Ajker Patrika

২০১৩ সালে সরকারি হওয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়টি যেভাবে দেশসেরা

সাদ্দাম হোসেন, ঠাকুরগাঁও
২০১৩ সালে সরকারি হওয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়টি যেভাবে দেশসেরা

গ্রামটিতে নেই কোনো আধুনিক সুযোগ-সুবিধা। যোগাযোগব্যবস্থাও ততটা উন্নত নয়। সীমান্তবর্তী প্রত্যন্ত এই গ্রামের নাম চরভিটা। গ্রামটিকে সারা দেশের কাছে পরিচিত করে তুলেছে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ের মিড ডে মিলে সফল হওয়ায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর সারা দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনুকরণ করতে পরিপত্র জারি করে।

ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার বকুয়া ইউনিয়নের চরভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এবার জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ নির্বাচিত হয়েছে। জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ-২০২৩ উপলক্ষে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক-২০২২-এর জন্য বিদ্যালয়টিকে নির্বাচিত করা হয়েছে।

গত সাত বছরে এই বিদ্যালয়ের ৩১৫ জন শিক্ষার্থী পিইসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে শতভাগ পাস করেছে। এর মধ্যে প্রথম বিভাগ ও জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪০ জন। ২০১৯ সালে রংপুর বিভাগীয় পর্যায়ে হয়েছে সেরা।

এলাকাবাসী ও বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এরফান আলী ২০০১ সালে গ্রামাঞ্চলে শিক্ষার হার বাড়াতে নিজের ৩৩ শতক জমিতে গড়ে তুলেছেন এ প্রাথমিক বিদ্যালয়। ২০১১ সালে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ থেকে পাঠদানের অনুমতি পায় বিদ্যালয়টি। এরপর পাসের হার ভালো হওয়ায় ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি সরকারিকরণ হয়।

বিদ্যালয়ের ভেতরটা সুন্দর করে সাজানোশিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার বৃদ্ধি ও পড়াশোনায় মনোযোগী করতে ২০১৪ সালে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সহযোগিতায় চালু করা হয় মিড ডে মিল বা দুপুরের খাবার। এতে বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার বেড়ে যায়। ২০১৬ সালে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সভায় এই বিদ্যালয়ের মিড ডে মিলের মডেলটি আলোচনায় আসে। এরপর অধিদপ্তর থেকে চিঠি দিয়ে দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়কে চরভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মিড ডে মিলের এই ধারণাকে অনুসরণ করতে বলা হয়।

আর ২০১৫ সালে বিনা খরচে চালু করা হয় সান্ধ্যকালীন বাড়তি ক্লাস। সৌর বিদ্যুতের আলোয় সন্ধ্যা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বিনা পয়সায় শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত ক্লাস করান এরফান। এতে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ায় মনোযোগী হওয়ার পাশাপাশি বাড়তে থাকে পাসের হারও।

সরেজমিনে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের মাঠে সাজানো হয়েছে বিভিন্ন খেলার সরঞ্জাম। চারদিকে সুসজ্জিত রংবেরঙের ফুলগাছ। কারুকার্যখচিত বক, টিয়া, ময়ূর। প্রথম দেখায় যে কারও মনে হতে পারে এটি বুঝি কোনো শিশু পার্ক। 

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. জিসান, মৌলি পারভীন, মো. সাবিদসহ একাধিক শিক্ষার্থী বলে, ‘বিদ্যালয়ে শিক্ষকেরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পড়ান। ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে আমরা মাঠে খেলাধুলা করি। পরিবেশটাও ভালো লাগে।’

ভেতেরর মতো বাইরের দিকটাও দৃষ্টিনন্দনবিদ্যালয়ের শিক্ষিকা মিতালী পারভীন বলেন, মাঠে নির্মিত বিভিন্ন স্থাপনা দেখতে প্রতিদিনই মানুষের আগমন ঘটে বিদ্যালয়ে। পাশাপাশি সুন্দর এ পরিবেশে লেখাপড়া করতে পেরে শিক্ষার্থীরা খুশি।

জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এরফান আলী বলেন, দুর্বল শিক্ষার্থীদের বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বিশেষ ক্লাস নেওয়া হয়। এ ছাড়া হাতের লেখা সুন্দর ও পাঠদানে শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থীদের প্রতি মাসে পুরস্কৃত করা হয়। আর্থিক অনটনে থাকা শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয় খাতা-কলম। ঝরে পড়া রোধে সপ্তাহে দুই দিন দুপুরের খাবার দেওয়া হয় সব শিক্ষার্থীকে। বিদ্যালয়ের পুকুরে মাছ চাষ ও হাঁস, মুরগি পালনের আয় থেকে এই ব্যয় মেটানো হয়।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আজিজার রহমান বলেন, প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে এ বিদ্যালয় মডেল হিসেবে কাজ করবে। বিদ্যালয়টিকে আরও সমৃদ্ধ করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মাসুদ আহমেদের সব পদ স্থগিত

টিআইএন নেওয়ার পরে কিন্তু ঘুমাইতে পারবেন না: এনবিআর চেয়ারম্যান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত