কর না কমালে গ্রামের মানুষকে সুলভে ইন্টারনেট দেওয়া সম্ভব নয়: গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
Thumbnail image
‘ইন্টারনেট অ্যাকসেস নিশ্চিত করা: চ্যালেঞ্জ ও সুপারিশ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থিত অতিথিরা। ছবি: সংগৃহীত

মোবাইল ফোনের একজন গ্রাহক ১০০ টাকার ইন্টারনেট প্যাকেজ কিনলে ৬০ টাকার বেশি চলে যায় সরাসরি সরকারের পকেটে। যেহেতু সরকার খুব সহজে ১০ কোটি মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী থেকে অনেক টাকা আদায় করতে পারছে, তাই তারা চায় না ইন্টারনেটের দাম কমুক। কর না কমালে গ্রামের মানুষকে সুলভ মূল্যে ইন্টারনেট দেওয়া সম্ভব নয়।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ডেইলি স্টার সেন্টার মিলনায়তনে টেকনোলজি ইন্ডাস্ট্রি পলিসি অ্যাডভোকেসি প্ল্যাটফর্ম (টিআইপিএপি) আয়োজিত ‘ইন্টারনেট অ্যাকসেস নিশ্চিত করা: চ্যালেঞ্জ ও সুপারিশ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন।

টিআইপিএপির সহসমন্বয়ক ও বিডিজবসের প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম মাশরুরের সঞ্চালনায় বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দেশের শীর্ষস্থানীয় টেলিকম কোম্পানি, ইন্টারনেট সার্ভিস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান, সফটওয়্যার ও ফ্রিল্যান্সিং কমিউনিটির প্রতিনিধিরা।

শুরুতে ফাহিম মাশরুর দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারের চিত্র তুলে ধরেন। তিনি জানান, বাংলাদেশে শহর ও গ্রামের মধ্যে ইন্টারনেটের ব্যবহারে বিশাল পার্থক্য। শহরে যত মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে, গ্রামে তার অর্ধেক মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। গড়ে শহরে একজন ব্রডব্যান্ড ব্যবহারকারী ১০০ গিগাবাইট ডেটা মাসে ব্যবহার করে, গ্রামে এর পরিমাণ গড়ে মাত্র ৬ গিগাবাইট।

ফাহিম মাশরুর আরও জানান, পার্শ্ববর্তী ভারতে গড়ে একজন মোবাইল ডেটা ব্যবহারকারী বাংলাদেশ থেকে তিন গুণ বেশি ডেটা ব্যবহার করে। মোবাইল ডেটা চার্জ বেশি হওয়ায় বাংলাদেশ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর চেয়ে অনেক পিছিয়ে পড়ছে। বিশেষ করে ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ প্রয়োজনীয় সেবা পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে।

বৈঠকে বক্তারা ইন্টারনেট সেবার ওপর ভ্যাট-ট্যাক্স আরোপে মনোনিবেশ না করে সুলভে সব নাগরিকের কাছে এই সেবা পৌঁছে দেওয়ার আহ্বান জানান। নতুন করে আরোপ করা ভ্যাট প্রত্যাহার না করা হলে এনবিআর ও সচিবালয় ঘেরাও করার হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা।

দেশের ইন্টারনেট সংযোগদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সভাপতি ইমদাদুল হক বলেন, ‘সম্পূরক শুল্ক বসানোয় ১ হাজার টাকার প্যাকেজে ১৫৫ টাকা সরকার নিয়ে যাবে। গ্রাহকদের কাছে বিল বেশি চাইলে তাদের সঙ্গে সমস্যার সৃষ্টি হবে। তারা আমাদের ছেড়ে যাবে। বৈধ আইএসপিগুলো গ্রাহক হারাবে। সেসব গ্রাহক অবৈধ আইএসপির কাছে যাবে। ফলে বৈধ আইএসপির গ্রাহক কমে অবৈধ আইএসপির গ্রাহক বাড়বে। আমাদের খরচ যত দিন না কমবে, তত দিন পর্যন্ত গ্রাহক মানসম্মত সেবা পাবে না।’

বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সরকার অপারেটরদের কাছ থেকে শতকরা ৭০-৮০ টাকা নিয়ে যাওয়ায় দেশে মোবাইল ও ইন্টারনেট সেবার মান নেমে গেছে। যেভাবে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, তা প্রত্যাহার করা না হলে আমরা সোম অথবা মঙ্গলবার এনবিআর ঘেরাও করব। প্রয়োজনে সচিবালয়কেও ছাড়ব না। অর্থ উপদেষ্টা কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজ করেছেন। এর জন্য সম্পূর্ণভাবে উনি দায়ী।’

আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট গেটওয়ে অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (আইআইজিএবি) সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন, ‘কর বাড়ানোর ফলে করপোরেট ও প্রান্তিক পর্যায়ে প্যাকেজ ডাউনলোড করছে। এতে কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। প্রবৃদ্ধি কমছে। এটা জাতীয় অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সরকার তা বুঝতে পারছে কি না জানি না। ৯ তারিখের পরই ইন্ডিয়া থেকে অধিকাংশ আইএসপিকে নক করা শুরু করেছে। তারা অফিসে আসতে চাচ্ছে। এটা বৈষম্যবিরোধী সরকারের কাছে কোনোভাবেই আশা করা যায় না।’

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন টেলিযোগ বিশেষজ্ঞ বিল্ডকনের প্রধান মাহতাব উদ্দিন আহমেদ, মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ (অ্যামটব) মহাসচিব লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ জুলফিকার (অব.), মোবাইল অপারেটর রবির চিফ রেগুলেটরি অফিসার মোহাম্মদ সাহেদুল আলম, বাংলালিংকের চিফ রেগুলেটরি অফিসার তাইমুর রহমান, বেসিসের সাবেক সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর প্রমুখ।

আলোচকেরা বলেন, দেশে মোবাইল ডেটা মূল্যের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী সরকারি অতিরিক্ত কর। ১৫ শতাংশ ভ্যাট ছাড়াও ২৩ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক, ২ শতাংশ সারচার্জ, ৬ শতাংশ রেভিনিউ শেয়ারিংসহ আরও নানা ধরনের সরকারি খরচের জন্য মোবাইল ডেটার মূল্য দিন দিন বাড়ছে। গত ১০ বছরে মোবাইলের ওপর কর দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে বলে মোবাইল অপারেটরদের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়, কর ছাড়াও আরও একটি বড় বাধা এনটিটিএন লাইসেন্সধারী দুটি কোম্পানির মনোপলি ব্যবসা। তাদের কারণে গ্রামগঞ্জে ইন্টারনেট ডেটা ট্রান্সমিশন কম খরচে করা যাচ্ছে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত