Ajker Patrika

নির্বাচন বড় না আমি বড়, এমপির প্রশ্নে জনতা বললো ‘আপনি’

শরীয়তপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২১, ২৩: ২৮
নির্বাচন বড় না আমি বড়, এমপির প্রশ্নে জনতা বললো ‘আপনি’

শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন দ্বীন মোহাম্মদ মাতবর। অভিযোগ উঠেছে, শরীয়তপুর-৩ আসনের সাংসদ নাহিম রাজ্জাক তাঁকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে চাপ দিচ্ছেন।

দ্বীন মোহাম্মদ অভিযোগ করে বলেন, শরীয়তপুর-৩ আসনের সাংসদ নাহিম রাজ্জাক নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে চাপ প্রয়োগ করছেন। সাংসদ নিজে দলবল নিয়ে বাড়িতে এসে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং তাঁর সমর্থিত প্রার্থী আবুল হোসেন মোল্লার পক্ষে কাজ করার জন্য বলেছেন। 

এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনের প্রচার প্রচারণায় অংশ নিতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেছেন প্রার্থী দ্বীন মোহাম্মদ। 

উল্লেখ্য, শরীয়তপুরের তিনজন এমপির অনুরোধ এবং জেলা আওয়ামী লীগের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ জেলায় তৃতীয় ধাপ থেকে ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে প্রার্থী দিচ্ছে না আওয়ামী লীগ।

এদিকে সম্প্রতি দ্বীন মোহাম্মদের বাড়িতে এসে সভা করে তাঁকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে অনুরোধ করার একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ওই ভিডিওতে শোনা যায়, সাংসদ নাহিম রাজ্জাক নির্বাচন থেকে দ্বীন মোহাম্মদকে সরে দাঁড়ানোর অনুরোধ করছেন। নাহিম রাজ্জাক বলেন, ‘এখানে আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মী উপস্থিত হয়েছেন। আমাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে দ্বীন মোহাম্মদকে চেয়ারম্যান বানিয়েছি, সাধারণ সম্পাদক বানানো হয়েছে। এখনো তাকে ভালো একটা জায়গায় বসানোর দায়িত্ব আমাদের।’

নির্বাচন বড় না আমি বড়? আমার ওপর আস্থা আছে? উপস্থিত জনগণের উদ্দেশে এমন প্রশ্ন ছুড়ে দেন এমপি নাহিম রাজ্জাক। এ সময় জনতা একযোগে চিৎকার করে বলে, ‘আপনি’।

নির্বাচন থেকে দ্বীন মোহাম্মদকে সরে দাঁড়াতে অনুরোধ করার পরই উপস্থিত সাধারণ ভোটাররা একযোগে ‘মানি না, মানি না’ বলে প্রতিবাদ করেন। এরপর সাংসদ পুনরায় সবার কাছে অনুরোধের স্বরে বলেন, ‘নির্বাচনে সে আমাদের কথা রাখবে এবং আমরা তার দায়িত্ব নিব।’

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২৬ ডিসেম্বর ডামুড্যা উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। দলীয় প্রতীকের বাইরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় আওয়ামী লীগ থেকে কাইকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। ইসলামপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হোসেন মোল্লা, সাবেক সাধারণ সম্পাদক দ্বীন মোহাম্মদ মাতবর ও মোসলেম আলী ঢালী। 

জানা গেছে, নির্বাচনে স্থানীয় সাংসদ নাহিম রাজ্জাক আবুল হোসেন মোল্লাকে সমর্থন দিয়েছেন। নির্বাচনের শুরু থেকেই দ্বীন মোহাম্মদকে নির্বাচন না করার অনুরোধ করেন তিনি। কিন্তু প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন দ্বীন মোহাম্মদ। বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ সাংসদ নাহিম রাজ্জাক গত শনিবার দুপুরে দলবল নিয়ে হাজির হন দ্বীন মোহাম্মদের বাড়িতে। বাড়ির উঠানে জনসভায় বক্তব্যে দ্বীন মোহাম্মদকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে অনুরোধ করেন।

তখন দ্বীন মোহাম্মদের সমর্থকেরা সাংসদের এই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন এবং প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এর পর থেকেই সাংসদের অনুসারীদের অব্যাহত হুমকির মুখে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছেন দ্বীন মোহাম্মদ। নির্বাচন ঘনিয়ে এলেও তিনি ও তাঁর সমর্থকেরা প্রচারণা চালাতে পারছেন না।

এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান প্রার্থী দ্বীন মোহাম্মদ মাতবর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জনগণের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। নির্বাচনকে প্রভাবমুক্ত রাখতে সরকারিভাবে দলীয় প্রতীক উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি আমরা সবাই আওয়ামী পরিবারের লোক। অথচ সাংসদ প্রকাশ্যে নির্বাচনে আমার প্রতিপক্ষ আবুল মোল্লার পক্ষে প্রচারণায় নেমেছেন। আমাকে নির্বাচন থেকে সরে যেতে চাপ দিচ্ছেন। এমপি বলার পর সন্ত্রাসীরা আমাকে এলাকায় যেতে দিচ্ছে না। আমাকে ও আমার সমর্থকদের নিয়মিত হুমকি দিচ্ছেন। বিষয়টি আমি ডামুড্যা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছি এবং জেলা ডিবি কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। সম্পূর্ণ বিষয়টি আমি মেসেঞ্জারে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।’ 

অপর চেয়ারম্যান প্রার্থী আবুল হোসেন মোল্লা বলেন, ‘সাংসদ নাহিম রাজ্জাক কোনো প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে সরে যেতে চাপ দিচ্ছে এমন বিষয় আমার জানা নেই। তবে সাংসদ চেয়ারম্যান প্রার্থী দ্বীন মোহাম্মদ মাতবরের বাড়িতে চা খাওয়ার দাওয়াতে গিয়েছিলেন। সেখানে এমন কিছু হয়নি।’ 

এ বিষয়ে কথা বলতে শরীয়তপুর-৩ আসনের সাংসদ নাহিম রাজ্জাককে সেলফোনে কল করলে তিনি রিসিভ করেননি।

রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ডামুড্যা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ আজিজুর রহমান বলেন, ‘সাংসদ নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে প্রচার প্রচারণা বা কাউকে চাপ দেওয়ার বিষয়ে কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে লোকমুখে শুনেছি, তিনি এলাকায় এসেছিলেন। শুনেতো আর কোন ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না।’   

 

 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

তানভীর ইমামের বাড়ি ভেবে গুলশানের একটি বাসায় মধ্যরাতে শতাধিক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ, তছনছ

৬ জ্যান্ত হাতি নিয়ে রাশিয়ায় মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান, উচ্ছ্বসিত পুতিন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত