Ajker Patrika

যৌতুক না পেয়ে স্ত্রীকে হত্যা, ১৬ বছর পর মৃত্যুদণ্ড

বগুড়া প্রতিনিধি
আপডেট : ২৪ জুলাই ২০২২, ১৮: ০৪
যৌতুক না পেয়ে স্ত্রীকে হত্যা, ১৬ বছর পর মৃত্যুদণ্ড

২০০৬ সালের জুনে বগুড়ার উজ্জ্বল হোসেনের সঙ্গে বিয়ে হয় আলো বেগমের। বিয়ের এক মাস না পেরোতেই ওই বছরের ১ আগস্ট স্বামীর ঘর থেকে আলোর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রথমে এটিকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ঘুরিয়ে দেয় মামলার মোড়। 

জানা যায়, আত্মহত্যা নয়, মারধরের ফলে প্রাণ গেছে গৃহবধূ আলো বেগমের। এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তির স্বামী, শাশুড়ি, দেবর, ননদ, ননদের স্বামীসহ পাঁচজনকে আসামি করে বগুড়া সদর থানায় মামলা করে আলোর পরিবার। দীর্ঘ ১৬ বছর পর বিচারে উঠে আসে যৌতুকের জন্য নির্যাতন করে আলোকে হত্যা করেন তাঁর স্বামী। বিচারে স্বামীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আদেশ দিয়েছেন আদালত। 

রোববার (২৪ জুলাই) দুপুরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক এ কে এম ফজলুল হক এ রায় ঘোষণা করেন। 

বিষয়টি আজকের পত্রিকাকে নিশ্চিত করেছেন বগুড়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর সরকারি কৌঁসুলি  (পিপি) নরেশ চন্দ্র মুখার্জী। 

দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম উজ্জ্বল প্রাং (৪০)। তিনি সদর উপজেলার কৈচর দক্ষিণ পাড়া গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে। মামলার শুরু থেকেই পলাতক রয়েছেন উজ্জ্বল। তাঁর অনুপস্থিতিতেই রোববার রায় ঘোষণা করেন বিচারক। রায়ে তাঁকে ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও এক বছর সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।

একই সঙ্গে মামলায় অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় চার আসামিকে বেকসুর খালাস প্রদান করেছেন আদালত। তাঁরা হলেন উজ্জ্বলের ভাই হিরা প্রাং, উজ্জ্বলের মা আলেয়া বেওয়া, উজ্জ্বলের বোন লাভলী বেগম এবং ভগ্নিপতি কাহালুর আলোক্ষছত্র এলাকার মজিবর রহমানের ছেলে নাজমুল হোসেন লাবু। 

মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালের জুন মাসে উজ্জ্বলের সঙ্গে শহরের সূত্রাপুর এলাকার আকবর আলী শেখের মেয়ে আলো বেগমের বিয়ে হয়। বিয়েতে যৌতুক হিসেবে ৩০ হাজার টাকা উজ্জ্বলকে দেয় আলোর পরিবার। পরে বিদেশ যাওয়ার জন্য উজ্জ্বল আরও ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন শ্বশুরবাড়ি থেকে। এ নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডাসহ সালিস হয়। পরে ৫০ হাজার টাকা না দিলে আলো বেগমকে তালাক দেবেন বলেও হুমকি দেন উজ্জ্বল। জবাবে আলো বেগমের পরিবার থেকে আর কোনো টাকা দেওয়া হবে না বলেও উজ্জ্বলকে জানিয়ে দেয়। এরই মধ্যে ২০০৬ সালের ১ আগস্ট বিকেল ৪টার দিকে আলো বেগমের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রথমে বিষয়টি আত্মহত্যা হিসেবে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন উজ্জ্বল। পরে ময়নাতদন্তে উঠে আসে ফাঁসিতে ঝুলে নয়, মারধরের ফলে মৃত্যু হয় আলো বেগমের। 

এ ঘটনায় ১৮ আগস্ট নিহত আলো বেগমের ভগ্নিপতি জাহাঙ্গীর আলম উজ্জ্বলকে প্রধান আসামি করে পাঁচজনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ ১৬ বছর পর রোববার দুপুরে মামলার সাক্ষ্যপ্রমাণে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। 

আলো বেগমের স্বজনেরা জানান, আলো বেগমের বাবা-মা মারা গেলেও ন্যায়বিচারের প্রত্যাশায় তাঁরা মামলা পরিচালনা করে আসছেন। 

বগুড়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১  পিপি নরেশ চন্দ্র মুখার্জী বলেন, ২০০৬ সালের মামলায় স্ত্রী হত্যার দায়ে পলাতক স্বামী উজ্জ্বলকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেছেন আদালত।  এ মামলায় তাঁর পরিবারের চার সদস্যকে খালাস দেওয়া হয়েছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা হলেই মেয়াদ শেষ নতুন পরিচালনা কমিটির

‘মবের হাত থেকে বাঁচাতে’ পলকের বাড়ি হয়ে গেল অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প

ভ্যানিটি ব্যাগ ধরে টান, সন্তানসহ ছিটকে পড়তেই তরুণীর গালে ছুরিকাঘাত

এনসিপিকে চাঁদা দিচ্ছেন ধনীরা, ক্রাউডফান্ডিং করেও অর্থ সংগ্রহ করা হবে: নাহিদ ইসলাম

আ. লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, তারাই সিদ্ধান্ত নেবে: বিবিসিকে প্রধান উপদেষ্টা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত