নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
বিগত অর্থবছরের বাজেটে ‘আদিবাসীদের’ জন্য নির্দিষ্ট করে কোন বাজেট দেওয়া হয়নি। হিজড়া জনগোষ্ঠীও জীবনমান উন্নয়নে সেইরকম বরাদ্দ পান না। কৃষকেরাও ন্যায্যমূল্যে বীজ পাচ্ছেন না। অন্যদিকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদেরও অবস্থা ভালো নেই। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকেরা সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। শিক্ষার্থীদেরও অনেকে পড়াশোনা বাদ দিয়ে দিয়েছেন। শিশুদের স্কুলে ফেরানো এবং অন্যদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টিও জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সব সমস্যা সমাধানে আসন্ন ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ দেওয়া এখন সময়ের দাবি।
আজ রোববার নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত ‘আসন্ন বাজেট নিয়ে জনমানুষের প্রত্যাশা’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সংলাপে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে ওয়ার্ল্ড ভিশনের পরিচালক টোনি মাইকেল গোমেজ বলেন, ‘আসন্ন বাজেটে অন্তত পক্ষে শিশুদের জন্য যেন ১০ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়। আজকের শিশু আগের ৫০ বছরের শিশুর মতো নয়। তারা আজ প্রযুক্তির ব্যবহারসহ নানা কিছুর মধ্যে দিয়ে বড় হচ্ছে। করোনার কারণে দুই বছর এই সব শিশুরা স্কুলে যেতে পারেনি সুতরাং তাদের দিকে নজর দেওয়া জরুরি। পাশাপাশি যা বরাদ্দ দেওয়া হয় তা কেন ব্যয় করা হয় না সেটা নিয়েও ভাবতে হবে।’
শিক্ষক সমাজের পক্ষ থেকে গাইবান্ধার বগাজান আদর্শ শিক্ষালয় এর প্রধান শিক্ষক সাধন কুমার বলেন, ‘করোনায় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের অবস্থা খুবই করুণ। যেসব শিক্ষার্থীদের নিয়ে স্কুল চালাব তারা ঝরে পড়েছে, আমরা কমিউনিটির সহযোগিতা নিয়ে স্কুল চালাই। আসন্ন বাজেটে বেসরকারি স্কুল পরিচালনার খরচ, বেতন-ভাতা ইত্যাদি নিয়ে বরাদ্দ রাখা জরুরি। সবচেয়ে ভালো হয় এগুলো জাতীয়করণ করা। আমাদের মনে রাখতে হবে ৯৭ ভাগ শিক্ষক কিন্তু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে।’
প্রতিবন্ধীদের পক্ষ থেকে সেন্টার ফর সার্ভিস অ্যান্ড ইনফরমেশন অন ডিজএ্যাবেলিটি এর নির্বাহী পরিচালক খন্দকার জহুরুল আলম বলেন, আমরা প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দ রাখতে খুব কম মন্ত্রণালয়কে দেখি। সোশ্যাল সেফটি নেটের অধীনে মাত্র ৭৫০ টাকা দেওয়া হচ্ছে।
প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি না করতে পারলে দেশ ৩ ভাগের অধিক জিডিপি থেকে বঞ্চিত হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তো আর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাজ করবে না। তাই সব মন্ত্রণালয়ে প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে।
হিজড়া জনগোষ্ঠীর বিষয়ে অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ‘এদের সংজ্ঞা ঠিক হয়নি। কাজেই বাজেট কার জন্য দেওয়া হচ্ছে সেটা নিয়েও সমস্যা থেকে যাচ্ছে। দেশে হিজড়া জনগোষ্ঠীর সংখ্যা কত সেটাও শুমারি করা দরকার। তাদের জন্য বাজেটে বরাদ্দ চাওয়াটাও সমস্যা কারণ আমরা তাদের সংখ্যা জানি না। সমাজ সেবা থেকে তাদেরকে যে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে সেটাকে ১ লাখ করা উচিত। তাদের স্বল্প সুদে লোন দিতে হবে। পরিবারে তাদের ইনক্লুশন দরকার। যেই পরিবারে কেউ হিজড়া আছে সেই পরিবারকে কীভাবে অর্থিত সহায়তা করা যায় সেটার দিকেও নজর দিতে হবে। যত দিন পরিবারে তাদের ইনক্লোশন না হয় ততদিন তাদের জন্য আবাসন ব্যবস্থা থাকা দরকার। টাকা দেওয়া শর্তেও অনেকে তাদের বাসা ভাড়া দিতে চায় না। এ ছাড়া তারা তাদের সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। তারা যেন স্বাভাবিকভাবে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারে সে জন্য সচেতনতা তৈরি করাও জরুরি।’
শিশুদের পক্ষ থেকে উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী লামিয়া আক্তার মীম বলেন, ‘দেশের জনগোষ্ঠীর মধ্যে বড় একটা (অর্ধেক) অংশ শিশু। শিশু কল্যাণ কাজ অব্যাহত রাখতে শিশুদের জন্য বাজেট বরাদ্দ সময়ের দাবি। ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনে শিশুদের জন্য খাত ভিত্তিক বরাদ্দ দিতে হবে। তাদের মতামত অনুযায়ী বাজেট বাস্তবায়ন করতে হবে। শিশুদের জন্য ১০ শতাংশ বরাদ্দ রাখতে হবে। পাশাপাশি প্রতিটি অফিসে শিশু কর্ণার রাখতে হবে। শিশুদের সহিংসতা বন্ধ করা এবং নিয়মিত শিশুদের খেলাধুলা ও সুস্থ বিনোদনের ব্যবস্থা, এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য প্রতিটি ইউনিয়নে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ রাখতে হবে।’
অধিবাসী জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে খোকন মুন্ডু বলেন, ‘বিগত বছরে আলাদাভাবে বাজেটে আদিবাসীদের জন্য বরাদ্দ ছিল না। বিশেষ এলাকার জন্য উন্নয়ন বরাদ্দ থাকলেও আলাদাভাবে বরাদ্দ থাকেনি। করোনার সময় আদিবাসী শিশুদের পড়াশোনা অনেক পিছিয়ে গেছে। অনলাইনে তারা পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারিনি। কেনো আদিবাসী দুই কৃষক আত্মহত্যা করেছে তাও আমরা জানি। আদিবাসীদের জন্য আলাদা প্রণোদনা প্যাকেজ দিতে হবে। সরকারের করোনার প্যাকেজ তাদের কাছে পৌঁছায়নি। পাশাপাশি আদিবাসীদের জন্য বাজেট বরাদ্দ বাড়াতে হবে এবং নির্দিষ্ট করে বাজেটে বলে দিতে হবে। অনেক জেলায় বিশেষ উন্নয়ন বরাদ্দ গিয়েছে যেখানে আদিবাসী থাকে না। তাই আমাদের জন্য সুনির্দিষ্ট বাজেট থাকবে। আমরা চাই আদিবাসীদের জন্য আসন্ন বাজেটে একটা প্যারা থাকুক।’
কৃষকের পক্ষ থেকে কৃষক আব্দুল আজিজ বলেন, ‘আমি নিজেও বোরো ধান করেছি। দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ত পানির জন্য ধানগুলোয় পুষ্টি কম হচ্ছে। আমাদের বড় সমস্যা লবণাক্ততা তাই আমাদের জন্য মিষ্টি পানির ব্যবস্থা করতে হবে। বিভিন্ন বীজের অনেক দাম। আমাদের সেগুলো চড়া মূল্যে কিনতে হচ্ছে। আমরা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ বিভিন্ন বন্যা মোকাবিলা করি। দক্ষিণাঞ্চলে মিষ্টি পানির নিশ্চিতে বরাদ্দ দিতেই হবে।’
শ্রমিকদের পক্ষ থেকে আহসান হাবিব বুলবুল বলেন, ‘সড়কে প্রতিদিন যে ২২ জন মানুষ মারা যাচ্ছে তার মধ্যে ২ থেকে ৩ জন কিন্তু পরিবহন শ্রমিক। নির্মাণ শ্রমিকেরা করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রণোদনায় টাকা তাদের কাছে পৌঁছায়নি। তাই এসব শ্রমিকদের জন্য রেশন এবং বিনা মূল্যে চিকিৎসার জন্য হেলথ কার্ড চালু করতে হবে।’
দলিত জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে বিপ্লব চন্ত্র ঋষি বলেন, ‘আর্থিক সংকটের কারণে সন্তানের শিক্ষার ব্যয় জোগাড় না করতে পেরে দলিত সম্প্রদায়ের শিশুদের মধ্যে ঝড়ে পড়ার হার বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের নিজস্ব জমি নেই তাই আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।’
জাতীয় হকার্স সমিতির সভাপতি আরিফ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা একটা জাতীয় নীতিমালা চাই, যেখানে আমরা সরকারকেই টাকা দিয়ে নিতে চাই। আমরা রাস্তায় বসি আর এই টাকা অন্য খাতে চলে যাচ্ছে। আমাদের জন্য জাতীয় নীতিমালা করলে, এনআইডি কার্ডের মতো কার্ড করলে আমরা দেশের বোঝা হব না। আমরা আরও সরকারকে দিতে চাই কিন্তু সরকার নিতে চাচ্ছেনা।’
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ সদস্য সীমা মোসলেম বলেন, ‘কৃষিতে নারীদের বড় একটা অংশ যুক্ত রয়েছে অথচ সেখানে নারীদের স্বীকৃতি নেই। জমির ক্ষেত্রে, বীজ দেওয়া, সার দেওয়া প্রণোদনা ইত্যাদির জন্য কৃষিতে নারীদের জন্য বাজেট বরাদ্দের বিষয় রয়েছে। নারী পোশাক শ্রমিকদের কারণে বাংলা স্বল্প আয় থেকে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তর হয়েছে। অটোমেশনের কারণে অনেক নারী পোশাক শ্রমিক চাকরি হারিয়ে গ্রামে চলে যাচ্ছেন। তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করতে হবে। পাশাপাশি অভিবাসী নারীরা বিদেশ থেকে অর্থ আনছেন। তাদের কেবলমাত্র গৃহকর্মী হিসেবে পাঠানো হচ্ছে। তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে পাঠানো যায় কিনা সে বিষয়টি বাজেটে রাখতে হবে। দলিত ও আধিবাসী নারীরাও ভালো নেই।’
নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘বাজেট দেওয়ার আগে একটা খসড়া নীতিকাঠামো প্রকাশ করা উচিত। যাতে সবাই তাদের মতামত দিতে পারে। করোনায় সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। কোন এলাকার, কোন মানুষ, কত পেল, কোন ভাতার অধীনে দেওয়া হয়েছে তার তথ্য দেওয়া দরকার। তাহলে জবাবদিহিতার বিষয়টি থাকে। করোনায় কর্মহীনতা বেড়েছে, আয় কমেছে। আগামী অর্থবছরের বাজেটের মূল লক্ষ্য থাকা উচিত কর্মসংস্থান। এর জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। কীভাবে এই কর্মসংস্থান হবে সেটা বাজেটে স্পষ্ট করা উচিত।’
এদিকে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের পক্ষ থেকে যারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করে তাদের কাছে থেকে বাজেট সম্পর্কিত প্রস্তাব সংগ্রহ করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে তা প্রকাশ করা হয়। সেখানে কোন জনগোষ্ঠীর জন্য কী কী বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন তা উল্লেখ করা হয়েছে।
বিগত অর্থবছরের বাজেটে ‘আদিবাসীদের’ জন্য নির্দিষ্ট করে কোন বাজেট দেওয়া হয়নি। হিজড়া জনগোষ্ঠীও জীবনমান উন্নয়নে সেইরকম বরাদ্দ পান না। কৃষকেরাও ন্যায্যমূল্যে বীজ পাচ্ছেন না। অন্যদিকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদেরও অবস্থা ভালো নেই। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকেরা সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। শিক্ষার্থীদেরও অনেকে পড়াশোনা বাদ দিয়ে দিয়েছেন। শিশুদের স্কুলে ফেরানো এবং অন্যদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টিও জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সব সমস্যা সমাধানে আসন্ন ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ দেওয়া এখন সময়ের দাবি।
আজ রোববার নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত ‘আসন্ন বাজেট নিয়ে জনমানুষের প্রত্যাশা’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সংলাপে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে ওয়ার্ল্ড ভিশনের পরিচালক টোনি মাইকেল গোমেজ বলেন, ‘আসন্ন বাজেটে অন্তত পক্ষে শিশুদের জন্য যেন ১০ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়। আজকের শিশু আগের ৫০ বছরের শিশুর মতো নয়। তারা আজ প্রযুক্তির ব্যবহারসহ নানা কিছুর মধ্যে দিয়ে বড় হচ্ছে। করোনার কারণে দুই বছর এই সব শিশুরা স্কুলে যেতে পারেনি সুতরাং তাদের দিকে নজর দেওয়া জরুরি। পাশাপাশি যা বরাদ্দ দেওয়া হয় তা কেন ব্যয় করা হয় না সেটা নিয়েও ভাবতে হবে।’
শিক্ষক সমাজের পক্ষ থেকে গাইবান্ধার বগাজান আদর্শ শিক্ষালয় এর প্রধান শিক্ষক সাধন কুমার বলেন, ‘করোনায় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের অবস্থা খুবই করুণ। যেসব শিক্ষার্থীদের নিয়ে স্কুল চালাব তারা ঝরে পড়েছে, আমরা কমিউনিটির সহযোগিতা নিয়ে স্কুল চালাই। আসন্ন বাজেটে বেসরকারি স্কুল পরিচালনার খরচ, বেতন-ভাতা ইত্যাদি নিয়ে বরাদ্দ রাখা জরুরি। সবচেয়ে ভালো হয় এগুলো জাতীয়করণ করা। আমাদের মনে রাখতে হবে ৯৭ ভাগ শিক্ষক কিন্তু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে।’
প্রতিবন্ধীদের পক্ষ থেকে সেন্টার ফর সার্ভিস অ্যান্ড ইনফরমেশন অন ডিজএ্যাবেলিটি এর নির্বাহী পরিচালক খন্দকার জহুরুল আলম বলেন, আমরা প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দ রাখতে খুব কম মন্ত্রণালয়কে দেখি। সোশ্যাল সেফটি নেটের অধীনে মাত্র ৭৫০ টাকা দেওয়া হচ্ছে।
প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি না করতে পারলে দেশ ৩ ভাগের অধিক জিডিপি থেকে বঞ্চিত হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তো আর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাজ করবে না। তাই সব মন্ত্রণালয়ে প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে।
হিজড়া জনগোষ্ঠীর বিষয়ে অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ‘এদের সংজ্ঞা ঠিক হয়নি। কাজেই বাজেট কার জন্য দেওয়া হচ্ছে সেটা নিয়েও সমস্যা থেকে যাচ্ছে। দেশে হিজড়া জনগোষ্ঠীর সংখ্যা কত সেটাও শুমারি করা দরকার। তাদের জন্য বাজেটে বরাদ্দ চাওয়াটাও সমস্যা কারণ আমরা তাদের সংখ্যা জানি না। সমাজ সেবা থেকে তাদেরকে যে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে সেটাকে ১ লাখ করা উচিত। তাদের স্বল্প সুদে লোন দিতে হবে। পরিবারে তাদের ইনক্লুশন দরকার। যেই পরিবারে কেউ হিজড়া আছে সেই পরিবারকে কীভাবে অর্থিত সহায়তা করা যায় সেটার দিকেও নজর দিতে হবে। যত দিন পরিবারে তাদের ইনক্লোশন না হয় ততদিন তাদের জন্য আবাসন ব্যবস্থা থাকা দরকার। টাকা দেওয়া শর্তেও অনেকে তাদের বাসা ভাড়া দিতে চায় না। এ ছাড়া তারা তাদের সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। তারা যেন স্বাভাবিকভাবে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারে সে জন্য সচেতনতা তৈরি করাও জরুরি।’
শিশুদের পক্ষ থেকে উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী লামিয়া আক্তার মীম বলেন, ‘দেশের জনগোষ্ঠীর মধ্যে বড় একটা (অর্ধেক) অংশ শিশু। শিশু কল্যাণ কাজ অব্যাহত রাখতে শিশুদের জন্য বাজেট বরাদ্দ সময়ের দাবি। ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনে শিশুদের জন্য খাত ভিত্তিক বরাদ্দ দিতে হবে। তাদের মতামত অনুযায়ী বাজেট বাস্তবায়ন করতে হবে। শিশুদের জন্য ১০ শতাংশ বরাদ্দ রাখতে হবে। পাশাপাশি প্রতিটি অফিসে শিশু কর্ণার রাখতে হবে। শিশুদের সহিংসতা বন্ধ করা এবং নিয়মিত শিশুদের খেলাধুলা ও সুস্থ বিনোদনের ব্যবস্থা, এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য প্রতিটি ইউনিয়নে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ রাখতে হবে।’
অধিবাসী জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে খোকন মুন্ডু বলেন, ‘বিগত বছরে আলাদাভাবে বাজেটে আদিবাসীদের জন্য বরাদ্দ ছিল না। বিশেষ এলাকার জন্য উন্নয়ন বরাদ্দ থাকলেও আলাদাভাবে বরাদ্দ থাকেনি। করোনার সময় আদিবাসী শিশুদের পড়াশোনা অনেক পিছিয়ে গেছে। অনলাইনে তারা পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারিনি। কেনো আদিবাসী দুই কৃষক আত্মহত্যা করেছে তাও আমরা জানি। আদিবাসীদের জন্য আলাদা প্রণোদনা প্যাকেজ দিতে হবে। সরকারের করোনার প্যাকেজ তাদের কাছে পৌঁছায়নি। পাশাপাশি আদিবাসীদের জন্য বাজেট বরাদ্দ বাড়াতে হবে এবং নির্দিষ্ট করে বাজেটে বলে দিতে হবে। অনেক জেলায় বিশেষ উন্নয়ন বরাদ্দ গিয়েছে যেখানে আদিবাসী থাকে না। তাই আমাদের জন্য সুনির্দিষ্ট বাজেট থাকবে। আমরা চাই আদিবাসীদের জন্য আসন্ন বাজেটে একটা প্যারা থাকুক।’
কৃষকের পক্ষ থেকে কৃষক আব্দুল আজিজ বলেন, ‘আমি নিজেও বোরো ধান করেছি। দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ত পানির জন্য ধানগুলোয় পুষ্টি কম হচ্ছে। আমাদের বড় সমস্যা লবণাক্ততা তাই আমাদের জন্য মিষ্টি পানির ব্যবস্থা করতে হবে। বিভিন্ন বীজের অনেক দাম। আমাদের সেগুলো চড়া মূল্যে কিনতে হচ্ছে। আমরা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ বিভিন্ন বন্যা মোকাবিলা করি। দক্ষিণাঞ্চলে মিষ্টি পানির নিশ্চিতে বরাদ্দ দিতেই হবে।’
শ্রমিকদের পক্ষ থেকে আহসান হাবিব বুলবুল বলেন, ‘সড়কে প্রতিদিন যে ২২ জন মানুষ মারা যাচ্ছে তার মধ্যে ২ থেকে ৩ জন কিন্তু পরিবহন শ্রমিক। নির্মাণ শ্রমিকেরা করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রণোদনায় টাকা তাদের কাছে পৌঁছায়নি। তাই এসব শ্রমিকদের জন্য রেশন এবং বিনা মূল্যে চিকিৎসার জন্য হেলথ কার্ড চালু করতে হবে।’
দলিত জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে বিপ্লব চন্ত্র ঋষি বলেন, ‘আর্থিক সংকটের কারণে সন্তানের শিক্ষার ব্যয় জোগাড় না করতে পেরে দলিত সম্প্রদায়ের শিশুদের মধ্যে ঝড়ে পড়ার হার বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের নিজস্ব জমি নেই তাই আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।’
জাতীয় হকার্স সমিতির সভাপতি আরিফ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা একটা জাতীয় নীতিমালা চাই, যেখানে আমরা সরকারকেই টাকা দিয়ে নিতে চাই। আমরা রাস্তায় বসি আর এই টাকা অন্য খাতে চলে যাচ্ছে। আমাদের জন্য জাতীয় নীতিমালা করলে, এনআইডি কার্ডের মতো কার্ড করলে আমরা দেশের বোঝা হব না। আমরা আরও সরকারকে দিতে চাই কিন্তু সরকার নিতে চাচ্ছেনা।’
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ সদস্য সীমা মোসলেম বলেন, ‘কৃষিতে নারীদের বড় একটা অংশ যুক্ত রয়েছে অথচ সেখানে নারীদের স্বীকৃতি নেই। জমির ক্ষেত্রে, বীজ দেওয়া, সার দেওয়া প্রণোদনা ইত্যাদির জন্য কৃষিতে নারীদের জন্য বাজেট বরাদ্দের বিষয় রয়েছে। নারী পোশাক শ্রমিকদের কারণে বাংলা স্বল্প আয় থেকে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তর হয়েছে। অটোমেশনের কারণে অনেক নারী পোশাক শ্রমিক চাকরি হারিয়ে গ্রামে চলে যাচ্ছেন। তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করতে হবে। পাশাপাশি অভিবাসী নারীরা বিদেশ থেকে অর্থ আনছেন। তাদের কেবলমাত্র গৃহকর্মী হিসেবে পাঠানো হচ্ছে। তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে পাঠানো যায় কিনা সে বিষয়টি বাজেটে রাখতে হবে। দলিত ও আধিবাসী নারীরাও ভালো নেই।’
নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘বাজেট দেওয়ার আগে একটা খসড়া নীতিকাঠামো প্রকাশ করা উচিত। যাতে সবাই তাদের মতামত দিতে পারে। করোনায় সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। কোন এলাকার, কোন মানুষ, কত পেল, কোন ভাতার অধীনে দেওয়া হয়েছে তার তথ্য দেওয়া দরকার। তাহলে জবাবদিহিতার বিষয়টি থাকে। করোনায় কর্মহীনতা বেড়েছে, আয় কমেছে। আগামী অর্থবছরের বাজেটের মূল লক্ষ্য থাকা উচিত কর্মসংস্থান। এর জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। কীভাবে এই কর্মসংস্থান হবে সেটা বাজেটে স্পষ্ট করা উচিত।’
এদিকে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের পক্ষ থেকে যারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করে তাদের কাছে থেকে বাজেট সম্পর্কিত প্রস্তাব সংগ্রহ করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে তা প্রকাশ করা হয়। সেখানে কোন জনগোষ্ঠীর জন্য কী কী বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন তা উল্লেখ করা হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ এম হাসান আরিফ বলেছেন, ‘আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত ভিসার ব্যাপারে কিছুটা কড়াকড়ি করেছে। তারা আমাদের ভিসা দেবে কি না, এটা তাদের বিষয়।’
৪ ঘণ্টা আগেনাটোরের বড়াইগ্রামে আওয়ামী লীগের এক সমর্থককে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠেছে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। মারধরের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ আহত ওই যুবককেই আটক করে। পরে তিনি জামিনে ছাড়া পান
৪ ঘণ্টা আগেঅন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেছেন, ‘আপনারা ভালো কাজ করলে আমাদের সমর্থন পাবেন। জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে এক সেকেন্ডও সময় নেব না আপনাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে। দায়সারা কথা বলে ছাত্র-জনতার সঙ্গে প্রহসন করবেন না।
৫ ঘণ্টা আগেলক্ষ্মীপুরে একটি তাফসিরুল কোরআন মাহফিল ও ইসলামি সংগীত সন্ধ্যা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আজ শুক্রবার লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার মোহাম্মদিয়া জামে মসজিদ মাঠে এই আয়োজন করা হয়েছিল। মাহফিলে জামায়াত নেতাকে প্রধান অতিথি করায় বিএনপি সেটি বন্ধ করে দেয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
৬ ঘণ্টা আগে