Ajker Patrika

হল বাঁচাতে কোন পথে হাঁটবেন মালিকেরা

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৫ জুলাই ২০২১, ১২: ৩৪
হল বাঁচাতে কোন পথে হাঁটবেন মালিকেরা

আগে থেকেই নানা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন হলের মালিকেরা। করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘদিন হলগুলো বন্ধ। সরকার থেকে ঋণ দেওয়ার কথা বলা হলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে ঋণের চেয়ে অনুদানের কথাই ভাবছেন হলের মালিকেরা।

নব্বইয়ের দশকের শুরুতে সারা দেশে সিনেমা হল ছিল ১ হাজার ৪৩৫টি। গত দুই দশকে কমতে কমতে তা ২০০-এর নিচে নেমে এসেছে। এই শিল্পে নিয়োজিত মানুষের সংখ্যাও ব্যাপকভাবে কমছে। প্রদর্শক সমিতির দেওয়া তথ্যানুযায়ী, মাত্র ১০ বছর আগেও সারা দেশের সিনেমা হলগুলোর সঙ্গে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ সম্পৃক্ত ছিল। এখন তা নেমে এসেছে ৫ হাজারের নিচে। হলমালিকেরা বলছেন, চার দশকের এই চিত্রই বলে দেয় এভাবে চললে ১০ বছর পর দেশের প্রেক্ষাগৃহগুলোর জায়গা হবে ইতিহাসের পাতায়।

কাজী শোয়েব রশীদবাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাবেক সভাপতি ও মধুমিতা হলের মালিক ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেছেন, ‘এক দেশে দুই নিয়ম তো হতে পারে না। আমাদের হলগুলো বন্ধ রাখতে হচ্ছে, কিন্তু সিনেপ্লেক্সগুলো ঠিকই তাদের প্রদর্শনী চালিয়ে যাচ্ছে। তাও আবার বিদেশি চলচ্চিত্র। গত তিন ঈদেই আমাদের হলগুলো বন্ধ। অসংখ্য চলচ্চিত্রে অর্থলগ্নি হয়ে আছে। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে অন্যান্য কার্যক্রম চলেছে, কেবল হল খোলা হলো না। তাহলে কীভাবে হলমালিকেরা চলবেন?’

হলমালিকদের ঋণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু ঋণ নিয়ে কী করবে যদি হলে ছবি না থাকে–এমন প্রশ্ন উঠেছে হলমালিকদের মনে। হলমালিক বা প্রদর্শক সমিতির বর্তমান সভাপতি কাজী শোয়েব রশিদ বলছেন, ‘করোনার কারণে অনেক হলমালিক সচ্ছলতা হারিয়েছেন, এখন আর ঋণের বোঝা নিতে চাইছেন না। ৫ শতাংশ সুদ দেওয়া অনেকের জন্য কঠিন হয়ে যাবে। আমরা এটাকে ২ শতাংশ সুদে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেওয়ার জন্য প্রস্তাব দিয়েছিলাম। তা ছাড়া গত রোজার ঈদে হল খুলেছিলাম; কিন্তু কোনো ছবি মুক্তি দেওয়া হলো না। তাহলে ঋণ নিয়ে কী করব! আমাদের এখন অনুদান দরকার। সরকারি সহযোগিতা আর পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া হলগুলো টিকিয়ে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়ছে।’

জায়েদ খানহল মালিক সমিতির উপদেষ্টা মিয়া আলাউদ্দিন বলেছেন, ‘ঋণের কথা বললেও এখন পর্যন্ত কোনো ঋণ পাইনি। ব্যাংকে গেলে তাঁরা বলেন, “আমরা কোনো সার্কুলার পাইনি।” আমাদের অনুদান দেওয়ার কথা বলা হলেও এক বছর হয়ে গেছে এর বাস্তবায়ন হয়নি। হলমালিকদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁরা হতাশা প্রকাশ করে বলেছেন, এভাবে চলতে থাকলে হল বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া পথ থাকবে না। কাজেই অতিসত্বর সরকারি অনুদানের মাধ্যমে হলগুলো টিকিয়ে রাখার জন্য সরকারি পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।’

শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘হলমালিকেরা যখন লাইসেন্স নিয়েছিলেন, লিজ নিয়েছিলেন। তখন শর্ত ছিল শুধু সিনেমা হল থাকবে। এখন ওখানে মার্কেট করছেন। এটা ঠিক না। সরকার ঋণ দিচ্ছে, প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। খুবই অল্প সুদে ঋণ দিচ্ছে। কিন্তু হলমালিকেরা হাত গুটিয়ে বসে থাকলে আমরা প্রতিষ্ঠানকে কীভাবে ধুয়ে–মুছে সময়োপযোগী করব? আমাদের অনেক ছবি প্রস্তুত আছে। কিন্তু প্রদর্শনের জায়গা নেই। তাঁরা যে বিদেশি ছবি চালানোর পাঁয়তারা করছেন, সেটা হতে পারে না।’

ইফতেখার উদ্দিন নওশাদপ্রযোজক জাহিদ হাসান অভি বলেন, ‘বিশ্বের অনেক দেশেই পুরোনো হলগুলো মেরামত করে সময়োপযোগী করা হচ্ছে। আর আমাদের দেশের হলগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ছবি প্রদর্শনের জন্য যদি হল না থাকে, তাহলে ছবি বানিয়ে কী হবে? জাতির জনকের হাত ধরে গড়ে ওঠা এই শিল্পমাধ্যমটিকে বাঁচিয়ে তুলতে এখনই যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।’

দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সুনাম কুড়াচ্ছে অনেকের ছবি। অথচ হলের অভাবে ব্যবসায়িক সাফল্য মিলছে না দেশে। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুতই সরকারের পক্ষ থেকে অনুদান, সঠিক দিকনির্দেশনা আর সহযোগিতা আশা করছেন হলমালিকেরা।

জাহিদ হাসান অভি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গণপিটুনিতে নিহত জামায়াত কর্মী নেজাম ও তাঁর বাহিনী গুলি ছোড়ে, মিলেছে বিদেশি পিস্তল: পুলিশ

রাজধানীতে ছিনতাইকারী সন্দেহে ইরানের দুই নাগরিককে মারধর

এক ছাতায় সব নাগরিক সেবা

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

তানভীর ইমামের বাড়ি ভেবে গুলশানের একটি বাসায় মধ্যরাতে শতাধিক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ, তছনছ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত