অর্থ পাচার মামলায় কারাগারে থেকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত, ২৫ দিন পর বরণ

ফরিদপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ৩১ মে ২০২৪, ২০: ৪১
আপডেট : ৩১ মে ২০২৪, ২০: ৪৯

দুই হাজার কোটি টাকা পাচার মামলায় উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের আগের দিন গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ফরিদপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী ও কোতোয়ালি থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামচুল আলম চৌধুরী। কারাগারে থাকা অবস্থায় ওই নির্বাচনে তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে জয়লাভ করেন। তবে জয়ের হাসিটা ফুটেছে তাঁর। টানা ২৫ দিন কারাবন্দী হয়ে থাকতে হয়েছে তাঁকে।

আজ শুক্রবার দুপুরে তিনি কারামুক্ত হন। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার সিনিয়র বিশেষ জজ ও মহানগর দায়রা জজ আস-সামছ জগলুল হোসেন জামিন দেন তাঁকে। কারামুক্ত হয়েই ফরিদপুরে রাজকীয় সংবর্ধনার মাধ্যমে ফেরেন তিনি। ঢাক ও বাদ্যের তালে তাঁকে বরণ করে নেন জেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীসহ স্থানীয় বাসিন্দারা। 

আজ বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ফরিদপুরে পৌঁছান তিনি। এ সময় শহরের নদী গবেষণা ইনস্টিটিউটের সামনে থেকে তাঁকে বরণ করে নেওয়া হয়। এরপর গাড়িবহরে শহর প্রদক্ষিণ করেন। এতে শত শত মানুষ অংশ নেয়। এ সময় আবির ছিটিয়ে উল্লাস করেন সমর্থকেরা। পরে শহরের হাসিবুল হাসান লাবলু সড়কসংলগ্ন জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ফুলেল সংবর্ধনা দেওয়া হয় তাঁকে। 

এ সময় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্যে দেন উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত শামচুল আলম চৌধুরী। তিনি আক্ষেপ নিয়ে বলেন, ‘আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দলের নির্দেশে ৭ মে একটি মিথ্যা মামলায় জামিন চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাকে ষড়যন্ত্র করে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। এ মামলায় আরও ৪৭ জন আসামির মধ্যে অনেকে জামিন পেয়েছেন। কী অপরাধ ছিল আমার? আমিই কী সবচেয়ে বড় দোষী? নির্বাচনের আগের দিন আমাকেই কারাগারে পাঠানো হলো।’ 

এ সময় তিনি প্রতিপক্ষ সংসদ সদস্য আব্দুল কাদের আজাদ গ্রুপকে উদ্দেশে বলেন, ‘তারা ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে যেমন ষড়যন্ত্র করেছিল, উপজেলা নির্বাচনেও তারা একই ষড়যন্ত্র করেছিল। তারা ফরিদপুর থেকে আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার জন্য ষড়যন্ত্র করে আসছে। কিন্তু মহান আল্লাহর রহমতে এবং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হকের নেতৃত্বে সেদিন আমি জয়লাভ করেছি।’ 

এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক আরিফ, নবনির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান ইমান আলী মোল্যা, জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আলী আশরাফ পিয়ারসহ অনেকে। 

এর আগে ৭ মে দুপুরে তিনি ফরিদপুরের আলোচিত দুই হাজার কোটি টাকা পাচার মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের জন্য হাজির হলে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আস-সামছ জগলুল হোসেন শামচুল আলম চৌধুরী জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরের দিন ৮ মে উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে তিনি আনারস প্রতীকে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী ছিলেন এবং বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন। গ্রেপ্তারের পর থেকে তিনি ২৫ দিন কারাগারে ছিলেন। 

গত ২২ এপ্রিল এই মামলায় সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ভাই মোহতেশামসহ ৪৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেন এই আদালত। গত বছর ২৫ জুন এই মামলায় সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। 

সম্পূরক অভিযোগপত্রে নতুন ৩৭ জন আসামি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আগের অভিযোগ পত্রে ১০ জন আসামি ছিলেন। এই মামলায় ৪৭ আসামির মধ্যে ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও তাঁর ভাই ফরিদপুর প্রেস ক্লাবের বহিষ্কৃত সভাপতি ইমতিয়াজ হাসান রুবেল, ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম খন্দকার লেভী, শহর যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসিবুর রহমানসহ ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের ও অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মী রয়েছেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত