নিমেষেই সব দুঃখ-কষ্ট উড়িয়ে দিতেন এ টি এম ভাই

মীর রাকিব হাসান, ঢাকা
আপডেট : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১১: ১৭
Thumbnail image

এ টি এম শামসুজ্জামান ছিলেন একাধারে অভিনেতা, পরিচালক, কাহিনিকার, চিত্রনাট্যকার, সংলাপকার ও গল্পকার।  আমাদের তিন বোনেরই খুব কাছের মানুষ ছিলেন। অনেক ছবিতে তাঁর সঙ্গে অভিনয় করেছি। অনেক অনেক স্মৃতি তাঁকে ঘিরে। শুটিংয়ের সময় আমাকে নামাজ আদায়ের তাড়া দিতেন। আমি সঠিকভাবে নামাজ আদায় করার শিক্ষাটা ওনার কাছেই পেয়েছিলাম। অনেক সুরা মুখস্থ করতে গিয়ে হিমশিম খেতাম। উনি সুরার তরজমা করে এমনভাবে বুঝিয়ে বলতেন যে সুরাটা সহজে মুখস্থ করতে পারতাম। ধর্মীয় অনেক বিষয়ই আমি ওনার কাছ থেকে জেনেছি, শিখেছি।

এ টি এম শামসুজ্জামান বাস্তবিকই একজন মজার মানুষ ছিলেন। পর্দার সামনেও যেমন মজার ছিলেন, পর্দার বাইরেও তেমনি। ওনার কাছে গেলে কোনো দুঃখবোধ থাকত না। মন খারাপ থাকলে তাই ওনার কাছে যেতাম। মন খুলে কথা বলতে পারতাম। উনি সব দুঃখ-কষ্ট নিমেষেই উড়িয়ে দিতেন। প্রচুর জানাশোনা লোক ছিলেন তিনি। ধর্ম, শিল্প, সংস্কৃতি, দেশি-বিদেশি লেখকদের বই নিয়মিত পড়তেন।

গুলশান আরা আক্তার চম্পাওনার সঙ্গে সর্বশেষ দেখা হলো হাসপাতালে। আমরা তিন বোন গিয়েছিলাম তাঁকে দেখতে। অসুস্থ অবস্থায়ও তিনি ছিলেন হাস্যোজ্জ্বল। আমাদের সঙ্গে মজা করলেন। আমরা তিন বোন বললাম, ‘ভাই, তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠেন। আমাদের মন ভালো করার টনিক আপনি।’ ছবি তুললাম একসঙ্গে। ছবি তোলার সময় ঠিকভাবে হাসলেন। বললেন, সুস্থ হয়ে বাড়িতে গেলেই যেন আমরা ওনার বাড়ি যাই। উনি নানা ধরনের খাবার খাওয়াবেন। আমরা কী কী খেতে পছন্দ করি তাও ওনার মুখস্থ। অনেক ধরনের খাবার নিয়ে গল্পও বললেন।

এ টি এম ভাই আমাদের অন্তরে বসে আছেন। এখনো বিশ্বাস হয় না যে তিনি নেই। তাঁর মতো শক্তিশালী অভিনেতা কমই দেখেছি। শট দেওয়ার আগে তুমুল মজা করছেন। আমার হেসে গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা। শট শুরু হলো, দেখি উনি ভয়ংকর এক ভিলেন। সে কী সংলাপ! উনি কমেডি করলে আমি সমস্যায় পড়ে যেতাম। দেখা যেত উনি সংলাপ দিচ্ছেন আর আমি হাসি চেপে রাখতে পারছি না। উনি যা করতেন আত্মবিশ্বাস নিয়ে করতেন। সেটাই বাস্তব মনে হতো। এসব আর আমাদের জীবনে আসবে না, ভাবলেই মনে হয় কত-কী হারাচ্ছি প্রতিনিয়ত।

অনুলিখন: মীর রাকিব হাসান

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত