Ajker Patrika

অ্যাবা ফিরে আসছে

জাহীদ রেজা নূর
অ্যাবা ফিরে আসছে

চল্লিশ বছর পর অ্যাবার সেই চার মূর্তি আবার বলছেন, শেষ খেলা দেখানো এখনো বাকি রয়ে গেছে! অথচ কতবারই না গাদা গাদা টাকার লোভ দেখানো হলো তাঁদের। বলা হলো, একবার শুধু মঞ্চে এসে গিটারে হাত লাগাও, ড্রামে তোলো ঝড়, আর কণ্ঠে আনো পুরোনো দিনের মাদক, ব্যাস! ব্যাংক ব্যালান্সের জন্য ভাবতে হবে না। কিন্তু কে শোনে কার কথা।

বারবার তাঁরা জানিয়ে দিয়েছেন—না। আর নয় গানের রাজ্যে চারজনের একত্র–ভ্রমণ। যা হওয়ার হয়ে গেছে। ইতিহাস যদি রচিত হয়ে থাকে, তাহলে সেটা সুদূর অতীতের ব্যাপার। এখন দিন কাটুক অন্যভাবে, যেখানে চারজনের মিলন হবে না আর!

সেই স্মৃতি
২০১৬ সালের ডিসেম্বরে নোবেল পুরস্কার কাভার করার জন্য সুইডেনে গিয়েছিলাম। নোবেল পুরস্কারই ছিল মূল লেখালেখির বিষয়। বিশেষ করে সে বছর বব ডিলান পেয়েছিলেন এ পুরস্কার। তাই তিনি আসবেন কিনা, তা নিয়ে ছিল সবার উৎকণ্ঠা। সাংবাদিকের দল বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাইছিল, আসছেন কি সংগীতের এই বরপুত্র? নোবেল কর্তৃপক্ষ এ প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারছিল না।

অ্যাবা ব্যান্ডের চার সদস্য বিয়র্ন, অ্যাগনেথ, বেনি ও ফ্রিদা (অ্যানি–ফ্রিদ)যখন খানিকটা তুষারপাত হয়ে পিচ্ছিল হয়ে গিয়েছিল রাস্তাঘাট, তখন মনে হলো অ্যাবা মিউজিয়ামে যাওয়ার এটাই সময়। দশদিনের জন্য একটা পাস কিনেছিলাম, যে পাস ব্যবহার করে মেট্রো, বাস, ট্রামে ওঠা যায়। কীভাবে অ্যাবা মিউজিয়ামে পৌঁছেছিলাম, তা নিয়ে আগেও লিখেছি। তাই এখানে শুধু বলে রাখি, এই মিউজিয়াম এখনো বহু মানুষের আগ্রহের জায়গা।

অ্যাবা মিউজিয়াম আমাকে শিখিয়েছিল, ভেঙে যাওয়া একটি দল কীভাবে মানুষের আকর্ষণের জায়গা হয়ে থাকতে পারে দীর্ঘকাল!

কেন ছিড়ে গেল তার?
এ প্রশ্ন অনেকেই করেন। কেন অ্যাবার মতো এ রকম একটি সফল ব্যান্ড ভেঙে গেল?

সম্ভবত, সম্পর্কগুলো আগের মতো ছিল না। সে কথা বলব পরে। আগে বলি, ১৯৭২ সালে যে ব্যান্ডের জন্ম, তা খুব দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল ইউরোপে। লন্ডনের ছোকরা–চতুষ্টয় তখন তাদের বিটলসকে বিদায় করেছে জীবন থেকে। যে যার মতো এককভাবে গড়ে তুলতে চাইছে ক্যারিয়ার, সে রকম সময়েই অ্যাবা এল, দেখল আর জয় করল। একের পর এক অ্যালবাম হিট হচ্ছিল তাদের। ব্যাংকে জমা হচ্ছিল পাহাড়সমান টাকা–পয়সা। তাদের গান শুনতে শুনতেই শ্রোতা–দর্শক বুঝতে পারল কারও সঙ্গেই এই ব্যান্ডের গানের কোনো মিল নেই। এমনকি নিজেদের একটি গানকে ছাপিয়ে অন্য গান যখন হচ্ছে, তখন দেখা যাচ্ছে, দ্বিতীয় গানটি একেবারেই অন্যরকম। নিজেদের একটা গানের সঙ্গে আরেকটা গানের ছন্দ–সুর–গায়কিতে কোনো মিল নেই। মোদ্দা কথা, অ্যাবার কোনো আইডল ছিল না।

কয়েকটি গানের প্রথম পংক্তি স্মরণ করা যাক। কেউ চাইলে ইউটিউবে শুনে নিতে পারবেন গানগুলো। আর আমার তো মনে হয় অনেকের কাছেই গানগুলো অশ্রুত নয়। একবার নাম শুনলেই বলবেন—আরে! এ গান তো আমার অনেক দিনের চেনা! ‘চিকিচিটা’, ‘ওয়াটারলু’, ‘টেক ইট ইজি’, ‘হ্যাপি নিউইয়ার’—কী চেনা চেনা লাগছে?

সে সময়ের দর্শক–শ্রোতা শুধু অ্যাবার গানের জন্যই অপেক্ষা করত না, অপেক্ষা করত, কী পোশাকে মঞ্চে আসবে ওরা; গানের সঙ্গে যে নৃত্যভঙ্গিমা থাকবে অবশ্যম্ভাবী হয়ে, কেমন হবে সেটি; চেহারায় কোন পবরিবর্তন আনা হবে সেটা জানার জন্য।

আমরা এই চারজনকে চিনি বিয়র্ন, অ্যাগনেথ, বেনি আর ফ্রিদা (অ্যানি–ফ্রিদ) নামে। প্রথম দুজন বিয়ে করেছিলেন পরস্পরকে। দ্বিতীয় দুজনও একে অন্যের সঙ্গে গাঁটছড়া বেধেছিলেন। কিন্তু আশির দশকের শুরু থেকেই বোঝা যাচ্ছিল কোথাও ছন্দ কেটে গেছে। ১৯৮২ সালে সেই কেটে যাওয়া ছন্দই ইতি টেনে দিল একত্রে পথ চলার।

এখানে নিশ্চয়ই বলে দিতে হবে না, অ্যাবা নামটি হয়েছিল এই চারজনের নামের আদ্যাক্ষর নিয়ে। ফ্রিদা র না, যে অ্যানি–ফ্রিদ, সেটা ওপরে বন্ধনীর মধ্যে লিখেছি, সেই তথ্যটিকে পোক্ত করার জন্য।

চল্লিশ বছর পর
ব্যান্ড তৈরি হওয়ার পর রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যায়নি অ্যাবা। এ জন্য তাদের অপেক্ষা করতে হয়েছিল ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত। ইউরোভিশনে যখন তাঁরা ‘ওয়াটারলু’ গানটি পরিবেশন করেন, তখন অন্য সব দল তলিয়ে গেল অনেকটা, মূর্ত হয়ে উঠল অ্যাবা। সেই যে পথ চলার শুরু, তা থামল ১৯৮২ সালে এসে। আগেই তো বলেছি, রোমান্টিক প্রতিভাবান চারজনের চারটি পথ চারদিকে বেঁকে গেল। মেয়ে দুজন একেবারে বন্দী হয়ে রইলেন ঘরে, ছেলে দুজন চালিয়ে যেতে লাগলেন নিজেদের মতো করে সংগীতের ধারা।

এবার খবর এল অ্যাবা আবার আসছে!

সত্তরের দশকের শিশু–কিশোরেরা এখন প্রৌঢ়ত্ব কিংবা বার্ধক্যে এসে পৌঁছেছে, কিন্তু অ্যাবার পুনর্মিলনীর সংবাদে তাদের হৃদয়ের রক্ত যেন ছলাৎছল!

হঠাৎ করেই অ্যাবার সদস্যরা আবার এক সূতোয় গাঁথলেন নিজেদের। টুইটারে হঠাৎ একদিন দেখা গেল ‘অ্যাবাভয়েস’ নামে একটি অ্যাকাউন্ট। সেই একাউন্টেই দেখা গেল এক চমকজাগানো ঘোষণা: চল্লিশ বছর পর অ্যাবা আসছে ‘ভয়েজ’ নামের অ্যালবাম নিয়ে।

‘আমরা ফিরে আসছি। অপেক্ষা করেছেন বলে ধন্যবাদ। ভয়েজ হচ্ছে সেই অ্যালবাম, যা আমাদের ভক্তদের উপহার দেওয়ার জন্য তৈরি করছি। আমাদের ভ্রমণ এই শুরু হচ্ছে বলে’—এ রকম কথা লেখা হয়েছে সেই ঘোষণায়।

আরও খবর বেরিয়েছে। ২০১৯ সালেই নাকি অ্যাবার চার সদস্য এক হয়ে কাজ করার জন্য তৈরি হয়েছিলেন। কিন্তু এ সময়ের নায়ক করোনাভাইরাস সে গুড়ে বালি দিয়েছে।

অ্যাবা ব্যান্ডের সদস্যরা এখন যেমন—(বাম থেকে) বিয়র্ন, অ্যাগনেথ, বেনি ও ফ্রিদাঘোষণা করা হয়েছে অ্যালবাম ‘ভয়েজ’ আসবে ৫ নভেম্বরে। শিল্পীরা বুঝতেই পারেনি, এখনো তাদের এ রকম জনপ্রিয়তা আছে। সামনের অ্যালবাম থেকে দুটো গানের কথা ভক্তদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিয়েছে অ্যাবা। একটি গান হলো, ‘আই স্টিল হ্যাভ ফেইথ ইন ইউ’। দ্বিতীয়টি, ‘ডোন্ট শাট মি ডাউন’। দ্বিতীয় গানটিতে বলা হচ্ছে, মেয়েটা তাঁর পুরোনো প্রেমিকের কাছে বহুদিন পর ফিরে আসছে, আবার নতুন করে সম্পর্ক তৈরি করতে চাইছে, এবং বলছে, এ সময় সে যখন কথা বলবে, তখন কথার মাঝে কথা যেন না বলা হয়।

অন্য গানটি আসবে ভিডিওসহ। সত্তর দশকের প্রাণ মাতানো গানগুলোর ভিডিও ফুটেজ থাকবে সেখানে, যোগ হবে এখনকার ভিডিও ফুটেজও। এবং সেগুলো থ্রিডি ফুটেজ। এতে শিল্পীদের ভার্চুয়াল মডেল তৈরি করে তাদেরকেই প্রদর্শন করা হবে। ফুটেজ এখনকার হলেও এই মডেলদের পরনে থাকবে সত্তর দশকের পোশাক, মনেই হবে না, তারা এর পর এতগুলো বছর পার করেছেন।

অ্যালবামে গানের সংখ্যা হবে দশটি।

দক্ষিণ লন্ডনে এই গ্রুপের জন্য তৈরি হচ্ছে বিশেষ মঞ্চ।

শেষ করি তাদের বয়স জানিয়ে।

সবাই তো মনে করছেন অ্যাবা মানেই সেই তুমুল আবেদনময় চতুষ্টয়। তাদের একটু বলে রাখি, বর্তমানে বিয়র্নের বয়স ৭৬ বছর, বেনের ৭৪, অ্যাগনেথের ৭১ আর অ্যানি–ফ্রিদের ৭৫।

অবশ্য শিল্পীদের বয়স কোনো ব্যাপার নয়। পল ম্যাকার্টনি, মিক জাগার এখনও কনসার্টে অংশ নিয়ে চলেছেন। তাতে যোগ দিচ্ছেন হাজার হাজার দর্শক। অ্যাবাও যে তাদের ভার্চুয়াল পারফরম্যান্সে দর্শকে পরিপূর্ণ স্টেডিয়াম পেতে যাচ্ছে কনসার্টে, সে কথা নিশ্চিত।  আগামী বছর মে থেকে শুরু হবে এই কনসার্ট।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এক ছাতায় সব নাগরিক সেবা

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

তানভীর ইমামের বাড়ি ভেবে গুলশানের একটি বাসায় মধ্যরাতে শতাধিক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ, তছনছ

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত