Ajker Patrika

জজ পরিচয়ে একের পর এক প্রতারণা, অবশেষে গ্রেপ্তার অটোরিকশাচালক

সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৯ নভেম্বর ২০২২, ১৭: ৫০
জজ পরিচয়ে একের পর এক প্রতারণা, অবশেষে গ্রেপ্তার অটোরিকশাচালক

সড়ক-মহাসড়কে প্রথমে একটি গাড়ি বা বাসকে টার্গেট করে নম্বর সংগ্রহ করা হয়। পরে ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে নিজেকে জজ পরিচয় দিয়ে সেই থানা এলাকার ওসি বা ট্রাফিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেন জহরুল ইসলাম পরিচয়দানকারী এক ব্যক্তি। হাইকোর্টের ৩ নম্বর বেঞ্চের বিচারক পরিচয়ে মোবাইলে পুলিশকে জানানো হতো ওই নম্বরের গাড়িটি তাঁর গাড়ির সঙ্গে অ্যাক্সিডেন্ট করে পালিয়েছে। এরপর সেই গাড়ির মালিক বা চালকের সঙ্গে কথা হলে তাঁর গাড়ির মেরামত বাবদ আদায় করতেন টাকা, না হলে ভয় দেখাতেন জেল–জরিমানার।

প্রশাসনকে ব্যবহার করা এমন এক প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশ। আজ বুধবার দুপুরে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আরাফাত হোসেন। 

আরাফাত হোসেন বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তথ্যের ভিত্তিতে আমরা কাজ শুরু করি। পরে মঙ্গলবার রাতে আশুলিয়ার জিরাব পুকুরপাড় এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করি। তাঁর কাছ থেকে ব্যবহৃত মোবাইল ও সিম জব্দ করা হয়েছে।’ 

গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তির আসল নাম—আবু বকর সিদ্দিক (২০)। তিনি পেশায় একজন অটোরিকশাচালক। তিনি রাজবাড়ী পাংশা থানার পূর্ব বাগদোল গ্রামের মজিবরের ছেলে। তিনি আশুলিয়ার জিরাব এলাকার শফিকুল কাজীর বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। তিনি এসব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন মোবাইলের মাধ্যমে। টাকা আদায় করতেন বিকাশের মাধ্যমে। 

ঢাকা উত্তর ডিবি পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আরাফাত হোসেন বলেন, ‘গত কয়েক মাস আগে আশুলিয়ায় একটি মারামারি ঘটনায় ৯৯৯ এ কল দিলে কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ চলে আসে। আইনগত ব্যবস্থাও নেয়। ৯৯৯ এ পুলিশের তড়িৎ পদক্ষেপের বিষয়টি দেখে অপরাধের ছক সাজান অটোচালক আবু বকর সিদ্দিক। মোবাইলের নতুন সিম কেনেন। এরপর শুরু হয় অভিনব অপরাধ কর্মকাণ্ড। বিচারক বা জজ পরিচয়ে ৯৯৯ এ ফোন করে বিভিন্ন পুলিশ সদস্যের মোবাইল নম্বর জোগাড় করতেন আশুলিয়ার এই অটোরিকশাচালক। এ পুলিশ সদস্যকে বিভিন্ন গাড়ি জব্দের নির্দেশনা দিতেন। পরে গাড়ির মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে টাকা হাতিয়ে নিতেন আবু বকর সিদ্দিক। এভাবে গত দুই মাসে প্রায় ১৫ থেকে ১৬ গাড়ি থেকে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।’ 

এ ঘটনার এক ভুক্তভোগী মাজেদুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গত ১৩ অক্টোবর আশুলিয়া বাইপাইলে ট্রাফিক পরিদর্শক কাজল সাহেব আমার একটি বাস আটক করে। থানা থেকেও পুলিশ আসে। তারা বলেন এক জজ সাহেবের প্রাইভেটকারে অ্যাক্সিডেন্ট করেছে আমার বাস। পরে জজ ফোনে আমার সঙ্গে কথা বলে তার প্রাইভেটকার মেরামতের জন্য ২৫ হাজার টাকা দাবি করে। আমি তাকে বিকাশে ২০ হাজার টাকা দিলে তিনি পুলিশকে বাস ছেড়ে দিতে বলেন। আমি সেই জজ ও বাইপাইলে পুলিশকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি, আমার বাস কোনো অ্যাক্সিডেন্ট করেনি। কিন্তু তারা মানেনি।’

ভুক্তভোগী মাজেদুল আরও বলেন, ‘ঘটনার ৫ দিন পর একই অভিযোগে আশুলিয়ার নিশ্চিতপুরে আমার আরেকটি বাস আটক করে। আশুলিয়া থানার ওসি সাহেবকে বিষয়টি জানালে তিনি জজকে সরাসরি আসার পরামর্শ দেন। কিন্তু কেউ আসেনি। পরে মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে ডিবি পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। তাঁর বিরুদ্ধে আমি বাদী হয়ে বুধবার আশুলিয়া থানায় মামলা দিয়েছি।’

এ বিষয়ে সাভার জোনের ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক (অ্যাডমিন) আব্দুস সালাম বলেন, ‘জজ পরিচয় দিলেও তাৎক্ষণিকভাবে পরিচয় যাচাই করা সম্ভব ছিল না। একই ঘটনা বারবার ঘটার পর বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। মূলত হাইকোর্টের ৩ নম্বর বেঞ্চে জহরুল ইসলাম নামে একজন আসল বিচারপতি রয়েছেন। ফলে বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। তবে নানা তদন্ত শেষে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, এই প্রতারক সেই নাম ব্যবহার করত।’

ঢাকা উত্তর ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বিপ্লব আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি গত দুই মাস ধরে আবু বক্কর নিজেকে জজ পরিচয়ে ৯৯৯ এর অপব্যবহার করে অপকর্মের করে আসছিল। ইতিমধ্যে আবু বকর ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ীসহ বিভিন্ন জেলায় এই ধরনের অপকর্ম করেছে। এ বিষয়ে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার কাছেও অভিযোগ গিয়েছে। সেই সূত্র ধরে অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে এই অপরাধের সঙ্গে আর কেউ জড়িত আছে কীনা সে বিষয়ে তদন্ত চলছে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মাসুদ আহমেদের সব পদ স্থগিত

টিআইএন নেওয়ার পরে কিন্তু ঘুমাইতে পারবেন না: এনবিআর চেয়ারম্যান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত