সাতকানিয়ায় নির্বাচনী সহিংসতায় অস্ত্রধারীরা চাকরি-ব্যবসার আড়ালে ভাড়াটে সন্ত্রাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৯: ১৬
আপডেট : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৯: ৩৬

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া নির্বাচনী সহিংসতায় দুজন নিহত ও শতাধিক অহতের ঘটনায় আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। র‍্যাবের তিনটি ব্যাটালিয়নের বিশেষ অভিযানে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, বান্দরবানসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

এ সময় তাঁদের কাছ থেকে সহিংসতায় ব্যবহৃত তিনটি একনলা বন্দুক, একটি দোনলা বন্দুক, একটি ওয়ান শুটারগান, ৪২ রাউন্ড গুলিসহ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। 

র‍্যাব বলছে, গ্রেপ্তার সন্ত্রাসীরা ফুল বিক্রেতা, গাড়ি চালক, জমির দালাল, অফিস সহকারী, রাজমিস্ত্রি, সিএনজি চালকসহ বিভিন্ন পেশার আড়ালে থেকে সাতকানিয়া এলাকায় বিভিন্ন সময়ের সহিংসতার ঘটনায় জড়িত। তাঁরা সবাই সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্য। বিভিন্ন অস্ত্র চালনায় পারদর্শী। এ ছাড়া প্রত্যেকের বিরুদ্ধে সাতকানিয়াসহ বিভিন্ন থানায় সহিংসতাসহ একাধিক অস্ত্র মামলা রয়েছে। 

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। 

 দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে সেই অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। ছবি: আজকের পত্রিকাকমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘গত ০৭ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার খাগরিয়ায় অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করতে প্রার্থীদের অনুসারী পরিচয়ে ব্যাপক সহিংসতা ও নাশকতা চালায় কয়েকজন যুবক। এই সহিংসতার ঘটনায় সাতকানিয়া থানায় বেশ কয়েকটি মামলা রুজু করা হয়।’ 

গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নির্বাচনী সহিংসতায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে র‍্যাব-২, র‍্যাব-৭ ও র‍্যাব-১৫ এর পৃথক অভিযান চালায়। প্রথমে বান্দরবানের গহিন জঙ্গল থেকে নাসির উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব-১৫। পরে তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় অভিযান চালিয়ে মো. মোরশেদ ২৬, কোরবান আলী (৩৭) ও মো. ইসমাঈল (৫৫) কে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার চারজনের দেওয়া তথ্যে সাতকানিয়ার খাগরিয়া থেকে সহিংসতায় ব্যবহৃত উদ্ধার করা হয়। 

একই রাতে র‍্যাব-৭ এর অপর একটি অভিযানে চট্টগ্রাম মহানগরী থেকে সহিংসতায় জড়িত মো. জসিমকে (২৪) গ্রেপ্তার করা হয়। পরে জসিমের দেওয়া তথ্যে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ থেকে (৬) মো. মিন্টুকে (২৬) গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সহিংসতার নেতৃত্ব দেওয়া কায়েসকে রাজধানী ঢাকার তেজকুনি পাড়া থেকে সহযোগী নুরুল আবছারসহ (৩৩) গ্রেপ্তার করা হয়। 

গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে খন্দকার মঈন বলেন, গ্রেপ্তার কায়েস গত দুই বছর ধরে চট্টগ্রামে একটি কোম্পানিতে চাকরি করে আসছেন। পাশাপাশি সাতকানিয়া উপজেলায় বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত সহিংসতা ও হামলার ঘটনায় নেতৃত্ব দিতেন। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য ৩০ থেকে ৪০ জনের একটি সন্ত্রাসী দল পরিচালনা করতেন। নাসির বিভিন্ন মাধ্যম থেকে আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র সংগ্রহ করে তাঁর দলের সদস্যদের সরবরাহ করতেন বলে জানা যায়। সাতকানিয়ার সহিংসতার ঘটনায় তাঁর নেতৃত্বে জসিম, মোর্শেদ, মিন্টু, আবছারসহ শতাধিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী সাতকানিয়ার খাগরিয়া ইউনিয়নে বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা চালায়। সহিংসতা পরবর্তীতে তিনি ঢাকায় আত্মগোপন করেন। নাসিরের বিরুদ্ধে সাতকানিয়া থানায় বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে মামলা রয়েছে। 

কমান্ডার মঈন জানান, র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তারের পর কায়েস র‍্যাবকে জানিয়েছেন, তিনি নির্বাচনকে সামনে রেখে বেশ কয়েকজন ব্যক্তির কাছ থেকে ভাড়ায় অস্ত্র সংগ্রহ করেছেন। তাঁর গ্রুপের অন্য সদস্যদের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সহিংসতায় এভাবে অস্ত্র সরবরাহ করা হতো। কাজ শেষে অস্ত্র ফেরত দিলে তাঁরা স্থানীয় কবরস্থান ও পুকুরপাড়সহ বিভিন্ন স্থানে এই অস্ত্র লুকিয়ে রাখতেন। 

যাদের পক্ষ হয়ে তাঁরা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছেন তাঁর বিরুদ্ধে র‍্যাব কী ভাবছে, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে সহিংসতার তথ্য গণমাধ্যমের মাধ্যমে এসেছে। মূলত সেখানে দুই জন প্রার্থীর হয়ে সহিংসতা চালিয়েছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। যে দুটি কেন্দ্রে এই সহিংসতা হয়েছে সেই দুই কেন্দ্রর ফলাফল স্থগিত করা হয়েছে। এই প্রার্থীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত এবং তাদের সংশ্লিষ্টতা মূলত নির্বাচন কমিশনের বিষয়। যারা এখানে সংহিতা করেছেন তাঁরা এই দুই প্রার্থীর হয়ে এই কাজটি করেছেন। শুধু প্রার্থীরা তাঁদের বলেছেন এমন নয়, অনেক ক্ষেত্রে সমর্থকেরা অতি উৎসাহী হয়ে যায়। তাঁরা তাঁদের প্রার্থীদের জিতিয়ে দেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে যান।’ 

প্রার্থীরা হামলার নির্দেশ দিয়েছেন কি না, এ প্রশ্নে র‍্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘সেটা আমরা জানি না। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা আমাদের ওরকম কিছু বলে নাই। প্রার্থীরা তাঁদের ছবি দেখে বলছেন, তাঁরা আমাদের লোক না। যাদের গ্রেপ্তার করেছি তাঁরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অনুসারী বলেছেন। তবে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদে তাঁদের সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলের পদে থাকার তথ্য পাইনি। বিভিন্নভাবে তাঁরা দুই প্রার্থীরই অনুসারী ছিলেন। তাঁরা তাঁদের প্রার্থীকে জিতিয়ে দেওয়ার জন্য মরিয়া ছিল। এসব নির্বাচনে একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ বা চক্র থাকে। তাঁরা নিজেদের স্বার্থ হাসিল করার জন্য, অনেক ক্ষেত্রে অর্থের বিনিময়ে তাঁরা এ ধরনের কেন্দ্র দখল বা কাজ করে থাকেন। কোনো প্রার্থী নির্দেশনা দিয়েছে কি না তাঁরা আমাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সেটা জানান নাই।’ 

এই সহিংসতায় ব্যবহৃত অস্ত্রের উৎস কী বা কারা সরবরাহ করেছে? এ ধরনের অস্ত্র কি এসব কর্মকাণ্ডে ভাড়া দেওয়া হয় নাকি তাদের সরবরাহ করা হয়—এসব প্রশ্নের উত্তরে খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘আমরা যেটা জেনেছি, কায়েস এই অস্ত্র একজনের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে এসেছিলেন। তবে যার কাছ থেকে ভাড়া নিয়েছিলেন তিনি আত্মগোপনে থাকায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা যায় নাই। আত্মগোপনে যাওয়ার কারণে এই অস্ত্রগুলো পুকুরপাড়ের মাটির নিচে লুকিয়ে রেখেছিল। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা বেশ কিছু আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার দেখেছি। এগুলো বন্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন দেশ থেকে অস্ত্র আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ হয়ে প্রবেশ করছে।’ 

গ্রেপ্তারকৃতরা নির্বাচনের দুই প্রার্থীর অনুসারী প্রমাণিত হলে সেই দুই প্রার্থীকে গ্রেপ্তার করা হবে কি না, এমন প্রশ্নে র‍্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, ‘প্রথমে আমরা তাঁদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা কার্যক্রম শুরু করেছি। তবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশন দিবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে যেসব শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন

ভারতের পাল্টা আক্রমণে দিশেহারা অস্ট্রেলিয়া

ঢাকা কলেজে সংঘর্ষকালে বোমা বিস্ফোরণে ছিটকে পড়েন সেনাসদস্য—ভাইরাল ভিডিওটির প্রকৃত ঘটনা

ঐশ্বরিয়ার বিচ্ছেদের খবরে মুখ খুললেন অমিতাভ

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত