Ajker Patrika

ভূমধ্যসাগরে নৌকা ডুবে ২ বাংলাদেশি যুবকের মৃত্যু

মাদারীপুর প্রতিনিধি
ভূমধ্যসাগরে নৌকা ডুবে ২ বাংলাদেশি যুবকের মৃত্যু

অবৈধভাবে নৌকায় ইতালী যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে ডুবে মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার খালিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামের দুই যুবক মারা গেছেন। 

আজ শুক্রবার দুপুরে দুই যুবক মারা যাওয়ার খবর পেয়ে পরিবারে চলছে শোক ও আহাজারি। 

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৪ জানুয়ারি মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার খালিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামের ইউসুফ আলী শেখের ছেলে মামুন শেখ (২০) ও একই ইউনিয়নের সেনদিয়া গ্রামের সুনীল বৈরাগীর ছেলে সজল বৈরাগী (২৫) দালালদের মাধ্যমে অবৈধভাবে ইতালীর উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হন। পরে তারা লিবিয়াতে অবস্থান করেন। 

এরপর দালালের মাধ্যমে গত ১৪ ফেব্রয়ারি লিবিয়া থেকে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় তারা ইতালীর উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন। ৩২ জন ধারণ ক্ষমতার নৌকায় ৫২ জন অভিবাসন প্রত্যাশী ইতালীর উদ্দেশে জন্য রওনা দেন। পথে তিউনিসিয়ার ভূমধ্যসাগরে নৌকার ইঞ্জিন ফেটে যায়। এতে মামুন ও সজলসহ বেশ কয়েকজন মারা যান। পরে খবর পেয়ে বেশ কয়েকজনকে জীবিত উদ্ধার করে সে দেশের কোস্টগার্ড। 

এদিকে এই খবর দেশে আসলে পরিবারে চলছে শোকের মাতম। আশে-পাশের লোকজনও একটু শান্ত্বনা দিতে নিহতদের বাড়িতে ভির করছে। 

নিহত মামুন শেখের বড় ভাই সজিব শেখ বলেন, ‘মানবপাচারকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার রাঘদী ইউনিয়নের সুন্দরদী গ্রামের বাদশা কাজীর ছেলে মোশারফ কাজী। দালাল মোশারফ কাজী প্রলোভন দেখিয়ে প্রত্যেকের কাছ থেকে ১৩ থেকে ১৫ লাখ টাকা করে নেয়। পরে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় লিবিয়া থেকে ইতালীর উদ্দেশে পাঠালে এই দুর্ঘটনা ঘটে। সরকারিভাবে তাদের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানান। পাশাপাশি দালাল মোশারফ কাজীর শাস্তির দাবি করছি। যাতে করে আর কোনো পরিবারে এমন ঘটনা না ঘটে।’
 
অপর নিহত সজল বৈরাগীর বাবা সুনীল বৈরাগী বলেন, ‘নৌকায় ডুবে প্রাণে বেঁচে যাওয়া আমার ছেলের সঙ্গে থাকা একজন আজ (শুক্রবার) মোবাইলে ফোন করে মামুন ও আমার ছেলে সজলের মারা যাওয়ার ঘটনাটি নিশ্চিত করেছেন। জমি, গরু বিক্রি করে, লোন করে ১৫ লাখ টাকা দিয়ে ছেলেকে ইতালি যাওয়ার জন্য পাঠাই। কিন্তু আমাদের সেই স্বপ্ন সত্যি হলো না। সব স্বপ্ন সাগরে শেষ হয়ে গেলো। আমার একেবারে পথে বসে গেছি। এখন আমরা কি করবো। আমার ছেলে গেল, সঙ্গে আমাদের সব শেষ হয়ে গেল। এই ঘটনায় আমরা দালাল মোশারফ কাজীর কঠিন বিচার চাই।’ 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই গ্রামের একজন যুবক বলেন, ‘দালাল মোশারফ কাজী দীর্ঘদিন ধরে লিবিয়ায় বসবাস করছেন। লিবিয়া থেকে মোবাইলের মাধ্যমে মোশারফ কাজী যোগাযোগ করেন আর দেশে বসে তার ছেলে মো. যুবরাজ কাজী ইতালী পাঠানোর জন্য যুবকদের সঙ্গে নানা প্রলোভন দেখিয়ে উদ্বদ্ধু করেন। এই অবৈধভাবে ইতালী যাওয়া বন্ধ না হলে, আরও অনেক যুবকের প্রাণ অকালেই চলে যাবে। মাদারীপুরে প্রতিনিয়তনেই এমন ঘটনা ঘটলেও, যেন কিছুতেই থামছেনা অবৈধ পথে ইতালীযাত্রা। 

অভিযুক্ত দালাল মোশারফ কাজী লিবিয়া থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এ ছাড়াও তার ছেলে যুবরাজ কাজীর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। তাই বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। 

রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান হাওলাদার বলেন, ‘এই ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত