Ajker Patrika

বাইচ্চ্যা থাইক্ক্যাও মনে অইতাছে মইরা গেছি: ট্রেনে ধর্ষণের শিকার কিশোরীর বাবা

মহিউদ্দিন রানা, ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) 
আপডেট : ২০ জানুয়ারি ২০২৪, ২২: ৪০
বাইচ্চ্যা থাইক্ক্যাও মনে অইতাছে মইরা গেছি: ট্রেনে ধর্ষণের শিকার কিশোরীর বাবা

‘কয়ডা দিন ধইরা নাওয়া-খাওয়া নাই, ঘুম নাই, বাইচ্চ্যা থাইক্ক্যাও মনে অইতাছে মইরা গেছি। আল্লায় আমারে যে কী কঠিন পরীক্ষাত ফালছে! সারা দিন এ-হে কল দেয়, জিগায়। মুখ দিয়া কথা আইয়ে না আমার। মান-ইজ্জত তো যা যাওনের সব গেছেগা। অহন হুনতাছি পত্র-পত্রিকাতও নাহি লেহালেহি অইতাছে। বাড়িত গিয়া মাইনষেরে এই মুখ কিবা দেহাইয়াম? কতোজনে কতো কথা জিগাইবো, পরে শরমে তো মরণ ছাড়া গতি থাকতো না। এর লাইগ্যা যেই কয়ডাদিন বাইচ্চ্যা আছি দূরাহিই পইড়া থাকবাম।’ 

মোবাইল ফোনে আজকের পত্রিকাকে এভাবেই কথাগুলো বলেন ভুল করে অন্য ট্রেনে ওঠে ধর্ষণের শিকার হওয়া কিশোরীর বাবা। ওই কিশোরীর বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের একটি গ্রামে। গত বুধবার সকালে চলন্ত অবস্থায় লালমনিরহাটগামী লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনে ধর্ষণের এ ঘটনা ঘটে। 

কিশোরীর বাবার ভাষ্যমতে, ধর্ষণের শিকার কিশোরীটি একেবারে সাদাসিধে প্রকৃতির ছিল। গত মঙ্গলবার দুপুরে বাসা থেকে কাউকে কিছু না বলেই বাড়ির উদ্দেশে বের হয় তাঁর মেয়ে। পরে ওই দিন রাতভর কোনো খোঁজখবর না পেয়ে বুধবার সকালে এ দুঃসংবাদটি পান তিনি।

ধর্ষণের শিকার কিশোরীর বাবা আজকের পত্রিকাকে জানান, ২০২১ সালে একটি হত্যা মামলার ঘটনায় পরপর দুটি মিথ্যা মামলা হয় তাঁর নামে। একটি মামলা করেন নিহতের স্ত্রী, অপরটি নিহতের মেয়ে। মা-মেয়ের করা মামলায় আট মাস জেল খেটে ঘরের ভিটেমাটি ছাড়া সব সহায়সম্বল বিক্রি করে উচ্চ আদালত থেকে জামিনে বের হন। এরপর দুই ছেলে এবং ছোট মেয়েকে (ধর্ষণের শিকার) বাড়িতে রেখে, বড় মেয়ে এবং স্ত্রীকে নিয়ে কাজের সন্ধানে চলে আসেন গাজীপুরের জয়দেবপুরে।

কিশোরীর বাবা জানান, সেখানে বড় মেয়ে একটি জুতার কারখানায়, স্ত্রী গৃহপরিচারিকা এবং নিজে দিনমজুরের কাজ শুরু করেন। ছোট মেয়ে তখন বাড়ির পাশেই স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত। কিছুদিন পর তাকেও নিজের কাছে নিয়ে আসেন। এরপর মহিলা মাদ্রাসায় ভর্তি করালেও খুব বেশি দিন পড়াশোনা করেনি। সারা দিন বাসায় থাকত সে। অন্যদিকে বাড়িতে থাকা দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে স্থানীয় স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী এবং ছোট ছেলে বাক্‌প্রতিবন্ধী। 

আজ শনিবার সরেজমিন ভুক্তভোগী কিশোরীর বাড়িতে গিয়ে বাক্‌প্রতিবন্ধী ছোট ভাইকে এবং তাঁর এক চাচাকে পাওয়া যায়। কথা হলে আজকের পত্রিকাকে ভুক্তভোগী কিশোরীর চাচা বলেন, ‘আমার ভাইয়ের কপালই খারাপ। মিথ্যা মামলায় পইড়া গরু-বাছুর, জায়গা-জমি বেইচ্চ্যা দেশছাড়া অইছে। অহন যে ঘটনা ঘটছে, বাড়িতে কেমনে আইবো কইন?’ এ ঘটনায় অভিযুক্তের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান কিশোরীর চাচা। 

এদিকে এ ঘটনার খবর শোনার পর থেকে স্তব্ধ ওই গ্রামের মানুষ। সরেজমিন কথা হলে একাধিক ব্যক্তি বলেন, ‘মেয়েটির পরিবার খুবই অসহায়। এ ধরনের ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, আমরা ওই অভিযুক্তের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’ 

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে গাজীপুরের জয়দেবপুর রেলস্টেশন থেকে ময়মনসিংহের ট্রেনে না ওঠে ভুলবশত লালমনিরহাটগামী লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনে ওঠে পড়ে ওই কিশোরী (১৩)। টিকিট চেকিংয়ের সময় ওই কিশোরীর টিকিট না পাওয়ায় ট্রেনের অ্যাটেনডেন্ট আক্কাছ গাজী (৩২) তাকে একটি ফাঁকা কেবিনে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেন।’ 

এরপর কিশোরীর চিৎকারে কর্তব্যরত পুলিশ তাকে উদ্ধার করে এবং অ্যাটেনডেন্ট আক্কাছ গাজীকে হাতেনাতে আটক করেন। তারপর রেলওয়ে থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) রুহুল আমিন বাদী হয়ে আক্কাছের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলার পর আক্কাছ গাজীকে কারাগারে পাঠানো হয়। এদিকে এ ঘটনায় বুধবারই আক্কাছ গাজীকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ ছাড়া আক্কাছ গাজীর বিরুদ্ধে গত বৃহস্পতিবার বিভাগীয় মামলাও করেন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মাসুদ আহমেদের সব পদ স্থগিত

টিআইএন নেওয়ার পরে কিন্তু ঘুমাইতে পারবেন না: এনবিআর চেয়ারম্যান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত