থাইল্যান্ডে অপহরণের শিকার চট্টগ্রামের ৫ যুবক

মো. ইমরান হোসাইন, কর্ণফুলী (চট্টগ্রাম)
Thumbnail image
সায়মন হোসেন আবির। ছবি: সংগৃহীত

প্রতি মাসে ভালো বেতন-ভাতা, থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থাসহ একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানে চাকরি—এমন সুবর্ণ সুযোগ ২১ বছর বয়সী বেকার যুবক সায়মন হোসেন আবিরের জন্য হাত ছাড়া করার মতো ছিল না। প্রয়োজনীয় সব প্রক্রিয়া শেষে ২০২৪ সালের ১২ আগস্ট দুবাই থেকে থাইল্যান্ডে গিয়ে অপহরণের শিকার হয়েছেন চট্টগ্রামের আনোয়ারার এই যুবক।

পাঁচ মাস আগে আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ ইউনিয়নের হুন্ধীপপাড়ার শাহ্ জাহানের পুত্র সায়মন হোসেন আবির (২১) ও পতেঙ্গা এলাকার তাঁর মামা মোহাম্মদ কায়সার হোসেন (৩২) ভাগ্য বদলাতে দুবাই থেকে থাইল্যান্ডে গিয়ে অপহরণের শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন তাঁদের স্বজনরা। তাঁদের সঙ্গে আরও ৩ বাংলাদেশিকে নিয়ে যাওয়া হয় থাইল্যান্ডে, সেখান থেকে তাঁদের থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারে নিয়ে জিম্মি করেন বলে তাঁরা স্বজনদের জানিয়েছেন।

গত ১২ আগস্ট দুবাই থেকে থাইল্যান্ডে একসঙ্গে ৫ জনই ভালো বেতন-ভাতা, থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থাসহ একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য যান। এই প্রলোভন তাঁদের এমনভাবে জিম্মি করেছে, যা তাঁরা দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি। সেখানে পৌঁছানোর পরের ৫ মাস তাঁদের কী দুঃসহ জীবন কাটাতে হবে, তা হয়তো কখনো কল্পনাও করেননি। জিম্মি দুজনই বৈরাগ ইউনিয়নের বারশত ইউনিয়নের কবিরের দোকান এলাকায় নানাবাড়িতে থাকতেন। অপর তিনজন হলেন মো. তানভীর আহাদ রাফি, মো. জুনায়েদ হোসেন পারভেজ ও তাহনুর খলিল্লাহ্।

জিম্মি সায়মন হোসেন আবিরের পিতা মো. শাহজাহান বলেন, ‘গত বছরের মে মাসে আমার ছেলে আবির ও আমার শালা কায়সার দুবাই যায়। সেখানে তাদের সঙ্গে নোমান নামে ফেনীর এক ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয় হয়। নোমান আমার ছেলে, শালাসহ ১৭ জনকে ১ হাজার ৫০০ ডলারের বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে থাইল্যান্ড নিয়ে যায়। পরে থাইল্যান্ড থেকে তাদের মিয়ানমার নিয়ে জিম্মি করে ফেলে। এ সময় কৌশলে ৫ জিম্মি আমাদের মোবাইলে মেসেজ দিয়ে অপহরণের খবরটি জানায়। পরে নরসিংদী জেলার জুনাইদ নামের একজন পালিয়ে এলে আমরা বিষয়টি নিশ্চিত হই।’

মো. শাহজাহান আরও বলেন, ‘গত ৫ মাসে আমরা নিখোঁজ ১৭ জনের মধ্যে ১৩ পরিবারের স্বজনেরা সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরেও কোনো সুরাহা মেলেনি। সরকারি কর্মকর্তারা শুধু চেষ্টা করছেন বলে আশ্বস্ত করেন। আমরা প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।’

চট্টগ্রামের আনোয়ারার যুবক সায়মন হোসেন আবির ও অপহরণের শিকার জিম্মি থাকা যুবকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
চট্টগ্রামের আনোয়ারার যুবক সায়মন হোসেন আবির ও অপহরণের শিকার জিম্মি থাকা যুবকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

সেখান থেকে মো. জুনায়েদ হোসেন পারভেজ নামের এক যুবক পালিয়ে এলে ঘটনাটি জানতে পারেন তাঁরা। এর পর থেকে তাঁদের উদ্ধারে বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছেন তাঁরা। ৫ মাস ধরে বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরেও কোনো প্রতিকার না পেয়ে হতাশায় ভুগছেন নিখোঁজদের স্বজনেরা।

এদিকে পালিয়ে আসা নরসিংদী জেলার মো. জুনায়েদ হোসেন পারভেজ (২৫) এক ভিডিওতে অপহরণের পর তাঁদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা বর্ণনা করেন।

ভিডিওতে বলতে দেখা যায়, ‘ফেনী জেলার নোমান নামের এক ব্যক্তি আমাদের ভালো চাকরির অফার দিলে আমরা তাকে ৫ হাজার ডলার করে ২৫ হাজার ডলারের বিনিময়ে ৫ বন্ধুসহ ১৭ বাংলাদেশি থাইল্যান্ড যাই। থাইল্যান্ডে গেলে কিছু লোক আমাদের জিম্মি করে একটি জঙ্গলে নিয়ে যায়। তাদের সবার হাতে একে-৪৭ অস্ত্র দেখেছি। আমরা বুঝতে পেরে দুবাইয়ে নোমানকে ফোন করলে সে বলে, কোনো সমস্যা হবে না, ওই লোকগুলো আমাদের। তারা তোমাদের সহযোগিতা করবে। পরে আমাদের একটি নৌকা করে মিয়ানমার নিয়ে গিয়ে একটি ঘরে বন্দী করে আমাদের ভিসা ও পাসপোর্ট নিয়ে ফেলে দেয় এবং আমাদের ভয়ভীতি দেখায়। সেই ঘরে আরও অনেক লোক আমরা দেখতে পেয়েছি। তারা জানাল, তাদেরও এক-দুই বছর ধরে বন্দী করে রেখেছে। আমাদের নিয়মিত খাবার দিত না, আমরা কয়েকবার আত্মহত্যাও করতে চেয়েছি। এসব বন্দীর মাধ্যমে অপহরণকারীরা বিভিন্ন অপকর্ম করিয়ে থাকে। আমি কৌশলে এক ব্যক্তির সহযোগিতায় তাদের থেকে পালিয়ে আসতে সক্ষম হলেও অন্যরা আসতে পারেনি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত