নকশা না মেনে একের পর এক উঠছে ভবন

  • প্রায় এক ডজন ভবন ওপরে বাড়ানো হয়েছে নকশাবহির্ভূতভাবে।
  • শীতলাখোলা এলাকার একটি ভবনের বিষয়ে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
  • এর আগে কয়েকটি ভবনের বর্ধিতাংশ ভেঙে ফেলা হয়।
খান রফিক, বরিশাল 
প্রকাশ : ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯: ০০
Thumbnail image
বরিশাল মহানগরের শীতলাখোলা এলাকার এ ভবনটি ১০ তলা পর্যন্ত নির্মাণ করার অনুমোদন থাকলেও নকশাবহির্ভূতভাবে ১১ তলা করা হয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

ভবনটির নকশায় ১০ তলার অনুমোদন ছিল। কিন্তু গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সুউচ্চ ভবনটি নকশাবহির্ভূতভাবে ১১ তলা করা হয়েছে। বরিশাল মহানগরের শীতলাখোলার ভবনটিই শুধু নয়, অভিযোগ রয়েছে, মহানগরের প্রায় এক ডজন ভবন এভাবে নকশাবহির্ভূতভাবে বর্ধিত করা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্র বলেছে, বরিশাল নগরের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের শীতলাখোলায় ৮৪৪ নম্বর হোল্ডিংয়ের মালিক মীর অলিউজ্জামান ১০ তলা ভবনের ওপর সম্প্রতি আরও একতলা নির্মাণ করেন। এ বিষয়ে এলাকাবাসী গত ২৬ ডিসেম্বর বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। এরপর গত ৩১ ডিসেম্বর সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল বারী ওই ভবনের কাজ বন্ধ রেখে অনুমোদিত নকশা দাখিল করতে নোটিশ দেন।

তবে ভবনমালিক অলিউজ্জামানের দাবি, ভবনটির প্ল্যান ১০ তলা। তিনি পরবর্তী সময়ে সিটি করপোরেশনের অনুমোদন নিয়ে ছাদের অর্ধেক অংশে আরেক তলা করেছেন। শিগগির বিসিসির নোটিশের জবাব দেবেন তিনি।

সিটি করপোরেশনের ঠিকাদার মো. আলতাফ নগরের ব্যস্ততম ও বাণিজ্যিক এলাকা লাইন রোডে ৯ তলার অনুমোদন নিয়ে ১০ তলা নির্মাণ করেন। তৎকালীন মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর নির্দেশে বর্ধিতাংশ ভেঙে ফেলা হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেই ভবন সম্প্রতি আবারও ১০ তলা করা হয়েছে।

আইনজীবী সাজু সদর গার্লস স্কুলের পেছনে নকশাবহির্ভূত বহুতল ভবন নির্মাণ করায় তৎকালীন সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর সময়ে ৪৫ লাখ টাকা জরিমানা দেন। গোরস্তানসংলগ্ন অপর একটি বহুতল ভবন করতে গিয়েও অনিয়ম করায় তাঁকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে বলে করপোরেশনের উচ্ছেদ শাখা সূত্রে জানা গেছে।

সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু জিলা স্কুলের সামনে ৯ তলা ভবন নির্মাণের অনুমোদন পান। কিন্তু ভবনটি ১১ তলা করা হয়। ভবনটি সার্কিট হাউসের কাছে হওয়ায় আপত্তি ওঠে। মন্ত্রণালয়ের আপত্তি সত্ত্বেও সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ বিধিবহির্ভূতভাবে ভবনটিকে অনুমোদন দেন।

সিটি করপোরেশনের উচ্ছেদ শাখার প্রধান স্বপন কুমার দাস বলেন, ‘আমরা শীতলাখোলার বাড়িটি গত শুক্রবার তদন্ত করেছি। ভবনটির প্ল্যান ১০ তলা। কিন্তু বানানো হয়েছে ১১ তলা। তাদের কাছে প্ল্যান চাওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, হাজি আলতাফের লাইন রোডের ভবনও এর আগে ভাঙা হয়েছে। অ্যাডভোকেট সাজুর গোরস্তান এলাকার ভবনটি প্ল্যানবহির্ভূত করায় নোটিশ করা হয়েছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) বরিশালের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম বলেন, বিল্ডিং কোড অনুসরণ করে ভবন করা দরকার। এটি দেখার দায়িত্ব নগর পরিকল্পনাবিদদের। যেসব ভবন নকশার বাইরে উঠেছে, সেগুলোর দায় প্রধান নির্বাহী এড়াতে পারেন না। এ কারণেই বরিশাল নগরের মাস্টারপ্ল্যান হয়নি। সিটি করপোরেশনের উচিত ঝুঁকিপূর্ণ সুউচ্চ ভবন শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া।

এ বিষয়ে জানতে বিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল বারীকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। তবে বিসিসির সচিব রুম্পা সিকদার বলেন, প্ল্যান লঙ্ঘন করে ভবন করা হলে করপোরেশনের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিসিসি নোটিশ দিলে তো এর একটা ব্যবস্থা হবেই। নগরে নকশাবহির্ভূত ভবন করা হচ্ছে কিংবা হয়েছে কি না, তার খোঁজ নেবেন বলে জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত