বিদেশে ক্যারিয়ার: তন্ময়ের গুগল জয়ের গল্প

আনিসুল ইসলাম নাঈম
প্রকাশ : ২৬ জুন ২০২৩, ১০: ১২

তন্ময় কৃষ্ণ দাসের জন্ম ও বেড়ে ওঠা সিলেটের সুনামগঞ্জ জেলায়। সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। এরপর দেশেই ‘থেরাপ বিডি লিমিটেড’ কোম্পানিতে ২ বছর সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরি করেন। ২০২১ সালের মাঝামাঝিতে গুগলে আবেদন করেন এবং পাঁচ ধাপের ইন্টারভিউতে সফলভাবে উত্তীর্ণ হন। ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে গুগলে ‘সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার’ হিসেবে আয়ারল্যান্ডের ডাবলিন ব্রাঞ্চে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি গুগল গ্লোবাল নেটওয়ার্কিংয়ের অপারেশনস লাইফ সাইকেল ইঞ্জিনিয়ারিং টিমে কাজ করছেন। ছয় মাস ধরে ইন্টারভিউর জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার পর যখন অফার লেটার পেলাম, নিজেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। স্টুডেন্ট অবস্থায় সিনিয়রদের দেখতাম বিগ টেক কোম্পানিতে যেতে, তখনো ভাবতে পারিনি, আমি নিজে কখনো যাব।

প্রোগ্রামিং শুরু যেভাবে 
প্রোগ্রামিং সম্পর্কে জেনেছি অল্প বয়সেই। হাইস্কুলে পড়ার সময় বাবা জাভা প্রোগ্রামিংয়ের একটি বই উপহার দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কিছুদিন আগে প্রবলেম সলভিং সম্পর্কে জানতে পারি। ভর্তি পরীক্ষার পর চুয়েটের এক ভাই একটি ফ্রি প্রোগ্রামিং কোর্স নিয়েছিলেন। সেই কোর্স থেকে প্রথমবারের মতো প্রোগ্রামিংয়ে আগ্রহ বাড়ে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর বিভাগের সাইফুল ইসলাম স্যারের হাতে কম্পিটিটিভ প্রোগ্রামিংয়ে হাতেখড়ি। তাঁর উৎসাহেই প্রোগ্রামিংয়ের প্রতি মনোযোগ দেওয়া শুরু করি।

ভোরবেলায় উঠেই প্রস্তুতি
বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকেন্ড ইয়ার থেকে কম্পিটিটিভ প্রোগ্রামিং আর করা হয়নি। পরে পূর্ণকালীন চাকরিতে ঢুকে গেলে প্রস্তুতির জন্য সময় বের করা কঠিন হয়ে যায়। এ কারণে ভোর ৫টায় উঠে প্রস্তুতি নিতাম। অফিস সময়ের আগপর্যন্ত অনুশীলন চলত তিন থেকে চার ঘণ্টা। আর রাতে ঘুমানোর আগেও ঘণ্টাখানেক নতুন টেকনিক শেখার চেষ্টা করতাম।

গুগলে আছে যত পদ
গুগলে অনেক ধরনের চাকরির সুযোগ আছে। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, সাইট রিলায়েবিলিটি ইঞ্জিনিয়ার, নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার, মেশিন লার্নিং ইঞ্জিনিয়ার, মার্কেটিং, সেলস, প্রজেক্ট ম্যানেজার—এসব রোলের জন্য লোক নিয়োগ দেওয়া হয়। গুগলের জব সাইটে সব 
ধরনের ওপেন পজিশন সম্পর্কে 
তথ্য পাওয়া যাবে।

রেফারেলে মিলতে পারে ইন্টারভিউ 
গুগলের জব সাইট থেকে সরাসরি আবেদন করা যায়। আবার লিংকড-ইনে গুগল রিক্রুটারদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেও আবেদন করা যায়। তবে গুগলে আবেদন করার জন্য অন্য কোনো গুগলারের রেফারেল থাকলে ইন্টারভিউ কল পাওয়ার সুযোগ কিছুটা বেড়ে যায়। পরিচিত কোনো গুগলার যদি থাকে, যারা আপনার স্কিল সম্পর্কে জানে। তাদের অনুরোধ করা যেতে পারে রেফার করার জন্য। এই রেফারাল শুধু ইন্টারভিউ কল পেতেই খানিকটা সাহায্য করবে। একবার ইন্টারভিউ কল পেয়ে গেলে তারপর নিজের ইন্টারভিউ পারফরম্যান্স সবকিছু নির্ধারণ করবে। তখন রেফারেল আছে কি না, সেটা দেখবে না।

ইন্টারভিউর প্রক্রিয়া যেভাবে
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার রোলের জন্য বেশ কয়েক ধাপে ইন্টারভিউ হয়ে থাকে। শুরু হয় ফোন ইন্টারভিউ দিয়ে। ফোন ইন্টারভিউ সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করতে পারলে তারপর হয় ভার্চুয়াল অনসাইট রাউন্ড। এই রাউন্ডও অনেকটা ফোন ইন্টারভিউর মতোই, কিন্তু এই রাউন্ডে পরপর তিন থেকে পাঁচটি ইন্টারভিউ হয়। প্রতি ইন্টারভিউতে আলাদা ইন্টারভিউয়ার থাকে, আর মার্কিংও হয় আলাদাভাবে। এর মধ্যে একটা ইন্টারভিউ একটু আলাদা হয়। সেটাকে বলে গুগলিনেস রাউন্ড। এখানে ক্যান্ডিডেটের লিডারশিপ, টিমওয়ার্ক ইত্যাদি দক্ষতার পরীক্ষা নেওয়া হয়। শুধু এই রাউন্ড ছাড়া বাকি সব রাউন্ডেই নেওয়া হয় কোডিং টেস্ট। এগুলোর রেজাল্টের ওপর ভিত্তি করেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

যত সময় লাগতে পারে
ইন্টারভিউগুলো সাধারণত এক মাসের মধ্যেই হয়ে যায়। এরপর প্রায় দুই সপ্তাহ পর্যন্ত লেগে যায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পেতে। ইন্টারভিউ রাউন্ডে উত্তীর্ণ হলে তারপর আসে টিম ম্যাচিং পর্ব। বিভিন্ন টিমের সঙ্গে কথা বলে নিজের ও টিমের প্রেফারেন্স ম্যাচ করলে তখন অফার লেটার পাঠানো হয়। কিন্তু অফার লেটার পাওয়ার পরেও ব্যাকগ্রাউন্ড চেক, ভিসা, ওয়ার্ক পারমিট ইত্যাদি পেতে অনেকটা সময় লেগে যায়। আমার অফার লেটার পাওয়া থেকে ফাইনালি জয়েন করতে ছয় থেকে সাত মাস লেগেছিল।

যাদের অনুপ্রেরণা পেয়েছি 
বাবা-মা আমার ওপর কোনো কিছু চাপিয়ে দেননি। নিজের সিদ্ধান্ত সব সময় নিজে নিয়েছি। এ জন্য ক্যারিয়ারের সিদ্ধান্ত নিজের মতো করে নিতে পেরেছি। বাবা-মা সব সময় আমাকে সমর্থন দিয়েছেন। 

নতুনদের জন্য পরামর্শ
শুধু দক্ষতা থাকলেই হবে না, 
দক্ষতার প্রমাণও দিতে হবে। প্রোগ্রামিং কম্পিটিশনে ভালো রেটিং, ভালো ভালো প্রজেক্ট, কোম্পানিতে ভালো কাজের দক্ষতা—এসবই প্রমাণ হিসেবে কাজে দেয়। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার লক্ষ্য থাকলে নিজেকে প্রবলেম সলভিং ইন্টারভিউর জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। এ জন্য ছাত্র অবস্থায় কম্পিটিটিভ প্রোগ্রামিংয়ে ফোকাস দিতে হবে। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের ইন্টারভিউতেও আসলে প্রবলেম সলভিং করতে হয়। কিন্তু প্রোগ্রামিং কমপিটিশনের সঙ্গে পার্থক্য হলো, এখানে শুধু প্রবলেম সলভ করলেই হয় না, প্রবলেম থেকে সলিউশনে কীভাবে পৌঁছানো হয়েছে, পুরো প্রসেসটা ইন্টারভিউতে ক্লিয়ার করতে হয়। সমাধান দ্রুত হলেই হবে না, কোডের কোয়ালিটিও ভালো হতে হবে। আর ইন্টারভিউতে যোগাযোগের দক্ষতাও গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া ইংরেজিতে স্পষ্টভাবে কথাবার্তা বলার দক্ষতা থাকা জরুরি।

অনুলিখন: আনিসুল ইসলাম নাঈম

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে যেসব শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন

ভারতের পাল্টা আক্রমণে দিশেহারা অস্ট্রেলিয়া

ঢাকা কলেজে সংঘর্ষকালে বোমা বিস্ফোরণের ছিটকে পড়েন সেনাসদস্য—ভাইরাল ভিডিওটির প্রকৃত ঘটনা

ঐশ্বরিয়ার বিচ্ছেদের খবরে মুখ খুললেন অমিতাভ

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত