তিস্তায় অবৈধ বালু উত্তোলনের খাদে পড়ে শিশুর মৃত্যু 

লালমনিরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৩ মার্চ ২০২৩, ২০: ৪৪
আপডেট : ০৩ মার্চ ২০২৩, ২১: ২১

লালমনিরহাটের আদিতমারীতে তিস্তা নদীর বালু উত্তোলনের গভীর গর্তে পড়ে ফাহিম (৪) নামে এক শিশু মারা গেছে। আজ শুক্রবার উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের চৌরাহা এলাকায় দুপুর ১২টার দিকে শিশুটি নিখোঁজ হয়। পরে বিকেল সোয়া ৫টার দিকে রংপুর ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল লাশ উদ্ধার করে। 

ফাহিম মহিষখোচা এলাকার মঞ্জু মিয়ার ছেলে। 

এলাকাবাসী জানান, উপজেলার মহিষখোচা এলাকায় তিস্তা নদীর বাঁ তীর রক্ষা বেড়িবাঁধের কাজ চলমান। কাজের অংশ হিসেবে নদীতে ৫ ফুট গভীর করে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে ব্লক ফেলার কথা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় বেশ কিছু চক্র দিনে-রাতে ওই জায়গা থেকে অবৈধ মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করে। ফলে সেখানে গভীর খাদের সৃষ্টি হয়। শুষ্ক মৌসুমে তিস্তা ধু ধু বালচর হলেও নদীর ধারে বেড়িবাঁধের ওই স্থান থেকে বালু উত্তোলন করা হয়। এতে প্রায় ২৫-৩০ ফুট গভীর খাদের তৈরি হয়েছে বলে জানান এলাকাবাসী। 

আজ শুক্রবার দুপুরে নামাজের আগে ফাহিমসহ কয়েকটি শিশু ওই জায়গায় খেলতে গিয়ে গভীর খাদে পড়ে যায়। এলাকাবাসী খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেন। আদিতমারী উপজেলা ফায়ার সার্ভিসের একটি দল গিয়ে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে রংপুর থেকে ডুবুরি দল ডেকে পাঠায়। পরে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ডুবুরি দল এসে সোয়া ৫টার দিকে লাশ উদ্ধার করে। 

ফাহিমের বাবা মঞ্জু মিয়া বলেন, ‘বালু তুলে বিক্রি করায় সেখানে গভীরতা হয়। এতেই আমার সন্তান ডুবে যায়। আমি এর বিচার চাই।’ 

এলাকাবাসী এমদাদুল হক ও মতিন মিয়া অভিযোগ করেন, ‘ঠিকাদারের লোকের সহায়তায় দীর্ঘদিন বালু তোলায় এখানে গভীর হয়েছে। সেখানেই আজ শিশুটি পড়ে মারা গেল। বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’ 

এদিকে বেড়িবাঁধের জায়গায় এত গভীর খাদ হওয়ায় কীভাবে সেখানে বালুর বস্তা ও ব্লক ডাম্পিং হবে—সেটা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এ ছাড়া সেখানে কাউন্টিং ব্লক আগেই ফেলায় মান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসী। 

এ বিষয়ে ঠিকাদারের প্রতিনিধি নুরে আলম সিদ্দিকী বাবুকে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, ‘বেড়িবাঁধের জায়গায় ৫ ফুটের বেশি গভীর হওয়ার সুযোগ নেই। সেখানে শিশু মৃত্যুর বিষয়টি খোঁজ নিচ্ছি। বস্তা ডাম্পিংয়ের আগে ব্লক ফেলার বিষয়ে দ্রুত খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

এ বিষয়ে রংপুর ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ডুবুরি দলের টিম লিডার মিজান হোসেন বলেন, ‘নিখোঁজের খবর পেয়ে আমরা এখানে এসে নদী থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করেছি। পরে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত