Ajker Patrika

‘ও আন্দোলনে যাইব জানলে আমিও লগে যাইতাম, একলগেই গুলি খাইতাম’

নাঈমুল হাসান, টঙ্গী (গাজীপুর)
আপডেট : ৩১ জুলাই ২০২৪, ১৯: ০৭
‘ও আন্দোলনে যাইব জানলে আমিও লগে যাইতাম, একলগেই গুলি খাইতাম’

‘যদি জানতাম ও আন্দোলনে যাইব, তাইলে আমিও লগে যাইতাম। একলগেই গুলি খাইতাম। বাপজান খুব কষ্ট পাইছে। কেন মারলেন ওরে?’

১৮ জুলাই রাজধানীর উত্তরায় কোটা আন্দোলনে গিয়ে গুলিতে নিহত রাহাত হোসাইন শরিফের (১৭) মা স্বপ্না আক্তার কেঁদে কেঁদে কথাগুলো বলছিলেন।

মা–বাবার একমাত্র সন্তান ছিল রাহাত হোসাইন শরিফ। ২০২৪ সালে গাজীপুরের টঙ্গীর শহীদ স্মৃতি উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। চলতি জুলাই মাসে রাজধানীর আজমপুর এলাকার নওয়াব হাবিবুল্লাহ মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয় সে। তার গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরায়।

পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা ফেরাতে রাহাতের মা স্বপ্না আক্তার চাকরি নেন টঙ্গীর একটি পোশাক কারখানায়। ছেলেকে উচ্চশিক্ষিত করতে অর্থের জোগান দিতে কয়েক মাস আগে তার বাবা মো. সেলিম প্রবাসে পাড়ি জমান।

এরই মধ্যে শুরু হয় কোটা সংস্কার আন্দোলন। ঘরে টেলিভিশন না থাকায় মায়ের মোবাইল ফোনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়া রংপুরে পুলিশের গুলিতে শিক্ষার্থী আবু সাঈদ নিহত হওয়ার ঘটনাটি বারবার দেখতে থাকে রাহাত। পরিবারে থাকা মা ও নানি সালেহা বেগমকে কয়েকবার দেখায় সেই ভিডিও। গত ১৭ জুলাই রাতে মাকে সে জিজ্ঞেস করে, ‘পুলিশগোর মায়া হয় না? ছাত্রগোরে ক্যামনে মারে? কেমনে গুলি করে?’

গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীর গোপালপুর এলাকায় মা ও নানির সঙ্গে ভাড়া বাসায় থাকত রাহাত। ১৮ জুলাই রাজধানীর উত্তরায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে গিয়ে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে রাহাতের মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা ও আশপাশের লোকজন সে দিন সন্ধ্যায় উত্তরার আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে লাশ নিয়ে যায়। পরে রাতেই নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার বাহারচর গ্রামে নিয়ে যাওয়া হলেও পরদিন শুক্রবার লাশ দাফন করা হয়।

আজ বুধবার দুপুরে কেঁদে কেঁদে ছেলে হারানোর সেই বর্ণনা দেন রাহাত হোসাইন শরিফের মা স্বপ্না আক্তার। তিনি বলেন, গত ১৮ জুলাই দুপুরে কারখানা থেকে বাসায় আসেন স্বপ্না। মা সালেহা বেগম ও ছেলে রাহাতকে নিয়ে দুপুরে খাবার শেষে আবার কাজে যান তিনি। বিকেল ৫টার দিকে কয়েকজন বন্ধু ফোন করে রাহাতকে ডেকে নেয়। তারা রাজধানীর উত্তরা এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে যায়। সেখানে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয় রাহাত। বন্ধুরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান স্বপ্না আক্তার।

কেঁদে কেঁদে ক্ষুব্ধ হয়ে স্বপ্না আক্তার বলেন, ‘আমি কোটা চাই না, আমার সন্তান চাই। ওরে মানুষ করতাছিলাম, ভবিষ্যতে আমার কষ্ট শেষ হইব। এহন কই যামু, ঘরটা খালি খালি লাগে। দাবি একটাই, আমার সন্তান ফেরত চাই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মাসুদ আহমেদের সব পদ স্থগিত

টিআইএন নেওয়ার পরে কিন্তু ঘুমাইতে পারবেন না: এনবিআর চেয়ারম্যান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত