৮ বছরেও খোঁজ মেলেনি ইসমাইলের, ফেরার অপেক্ষায় স্বজনেরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
প্রকাশ : ০৯ আগস্ট ২০২৪, ১৬: ০৪
আপডেট : ০৯ আগস্ট ২০২৪, ১৭: ২৩

নিজের দোকানে যাওয়ার জন্য মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন ৩০ বছরের যুবক ইসমাইল হোসেন। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা সদর ডাইংপাড়া মোড়ে পৌঁছালে তাঁকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যায়। তিনদিন পর  ইসমাইল অন্য এক মোবাইল নম্বর থেকে কল করে পরিবারকে জানান তিনি একটি বাহিনীর হেফাজতে আছেন। তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু আট বছরেও ফেরেননি ইসমাইল। 

জুয়েলারি ব্যবসায়ী ইসমাইলের বাড়ি গোদাগাড়ী পৌরসভার মহিষালবাড়ি আলীপুর মহল্লায়। তাঁর বাবার নাম ইসরাইল হক। স্বজনেরা এখনো তাঁর ফেরার পথ চেয়ে আছেন। সরকার পতনের পর কথিত আয়নাঘর থেকে কয়েকজন বন্দী ফিরে আসার পর স্বজনদের আশা আরও বেড়েছে। ইসমাইলের ছোট ভাই ইউসুফ আলী কয়েক দিন ধরে ওই আয়নাঘরের সামনে অবস্থান করছেন ভাইকে ফিরে পেতে।

তাঁকে ফিরে পেতে অপেক্ষমাণ বৃদ্ধ বাবা ইসরাইল হক, বৃদ্ধা মা মোমেনা বেগম ও স্ত্রী নাইস খাতুন। বাবার চেহারা মনে করতে না পারা ৮ বছরের ছেলে সিফাত আর ১৩ বছরের কিশোর রিফাতও রয়েছে অপেক্ষায়। কয়েক দিন ধরে তারা শুধু চোখের পানি ফেলছে। 

পরিবারের সদস্যরা জানান, ২০১৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যার আগে দোকানে যাওয়ার জন্য মোটরসাইকেল নিয়ে বের হন ইসমাইল। উপজেলা সদর ডাইংপাড়া মোড়ে সাদাপোশাকে থাকা একদল লোক তাঁকে থামিয়ে নিজেদের গাড়িতে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেন। ইসমাইল হোসেন তখন চিৎকার শুরু করলে আশপাশের লোকজন এগিয়ে যান। তাঁরা ওই ব্যক্তিদের চ্যালেঞ্জ করেন। তখন তাঁরা নিজেদের একটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয় দেন। তাঁরা পরিচয়পত্র দেখিয়ে ইসমাইলকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যান।

এর তিন দিন পর ১২ সেপ্টেম্বর ইসমাইল হোসেন অন্য একটি মোবাইল নম্বর থেকে কল করেন। তিনি জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাঁকে নিয়ে এসেছেন। রাজশাহীর কোথায় এবং কোন অফিসে তিনি অবস্থান করছেন, সেটিও জানিয়েছিলেন। পরে পরিবারের সদস্যরা সেখানে যান। এ সময় বাহিনীটির পক্ষ থেকে ইসমাইলের স্বজনদের জানানো হয়, ইসমাইলকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু এখনো ইসমাইল আসেননি। ইসমাইলকে তুলে নেওয়ার পরদিন গোদাগাড়ী থানায় ছেলে নিখোঁজ বলে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন বাবা ইসরাইল হক। কিন্তু পুলিশও কখনো ইসমাইলকে উদ্ধারে উদ্যোগী হয়নি। 

বৃদ্ধ ইসরাইল হক বলেন, ‘আমার ছেলেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার তিন দিন পর সে ফোন করেছিল। সে কোথায় আছে জানিয়েছিল। আমরা সেখানে গেলে জানানো হয়েছিল, তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত ছাড়া হয়নি। সে বেঁচে আছে নাকি মেরে ফেলা হয়েছে, আমরা সেটাও জানি না।’ 

দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন স্থান থেকে গুম হওয়া লোকেরা ফিরে আসছে। তাদের আত্মীয়দের মুখে হাসি ফুটছে। আমার ইসমাইল ফিরবে কবে? আমি কি জীবনের শেষ সময়টাও ছেলের জন্য কেঁদেই যাব? আমার ইসমাইল কি আর ফিরবে না কখনো?’ 

ঢাকায় আয়নাঘরের সামনে কয়েক দিন ধরে অবস্থান করছেন ইসমাইল হোসেনের ছোট ভাই ইউসুফ আলী। তিনি বলেন, ‘আট-দশ বছর পর যখন গুম হওয়া অন্যরা ফিরছে, তাহলে আমার ভাইও ফিরে আসবে—এই আশায় ঢাকায় এসেছি। আয়নাঘর হয়তো দেশের সব জেলাতেই আছে। কোথায় কোথায় এই আয়নাঘর আছে, সেখানে কারা এখনো গুম হয়ে আছে—তা খুঁজে বের করা হোক। আমরা আশায় আছি, আমার ভাইও এসে মায়ের বুকে ফিরে যাবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত