উপজেলা পরিষদ নির্বাচন: সিংড়ায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তাঁর ভাইসহ তিনজনকে অপহরণ

নাটোর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৫ এপ্রিল ২০২৪, ২০: ২৮

নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনসহ তিনজনকে দুই দফায় অপহরণের অভিযোগ উঠেছে ডাক, টেলিযোগাযোগ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক লুৎফুল হাবিব রুবেল ও তাঁর কর্মীদের বিরুদ্ধে। অপহরণের কাজে সিংড়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি হাসান ইমাম ও সাধারণ সম্পাদক মোহন আলী সহযোগিতা করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

আজ সোমবার সকালে ও বিকেলে নাটোর আদালত চত্বরের অদূরে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের গেট থেকে দুই দফায় প্রার্থী দেলোয়ার ও তাঁর ভাইদের তুলে নেওয়া হয়।

তবে লুৎফুল হাবিব রুবেল দাবি করেছেন, তিনি নির্বাচনের জন্য কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন। তিনি কাউকে তুলে নেওয়ার ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন।

সিংড়া থানা-পুলিশ ও ভুক্তভোগীদের পরিবার সূত্রে জানা যায়, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন প্রতিমন্ত্রী পলকের শ্যালক লুৎফুল হাবিব রুবেল। গতকাল রোববার পর্যন্ত তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে কেউ মনোনয়নপত্র দাখিল করেননি। আজ সোমবার সকালে অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিলের জন্য দেলোয়ার নাটোর শহরে যান। এ সময় তাঁর বড় ভাই ও কলম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক এবং কলম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মুন্সি ব্যাংকে জামানতের টাকা জমা দেওয়ার জন্য তাঁকে শহরে রেখে বের হন। তাঁরা কোড নম্বর জানার জন্য নাটোর জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের সামনে গেলে কালো মাইক্রোবাসে করে কয়েকজন যুবক তাঁদের পথরোধ করেন। একপর্যায়ে তাঁদের জোর করে ওই মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায় তারা। এরপর থেকে তাঁদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে তাদের অনেক খোঁজাখুঁজি করেও না পাওয়ায় জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে কল দিয়ে ঘটনাটি জানান প্রার্থী দেলোয়ার।

এরপর বিকেলে দেলোয়ার তাঁর আরেক ভাইকে সঙ্গে নিয়ে জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে যান মনোনয়নপত্রের প্রতিলিপি জমা দিতে। বিকেল চারটার পরপরই একই মাইক্রোবাসে করে দুর্বৃত্তরা জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে আসে এবং তাঁরা প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে কিলঘুষি মারতে মারতে জোর করে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় সাংবাদিক এস এম কামাল হোসেন জানান, তিনি মনোনয়ন জমাদানের খবর সংগ্রহে নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে যান। এ সময় তিনি দেখেন সিংড়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহন আলীসহ কয়েকজন যুবক দেলোয়ারকে মারতে মারতে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাচ্ছেন। ঘটনাটি ডিসি অফিস ও কোর্ট এলাকা সংলগ্ন হওয়ায় অনেক মানুষই তা দেখেছেন।

তবে অভিযুক্ত উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি হাসান ইমাম জানান, তার সংগঠনের কেউ কাউকে অপহরণের সঙ্গে জড়িত নন। তিনি নিখোঁজ দুই আওয়ামী লীগ নেতাকে সকালে মাইক্রোবাসে করে তাঁদের বাড়ি পাঠিয়েছেন।

এ বিষয়ে সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম বলেন, ‘সকালে অপহৃত দুজনকে মাইক্রোবাসে করে ঘোরানো হচ্ছে। আমরা তাঁদের অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছি।’

নাটোর জেলা পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রার্থীকে তুলে নেওয়ার ঘটনা শুনেছি। ইতিমধ্যে কয়েক দলে বিভক্ত হয়ে পুলিশ দুর্বৃত্তদের আটক করার জন্য ও অপহৃত দেলোয়ারকে উদ্ধারের জন্য তৎপরতা শুরু করেছে।’

এ বিষয়ে নাটোর জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভূঞা জানান, তিনি পুলিশ সুপারকে বিভিন্ন স্থানে চৌকি বসিয়ে ওই মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থীকে উদ্ধারে পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তদন্ত করে এ ঘটনার সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

এ দিকে অবশেষে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিসেবে দেলোয়ার হোসেনের মনোনয়ন জমা হয়েছে। জেলা নির্বাচন অফিসার আব্দুল লতিফ শেখ বলেন, ‘প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনের মনোনয়ন সময়মতো জমা হয়েছে। তার তথ্য নির্বাচন কমিশনেও পাঠানো হয়েছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত