নানা অনিয়ম ও গুরুতর অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ উঠেছে রাজশাহীর চারঘাটের পাঁচজন জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে। স্থানীয় এসব জনপ্রতিনিধি মাদক কারবার, সুদ বাণিজ্য, জমি দখল, সরকারি কর্মকর্তাদের হেনস্তা করাসহ বিভিন্ন প্রকল্পে ভয়াবহ অনিয়মে জড়িয়ে পড়ছেন। কোনো কোনো জনপ্রতিনিধি গ্রাম্য সালিসের নামে নিয়েছেন ঘুষ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ ধরনের অসংখ্য অভিযোগের ভিত্তিতে ইতিমধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) এক সদস্যকে বহিষ্কার করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। আরও চার ইউপি সদস্যের বিভিন্ন অনিয়ম ও মামলার তথ্য জেলা প্রশাসকের দপ্তর বরাবর পাঠিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, গত ২৬ ডিসেম্বরের নির্বাচনে শলুয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন সাহাবুর আলী। নির্বাচিত হয়েই পরদিন স্থানীয় এক ব্যাংক কর্মকর্তার বাড়িতে সমর্থকদের নিয়ে হামলা চালান।

এরপর ওই ওয়ার্ডের আমবাগানগুলোতে মাদকের অভয়ারণ্য হিসেবে গড়ে তোলেন তিনি। সর্বশেষ গত ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠান পালনের সময় স্থানীয় তাঁতারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত এবং তাঁর ক্যাডার বাহিনী নিয়ে বিদ্যালয়ে ভাঙচুর চালান। পরে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ইউপি সদস্য সাহাবুর আলীকে বহিষ্কার করে স্থানীয় সরকার বিভাগ।

একই ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আশরাফ আলী ১৮ আগস্ট হেরোইনসহ পুলিশের হাতে আটক হন। তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক কারবারি। তাঁর নামে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মাদক মামলা রয়েছে। তাঁর ওয়ার্ডে মাদকের সাম্রাজ্য কায়েম করেছেন তিনি। এদিকে সরদহ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শাহাবুদ্দীন আলী অন্যের জমি দখল করে নিজের নামে রেজিস্ট্রি করে নিয়েছেন। ভুক্তভোগীকে নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে প্রাণনাশের হুমকি দেন তিনি। পরে আদালতে মামলা দায়ের হলে গত ৩ আগস্ট তাঁকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠায় পুলিশ। 
একই ইউনিয়নের সংরক্ষিত নারী সদস্য আনোয়ারা বেগম চেক জালিয়াতির মাধ্যমে এক ব্যক্তির সঙ্গে প্রতারণা করেন। পরে ভুক্তভোগীর মামলায় এক বছরের সাজাপ্রাপ্ত হন তিনি। ২৫ সেপ্টেম্বর তাঁকে আটক করে জেলহাজতে পাঠানো হয়।

অপরদিকে ইউসুফপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রবিউল ইসলাম ১৪ সেপ্টেম্বর ফেনসিডিলসহ পুলিশের হাতে আটক হন। পরে তাঁকে মামলা দিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়। উপজেলা প্রশাসন আরও জানায়, উল্লেখিত চার ইউপি সদস্যের অনিয়ম ও মামলার তথ্য জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। তাঁদের বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উপজেলার আরও বিভিন্ন ইউনিয়নের ছয়জন ইউপি সদস্য মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছেন বলে জানা গেছে। সরদহ ইউপির চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান মধু বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের দুই ইউপি সদস্য জমি দখল ও চেক জালিয়াতির মাধ্যমে প্রতারণার কারণে বর্তমানে জেলহাজতে আছেন। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে তাঁরা সেই জনগণেরই ক্ষতি করছে।’

সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের চারঘাট উপজেলা সভাপতি মো. কামরুজ্জামান বলেন, সেবকেরা যখন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে তখন সাধারণ জনগণ নিরুপায় হয়ে পড়ে। কঠোর আইন প্রয়োগের মাধ্যমে এসব বেপরোয়া জনপ্রতিনিধিদের লাগাম টেনে ধরতে হবে।

জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সোহরাব হোসেন বলেন, উপজেলার এক ইউপি সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। আরও চার ইউপি সদস্যের মামলার তথ্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। কোনো স্থানীয় জনপ্রতিনিধি অনিয়ম করলে স্থানীয় সরকার বিভাগ তাদের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়।