Ajker Patrika

বড় সমস্যা পাহাড় দখল আর মাদক

নাজমুল হাসান, চট্টগ্রাম
বড় সমস্যা পাহাড় দখল আর মাদক

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডকে বলা যায় নগরে প্রবেশমুখ। ৬.৪১ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই ওয়ার্ডে প্রায় আড়াই লাখ মানুষের বাস। এটি চট্টগ্রাম-৪ নির্বাচনী এলাকারও একটি অংশ। জনবহুল এই এলাকা পাহাড় দখলের জন্য রীতিমতো পরিচিতি পেয়ে গেছে। মাদক বেচাকেনা ও কয়েকটি কুখ্যাত কিশোর গ্যাং সক্রিয় থাকার অভিযোগও আছে। এ ছাড়া এখানে গড়ে ওঠা বস্তিগুলোতে পর্যাপ্ত নাগরিক সুবিধা নেই।

উত্তর পাহাড়তলী এলাকা ঘুরে ও সেখানকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে শাপলা, বেলতলী ঘোনা, নাছিয়া ঘোনা, ফয়’সলেক, জয়ন্তিকা, আকবরশাহ এলাকায় কয়েকটি সংঘবদ্ধ চক্র পাহাড় দখল করে আসছে দীর্ঘদিন। তবে এ বছরের ৮ জানুয়ারি ২৮ মামলার আসামি নুরে আলম ওরফে নুরু গ্রেপ্তার হওয়ার পর পাহাড় কাটা কিছুটা কমেছে। তবে বন্ধ হয়নি পুরোপুরি। নুরুর দখল করা একটি পাহাড়ে এখন পুলিশের ক্যাম্প করা হয়েছে।

আকবরশাহ এলাকায় রাজনৈতিক ছত্র ছায়ায় কয়েকটি কিশোর গ্যাং সক্রিয় রয়েছে। ২০১৯ সালে বিশ্বকলোনী এলাকার এন ব্লকে মো. মহসিন নামে এক যুবলীগ কর্মীকে নির্মমভাবে পিটিয়ে মারাত্মক জখম করার ঘটনায় নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত কিশোরদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত বন্ধে চিরুনি অভিযান চালায় আকবর শাহ থানা পুলিশ। তবে এলাকাবাসীর দাবি কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়নি।

শাপলা এলাকার বাসিন্দা অটোরিকশা চালক জমির উদ্দিন বলেন, কিছু এলাকায় রাস্তাঘাটের উন্নতি হলেও সাধারণ মানুষ এখনো নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সন্ধ্যার পর কয়েকটি নির্দিষ্ট এলাকায় মাদক ও জুয়ার আসর বসে।

বেলতলী ঘোনার বাসিন্দা সুফিয়া খাতুন বলেন, পানির জন্য বেশি কষ্ট করতে হয়। কখনো কখনো এক সপ্তাহও পানি থাকে না। নেতারা সব সময় বলে পানির ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু করেন না।

প্রশান্তি আবাসিক এলাকার বাসিন্দা ব্যাংকার আকবর হোসেন বলেন, এলাকায় যথেষ্ট উন্নয়ন হয়েছে। কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসী আর মাদকের সঙ্গে জড়িতদের দমন করা গেলে আকবরশাহ পুরোপুরি শান্তির এলাকায় রূপ নেবে।

আকবর শাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহির হোসেন বলেন, আকবর শাহ এলাকা নিয়ে প্রচলিত ধারণার সঙ্গে বর্তমান বাস্তবতা ভিন্ন। এখানে চিহ্নিত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধ করেছি। কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে যারা যুক্ত তাদের নিয়মিত কাউন্সিলিং করানোর পাশাপাশি অভিভাবকদেরও সচেতন করা হচ্ছে। পাহাড় কাটা বন্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। দুপক্ষের আন্তরিক প্রচেষ্টায় নতুন করে পাহাড় দখল কিংবা কাটতে দেওয়া হচ্ছে না।

পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের পরিচালক মোহাম্মদ নূরুল্লাহ নূরী বলেন, পাহাড় কাটা বন্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছি। যেসব পাহাড় ইতিমধ্যে অবৈধভাবে কাটা হয়েছে সেগুলো পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে কাজ চলছে। নতুন করে কাউকে পাহাড় কাটার সুযোগ দেওয়া হবে না।

৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম আজকের পত্রিককে বলেন, নির্বাচিত হওয়ার পর পুরো আকবরশাহকে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধার আওতায় নিয়ে এসেছি। এখানে পাহাড়ের ভেতর পর্যন্ত দুই লেনের রাস্তা করেছি। প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকায়ও পানি সংকট দূর করতে কাজ করেছি। সালিস বাণিজ্য বন্ধ করে পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে পারিবারিক ও সামাজিক সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছি। ব্যক্তিগত উদ্যোগে দুটি উচ্চ বিদ্যালয় এবং একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেছি।

কাউন্সিলর আরও বলেন, ‘সর্বশেষ গত পাঁচ বছরে ১৪২ কোটি টাকার কাজ করেছি। ১৫০টি রাস্তা করেছি আর অনেকগুলো রাস্তার কাজ চলমান। নতুন করে ৭৫ কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছি। কিছু এলাকায় এখনো শতভাগ নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা যায়নি এটা সত্য। পানি সংকট দূর করতে ওয়াসার সঙ্গে আলোচনা চলছে। খুব দ্রুত পুরো আকবরশাহকে সবুজায়নের মাধ্যমে আধুনিক ও মডেল ওয়ার্ড হিসেবে গড়ে তুলব। সন্ত্রাস আর মাদকের বিরুদ্ধে আমার অবস্থান স্পষ্ট। পাহাড় কাটার সঙ্গে যারা যুক্ত তাদের তালিকা করে সে অনুযায়ী প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। প্রশাসনকে সহযোগিতা করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গণপিটুনিতে নিহত জামায়াত কর্মী নেজাম ও তাঁর বাহিনী গুলি ছোড়ে, মিলেছে বিদেশি পিস্তল: পুলিশ

এক ছাতায় সব নাগরিক সেবা

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

তানভীর ইমামের বাড়ি ভেবে গুলশানের একটি বাসায় মধ্যরাতে শতাধিক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ, তছনছ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত