Ajker Patrika

পা দিয়ে মোবাইল সার্ভিসিং করে চালান সংসার, উত্তীর্ণ হলেন এইচএসসিতেও

নগরকান্দা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২০: ১৬
পা দিয়ে মোবাইল সার্ভিসিং করে চালান সংসার, উত্তীর্ণ হলেন এইচএসসিতেও

নানা প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে পা দিয়ে লিখে এইচএসসি পাস করেছেন ফরিদপুরের নগরকান্দার প্রতিবন্ধী জসিম। উপজেলার তালমা ইউনিয়নের কদমতলী গ্রামের দিনমজুর বাবা হানিফ মাতুব্বর ও তছিরন বেগমের বড় ছেলে জসিম। ফরিদপুর সিটি কলেজের বিএম শাখা থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দেন তিনি। পা দিয়ে লিখে জিপিএ ৪.২৯ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন।

জানা গেছে, জন্মের পর থেকেই জসিমের দুটি হাত নেই। তারপরও দারিদ্রের কারণে তিনি জীবন সংগ্রামের কঠিন পথ বেছে নেন। কৃষক বাবার সংসারে হাল ধরতে ছোটবেলা থেকেই দক্ষতার সঙ্গে মোবাইল সার্ভিসিংয়ের কাজ শুরু করেন। পাশাপাশি পড়ালেখাও চালিয়ে যান অদম্য এ শিক্ষার্থী। পা দিয়েই মোবাইল সার্ভিসিংয়ের কাজ করে লেখাপড়ার খরচ জোগান। নগরকান্দা সদর বাজারের মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটে মনা মোবাইল সার্ভিসিংয়ে চুক্তিভিত্তিক কাজ করেন জসিম। জসিম খেলতে পারেন ক্রিকেট ও গাইতে পারেন মুরশিদী গান। তাঁর অদম্য ইচ্ছার কাছে হার মেনেছে শারীরিক প্রতিবন্ধিতা। জসিমের লেখাপড়া শেষে সরকারি চাকরি করার ইচ্ছা রয়েছে। 

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে কথা হয় শারীরিক প্রতিবন্ধী জসিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘পা দিয়ে লিখে ফরিদপুর সিটি কলেজের বিএম শাখা থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে ৪.২৯ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছি। এর আগে পা দিয়ে লিখে কদমতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিএসসি ও তালমা নাজিমুদ্দিন উচ্চবিদ্যালয় থেকে জেএসসি এবং এসএসসি পাস করেছি।’

জসিম আরও বলেন, ‘আমার বাবা একজন দিনমজুর। তাই লেখাপড়ার পাশাপাশি কাজ করছি। সেই টাকা দিয়েই ছোট বোনের বিয়ে দিয়েছি। পাশাপাশি পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছি। আমি সবার সহযোগিতা চাই। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন, পড়ালেখা শেষ করে আমি যেন সরকারি একটা চাকরি করতে পারি।’

মোবাইল সার্ভিসিংয়ের ওস্তাদ মনা মিয়া বলেন, ‘ওকে দেখে আমি বুঝতে পেরেছিলাম, পা দিয়ে যদি ও  লিখতে পারে তাহলে সব কাজই করতে পারবে। তাই ওকে পা দিয়ে স্ক্রু ড্রাইভার চালানোর সুযোগ দিই। মাত্র এক বছরের মধ্যেই ও মোবাইলের সব ধরনের কাজ শিখেছে।’

জসিমের বাবা হানিফ মাতুব্বর বলেন, ‘আমার পাঁচ সন্তানের মধ্যে জসিম সবার বড়। ও জন্মের পর থেকে প্রতিবন্ধী। ওর দুটি হাত নেই। স্বাভাবিক চলাফেরাও ঠিকমতো করতে পারে না। তবে জসিম শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও সে মেধাবী। বিশেষ করে পড়ালেখার প্রতি অনেক মনোযোগ তার। বাবা হিসেবে ছেলের এই সাফল্যে আমি গর্বিত।’

জসিমের মা তছিরন বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে জসিম জন্মের পর থেকে প্রতিবন্ধী হলেও কোনো কাজে সে পিছিয়ে নেই। খেলাধুলাসহ সব কাজ সফলতার সঙ্গে করে আসছে। আর পড়ালেখার প্রতি ছোট সময় থেকে ওর অনেক আগ্রহ। এবারও এইচএসসি পরীক্ষায় পাস করার খবরটি শুনে আমাদের অনেক আনন্দ লাগছে। যা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। আল্লাহ ওর মনের আশা পূরণ করুক।’

নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মঈনুল হক বলেন, ‘এইচএসসি পরীক্ষায় হাতবিহীন জসিমের পাস করার খবর শুনেছি। এটা সত্যিই হাজারটি ভালো খবরের মধ্যে সেরা। তাই আজ থেকে ওর উচ্চশিক্ষার জন্য সব খবচ বহন করবে উপজেলা পরিষদ। এ ছাড়া ওকে ৬০ হাজার টাকার একটি ফান্ড করে দিয়েছি। এই টাকা দিয়ে ওর বাবা ব্যবসা করে লভ্যাংশ দিয়ে সংসারে স্বচ্ছতা আনবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

তানভীর ইমামের বাড়ি ভেবে গুলশানের একটি বাসায় মধ্যরাতে শতাধিক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ, তছনছ

৬ জ্যান্ত হাতি নিয়ে রাশিয়ায় মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান, উচ্ছ্বসিত পুতিন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত