Ajker Patrika

এই মঞ্চে বড় হলো শিশুরা, বাবারা ফিরে এলেন না

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ৩১ আগস্ট ২০২১, ১১: ১৭
এই মঞ্চে বড় হলো শিশুরা, বাবারা ফিরে এলেন না

ছোট্ট নিলিমা আক্তার মিম প্রতিবছর এই দিনে মায়ের হাত ধরে বাবাকে খুঁজতে আসে। ২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর তেজগাঁওয়ের শাহীনবাগের বাসা থেকে তার বাবা কাওছারকে তুলে নেওয়া হয়। তখন মিমের বয়স ছিল মাত্র তিন বছর। সে বছরই মিম বাবার ছবি বুকে নিয়ে এই মঞ্চে বসে ছিল। গতকাল ছিল আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস। গতকালও সে বাবার ছবি বুকে নিয়ে বসে আছে। মাঝে ৮ বছর চলে গেছে, কিন্তু বাবা আর ফিরে আসেননি।

গতকাল সোমবার আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবে সমবেত হয়েছিলেন নিখোঁজ ও গুম হওয়া অন্তত ৫০টি পরিবারের সদস্যরা। নিখোঁজ এই ব্যক্তিদের 
নিয়ে কাজ করে মায়ের ডাক নামের একটি সংগঠন।

নিখোঁজ কাওছারের স্ত্রী শিমু আক্তার বলেন, ‘সেদিন মাঝরাতে লোকজন তাঁর স্বামীকে তুলে নিয়ে যায়। তারা তখন বলেছিল, জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু সেই জিজ্ঞাসাবাদ আর শেষ হয় নাই।’ তখন র‍্যাব, পুলিশ, ডিবি–সব জায়গায় ঘুরেছেন। পরে কেউ স্বীকার করেনি তাঁর স্বামীকে কেউ তুলে নিয়েছে।

বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ২০০৯ থেকে ২০২০ সাল—এই ১০ বছরে ৫৮৭ জন নিখোঁজ হয়েছেন। এর মধ্যে ১৪৯ জন এখনো নিখোঁজ। ৩৫৭ জন দীর্ঘ সময় ধরে নিখোঁজ থেকে ফিরে এসেছেন। আর ৮১ জনের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো এবং নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের পরিবার বলছে, এঁরা সবাই গুম হয়েছেন।

আরেক নিখোঁজ ব্যক্তি ইসমাইল হোসেন বাতেন। ২০১৯ সালের জুন মাসে নিজের কর্মস্থল মিরপুর-১ থেকে নিখোঁজ হয়েছেন। যেদিন নিখোঁজ হন, সেদিন সকালে বাসা থেকে বের হন। দুপুরে দোকান থেকে তাঁর বাড়িতে খেতে আসার কথা, কিন্তু তিনি আর ফিরে আসেননি।

ইসমাইল হোসেন বাতেনের মেয়ে আনিসা ইসলাম বলেন, ‘আমরা তিন বছর ধরে এখানে এসে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটাই অনুরোধ করি, তিনি যেন আমার বাবাকে ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেন। কিন্তু আমরা কোনো আশ্বাসই পাচ্ছি না কারও কাছে।’ আনিসা বলেন, ‘বাবা যখন নিখোঁজ হন, আমার ছোট ভাই ইনামের বয়স তখন আড়াই বছর। এখন তার বয়স প্রায় ছয় বছর। তিন বছর ধরে সে আমার আর মায়ের সঙ্গে এখানে আসে। প্রতিবার জিজ্ঞেস করে, “প্রেসক্লাবে গেলে কি বাবাকে ফিরে পাব?”’

মায়ের ডাকের আয়োজনে এই সমাবেশে নিখোঁজদের পরিবারকে সহমর্মিতা জানাতে এসেছিলেন রাজনীতিবিদ, মানবাধিকারকর্মী ও শিক্ষকেরা। তাঁরা গুমের শিকার ব্যক্তিদের ফিরিয়ে দেওয়ার তাগিদ দেন। পাশাপাশি বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানান।

এ সময় মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন বলেন, আজ শুধু দেশের অভ্যন্তরে গুম হচ্ছে না। এখান থেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশে। পরে সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আরেক জায়গায়। এই যে আন্তদেশীয় ব্যবস্থা, এটা কখনোই রাষ্ট্রীয় সম্মতি ছাড়া সম্ভব নয়। তাই অবিলম্বে এসব ঘটনা তদন্তে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠন করা হোক।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী গুম হওয়ার বিষয়ে সবই জানেন। কে কোথায় আছেন? কেমন আছেন? তাঁরই উচিত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘একটা প্রশ্ন মনের মধ্যে আসে, গুম কারা করে। এই গুম সরকারি বাহিনী করেছে, সরকার করেছে—এটা বিশ্বাস করার বহু কারণ রয়েছে। যদি গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সরকারি বাহিনী না করে থাকে, তাহলে যাঁরা গুম হয়েছেন, তাঁদের খুঁজে বের করছেন না কেন?’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এক ছাতায় সব নাগরিক সেবা

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

তানভীর ইমামের বাড়ি ভেবে গুলশানের একটি বাসায় মধ্যরাতে শতাধিক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ, তছনছ

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত