Ajker Patrika

৮০ শতাংশ ব্রোকারেজ হাউস পরিচালন ব্যয় তুলতে পারছে না: ডিবিএ 

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৮ জানুয়ারি ২০২৪, ২০: ১৮
৮০ শতাংশ ব্রোকারেজ হাউস পরিচালন ব্যয় তুলতে পারছে না: ডিবিএ 

শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস (সর্বনিম্ন দাম) বেঁধে দেওয়ায় গত দেড় বছরে দেশের পুঁজিবাজারে লেনদেন ব্যাপক হারে কমে গেছে। এ কারণে প্রায় ৮০ শতাংশ ব্রোকারেজ হাউস পরিচালন ব্যয় তুলতে পারছে না। ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম এ তথ্য দিয়েছেন।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর নিকুঞ্জে ডিএসই টাওয়ারে ডিবিএ ও ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নলিস্টস ফোরামের (সিএমজেএফ) মধ্যে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।

ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজের পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ফ্লোর প্রাইস (শেয়ারের সর্বনিম্ন দাম) বেঁধে দেওয়ায় গত দেড় বছরে দেশের শেয়ারবাজারে লেনদেন ব্যাপক হারে কমে গেছে। এতে প্রায় ৮০ শতাংশ ব্রোকারেজ হাউস তাদের পরিচালন ব্যয় তুলতে পারছে না। বিগত দেড় বছরে আমরা সবাই ক্ষতিগ্রস্থ। এখানে কোনো লেনদেন করা যাচ্ছে না, প্রায় ২০ মাস হতে চলল। ব্রোকারেজ হাউস ২৫০ এবং আরও ৭০টির মতো ট্রেকহোল্ডার আছে। সব মিলিয়ে ৩২০টির মতো কোম্পানি এখানে রান করছে। ৮০ শতাংশের মতো কোম্পানি তার অপারেটিং কস্ট (পরিচালন ব্যয়) তুলতে পারছে না, আজকে প্রায় দেড় বছর।’

বাজারে শেয়ারের দাম নিয়ন্ত্রণের বিরোধিতা করে তিনি বলেন, ‘মার্কেটকে মার্কেটের মতো চলতে দিতে হবে। আমাদের ডিমিউচুয়ালাইজেশন (স্টক এক্সচেঞ্জ মালিকা থেকে ব্যবস্থাপনা পৃথককরণ) হয়েছে ২০১৩ সালে। ডিমিউচুয়ালাইজেশনের কারণে আমাদের ক্ষতি হয়েছে, তারপরও আমরা মেনে নিয়েছি। ২০১৩ সাল থেকে ১০ বছর হয়ে গেছে। এই ১০ বছর পর আমরা যেটা বিশ্বাস করি, এটা (ডিমিউচুয়ালাইজেশন) এখন রিভিউ করার সময় এসেছে। বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নতির সঙ্গে যদি তুলনা করি পুরো ইকোনমি এগিয়ে যাচ্ছে একভাবে, আর আমরা অন্যভাবে যাচ্ছি। গত ১৫ বছরে যে আইপিও এসেছে আমি মনে করি তা রিভিউ করার সময় এসেছে।’

ডিবিএর সাবেক সভাপতি ও গ্লোবাল সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিচার্ড ডি রোজারিও বলেন, ‘আমাদের যে তিনটি ব্রোকারেজ হাউসের কথা বলা হয়েছে, সেই তিনটি হাউসের এই অবস্থার জন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং ডিএসইর দায় আছে। আমরা দেখেছি, শুরুতে হাউসগুলোর সমস্যা কিছু খুবই কম। ধীরে ধীরে সমস্যা বড় হয়েছে। অসহযোগিতার কারণে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। ফ্লোর প্রাইসের মতো জঘন্য ঘটনা আবার বিপদে ফেলেছে। স্বল্প সময়ের জন্য এটা মেনে নেয়া যায়, কিন্তু এতো দীর্ঘ সময়ের জন্য এটা গ্রহণযোগ্য না।’

ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, ‘আমরা চাচ্ছি, একটা ভালো শেয়ার মার্কেট। শেয়ার মার্কেট ভালো হলে শিল্পায়নের সহযোগী হবে। মানুষের কর্মসংস্থান বাড়বে। পুঁজিবাজারে মানুষের অংশগ্রহণ বাড়বে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে আমরা দেখতে পাই, ব্যাপক মানুষ শেয়ারবাজারে। আমরা চাই আমাদের শেয়ারবাজারেও ব্যাপক মানুষের অংশগ্রহণ হোক।’

ডিএসইর সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, ‘ব্রোকারেজ হাউসগুলোর ৬০-৭০ শতাংশ কর্মী চলে গেছে। বড় হাউসগুলো কোনো রকমে টিকে আছে। ছোট হাউসগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। আমাদের তিনটি হাউস সমস্যায় পড়ে যাওয়ার তথ্য আপনারা পেয়েছেন। আমাদের সহযোগিতা করেন, আমরা আপনাদের একটি ভালো বাজার উপহার দিতে পারব।’

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সাবেক প্রেসিডেন্ট মো. ছায়েদুর রহমান বলেন, ‘ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত না হলে বাজারের উন্নতি সম্ভব না। অন্যদিকে তালিকাভুক্ত-অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার সাড়ে ৭ শতাংশ এটা খুবই কম। করহার বাড়ানোটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, আমরা সব সময় এই বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে আসছি; কিন্তু কার্যকরী পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। সুতরাং, ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত করতে হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।’

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি মাজেদা খাতুন বলেন, ‘পুঁজিবাজারের সার্বিক সহযোগিতায় আমরা সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করি। সবাই মিলে দেশের শেয়ারবাজারের উন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করব। সবাই যার যার জায়গা থেকে এগিয়ে আসলে শেয়ারবাজারের উন্নয়ন হবে বলে আশা করছি।’

এদিকে সভায় সিএমজেএফের সভাপতি এস এম গোলাম সামদানী ভূঁইয়া বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি যেভাবে এগিয়ে গেছে, সেভাবে পুঁজিবাজার উন্নতি হয়নি। যখন দেশের অর্থনীতি ভালো ছিল, তখন যেমন পুঁজিবাজার খারাপ ছিল। বর্তমানে অর্থনীতি কিছুটা মন্দা, এখনো শেয়ারবাজার খারাপই রয়েছে। দেশের পুঁজিবাজারে বর্তমানে ফ্লোর প্রাইস একটা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফ্লোর প্রাইসের কারণে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি দিন দিন বাড়ছে। সঠিক সময় শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করতে না পারায় অনেকের পুঁজি আটকে পড়েছে। এমন পরিস্থিতি থেকে বিনিয়োগকারীরা পরিত্রাণ চায়। সবার প্রত্যাশা বাজারের লেনদেন স্বাভাবিক গতিতে চলুক। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণের লক্ষ্যে ডিএসই ও সিএমজেএফ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একসঙ্গে কাজ করবে।’

সিএমজেএফের সাবেক সভাপতি জিয়াউর রহমান বলেন, ‘আমরা যদি পুঁজিবাজার ভালো অবস্থানে দেখতে চাই। বাজারে সব স্টেকহোল্ডারকে নিয়ে যদি একটি ইকোসিস্টেম তৈরি করা যায়, তবে বাজারে ভালো ভালো প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত হবে। ফ্লোর প্রাইস নিয়ে আপনাদের যে উদ্বেগ তা আমরা লেখালেখির মাধ্যমে প্রকাশ করেছি। সরাসরিও আমরা তাদের কাছে তুলে ধরেছি৷ এর ফলে যে আস্থার সংকট তৈরি হচ্ছে তা যদি মানুষের মাঝে থেকে যায় তাহলে ভবিষ্যৎ সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীরা আর বাজারে বিনিয়োগে আগ্রহী হবে না।’

সিএমজেএফের সেক্রেটারি আবু আলী বলেন, ‘সিএমজিএফ পুঁজিবাজারের উন্নয়ন এবং সাংবাদিকদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে আমরা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে থাকি। এ ছাড়া আমরা বিভিন্ন গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেছি যা বাজারের উন্নয়নে কাজে আসবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাজার উন্নতি করতে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মাসুদ আহমেদের সব পদ স্থগিত

টিআইএন নেওয়ার পরে কিন্তু ঘুমাইতে পারবেন না: এনবিআর চেয়ারম্যান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত