Ajker Patrika

দরজা-জানালাবিহীন মসজিদ

শরিফুল ইসলাম তনয়, সিদ্ধিরগঞ্জ
আপডেট : ১৪ আগস্ট ২০২১, ২৩: ৪৯
দরজা-জানালাবিহীন মসজিদ

আদমজী জামে মসজিদ। এই মসজিদের প্রধান বিশেষত্ব হলো দরজা-জানালাবিহীন ১৯টি প্রবেশদ্বার এবং মসজিদের সামনের শাণবাঁধানো পুকুরঘাট। সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী সোনামিয়া বাজারসংলগ্ন বিহারি ক্যাম্পে ঐতিহ্যবাহী এই জামে মসজিদের অবস্থান।

দূর থেকেই দেখা যায় একটি সুদীর্ঘ মিনার। ব্যস্ত রাস্তার পাশে মিনারটি যেন জানান দিচ্ছে—এখানে একটি মসজিদ আছে। কাছে আসতেই চারপাশজুড়ে সবুজের সমারোহ চোখে পড়ে, যার চোখ জুড়ানো নির্মাণশৈলী দেখে যেকোনো পথিক ক্ষণিকের জন্য থমকে যেতে বাধ্য।

জানা যায়, ১৯৪৫ সালে আদমজী জুট মিল স্থাপনের সময় তৎকালীন ধনাঢ্য বাইশ পরিবারের একজন গুল মোহাম্মদ আদমজী শ্রমিক-কর্মকর্তাদের জন্য মিলের অভ্যন্তরে ১৯৫২ সালে নির্মাণ করেন এই মসজিদ। প্রায় দুই একর জায়গার ওপর অবস্থিত মসজিদ, পুকুর ও মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনের আবাসিক বাসা।

মসজিদটি ৯০ ফুট দৈর্ঘ্য, ৬৫ ফুট প্রস্থবিশিষ্ট ১২টি সুদর্শন থামের ওপর স্থাপিত। পশ্চিম দিক ছাড়া বাকি তিন দিকেই রয়েছে প্রশস্ত বারান্দা। ৬০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৬০ ফুট প্রস্থ তিন পাশের বারান্দার ছাদটি মোট ৭০টি পিলারের ওপর নির্মিত।

মসজিদটির উপরিভাগে রয়েছে ছোট ছোট আটটি গম্বুজবেষ্টিত একটি বড় গম্বুজ। পূর্ব-দক্ষিণ কোণে অবস্থিত সুউচ্চ একটি মিনার, যেখানে সে সময় বিদ্যুৎব্যবস্থা না থাকায় খালি গলায় মুয়াজ্জিন আজান দিতেন। বর্তমানে এ মসজিদে একসঙ্গে ৩ হাজারেরও অধিক মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন।

এলাকাবাসী জানান, আদমজী জুট মিলের নীরব সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকা শৈল্পিক নিদর্শনের এই মসজিদ ঠিকভাবে সংরক্ষণের উদ্যোগ না নিলে সংস্কারের অভাবে বিলীন হয়ে যাবে। হারিয়ে যাবে প্রাচীন এই ঐতিহ্য।

২০০২ সালের ৩০ জুন আদমজী জুট মিল বন্ধ হয়ে গেলে আদমজী উম্মুল ক্বোরা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক হাকিম মো. জয়নুল আবেদীন কয়েকজন মুসল্লিকে নিয়ে মসজিদের হাল ধরেন এবং বিভিন্নজনের সহযোগিতায় মসজিদের উন্নয়নকাজ চালিয়ে আসছেন। বর্তমানে তিনি মসজিদটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তার দেওয়া তথ্যমতে, আদমজী জুট মিলের নিজস্ব ৩০০ একর জায়গায় এটিসহ প্রায় ১৩টি মসজিদ ছিল। মিল বন্ধের পর এটি ছাড়া সব মসজিদও বন্ধ হয়ে যায়। শুধু তাই নয়, মিল বন্ধের পর ফ্যান–লাইট চুরির ভয়ে মিল কর্তৃপক্ষ সব মসজিদের মাইক, ফ্যান ও সাউন্ডবক্স খুলে নিয়ে যায়। সবার সহযোগিতায় এখন মসজিদ চলছে।

আদমজীর বিহারি ক্যাম্পে দরজা–জানালা বিহীন মসজিদ। ছবি: আজকের পত্রিকা

জয়নুল আবেদীন আরও জানান, সিদ্ধিরগঞ্জ পৌরসভার সাবেক প্রশাসক আব্দুল মতিন প্রধান প্রশাসক থাকাকালীন মসজিদের ছাদ নির্মাণের জন্য সরকারি অনুদান দিয়েছিলেন। এরপর তাঁরা আর কোনো অনুদান পাননি। তবে মসজিদ কর্তৃপক্ষ পুকুরের তিন দিকে বাউন্ডারি দেয়াল নির্মাণসহ মসজিদের যাবতীয় কাজ করার জন্য ৪ লাখ ৮০ টাকা প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে একটি চিঠি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নারায়ণগঞ্জ শাখায় দেয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত ওই চিঠির কোনো প্রত্যুত্তর দেয়নি ইসলামিক ফাউন্ডেশন।

এ বিষয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নারায়ণগঞ্জ শাখার উপপরিচালক মো. জাকির হোসেন বলেন, মসজিদ উন্নয়নের জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন কোনো অনুদান দেয় না। মসজিদের সব আর্থিক অনুদান ধর্ম মন্ত্রণালয় দিয়ে থাকে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কাজ হচ্ছে যেসব মসজিদে অনুদান দরকার, সেসব মসজিদের অনুদানের তালিকা ধর্ম মন্ত্রণালয়ে দেওয়া। ধর্ম মন্ত্রণালয় তখন এসব তালিকা বিবেচনা করে একটি প্রজেক্ট পাশ করে অনুদান দিয়ে থাকে। করোনার কারণে এসব অনুদান আপাতত বন্ধ রয়েছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গণপিটুনিতে নিহত জামায়াত কর্মী নেজাম ও তাঁর বাহিনী গুলি ছোড়ে, মিলেছে বিদেশি পিস্তল: পুলিশ

রাজধানীতে ছিনতাইকারী সন্দেহে ইরানের দুই নাগরিককে মারধর

বিএনপির দুই পেশাজীবী সংগঠনের কমিটি বিলুপ্ত

ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ: ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা, নিষিদ্ধের দাবি শিক্ষার্থীদের

ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে পন্টিংয়ের আরেকটি রেকর্ড ভাঙলেন কোহলি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত