মুক্তিযোদ্ধার নাতি সেজে ১০ বছর সরকারি চাকরি

শাকিলা ববি, সিলেট
প্রকাশ : ১৬ মে ২০২৩, ১১: ৪৮

পোষ্য কোটায় মুক্তিযোদ্ধা বা তাঁর সন্তান এবং নাতিকে চাকরিতে নিয়োগের বিধান রয়েছে। কিন্তু সিলেটের কানাইঘাট উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধার নাতি সেজে এক ব্যক্তি ১০ বছর ধরে সরকারি চাকরি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তাঁর নাম মো. নাজিম উদ্দিন। তিনি দ্বিতীয় শ্রেণি মর্যাদার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা পদে কর্মরত আছেন।

দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলছেন, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে তাঁদের কাছে নাজিমের বিরুদ্ধে এমন একটি অভিযোগ আসে।আজকের পত্রিকার অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার বড় চতুল ইউনিয়নের সরুফৌদ গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা ইব্রাহিম আলীকে রায়পুর গ্রামের মহসিনা বেগম পালক বাবা দাবি করেন। যদিও জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) মহসিনার বাবা হিসেবে মুশাহিদ আলীর নাম উল্লেখ রয়েছে। অথচ মহসিনার ছেলে নাজিম উদ্দিনকে বড় চতুল ইউনিয়ন পরিষদ থেকে দেওয়া প্রত্যয়নপত্রে বীর মুক্তিযোদ্ধাকে নাতি হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

জানা গেছে, নাজিম উদ্দিন বর্তমানে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় কর্মরত আছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা ইব্রাহিম আলীর প্রতিবেশী নিজাম উদ্দিন (৪৭) বলেন, ‘মহসিনা বেগমের ছেলে যে ভুয়া উত্তরাধিকারী সেজে সরকারি চাকরি নিয়েছেন, এটা আমি আরও কয়েক বছর আগে থেকে জানি। বীর মুক্তিযোদ্ধা ইব্রাহিম আলী কখনো কোনো মেয়েকে পালনপালন করতে নেননি।’

বীর মুক্তিযোদ্ধা ইব্রাহিম আলী বলেন, ‘নাজিম উদ্দিন নামে আমার কোনো নাতি নেই। আমি মহসিনা বেগম নামের কাউকে লালনপালন করিনি। নাজিম উদ্দিন আমার বাড়ির পাশে একটি মহিলা মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। সেই সুবাদে তিনি বাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন এবং আমাকে নানা ডাকতেন।’

এই বীর মুক্তিযোদ্ধার দাবি, নাজিম একদিন তাঁর সরকারি চাকরির জন্য একজন মুক্তিযোদ্ধার সুপারিশ দরকার বলে একটি কাগজে স্বাক্ষর নেন। কিন্তু এটা নিয়ে তিনি জালিয়াতি করেছেন।

নাজিম উদ্দিনের নানার বাড়ি রায়পুর গ্রামের প্রতিবেশী আব্দুল হালিম বলেন, ‘মহসিনা বেগম তাঁর বাবার বাড়ি রায়পুরেই বড় হয়েছেন। তাঁকে কোথাও পালন করতে দেওয়া হয়নি।’

নাজিম উদ্দিনের মা মহসিনা বেগম বলেন, ‘মা-বাবা পালন করতে দিছলা। কিন্তু কেনে দিছলা, কোন বয়সে দিছলা, আমার মনে নাই।’

এদিকে অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য খলিলুর রহমান ও মো. আব্দুল্লাহ জানান, নাজিম উদ্দিন বীর মুক্তিযোদ্ধার নাতি নন। মহসিনা বেগমকে পালন করতেও নেননি তিনি।

প্রত্যয়নপত্র দেওয়া সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হোসেন বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা ইব্রাহিম আলী তখন আমাকে বলেছিলেন, নাজিম তাঁর পালিত নাতি। তাই ওই প্রত্যয়নপত্র দিয়েছিলাম।’

বড় চতুল ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক চৌধুরী বলেন, ‘কিছুদিন আগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকে একটি চিঠি আসে। সেখানে নাজিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধার ভুয়া সনদ ব্যবহার করে চাকরি নেওয়ার অভিযোগ অনুসন্ধানের স্বার্থে তথ্য সরবরাহ করতে বলা হয়।’

অভিযোগের বিষয়ে নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘২০১৩ সালে যখন চাকরির সার্কুলার হয়, তখনই ইব্রাহিম আলী আমাকে নাতি হিসেবে প্রত্যয়নপত্র দেন। আমি যে তাঁর নাতি,  আমার কাছে তার ডকুমেন্ট আছে।’

দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক জাভেদ হাবীব বলেন, ‘নাজিমের বিরুদ্ধে অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত