সেই মইদুল ‘১৩টি নয় ২৪টি’ বিয়ে করেছেন

ঘিওর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২: ১১
আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২: ২৭

মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার চরকাটারী ইউনিয়নের বোর্ডঘর বাজার গ্রামের বাসিন্দা মো. মহিদুল ইসলাম মইদুল (২৭)। ২০১৬ সালে নৌবাহিনীতে অফিস সহায়ক পদে চাকরি হয় তাঁর। দুই বছরের মাথায় শৃঙ্খলা ভঙ্গসহ বিভিন্ন অভিযোগে হন চাকরিচ্যুত। এরপর শুরু করেন প্রতারণা। নিজেকে নৌবাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে বিয়ে করেন ২৪টি। হাতিয়ে নেন অর্ধকোটি টাকা। এক স্ত্রীর অভিযোগে সম্প্রতি মইদুলকে গ্রেপ্তার করে ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ। তারপর মইদুলের ১৩টি বিয়ের কথা প্রকাশ্যে আসে। তবে এখন পুলিশের তদন্তে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, মইদুল বিয়ে করেছেন ২৪টি।

মইদুলের বিরুদ্ধে ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত রোববার সন্ধ্যায় মানিকগঞ্জের দৌলতপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন প্রথম স্ত্রী শারমিন আক্তার।  

মইদুলের ২৪ বিয়ে ও তাঁর প্রথম স্ত্রীর অভিযোগের বিষয়টি জানিয়েছেন দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন কুমার আদিত্য। 

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এর আগে ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার এক তরুণী ও তাঁর স্বজনেরা মইদুলের প্রতারণার বিষয়ে অভিযোগ দিলে ৯ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের চন্দ্রা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁকে আটক করে পুলিশ। 

মহিদুল ইসলামের গ্রেপ্তারের খবর শুনে ময়মনসিংহ জেলা পুলিশের কাছে তাঁর ছয় স্ত্রী উপস্থিত হন। প্রত্যেকেই টাকা উদ্ধার ও মহিদুল ইসলামের বিচার দাবি করেন। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েদের সাজানো ঘটকের মাধ্যমে বিয়ের প্রস্তাব পাঠানো এবং নিজেদের নৌবাহিনীর সদস্য হিসেবে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে বিয়ের মাধ্যমে এসব পরিবারের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিলেন মইদুল।

প্রথম স্ত্রী শারমিন আক্তারের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালে ১৮ বছর বয়সে মইদুল পারিবারিকভাবে বিয়ে করেন বাড়ির পাশের মজনু শেখের মেয়ে শারমিন আক্তারকে। বিয়ের সময় সরকারি চাকরিতে যোগদানের জন্য টাকা লাগবে বলে শ্বশুর মজনু শেখের কাছ থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা ধার নেন। এরপর ২০১৮ সালে অন্য একটি মেয়ের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের জেরে ঝামেলা থেকে রেহাই পেতে শ্বশুরের কাছ থেকে আবার সাত লাখ টাকা ধার নিয়ে সেখানে জরিমানা দেন। কিন্তু শ্বশুরের টাকা ফেরত দেননি মইদুল ও তাঁর বাবা মোহাম্মদ আলী। প্রথম স্ত্রীর ঘরে ২ বছরের একটি ছেলেসন্তান আছে মইদুলের। কিন্তু গত দুই বছর ধরে তাঁদের কোনো খোঁজখবর রাখেননি। ভরণ-পোষণও দেন না। 

মানিকগঞ্জের দৌলতপুর থানার পুলিশ এবং পরিবারের সদস্যরা খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারেন, মইদুল মোট বিয়ে করেছেন ২৪টি। নিজেকে নৌবাহিনীতে চাকরিজীবী পরিচয় দিয়ে প্রতারণার পেশায় কামিয়েছেন অর্ধকোটি টাকা। কাউকে কাবিনে, কাউকে শুধু কলেমা পড়েই বিয়ে করেন তিনি। 

শারমিন আক্তার বলেন, ‘আমি তাঁর প্রথম স্ত্রী। সে যে এতগুলো বিয়ে করেছে, আমি জানতাম না। পুলিশ গ্রেপ্তারের পর জেনেছি, সে ২৪টি বিয়ে করেছে। আমি আমার সন্তান নিয়ে চলতে পারছি না। সে আমার সঙ্গে প্রতারণা করে এতগুলো বিয়ে করেছে। এর উচিত বিচার চাই। আমার বাবার ধার দেওয়া টাকা ফেরত চাই।’

মইদুলের বাবা মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘ও (মইদুল) আমার সন্তান না। এমন সন্তান থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো। ওকে ত্যাজ্যপুত্র করেছি।’  তবে তিনি শারমিনকে পারিবারিকভাবে বিয়ে করানোর কথা স্বীকার করেন। টাকার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে জানান, এটা মইদুল নিয়েছে, তিনি নন।

দৌলতপুর থানার ওসি সুমন কুমার আদিত্য বলেন, ‘মইদুলের প্রথম স্ত্রীর অভিযোগ পেয়েছি। ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত থেকে প্রাথমিকভাবে জেনেছি, তিনি মানিকগঞ্জ জেলায় তিনটি, টাঙ্গাইলে তিনটি, কিশোরগঞ্জে একটি এবং ময়মনসিংহে ছয়টিসহ আরও কয়েকটি জেলা মিলিয়ে ২৪টির মতো বিয়ে করেছেন। এদের মধ্যে এক প্রতিবন্ধী নারীও রয়েছেন। কৌশলে হাতিয়ে নেন ৫০ লাখ টাকা।  তদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

উল্লেখ্য, চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের ৯ তারিখ শুক্রবার রাতে গাজীপুরের চন্দ্রা এলাকায় অভিযান চালিয়ে মইদুলকে গ্রেপ্তার করে ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ। ১০ ফেব্রুয়ারি সংবাদ সম্মেলনে ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপার মাসুম আহমেদ ভুঁঞা গণমাধ্যমকে বিষয়টি জানালে মইদুলের এই বহুবিবাহের কথা প্রকাশ্যে আসে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত