শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে আড্ডা দিলেই গ্রেপ্তার, সেনাবাহিনী এমন নোটিশ দেয়নি

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
প্রকাশ : ০১ জুন ২০২৪, ২০: ৫২
আপডেট : ০১ জুন ২০২৪, ২৩: ১৮

সোশ্যাল মিডিয়ায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে ‘জরুরি নোটিশ’ দাবিতে একটি বিজ্ঞপ্তির ছবি ভাইরাল হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিটিতে দাবি করা হচ্ছে, স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে বা ছুটির সময় স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার আশপাশে বা দোকানে বসে আড্ডা দেওয়া এবং রাস্তাঘাটে অহেতুক ঘোরাফেরা করা সম্পূর্ণ নিষেধ করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আজ থেকে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার সামনে কোনো বখাটে ছেলে পেলে তাদের গ্রেপ্তার করে আইনগত ব্যবস্থা নেবে। 

বিজ্ঞপ্তিটিতে আরও দাবি করা হচ্ছে, সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন এমন আদেশ দিয়েছেন। “Bangladesh army lover’s” নামের ২ লাখ ৮ হাজার সদস্যের একটি ফেসবুক গ্রুপে গতকাল শুক্রবার (৩১ মে) কথিত বিজ্ঞপ্তিটি পোস্ট করা হয়। ‘বাংলার সৈনিক’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গ্রুপে বিজ্ঞপ্তিটি পোস্ট করা হয়। আজ শনিবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত পোস্টটিতে রিঅ্যাকশন পড়েছে ৫ শতাধিক। 

এটি ছাড়াও একাধিক ফেসবুক পেজ, ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট ও গ্রুপ থেকে কথিত বিজ্ঞপ্তিটি পোস্ট করা হয়েছে। 

পোস্টের সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার বাইরে মূলধারার সংবাদমাধ্যমে এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ, অফিশিয়াল ওয়েবসাইট, আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) ওয়েবসাইট খুঁজে এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। সেনাবাহিনী থেকে জনগুরুত্বপূর্ণ এমন কোনো নির্দেশনা দিলে সেটি আইএসপিআরের ওয়েবসাইটসহ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার কথা। 

পরে আরও খুঁজে দেখা যায়, একই ধরনের বিজ্ঞপ্তি বিভিন্ন দায়িত্বশীল ব্যক্তি ও সরকারি সংস্থার নামেও ফেসবুকে প্রচার হচ্ছে। যেমন, গতকাল শুক্রবার চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রশিদের নাম ও ছবি ব্যবহার করে ভাইরাল তথ্যগুলো পোস্ট করা হয়েছে। এমন কোনো আদেশ দিয়েছেন কি না সে সম্পর্কে জানতে ওসি আব্দুর রশিদকে একাধিকবার ফোন কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। 

স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা সংক্রান্ত জরুরি নোটিশটি বাংলাদেশ পুলিশের নামেও ছড়িয়েছেএর আগে বাংলাদেশ পুলিশের নামে বিজ্ঞপ্তিটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়াতে দেখেছে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ। গত ২৮ মার্চ ‘সময় নিউজ। ২৪ ঘণ্টাই খবর’ নামের প্রায় ১০ লাখ সদস্যের একটি ফেসবুক গ্রুপে ‘বাংলাদেশ পুলিশের জরুরি নোটিশ’ দাবিতে হুবহু একই দাবি পোস্ট করা হয়েছিল। 

তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০২২ সালে এমন নির্দেশনা দিয়েছিল টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর থানা পুলিশ। ওই বছরের জুনের শুরুতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড রোধে ও গণসচেতনতার লক্ষ্যে উপজেলাটির বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাঁটিয়ে দেওয়া হয় সতর্কতামূলক পোস্টার। সেই পোস্টারের ছবির সঙ্গে সম্প্রতি সেনাবাহিনীর নামে ভাইরাল বিজ্ঞপ্তিটির নির্দেশনার মিল পাওয়া যায়। 

স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা সংক্রান্ত জরুরি নোটিশটি জারি করে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর থানা পুলিশ ২০২২ সালেঅর্থাৎ, ২০২২ সালে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর থানা পুলিশের সতর্কতামূলক নির্দেশনাকেই সম্প্রতি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বরাত দিয়ে প্রচার করা হচ্ছে। 

প্রসঙ্গত, সোশ্যাল মিডিয়ায় সেনাবাহিনীর বরাত দিয়ে জরুরি নোটিশটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে আজ শনিবার (১ জুন) বেলা ৩টা ৫০ মিনিটে একটি পোস্ট দিয়ে জানানো হয়, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদের পক্ষ থেকে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাসংক্রান্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জরুরি নোটিশ নামক যে ফেসবুক পোস্টটি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে/হচ্ছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও অলীক। এ ব্যাপারে সর্বসাধারণকে সচেতন থাকার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো। 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত