Ajker Patrika

চলচ্চিত্রে ভাষা আন্দোলন

শ্যামল কান্তি ধর
আপডেট : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১১: ২৭
চলচ্চিত্রে ভাষা আন্দোলন

বাংলাদেশের সাহিত্য-সংস্কৃতি ও শিল্পের অন্যান্য শাখায় একুশে ফেব্রুয়ারি কিংবা ভাষা আন্দোলনের স্বরূপ মোটামুটিভাবে প্রতিবিম্বিত হলেও চলচ্চিত্র শিল্পে এর প্রতিফলন হতাশাজনক। এখন পর্যন্ত যে কয়েকটি চলচ্চিত্রের নাম ঘুরেফিরে আলোচনায় আসে এবং একুশে ফেব্রুয়ারিতে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে প্রদর্শিত হয়, সেগুলোও একুশে ফেব্রুয়ারির ইতিহাস ও আন্দোলন নিয়ে কোনো পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্র নয়। তবু এই চলচ্চিত্রগুলোর কারণে আমাদের লজ্জা কিছুটা হলেও নিবারিত হয়। 

এর মধ্যে যে চলচ্চিত্র সবচেয়ে বেশি আলোচিত, তা হচ্ছে প্রতিভাবান চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান পরিচালিত ‘জীবন থেকে নেয়া’, যা উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে নির্মিত হলেও তাতে একুশের প্রসঙ্গ ও প্রেক্ষাপট উঠে আসে নানা রূপকে। চলচ্চিত্রটির শুরু ও শেষ হয় একুশে ফেব্রুয়ারিকে স্মরণ করেই। ‘জীবন থেকে নেয়া’ শুধু গণঅভ্যুত্থান কিংবা একুশে ফেব্রুয়ারির জন্যই আলোচিত নয়, তা তার নির্মাণশৈলী ও চলচ্চিত্রের নিজস্ব কিছু ভাষার ব্যবহারের কারণেও বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসের এক মাস্টারপিস। ‘অক্টোবর বিপ্লব ও সোভিয়েত চলচ্চিত্র’ নামক চলচ্চিত্রবিষয়ক এক প্রবন্ধে জহির রায়হান লিখেছেন—

‘সিনেমা মানুষের সৃষ্টি ক্ষমতাকে প্রকাশের এবং বিকাশের এক নতুন মাধ্যমের সন্ধান দিয়েছে, যার শক্তি অপরিসীম। সিনেমা হলো কবিতা। সিনেমা হলো উপন্যাস। সিনেমা হলো সংগীত। সিনেমা হলো পেইন্টিং। সিনেমা হলো নাটক। সিনেমা হলো বিজ্ঞান। সিনেমা হচ্ছে সবকিছুর সমষ্টি। এ এক যৌথ কলা। অথচ কোনো একটির একক অস্তিত্ব এখানে নেই। সবকিছু ভেঙেচুরে, সবকিছুর সমন্বয়ে গড়ে ওঠা এক বৈজ্ঞানিক শিল্পকর্ম।’ 

একটি পরিবারের কাহিনি দিয়ে তৎকালীন রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচার যেমন, তেমনি বাঙালির মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকেও মূর্ত করেছেন জহির রায়হানজহির রায়হান এই প্রবন্ধ লিখেছিলেন ১৯৬৭ সালে, আর ১৯৭০ সালে নির্মিত ‘জীবন থেকে নেয়া’ সিনেমায় তাঁর এই ভাবনার প্রকাশ ঘটিয়েছেন পুরোদমে। সবকিছু ভেঙেচুরে, সবকিছুর সমন্বয়ে এক পরিবারের কাহিনির আড়ালে বিভিন্ন রূপক ও মন্তাজের মাধ্যমে পাকিস্তানি শাসকদের স্বৈরতন্ত্রের স্বরূপই ফুটিয়ে তুলেছেন ৷ পরিবারের প্রধান কর্তৃ (রওশন জামিল) যেন সাক্ষাৎ আইয়ুব খানের প্রতিভূ হয়ে উপস্থিত হন, যিনি তুচ্ছার্থে বলতে পারেন—

‘একুশে ফেব্রুয়ারি? সেটা আবার কী?’ 

কাহিনির আবর্তনে এক সময় এই দাম্ভিক রওশন জামিলকে আদালতের কাঠগড়ায় দেখতে পাওয়া যায়, যেখানে তাঁর স্বামী খান আতাউর রহমান প্রসঙ্গক্রমে ক্ষুব্ধ হয়ে বিচারককে উদ্দেশ্য করে বলেন—

‘মাননীয় বিচারক আপনি বলতে পারেন, বাংলাদেশের কোন বাঙালি জানে না একুশে ফেব্রুয়ারি কী? অথচ এই মহিলা জানেন না একুশে ফেব্রুয়ারি কী?’ 

এ যেন পাকিস্তানি স্বৈরশাসককেই দাঁড় করানো হলো জনতার আদালতে। আনোয়ার হোসেনের অমর একুশে লেখা পোস্টার লেখনির শটের মাধ্যমে শুরু হয় ‘জীবন থেকে নেয়া’। প্রভাতফেরির দৃশ্যধারণে জহির রায়হান বিভিন্ন প্রতিবাদী পোস্টারের ক্লোজ আপের প্রতিও আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন, যেখানে আব্দুল গাফফার চৌধুরী রচিত চিরচেনা একুশের গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ আবহ সংগীত হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মিছিলের লং শট থেকে প্যানিং করে ক্লোজ আপে দেখা যায় মায়ের কোলে ভয়ার্ত শিশুর ছবি, যাদের দিকে এগিয়ে আসছে শকুনের থাবা। এর পর আসে চোখবাঁধা ছাত্রনেতাদের ছবি, শহীদ ভাষা সৈনিকদের নাম ফলক। 

আমরা স্মরণ করতে পারি সেই দৃশ্যের, যেখানে মিছিলের ভিড়ে রাজ্জাক ও সুচন্দার পরস্পরকে খোঁজার সময়, কথোপকথনের সময় ক্লোজ আপ শটে নেওয়া পোস্টারগুলোও যেন কথা কয়, যাতে লেখা ছিল ‘কৃষক মজদুর এক হও’, ‘শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’, ‘১১ দফা মানতে হবে’, ‘অন্ন চাই বস্ত্র চাই’ ইত্যাদি। 

আনোয়ার হোসেন, সুচন্দা, রোজী আফসারী এবং আমজাদ হোসেনের মিলিত কণ্ঠে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের চিত্রায়ণের সাথে গ্রামের প্রাকৃতিক দৃশ্যের শটের প্রতিটি ফ্রেমের বিন্যাস অনন্য হয়ে ওঠে এ সিনেমায়। গানের প্রতিটি লাইনের সাথে পারিপার্শ্বিকতার ব্যাঞ্জনাময় ডিটেলে ও গ্রাম বাংলার চিরায়ত দৃশ্যের পটভূমির মাধ্যমে সার্থক এক সিনেমা ভাষার ব্যবহার হয়, যেখানে চরিত্রদের ফ্রেমের কোনায় রেখে গ্রাম বাংলার দৃশ্যকে প্রধান করে তোলা হয়। 

অনবদ্য সম্পাদনা ও মন্তাজের ব্যবহারে চলচ্চিত্রটিতে অনন্য শিল্পমাত্রা যোগ হয়। সুচন্দার কোলে দুধ পানরত নবজাতকের শটের সাথে তার বাবার (রাজ্জাক) মুষ্টিবদ্ধ স্লোগানের শটের সংঘর্ষ, যেখানে ওই শিশুর মুক্তভাবে বড় হওয়ার অধিকারেরই জানান দেয়। যেখানে রাজ্জাকের কণ্ঠের স্লোগানে উচ্চারিত হয়, বাঁচার মতো বাঁচতে চাই। কী এক অপূর্ব মন্তাজ। এ দৃশ্য আইজেনস্টাইনের মন্তাজ তত্ত্বকেই মনে করিয়ে দেয়, যেখানে শটের সাথে শটের সংযোগ নয়, সংঘর্ষই প্রধান। অর্থাৎ, দুটি বিপরীত শটের সংঘর্ষে তৃতীয় অর্থ প্রকাশিত হয়। 

‘জীবন থেকে নেয়া’ চলচ্চিত্রের অন্যান্য দৃশ্যেও মন্তাজের অপূর্ব ব্যবহার দেখতে পাওয়া যায়। রওশন জামিলের শত বাধা উপেক্ষা করে রাজ্জাক-সুচন্দা এবং শওকত আকবর-কাজী রোজীর রোমান্স ও মিলনের দৃশ্যায়নে জহির রায়হান প্রবহমান সময়কে প্রকাশ করেন বিভিন্ন স্থিরচিত্রের মাধ্যমে। যেমন ক্লোজআপে বিছানার ওপর শুধু দুই জোড়া পায়ের ছন্দ, হাতের ওপর হাত এবং তার বিপরীতে এক্সট্রিম বিগ শটে রওশন জামিলের অগ্নি চোখে যেন পাকিস্তানি স্বৈরশাসকের অগ্নি চোখ প্রতিস্থাপিত হয়, যা উপেক্ষা করেই বাঙালি জেগে উঠেছিল নিজস্ব সংস্কৃতিতে ও মুক্তির সন্ধানে। ঘরের দেয়ালজুড়ে স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে পোস্টার দেখে রওশন জামিলের হুংকারও আমাদের পাকিস্তানি শাসকদের হুংকারকেই মনে করিয়ে দেয়। জেলে থাকা রাজবন্দীদের কণ্ঠে নজরুলের ‘কারার ওই লৌহ কপাট’ গানটির সাথে উড়ন্ত পাখির বুকের দিকে ছুটে আসা তীরের ছবির মন্তাজে অনেক না বলা কথাই বলা হয়ে যায়।’ আবার ‘দুনিয়ার যত গরিবকে আজ জাগিয়ে দাও’ শীর্ষক গণসংগীতের দৃশ্যের পুরোটাই ক্লোজআপে ধারণ করা হয়, যেখানে মাঝেমধ্যেই শুধু হাতিয়ারের ছবি পুরো ফ্রেমে থাকে। হাতিয়ার কাঁধে শ্রমিকদের মুখের অভিব্যক্তিতে শ্রমিক শ্রেণির মুক্তির দাবি আরও জোরালোভাবে ফুটে ওঠে যেন, ঠিক যেমন খান আতাউর রহমানের কণ্ঠে গাওয়া ‘এ খাঁচা ভাঙব আমি কেমন করে’ গানটি স্বাধীনতার আকুতিকেই প্রকাশ করে। 

আমরা স্মরণ করতে পারি সেই দৃশ্যেরও, যেখানে মিছিলের মুষ্টিবদ্ধ হাত, স্লোগান ও প্রতিবাদী পোস্টারের সাথে মধুর (আমজাদ হোসেনে) ক্লোজআপ শটে তাঁর মুখের অভিব্যক্তির পরিবর্তনগুলো স্পষ্ট হয়ে ফুটে ওঠে। আমরা বুঝতে পারি, দিন বদলের স্বপ্নের এ মিছিল সহজ-সরল মধুকেও একজন বিপ্লবীতে পরিবর্তন করছে। তার পর গুলির শব্দের সাথে দেখা গেল শূন্য থেকে মিছিলের হাতগুলো একের পর এক নিচে পড়ছে, শত শত পোস্টার পড়ছে। এর পর মধুর গুলিবিদ্ধ মৃতদেহের শটে ইতিহাসের এক অধ্যায়কে তুলে ধরা হয় নিখুঁত সম্পাদনায়। 

একুশে ফেব্রুয়ারির মাধ্যমেই পাকিস্তানি স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছিল বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতির মুক্তির আন্দোলন, যার ধারাবাহিকতায় মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশের জন্ম। তাই ১৯৭০ সালে নির্মিত এই চলচ্চিত্রে ঘুরেফিরে একুশ আসে প্রাসঙ্গিকভাবেই। জহির রায়হান বুঝতে পেরেছিলেন বাঙালির মুক্তি অনিবার্য। তাই রাজ্জাক-সুচন্দার সন্তানের নাম হয় ‘মুক্তি’। জেল থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত রাজবন্দীদের কোলে কোলে ঘুরে মুক্তি আর জনগণের কণ্ঠে উচ্চারিত হয়, ‘মুক্তি, মুক্তি, মুক্তি’। শহীদ মিনারের সামনে দাঁড়িয়ে শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শেষ হয় ‘জীবন থেকে নেয়া’ চলচ্চিত্রটি, যেখানে দাঁড়িয়ে ভাষা শহীদদের উদ্দেশ্যে রাজনীতিক আনোয়ার হোসেন বলেন—

তৌকির আহমেদ পরিচালিত ‘ফাগুন হাওয়ায়’ মফস্বলের প্রেক্ষাপটেই হাজির করেছে গোটা রাষ্ট্রকে‘সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, তোমরা আমাদের দোয়া কর, আশীর্বাদ কর। আমরা যেন এই দেশটাকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে পারি। এ দেশের প্রতিটি ঘরে-সংসারে যেন সুখ ও শান্তি এনে দিতে পারি। এ দেশের প্রতিটি ঘর থেকে যেন ঈর্ষা-বিদ্বেষ-লোভ-লালসা-হিংসা-ঘৃণা-অবিচার ও অত্যাচারের ক্লেদ যেন চিরতরে মুছে দিতে পারি।’ 

‘জীবন থেকে নেয়া’ চলচ্চিত্রটি দেখতে হয় গভীর নিমগ্নতায় এবং তার ভাষা বুঝতে হয় চলচ্চিত্রতত্ত্বের অনুভব ও অনুধাবনে। তাই বোধ হয় চলচ্চিত্রের শুরুতেই জহির রায়হান লিখেন—

‘একটি দেশ-একটি সংসার-একটি চাবির গোছা-একটি আন্দোলন-একটি চলচ্চিত্র।’ 

আমাদের আফসোস এই যে, পরবর্তীকালে হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া বাংলাদেশের কোনো চলচ্চিত্রই ‘জীবন থেকে নেয়া’-এর উত্তরাধিকার বহন করতে পারেনি। এখানে উল্লেখ্য যে, ভাষা আন্দোলন নিয়ে জহির রায়হান ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ নামে আরেকটি চলচ্চিত্রের নির্মাণের কাজ শুরু করলেও তা নানা বাধার কারণে সমাপ্ত হয়নি। 

‘জীবন থেকে নেয়া’-এর নির্মাণের প্রায় ৪৯ বছর পর ২০১৯ সালে একুশে ফেব্রুয়ারি নিয়ে আরেক তরুণ পরিচালক তৌকির আহমেদ নির্মাণ করলেন ‘ফাগুন হাওয়ায়’। ‘ফাগুন হাওয়ায়’ ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস নিয়ে নির্মিত কোনো সিনেমা না হলেও এটা ভাষা আন্দোলনের পটভূমিকায় নির্মিত এক চলচ্চিত্র। জহির রায়হান যেমন এক পরিবারের কাহিনির আড়ালে তুলে এনেছেন তৎকালীন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, সেখানে তৌকির আহমেদ একটি মফস্বল থানার কাহিনির বিন্যাসে আমাদের ভ্রমণ করিয়ে আনেন ভাষা আন্দোলনের চেতনায় ও সংগ্রামে। 

সিনেমার শুরুতে পাকিস্তানি এক পুলিশ অফিসারের (যশপাল শর্মা) লঞ্চে ওঠার সময় বাঙালি প্রবীণ ডাক্তারকে (আবুল হায়াত) পাশ দিয়ে ধাক্কা দিয়ে চলে যেতে চাওয়ার দৃশ্য যেন ঠিক পশ্চিম পাকিস্তানের স্বৈরশাসকদের পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের ধাক্কা দিয়ে লাগতে আসার দম্ভকেই মনে করিয়ে দেয়। লঞ্চের ডেকে গান গাইতে থাকা এক বাউলের প্রতি পুলিশ অফিসার জামসেদের গান বন্ধ করার নির্দেশ ও তাঁকে লাঞ্ছিত করার মাধ্যমে পাকিস্তানি শাসকদের বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির ওপর আঘাতের আরেক রূপ তুলে ধরা হয়েছে। লঞ্চের ডেকে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নাসির প্রতিবাদী বাঙালিদের প্রতিনিধি হিসেবেই আবির্ভূত হন। তাই বাউল তাঁর গান থামিয়ে দিলেও নাসির হাতে তুলে নেন বাউলের দোতারা; সম্পূর্ণ করেন বাউলের অসম্পূর্ণ গান। বদ মেজাজি, অসৎ ও অহংকারী পুলিশ অফিসার জামসেদের উপস্থিতি সিনেমাটির অধিকাংশ জায়গাজুড়ে আমরা দেখতে পাই। তবে তা কোনোভাবেই বাহুল্য বলে মনে হয় না। দাম্ভিক এই অফিসার শান্তিনগর থানার ওসি হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে আসেন শাস্তিমূলক পদায়ন হিসেবে। এসেই তাঁর স্বৈরতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে চান অধীনস্থ অফিসার এবং এলাকাবাসীর ওপর। জামসেদ দাম্ভিকতার সঙ্গে ঘোষণা করেন—উর্দু হবে এই অঞ্চলের জনগণের একমাত্র ভাষা। এই প্রসঙ্গে তাঁর বারবার ‘উর্দু, উর্দু এবং উর্দু’ সংলাপে আমরা চোখের সামনে যেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সেই রূপটিই দেখতে পাই। 

জহির রায়হানের ‘জীবন থেকে নেয়া’ যেখানে শুরু, শেষ দৃশ্যে সেখানেই গিয়ে মিশেছে যেন ‘ফাগুন হাওয়ায়’পরিচালক তৌকির আহমেদ পাকিস্তানি শাসকদের প্রতিনিধি হিসেবে আমাদের সামনে হাজির করেন জামসেদকে। এই চরিত্রকে একটু বিশ্লেষণ করলেই তৎকালীন শাসকগোষ্ঠীর একটা পরিচয় পাওয়া যায়, যা নতুন প্রজন্মকে ইতিহাস চর্চায় আগ্রহী করে তুলবে। 

পুলিশ অফিসারের চরিত্রে যশপাল শর্মার অনবদ্য অভিনয়ে, সায়েম ও তিশার প্রতিবাদে ইতিহাস আরও জীবন্ত হয়ে ওঠে রুপালি পর্দায়। এই পুলিশ অফিসারের মতোই পাকিস্তানি সেনারা বাঙালিদের ওপর অত্যাচার ও নির্যাতনের মাধ্যমে রক্তের হোলি খেলায় মেতে উঠেছিল ১৯৭১ সালে। ‘ফাগুন হাওয়ায়’-এর কিছু নমুনা আমরা দেখতে পাই। কামুক, লোভী জামসেদের হাত থেকে রেহাই পায়নি থানার নির্বাক ঝাড়ুদার ঝুমুর। লাল শাড়ি, আলতা, লিপস্টিক দেখে ঝুমুরের বাবা (ফজলুর রহমান বাবু) যখন জামসেদের প্রশংসা করেন, তখন বোবা ঝুমুর অসহায় চোখে তাকায় তার বাবার দিকে। বাবা আপনমনে নৌকা চালিয়ে যায় নদীর বুক চিরে। ঝুমুর কীভাবে বোঝাবে তার বাবাকে তার অপমানের কথা। 

ঠিক সেই মুহূর্তে পরিচালক তৌকির আহমেদ পরিচালক হিসেবে তাঁর সার্থকতার পরিচয় দেন। আমরা দেখতে পাই, নির্বাক ঝুমুর অশ্রুসজল চোখে আলতার গুঁড়ো ভাসিয়ে দেয় নদীর বুকে। লাল হয় নদীর জল। যেন রক্ত ভাসছে নদীর বুকে। এ তো ঝুমুরের অপমানের রক্ত! এ আমাদের শহীদের রক্ত! যাদের রক্তের বিনিময়ে পেয়েছি আমাদের বাংলা ভাষা, আমাদের স্বাধীনতা। বাকহীন ঝুমুর যখন জামসেদের লালসার শিকার হচ্ছে, তখন পরিচালক আমাদের নিয়ে যান সায়েম ও দীপ্তির নাটকের দলের ‘নীলদর্পণ’ নাটকের রিহার্সালে, যেখানে অত্যাচারী ইংরেজ নীলকরদের হাতে অত্যাচারিত হচ্ছে আরেক বাঙালি নারী, যে চিৎকার করে বলে, ‘আমাকে ছেড়ে দাও সাহেব, মোরে বাড়ি যেতে দাও’। এ তো বোবা ঝুমুরের আর্তনাদ। তৌকির আহমেদ নিপুণ এই শটের মন্তাজে কষ্টের বিশালতাকে ফুটিয়ে তুলেছেন। না দেখিয়ে, না বলে যা বলতে পেরেছেন, তা আরও শক্তিশালী হয়েছে। 

‘ফাগুন হাওয়ায়’ চলচিত্রটি টিটো রহমানের ছোট গল্প ‘বউ কথা কও’-এর অনুপ্রেরণায় নির্মিত। এই গল্পে আজিজ সাহেব একজন পাকিস্তানি পুলিশ অফিসার, যিনি বাংলা ভাষা রপ্ত করেছেন বাঙালিদের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার সুযোগ লাভের জন্য। কিন্তু উর্দু ভাষার প্রতি তাঁর সবিশেষ দুর্বলতা। উর্দু ভাষাকে বাংলার সর্বস্তরে চালুর জন্য তিনি জিন্নাহর কাছে একটা চিঠিও লেখেন। কিন্তু আজিজ সাহেব একদিন শুনতে পান একটি পাখিও ‘বউ কথা কও’ বলে ডাকছে। তাই তিনি পাখিদের ভাষাও উর্দু করার জন্য জিন্নাহের কাছে আরেকটি চিঠি লেখেন। আজিজ সাহেব একটি খাঁচা বন্দী পাখি পুষতে শুরু করেন এবং পাখিটিকে ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ শেখানোর চেষ্টা করেন। মাস ঘুরে বছর যায়; কিন্তু পাখিটি ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ বলে না। আজিজ সাহেব মহা বিরক্ত হন। তিনি পাখিটিকে অনেক অত্যাচারের মাধ্যমে খাবার ও পানি দেওয়াও বন্ধ করে দেন। একদিন পাখিটির একটি ডানাও ভেঙে দেন। তবুও পাখি উর্দু শেখে না। আজিজ উপলব্ধি করেন, যে বোকা পাখিটিকে তিনি অনেক চেষ্টা করেও উর্দু শেখাতে পারছেন না, জিন্নাহ সাহেব বুদ্ধিমান বাঙালিকে কীভাবে উর্দু শেখাবেন। তিনি পাখিটিকে মুক্ত করে দেন। পাখিটি উড়ে যায় আকাশের সীমানায় মুক্তির দিকে, স্বাধীনতার দিকে, ইচ্ছেমতো বলার দিকে। 

তৌকির আহমেদের ‘ফাগুন হাওয়ায়’ পুলিশ অফিসার জামসেদের জিন্নাহ সাহেবের কাছে পাঠানো চিঠি পৌঁছায় না। বুদ্ধিমান বাঙালি অফিসার তা পুড়িয়ে ফেলে। জামসেদ পাখিদের উর্দু শেখানোর পাশাপাশি মানুষদেরও উর্দু শেখানোর ব্যবস্থা করে এবং তা রীতিমতো মৌলভি রেখে। তৌকির আহমেদ ছোট গল্পের মূলভাব ঠিক রেখে ‘ফাগুন হাওয়ায়’-এর কাহিনি এগিয়ে নিয়ে যান আরও বিস্তৃতভাবে। বাংলা নাটকের প্রদর্শনী নিষিদ্ধ করাসহ সর্বস্তরে উর্দু ভাষা প্রচলনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে নিহত নাট্যকর্মীর মিছিলে তৌকির আহমেদ ফুটিয়ে তোলেন বাঙালির বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকে। যে আন্দোলন ও মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়ে যেন একসময় মিশে যায় ঢাকার সেই মিছিলের সাথে, যে মিছিলের রক্তরাঙা পথ পেরিয়ে বাংলা হয় আমাদের ভাষা। ‘জীবন থেকে নেয়া’ যেখানে শুরু হয়েছিল প্রভাতফেরির দৃশ্যের মাধ্যমে, সেখানে ‘ফাগুন হাওয়ায়’ শেষ হয় প্রভাতফেরির দৃশ্যে এসে। 

আহমদ ছফার গল্প ‘ওংকার’ অবলম্বনে শহীদুল ইসলাম খোকন নির্মিত ‘বাংলা’ এক অন্যরকম বাস্তবতাকে সামনে এনে হাজির করেছেআরেকটি আশার কথা এই ছিল যে, এই দুই চলচ্চিত্রের মাঝখানে বাণিজ্যিক ধারার চলচ্চিত্র পরিচালক শহীদুল ইসলাম খোকন আহমদ ছফার উপন্যাস ‘ওংকার’ অবলম্বনে নির্মাণ করেন চলচ্চিত্র ‘বাংলা’। এই চলচ্চিত্র নির্মাণে ও সম্পাদনায় শহীদুল ইসলাম খোকন তাঁর নিজস্ব ফর্মুলা ফিল্মের অনেক বাইরে থেকে কাজ করেছেন। বাংলা চলচ্চিত্রটি যদিও গণ-অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে নির্মিত, তবু মিছিলের শব্দ শুনে বোবা মেয়েটির রক্তাক্ত মুখে উচ্চারিত ‘বাংলা’ শব্দটির সাথে আমাদের বাংলা ভাষার জন্য শহীদদের রক্ত ও আত্মত্যাগ খুবই অর্থপূর্ণভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে যায়। এই চলচ্চিত্রে বাণিজ্যিক ধারার আরেক জনপ্রিয় নায়িকা শাবনূর তাঁর অভিনয়ে নিজেকেই ছাড়িয়ে গেছেন। 

বাংলাদেশের ইতিহাসের গৌরবোজ্জ্বল এক অধ্যায়ের নাম একুশে ফেব্রুয়ারি, যখন বাঙালি জেগে উঠেছিল নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার আন্দোলনে। অনেক সংগ্রাম, আন্দোলন ও শহীদের রক্তে রাঙা পথ পেরিয়েই বাংলা আমাদের প্রাণের ভাষা, মাতৃভাষা। একুশে ফেব্রুয়ারি আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। তাই, একুশে ফেব্রুয়ারি নিয়ে পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্র নির্মাণ আজ সময়ের দাবি। এর জন্য ব্যক্তি উদ্যোগের পাশাপাশি একুশে ফেব্রুয়ারি নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণে আলাদা করে সরকারি অনুদান চালু করাও জরুরি। 

তথ্যসূত্র: 
জহির রায়হান অনুসন্ধান ও ভালোবাসা, সম্পাদক: মতিউর রহমান, প্রথমা প্রকাশনী

লেখক: ব্যাংকার ও চলচ্চিত্রবিষয়ক লেখক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনএসআইয়ের ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

বিএনপির সময় গণমাধ্যম তুলনামূলক বেশি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল: প্রথম আলো সম্পাদক

‘আমি ওর সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে চাই, শুধু এক মিনিট’

পপুলার ফার্মায় এক্সিকিউটিভ পদে চাকরি, সাপ্তাহিক ছুটি ২ দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সাক্ষাৎকার

দর্শক চায় বাস্তবজীবনেও আমাদের জুটি হোক

তাবাসসুম ছোঁয়া।

শত পর্বের মাইলফলক স্পর্শ করেছে ধারাবাহিক নাটক ‘দেনা পাওনা’। গত বছর নভেম্বরে সিনেমাওয়ালা ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার শুরু হয়েছিল ধারাবাহিকটির। কে এম সোহাগ রানা পরিচালিত এ নাটকে নিপা চরিত্রে অভিনয় করে পরিচিতি পেয়েছেন তাবাসসুম ছোঁয়া। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন শিহাব আহমেদ

শিহাব আহমেদ

ধারাবাহিকটি যে এত লম্বা সময় ধরে চলবে, শুরুতে সেটা আঁচ করতে পেরেছিলেন?

শুরুতে ৮ পর্বের লক্ষ্য নিয়ে এগোনো হচ্ছিল। কিন্তু প্রচারের শুরুতেই আমরা দর্শকের ব্যাপক সাড়া পাই। তখন নির্মাতা সিদ্ধান্ত নিলেন, দর্শক যেহেতু এত ভালোবাসা দিচ্ছে, আমাদের উচিত এটা চালিয়ে যাওয়া।

এক বছরের বেশি সময় ধরে শুটিং করছেন, এই জার্নির অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

অনেক কিছু শিখেছি। দেনা পাওনা আমার জীবনে স্মরণীয় হয়ে থেকে যাবে। আগে কয়েকটা কাজ করলেও আমার অভিনয়ের হাতেখড়িটা এই নাটকের সেটেই হয়েছে। অভিনয়ে যতটা উন্নতি করেছি, তার কৃতিত্ব দেনা পাওনা নাটকের টিমের। সহশিল্পী, নির্মাতা থেকে শুরু করে ইউনিটের সবাই খুব সাপোর্ট করেছে। এ ছাড়া দর্শকের ভালোবাসা তো পেয়েছি। নিপা চরিত্রে পরিচিতি পেয়েছি, এখন মানুষ আমাকে চিনতে পারছে। সব মিলিয়ে পুরো অভিজ্ঞতাটা খুব সুন্দর।

এই চরিত্র আপনার ব্যক্তিজীবনে কোনো প্রভাব ফেলেছে কি না?

বাস্তবজীবনেও আমি অনেকটা নিপার মতো হয়ে গেছি। এখন আমি মানুষকে বোঝার চেষ্টা করি। নরম করে কথা বলি, যেমনটা নিপা করে।

অনেকে বলে, এ নাটকে খায়রুল চরিত্রে অভিনয় করা অ্যালেন শুভ্রর সঙ্গে আপনি সম্পর্কে আছেন। আসলেই কি তাই?

দেনা পাওনা নাটকে আমাদের জুটির ওপর সবাই ক্রাশ খেয়েছে। ফেসবুকে রীতিমতো হুমকি দিয়ে আমাকে মন্তব্য করা হয়, নিপা, তুমি যদি খায়রুলকে বিয়ে না করো, তাহলে তোমাকে দেখে নেব। স্ক্রিনের মতো বাস্তবেও নাকি আমাদের খুব সুন্দর লাগে। দর্শক চায় বাস্তবজীবনেও আমাদের জুটি হোক। বিষয়টা আমি খুব উপভোগ করি।

এ রকম হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আছে?

অ্যালেন শুভ্র একজন জেন্টেলম্যান, নাইস পারসন। অ্যালেন ভাই সত্যিই খায়রুলের মতোই। তাঁর মধ্যে শিশুসুলভ ব্যাপার আছে। পর্দায় দেখে দর্শক যেমন তাঁর মায়ায় পড়ে, তেমনি অভিনয় করতে গিয়ে আমারও তাঁর প্রতি মায়া কাজ করে। মায়াটা হয়তো দুজনের মধ্যেই কাজ করে। এই কারণেই হয়তো পর্দায় এত ভালো লাগে। আমাদের মধ্যে সুন্দর একটা সম্পর্ক আছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এমন কিছু হয়নি, যেমনটা মানুষ ভাবছে।

কনটেন্ট ক্রিয়েশন থেকে অভিনয়ে আসা। আপনার এই জার্নিটা নিয়ে জানতে চাই...

ক্যামেরার সঙ্গে আমার অনেক আগে থেকে খাতির ছিল। ফটোগ্রাফি, ভিডিওগ্রাফি শিখতে চেয়েছিলাম। কিছুদিন গিটার শিখেছি। এরপর কনটেন্ট ক্রিয়েশন শুরুর পর বিভিন্ন শুটের প্রস্তাব আসে। শখের বশে করছিলাম। প্রথম অভিনয় ওটিটিতে। ইমরাউল রাফাতের ‘ওপেন কিচেন’ সিরিজে। সেখানে একটি ছোট চরিত্র করি। সেটা করতে গিয়েই মনে হয়, এ মাধ্যমেই নিয়মিত কাজ করব। আমি মনে করি, একজন প্রপার অভিনেত্রী হতে গেলে বেসিক লার্নিং দরকার। সে জন্য কন্টিনিউয়াস প্রসেসের মধ্য দিয়ে চর্চা করে যেতে হবে। সেটাই করার চেষ্টা করছি। আমার জার্নিটা মাত্র শুরু, আশা করছি অনেক দূর যাবে।

অভিনয়কে কি পেশা হিসেবে নেওয়া যায়?

পেশা হিসেবেই নিয়েছি। হ্যাঁ, একটু ঝুঁকি তো থাকেই। আমার মনে হয়, শুধু অভিনয়ের ওপর নির্ভর না করে থাকলে ভালো। শুধু অভিনয় করব তা নয়, পাশাপাশি অনেক কিছু আছে। আমি কিন্তু কনটেন্ট ক্রিয়েশন আর অভিনয় দুটোই করছি। এমন কাজ করতে চাই, যেটাতে আমার অনীহা লাগবে না। যে কাজের প্রতি প্রেম থাকবে, সেটাই করতে চাই। আমার প্রেমটা অভিনয়ের সঙ্গে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনএসআইয়ের ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

বিএনপির সময় গণমাধ্যম তুলনামূলক বেশি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল: প্রথম আলো সম্পাদক

‘আমি ওর সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে চাই, শুধু এক মিনিট’

পপুলার ফার্মায় এক্সিকিউটিভ পদে চাকরি, সাপ্তাহিক ছুটি ২ দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শাকিবভক্তদের রোষানলে প্রযোজক সুমি

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
শাকিব খান ও প্রযোজক শাহরিন আক্তার সুমি। ছবি: সংগৃহীত
শাকিব খান ও প্রযোজক শাহরিন আক্তার সুমি। ছবি: সংগৃহীত

গত রোজার ঈদে শাকিব খানকে নিয়ে রিয়েল এনার্জি প্রোডাকশন হাউস থেকে নির্মিত হয় ‘বরবাদ’। বেশ আলোচিত হয় শাহরিন আক্তার সুমি প্রযোজিত সিনেমাটি। আগামী বছরের ঈদের জন্য আরেকটি সিনেমা প্রযোজনা করছেন সুমি। তাঁর নতুন সিনেমা ‘রাক্ষস’-এর নায়ক সিয়াম আহমেদ। সম্প্রতি সিনেমার সংবাদ সম্মেলনে প্রযোজক সুমি মন্তব্য করেন, শাকিব খান থাকলেই সিনেমা ব্লকবাস্টার হবে এটা ভেবে তিনি বরবাদ বানাননি। এমন মন্তব্যের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় শাকিবভক্তদের রোষানলে পড়েছেন এই প্রযোজক।

বরবাদ সাফল্যের পর সুমি জানিয়েছিলেন, তাঁর পরবর্তী সিনেমায়ও থাকবেন শাকিব খান। শেষ পর্যন্ত তাঁকে ছাড়াই দ্বিতীয় সিনেমা শুরু করলেন তিনি। রাক্ষসের সংবাদ সম্মেলনে সুমির কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, এবার তাঁর সিনেমায় শাকিব খান নেই কেন? জবাবের একপর্যায়ে সুমি বলেন, ‘শাকিব খান থাকলে বরবাদ ব্লকবাস্টার হবে আর না থাকলে হবে না, এটা ভেবে আমি সিনেমা করিনি। তাঁর সব সিনেমাই যে ব্লকবাস্টার ছিল, এমনটা কিন্তু না।’

সুমির এমন কথা ভালোভাবে নেয়নি শাকিব খানের ভক্তরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো তুলাধোনা করছেন সুমিকে। সমালোচনার জবাবে সংবাদমাধ্যমে সুমি জানান, শাকিব খানকে নিচু করে তিনি কোনো কথা বলেননি।

শাহরিন আক্তার সুমি বলেন, ‘আমি বলেছিলাম, বরবাদে শাকিব খানকে এ জন্য নিইনি যে আমার সিনেমা হিট হতে হবে। বরবাদের গল্পে তাঁকে ছাড়া অন্য কেউ হলে সেটা মানাত না। এ কারণেই তাঁকে নেওয়া, সিনেমা হিট করানোর জন্য না। আর রাক্ষসের গল্পে সিয়ামকে মানাবে বলেই তাঁকে নেওয়া হয়েছে। হয়তো আমি বিষয়টি ঠিকমতো বোঝাতে পারিনি। এটা আমার ব্যর্থতা। আমি শাকিব ভাইকে নিচু করে কোনো কথা বলিনি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনএসআইয়ের ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

বিএনপির সময় গণমাধ্যম তুলনামূলক বেশি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল: প্রথম আলো সম্পাদক

‘আমি ওর সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে চাই, শুধু এক মিনিট’

পপুলার ফার্মায় এক্সিকিউটিভ পদে চাকরি, সাপ্তাহিক ছুটি ২ দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নির্ধারিত সময়ের দুই দিন পর শুরু হচ্ছে নবীন প্রবীণ নাট্যমেলা

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
বাতিঘরের ‘প্যারাবোলা’ নাটকের দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত
বাতিঘরের ‘প্যারাবোলা’ নাটকের দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত

১৯ ডিসেম্বর রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু হওয়ার কথা ছিল নাট্যতীর্থ আয়োজিত ‘নবীন প্রবীণ নাট্যমেলা’ শীর্ষক আট দিনব্যাপী নাট্যোৎসব। তবে শিল্পকলা একাডেমির অনুষ্ঠান ও প্রদর্শনী অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হওয়ার কারণে শুরু হয়নি নবীন প্রবীণ নাট্যমেলা। অবশেষে আজ থেকে শুরু হচ্ছে এই নাট্যোৎসব।

‘রাষ্ট্রীয় শোক দিবস ও অনিবার্য কারণবশত’ ১৯ ডিসেম্বর থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত সব অনুষ্ঠান ও প্রদর্শনী স্থগিতের ঘোষণা দেয় শিল্পকলা একাডেমি। এমন ঘোষণা নিয়ে তৈরি হয় ধোঁয়াশা। অনেকেই মনে করেন, দীর্ঘ সময়ের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে শিল্পকলা একাডেমি। তবে সব শঙ্কা দূর করে গতকাল শিল্পকলা একাডেমির ফেসবুক পেজে জানানো হয়, ২১ ডিসেম্বর থেকে আবার শুরু হবে অনুষ্ঠান ও প্রদর্শনী।

শিল্পকলা একাডেমির ঘোষণা অনুযায়ী, ১৯ ও ২০ ডিসেম্বর বন্ধ ছিল সব আয়োজন। যে কারণে স্থগিত করা হয় নবীন প্রবীণ নাট্যমেলা। তবে বেশি দিন অপেক্ষায় থাকতে হলো না নাট্যপ্রেমীদের। শিল্পকলা একাডেমির অনুষ্ঠান ও প্রদর্শনী চালুর সিদ্ধান্তের পরই নাট্যতীর্থ থেকে জানানো হয়েছে, আজ ২১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে নবীন প্রবীণ নাট্যমেলা। আজকের পত্রিকাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নাট্যতীর্থ দলের প্রধান ও নাট্যমেলার আহ্বায়ক তপন হাফিজ।

সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায় আয়োজিত এই উৎসবে প্রদর্শিত হবে আট দলের আটটি নাটক। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টায় দেখা যাবে নাটকগুলো। উৎসবে ছয়জন নাট্যব্যক্তিত্বকে দেওয়া হবে নাট্যবন্ধু সম্মাননা। এ ছাড়া অনুষ্ঠিত হবে সেমিনার।

উৎসবের প্রথম দিন প্রদর্শিত হবে তীরন্দাজ রেপার্টরির প্রযোজনা দীপক সুমন নির্দেশিত ‘কণ্ঠনালীতে সূর্য’। দ্বিতীয় দিন মঞ্চস্থ হবে আরণ্যক নাট্যদলের ‘রাঢ়াঙ’। রচনা ও নির্দেশনায় মামুনুর রশীদ। এ ছাড়া এ উৎসবে দেখা যাবে বাতিঘরের ‘প্যারাবোলা’, নাট্যতীর্থের ‘জুলিয়াস সিজার’, ঢাকা থিয়েটার মঞ্চের ‘ঘরজামাই’, পদাতিক নাট্য সংসদের (টিএসসি) ‘আলিবাবা এবং চল্লিশ চোর’ এবং থিয়েটার নাট্যদলের ‘মেরাজ ফকিরের মা’।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনএসআইয়ের ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

বিএনপির সময় গণমাধ্যম তুলনামূলক বেশি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল: প্রথম আলো সম্পাদক

‘আমি ওর সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে চাই, শুধু এক মিনিট’

পপুলার ফার্মায় এক্সিকিউটিভ পদে চাকরি, সাপ্তাহিক ছুটি ২ দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মাধুরীর কাছে ক্যারিয়ারের চেয়ে পরিবার বেশি জরুরি

বিনোদন ডেস্ক
মাধুরী দীক্ষিত। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
মাধুরী দীক্ষিত। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

আশির দশকের শেষ দিকে এবং নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে বলিউডের অন্যতম ব্যস্ত অভিনেত্রী ছিলেন মাধুরী দীক্ষিত। ওই সময় প্রতিবছর ১০টির বেশি সিনেমা মুক্তি পেত তাঁর। তবে সাফল্যের তুঙ্গে থাকা অবস্থায়ই বড় একটি সিদ্ধান্ত নেন মাধুরী। তারকাখ্যাতি পাশ কাটিয়ে ব্যক্তিজীবনকে বেশি গুরুত্ব দেন। ১৯৯৯ সালে ডা. শ্রীরাম নেনেকে বিয়ে করে চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে। ফেলে যান সফল ক্যারিয়ার। তবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া নাকি মোটেই কঠিন ছিল না মাধুরীর জন্য।

সম্প্রতি মিড-ডেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওই সময় নিয়ে মুখ খুলেছেন মাধুরী দীক্ষিত। ক্যারিয়ারের সাফল্য নয়, পরিবার-সন্তান-সংসারই নাকি ছিল তাঁর স্বপ্ন। অভিনেত্রী বলেন, ‘আমি সব সময় ভাবতাম, আমার বিয়ে হবে, একটি সংসার হবে, সন্তান হবে। যখন সেটা ঘটল, মনে হয়েছিল, এত দিনে স্বপ্ন সত্যি হলো। বিয়ের সিদ্ধান্ত নিতে দুবার ভাবিনি। বিয়ে করে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাই।’

প্রায় এক যুগ মাধুরী কাটিয়েছেন কলোরাডো অঙ্গরাজ্যের ডেনভারে। সেখানে প্রকৃতির নির্জনতায় সহজ-সাধারণ পারিবারিক জীবনেই নিজের সবটুকু মনোযোগ ঢেলে দিয়েছিলেন অভিনেত্রী। যুক্তরাষ্ট্রে আগে থেকে তাঁর ভাইবোনেরা থাকতেন। তাঁদের সঙ্গেও মাধুরীর নিয়মিত দেখা হতো। তাই সময়টা মন্দ কাটত না। অভিনেত্রী বলেন, ‘জীবনের প্রায়োরিটি আসলে কী, সেটা আগে থেকে জানতাম। সেখানে নিজের কাজ নিজেকে করতে হতো। তাতেও কোনো কষ্ট লাগত না। আফসোস হতো না।’

ক্যারিয়ারের জাঁকজমকের চেয়ে বরং পারিবারিক জীবন, সন্তান-সংসার—এসবই মাধুরীর ভালো লাগত বেশি। অভিনেত্রী বলেন, ‘বাচ্চাদের নিয়ে নিজের মতো থাকতাম। তাদের পার্কে নিয়ে যেতাম। ওদের সঙ্গে খেলতাম, মজা করতাম। কেউ আমাকে চিনত না। সময়টা ভীষণ উপভোগ করেছি।’

পাঁচ বছর শোবিজ থেকে দূরে ছিলেন মাধুরী। ২০০৭ সালে ‘আজা নাচলে’ দিয়ে আবার বড় পর্দায় ফেরেন। সিনেমাটি বক্স অফিসে অত সাড়া না পেলেও তাঁর অভিনয় প্রশংসিত হয়। এরপর আবারও বিরতি। ২০১৩ সালে ‘বোম্বে টকিজ’ ও ‘ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি’ সিনেমার গানে পারফর্ম করে সাড়া ফেলেন। আবারও মাধুরীকে নিয়ে চর্চা শুরু হয় বলিউডে।

এরপর সিনেমায় সেই অর্থে আর নিয়মিত হননি মাধুরী দীক্ষিত। অল্পস্বল্প কাজ করেছেন। রিয়েলিটি শোতে বিচারক হয়েছেন। ওয়েব কনটেন্টেও দেখা দিয়েছেন। সম্প্রতি জিওহটস্টারের ‘মিসেস দেশপান্ডে’ সিরিজ দিয়ে আবারও আলোচনায় তিনি। ১৯ ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়া সিরিজটি তৈরি হয়েছে ফরাসি থ্রিলার ‘লা ম্যান্টে’র অনুপ্রেরণায়। এতে মাধুরী অভিনয় করেছেন একজন সিরিয়াল কিলারের চরিত্রে।

মাধুরী সব সময় চেয়েছেন ক্যারিয়ার আর পরিবার—দুটির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে। শোবিজের তারকাখ্যাতি তাঁর পারিবারিক জীবনকে যেন প্রভাবিত করতে না পারে। হলিউড রিপোর্টার ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রী বলেন, ‘যখন আমি বাড়িতে ঢুকি, তারকাখ্যাতিকে বাইরে রেখে যাই। সেখানে আমি একেবারেই সাধারণ—একজন স্ত্রী, একজন মা। আর দশটা মানুষের মতোই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনএসআইয়ের ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

বিএনপির সময় গণমাধ্যম তুলনামূলক বেশি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল: প্রথম আলো সম্পাদক

‘আমি ওর সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে চাই, শুধু এক মিনিট’

পপুলার ফার্মায় এক্সিকিউটিভ পদে চাকরি, সাপ্তাহিক ছুটি ২ দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত