শেরপুরে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন গ্রাম, ৩ জনের মৃত্যুর খবর

শেরপুর ও নালিতাবাড়ী প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ১২: ১৩
আপডেট : ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ১২: ৪৯

তিন দিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলার নতুন নতুন গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতী উপজেলা সদরের পানি কিছুটা নেমে গেলেও নিম্নাঞ্চলের অন্তত দেড় শ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমন আবাদ, মাছের ঘের ও সবজি আবাদ। পানিবন্দী হয়ে আছে কয়েক হাজার পরিবার। 

এদিকে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পাহাড়ি ঢলে নালিতাবাড়ীতে এক বৃদ্ধ ও নারীর মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ হয়েছেন আরও তিনজন। এ ছাড়া ঝিনাইগাতীতে পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে উজান থেকে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর এক ব্যক্তির লাশ ভেসে এসেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। 

নালিতাবাড়ীতে নিহত দুজন হলেন বাঘবেড় গ্রামের মানিক মিয়ার স্ত্রী ওমিজা খাতুন (৪৫) এবং আন্ধারুপাড়া গ্রামের ইদ্রিস মিয়া (৮০)। এ ছাড়া উপজেলার  নন্নী অভয়পুর গ্রামের বছির উদ্দীনের দুই ছেলে আবু হাতেম (৩০) ও আলমগীর (১৭)  এবং বাতকু‌চি গ্রামের মৃত আব্দুল হাকিমের স্ত্রী জহুরা খাতুন (৪৫) নিখোঁজ রয়েছেন।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে উপজেলার নয়াবিল ইউনিয়নের আন্ধারুপাড়া গ্রামে ঢলের পানিতে ডুবে থাকা সড়ক পার হওয়ার সময়  ডুবে যান ইদ্রিস মিয়া। পরে স্থানীয়রা খোঁজাখুঁজির পর তাঁর লাশ উদ্ধার করে। এদিকে ঢলের পানি থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ রয়েছেন উপজেলার বাতকুচি গ্রামের জহুরা খাতুন ও নন্নী অভয়পুর গ্রামের সহোদর দুই ভাই আবু হাতেম ও আলমগীর।

নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছানোয়ার হোসেন বলেন, ঢলের পানিতে ডুবে এক বৃদ্ধ ও এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন। তাঁদের সন্ধান পেতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

ঝিনাইগাতী উপজেলার মহারশি এবং নালিতাবাড়ীর ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর অন্তত ১০ জায়গায় বাঁধ ভেঙে ও নদীর পাড় উপচে প্লাবিত হওয়া গ্রামগুলোর বিভিন্ন রাস্তাঘাট ও আবাদ তলিয়ে গেছে। জেলার অন্তত ২৫ হাজার হেক্টর আমন আবাদ এবং ১ হাজার হেক্টর সবজির আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি কার্যালয়। এতে অন্তত ৬৫ হাজার ৪০০ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। 

নালিতাবাড়ী উপজেলার ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর বাঁধ ভেঙে ও নদীর পাড় উপচে পানি যাওয়ায় রামচন্দ্রকুড়া, কাকরকান্দি, নন্নী, পোড়াগাঁও, নয়াবিল, বাঘবেড়, কলসপাড়, মরিচপুরান, যোগানিয়া, রাজনগরসহ ১০টি ইউনিয়ন ও পৌর শহরের তিনটি স্থানে বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এতে উপজেলার প্রায় ৬০০ পুকুর ও ১০ হাজার হেক্টর আমন আবাদ তলিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে কৃষি ও মৎস্য অফিস। 

এদিকে জেলার সব সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করেছে প্রশাসন। গতকাল বিকেল থেকে বন্যাকবলিত বেশ কিছু এলাকায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতী উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় রাতভর পানিবন্দী মানুষদের উদ্ধারের চেষ্টা করেছেন স্বেচ্ছাসেবীরা। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরাও উদ্ধারকাজ পরিচালনা করেন। 

পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকাস্বেচ্ছাসেবী সারোয়ার হোসেন বলেন, ‘গতকাল বিকেল থেকে আমরা শুকনো খাবার বিতরণ করেছি এবং সন্ধ্যার পর থেকেই উদ্ধারকাজ চালিয়েছি। অনেক মানুষ এখনো পানিবন্দী। কিন্তু উদ্ধারের সরঞ্জাম না থাকায় আমরা কাজ করতে পারছি না।’

নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসুদ রানা বলেন, ‘অবিরাম বৃষ্টি ও ঢলের পানিতে কয়েকটি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। তাদের সরিয়ে আনা হচ্ছে। তবে আমাদের কাছে পর্যাপ্ত উদ্ধার সরঞ্জাম নেই। আজ সকাল থেকে সেনাবাহিনী উদ্ধারকাজে সহযোগিতা করছে। আমাদের সংগ্রহে পর্যাপ্ত শুকনো খাবার রয়েছে। পানিবন্দী পরিবারগুলোকে তা সরবরাহ করা হচ্ছে।’ 

শেরপুরের নদীগুলোর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে অনেক গ্রাম। ছবি: আজকের পত্রিকাশেরপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘শেরপুরে পাহাড়ি ঢলের পানিতে হাজার হাজার মানুষ আটকা পড়েছে। আটকে পড়া মানুষকে উদ্ধারে নৌকা নিয়ে আসা হচ্ছে। বন্যাকবলিত মানুষের জন্য শুকনো খাবার রেডি করা হচ্ছে। রাতের মধ্যেই সেগুলো পৌঁছে দেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত