Ajker Patrika

খরচের চাপে পোশাক খাত

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা
আপডেট : ২৭ মে ২০২৪, ১৫: ১০
খরচের চাপে পোশাক খাত

খরচের চাপ বাড়ছে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পে। কখনো কর্মীদের মজুরি বৃদ্ধি, কখনো গ্যাস, জ্বালানি তেল ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির মতো এ রকম ঘটনা এই খাতকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে। সর্বশেষ যোগ হয়েছে ঋণের সুদহারের খড়্‌গ। অথচ এর বিপরীতে পোশাকের কাঙ্ক্ষিত ক্রয়াদেশ আসছে না। আবার মিলছে না পণ্যের ভালো দামও। পাশাপাশি চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মোকাবিলার প্রস্তুতি হিসেবে নানান কমপ্লায়েন্স মেনে চলা এবং উন্নত প্রযুক্তি সংযোজনের পেছনেও বাড়ছে বিনিয়োগ। ফলে সব মিলিয়ে খরচ ও লোকসানের চাপ বাড়ছে উদ্যোক্তাদের ঘাড়ে। তারা এ থেকে উত্তরণে সরকারের কাছে নীতি-সহায়তা চেয়েছেন। পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ চিত্র জানা যায়।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো বলছে, তৈরি পোশাকশিল্প বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে পরিচিত। রপ্তানিতে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষতম দেশ। বাংলাদেশ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৪৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পোশাক রপ্তানি করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জিডিপিতে এ খাতের অবদান ১০ দশমিক ৩৫ শতাংশ। কিন্তু কয়েক বছর ধরে নানান সংকট পার করে চলছে এই খাত। কোভিডের পর কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও পুরো ক্রয়াদেশ এখনো ফেরেনি। 

এ বিষয়ে নিট পোশাক খাতের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ব্যবসা ভালো নয়। ক্রয়াদেশ কমে গেছে। ক্রয়াদেশ কম থাকলে অ্যাগ্রেসিভ মার্কেটিং করতে হয়। এখন আমাদের অ্যাগ্রেসিভ হওয়ার কোনো জায়গা নেই। কারণ, এ সময়ে গ্যাস, বিদ্যুতের দাম অব্যাহতভাবে বেড়েছে। মজুরি বেড়েছে। ডলারের দর বাড়ায় খরচ বেড়েছে। সুদের হার ৯ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ হয়েছে। আবার প্রণোদনা কমে গেছে। কোনটা বাদ দিয়ে কোনটা বলব? অর্থাৎ কোনোটাই ব্যবসার জন্য সহায়ক নয়।’ 

 উদ্যোক্তারা জানান, শিল্পটির যে নানান সংকট, বাইরে থেকে তা বোঝার উপায় নেই। মজুরি বেড়েছে প্রায় ৫৭ শতাংশ। দফায় দফায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিদ্যুতের দাম প্রায় ১৫ দশমিক ৭ শতাংশ, ডিজেলের দাম বেড়েছে ৩৭ শতাংশ এবং ফার্নেস অয়েলের দাম বেড়েছে ৪১ দশমিক ৪ শতাংশ। শিল্পের জন্য গ্যাসের দাম বেড়েছে ১৭৮ শতাংশ। এর ফলে পোশাকের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। আর ডলারের সংকট তো চলছে কয়েক বছর ধরে। এতে শিল্পের কাঁচামাল আমদানির এলসি খোলা কঠিন হয়ে পড়েছে। এর সঙ্গে দফায় দফায় সুদের হার বাড়ানোর ফলে যোগ হয়েছে বাড়তি খরচ। এতে অনেক উদ্যোক্তার লোকসানের অঙ্ক বেড়েছে। না পেরে অনেকে উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছেন। ছোট ছোট উদ্যোক্তা, যাঁদের বড় অর্ডার নেই, তাঁরা ধীরে ধীরে ব্যবসা গোটাচ্ছেন। অনেকের উৎপাদন সক্ষমতা কমেছে। এর প্রভাব পড়ছে অর্থনীতিতে।

পোশাক খাতের উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান মাইক্রো ফাইবার গ্রুপের পরিচালক ড. কামরুজ্জামান কায়সার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ইউটিলিটির পেছনে তো খরচ বেড়েছেই। এর বাইরেও শুল্ক-করসহ সরকারি খাতের দিক থেকেও খরচ বেড়েছে। এলডিসি থেকে উত্তরণ পর্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এখনো আমরা প্রস্তুত নই। বায়াররাও পণ্যের বাড়তি দাম দিচ্ছে না। এতে উদ্যোক্তাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছে। যাঁরা ব্যাংকঋণের ওপর নির্ভরশীল, তাঁরা একে একে কারখানা বন্ধ করে দিচ্ছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত