Ajker Patrika

টাকা নিয়ে নকল করতে দেন মাদ্রাসাশিক্ষক, সংবাদ না করতে উৎকোচের প্রলোভন

মো. রিয়াদ হোসাইন, কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২০: ৫৯
টাকা নিয়ে নকল করতে দেন মাদ্রাসাশিক্ষক, সংবাদ না করতে উৎকোচের প্রলোভন

গাজীপুরের কালীগঞ্জে চলমান এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষাকেন্দ্রে অর্থের বিনিময়ে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক মাদ্রাসাশিক্ষকের বিরুদ্ধে। পরে ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে ওই শিক্ষককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সাংবাদিককে সংবাদ না করার শর্তে অর্থের প্রলোভন দেন অভিযুক্ত ওই শিক্ষক।

গত বৃহস্পতিবার মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে গণিত পরীক্ষা চলাকালীন দুর্বাটি এম ইউ কামিল মাদ্রাসায় এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ওই কেন্দ্রের হল সুপার মো. মোতাহার হোসেন।

অভিযুক্ত শিক্ষক হলেন উপজেলার সাইলদিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক মো. আতিক মোল্ল্যা। আজ সোমবার তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সাক্ষী-প্রমাণ কিছু নাই, রিপোর্ট কইরা কী হইব? দেখা কইরেন কিছু দিয়া দিমুনে। লেখালেখি কইরা কিচ্ছু অইতনা। তার থেকে ভালো কিছু নেন আর চুপ থাকেন।’

কেন্দ্র সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দুর্বাটি এম ইউ কামিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে একজন শিক্ষক পরীক্ষার কক্ষে পরীক্ষার্থীদের বিশেষ সুবিধা দেবেন বলে তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন অঙ্কের অর্থ দাবি করেন। পরে পরীক্ষার্থীরা সেই টাকা পরিশোধ করলে ওই শিক্ষক তাদের মধ্যে কয়েকজনকে নকল সাপ্লাই করেন। যারা নকল পায়নি তারা এ নিয়ে কেন্দ্রে হট্টগোল বাধালে বিষয়টি কেন্দ্রে জানাজানি হয়ে যায়। পরিস্থিতি ভয়ানক আকার ধারণ করলে কেন্দ্রের সহকারী হল সুপার মো. নজরুল ইসলামের মধ্যস্থতায় অভিযুক্ত ওই শিক্ষক পরীক্ষার্থীদের টাকা ফিরিয়ে দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

এ ঘটনার বিষয়ে কেন্দ্রের সহকারী হল সুপার মো. নজরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি এই ব্যাপারে কিছুই বলতে পারব না। আপনার যা কিছু বলার বা জানার, কেন্দ্রের প্রধান সুপারের সাথে কথা বলেন।’

কেন্দ্র সুপার মো. মোতাহার হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি অন্য একটি রুমে পরীক্ষার জন্য কাজে ব্যস্ত ছিলাম। পরীক্ষা শেষে আমি বিষয়টি জানতে পারি। পরে সময় কম বিধায় ওই দিন আর কিছু বলিনি। তবে বিষয়টি কেন্দ্র সচিবকে জানিয়েছি।’

কেন্দ্র সুপার আরও বলেন, ‘আজকে ওই রুমের কয়েকজন ছাত্রকে ডেকে এনে তাদের আর্থিক লেনদেনের কথা জিজ্ঞেস করি। তাদের মধ্যে একজন ছাত্র ঘটনার কথা স্বীকার করেছে। আমি ছাত্রদের পরামর্শ দিয়েছি, তারা যেন লিখিত অভিযোগ করে। আমরা ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আপাতত তাকে পরীক্ষার কেন্দ্র থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।’

ওই কেন্দ্রের একজন পরীক্ষক মো. মহসীন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি আতিক স্যারের সঙ্গে এক রুমে পরীক্ষা নেওয়ার দায়িত্বে ছিলাম। আমি আমার নিজ দায়িত্ব পালনে মনোযোগী ছিলাম। পরীক্ষা শেষে কিছু ছাত্র এসে আতিক স্যারকে ধরলে, পরিস্থিতি ভিন্নরূপ ধারণ করে। পরে দেখলাম তিনি পকেট থেকে বের করে ছাত্রদের টাকা দিচ্ছেন। এর বাইরে কিছু জানি না।’

এ বিষয়ে কেন্দ্রসচিব ও দুর্বাটি এম ইউ কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা রুহুল আমিন আজাদী ঘটনার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার কেন্দ্রে এমন কিছুই হয়নি। পরীক্ষা ভালো হচ্ছে।’ বলে তিনি ফোন কেটে দেন।

অভিযুক্ত শিক্ষক মো. আতিক মোল্ল্যা এসব অভিযোগ প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে স্বীকার করে বলেন, ‘প্রত্যেকটা কেন্দ্রেই কিছু না কিছু সমস্যা থাকে। এগুলা ধরে পারা যাবে না।’

পরে ভুক্তভোগী পরীক্ষার্থীর স্বীকারোক্তির কথা জানালে তিনি আজকের পত্রিকার সাংবাদিককে অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে বলেন, ‘এই সব লিখে কিছুই হবে না। আমার সাথে দেখা করেন কিছু নিয়ে যান এবং চুপ থাকেন। এগুলো সব সময়ই হয়ে থাকে। এটা কোনো বিষয় না।’

এ ব্যাপারে কেন্দ্র তত্ত্বাবধায়ক ও উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এই বিষয়ে আমাকে কেউ কিছুই জানায়নি। আমি আপনার কাছ থেকেই শুনলাম। ইতিমধ্যে বিভিন্ন অনিয়মের জেরে ছয়জন শিক্ষককে বরখাস্তও করেছি। আমি জানতে পারলে ওই দিনই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতাম।’

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আজিজুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার থেকে লুকানো হয়েছে, ঘটনাটি আমি জানতাম না। আমি জেনে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এক ছাতায় সব নাগরিক সেবা

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

তানভীর ইমামের বাড়ি ভেবে গুলশানের একটি বাসায় মধ্যরাতে শতাধিক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ, তছনছ

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত