Ajker Patrika

StopNCII কি ইন্টারনেট থেকে আপত্তিকর ছবি সরিয়ে নিতে পারে

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৫: ০৮
StopNCII কি ইন্টারনেট থেকে আপত্তিকর ছবি সরিয়ে নিতে পারে

সম্প্রতি ফেসবুকে StopNCII নামে একটি ওয়েবসাইটের পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলা হচ্ছে, ‘যদি কেউ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বা ফটোশপ দিয়ে কারও ছবি এডিট করে ন্যুড ছবি তৈরি করে, তাহলে StopNCII ওয়েবসাইটে গিয়ে আসল ছবি ও এডিটেড ছবি জমা দিতে হবে। পরে ওয়েবসাইটটি ইন্টারনেটের যত জায়গায় এই এডিটেড ছবি আছে তা সরিয়ে দিবে। এর জন্য ওই ব্যক্তিকে কারও সঙ্গে সরাসরি কথা বলা লাগবে না। নিজের পরিচয় ও গোপন থাকবে।’ 

‘বিজ্ঞানবলয়’ নামের ৩৮ হাজার সদস্যের একটি ফেসবুক গ্রুপে গত ২৪ মার্চ (শনিবার) এসব তথ্য উল্লেখ করে একটি পোস্ট করা হয়। ‘সায়েন্স গ্যালাক্সি (Science Galaxy) ’ নামের একটি ফেসবুক ফেসবুক পেজ থেকে দেওয়া পোস্টটি আজ বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৪ হাজারের বেশি শেয়ার হয়েছে। এতে রিয়েকশন পড়েছে ১৭ হাজারের বেশি।

StopNCII কী ইন্টারনেটের সব উৎস থেকে আপত্তিকর ছবি সরিয়ে দিতে পারে? ওয়েবসাইটটি কী নির্ভরযোগ্য? কীভাবে কাজ করে ওয়েবসাইটটি? 

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম ওপি ইন্ডিয়াতে ২০২৩ সালের ১৪ সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে StopNCII সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়। এতে বলা হয়, StopNCII হল যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি উদ্যোগ, যা বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তির নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিতে কাজ করা দাতব্য সংস্থা সাউথ ওয়েস্ট গ্রিড ফর লার্নিং (এসডাব্লিউজিএফএল) এর অংশ। এটি সংস্থাটির রিভেঞ্জ পর্ণ হেল্পলাইন (আরপিএইচ) দ্বারা পরিচালিত হয়। আরপিএইচের যাত্রা শুরু হয় ২০১৮ সালে অ-সম্মতিমূলক অন্তরঙ্গ ছবি অপব্যবহারের ফলে ভুক্তভোগীদের সহায়তা প্রদানের উদ্দেশ্যে। এরই অংশ হিসেবে ২০১৮ সালে ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের একটি পাইলট প্রকল্পের আওতায় StopNCII এর যাত্রা। আরপিএইচের দাবি অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটির অ-সম্মতিমূলক অন্তরঙ্গ ছবি সরানোর হার শতকরা ৯০ ভাগ এবং তারা ২ লাখের বেশি ছবি সরিয়েছে। তবে StopNCII ইন্টারনেটের সব উৎস থেকে আপত্তিকর বা বিকৃত ছবি সরাতে পারে না, যেমনটা সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবি করা হচ্ছে। ওয়েবসাইটটি কেবল এদের অংশী প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট যেমন, মেটা, টিকটক থেকে ছবি সরাতে পারে।

২০২৩ সালে ভারতের বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েনসাররা StopNCII নিয়ে কনটেন্ট বানিয়ে দাবি করে, ওয়েবসাইটটি ইন্টারনেটের সব উৎস থেকে আপত্তিকর ছবি সরিয়ে ফেলতে পারে। এ প্রসঙ্গে ওপি ইন্ডিয়া ভারতের সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ আকাঞ্চা শ্রীবাস্তবের বরাত দিয়ে জানায়, এটি পুরোপুরি মিথ্যা। কেউ ইন্টারনেটের সব উৎস কোনো কিছু চিরতরে মুছে ফেলতে পারবে না। 

StopNCII এর ওয়েবসাইট ঘুরেও এসব তথ্যের সত্যতা মেলে। ওয়েবসাইটটির ব্যবহার সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর পর্ব থেকে জানা যায়, ওয়েবসাইটটি ব্যবহারের জন্য কিছু নির্দিষ্ট শর্ত রয়েছে। শর্তগুলো হলো:

  • যে ছবিটি সরাতে আবেদন করা হচ্ছে, তাতে আবেদনকারীর উপস্থিতি থাকতে হবে এবং ওই ছবিটি তাঁর কাছে থাকতে হবে। 
  •  ছবিটি কোনো অন্তরঙ্গ মুহূর্তের হতে হবে। 
  • আবেদনকারী ব্যক্তির বয়স ১৮ বছরের বেশি হতে হবে। 

প্রশ্নোত্তর পর্ব থেকে আরও জানা যায়, StopNCII এর ওয়েবসাইটে অন্য কারও পক্ষ থেকে ছবি শেয়ার করার কোনো সুযোগ নেই। কেবল ভুক্তভোগী ব্যক্তিই এখানে আবেদন করতে পারবেন। প্রতিষ্ঠানটি কারও ছবি গ্রহণ করে না। এরা অংশী প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়েবসাইট থেকে ছবি সরানোর ক্ষেত্রে অন ডিভাইস হ্যাশিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে। 

ওয়েবসাইটটির শুরুতেও একই তথ্যের উল্লেখ রয়েছে। এখানে ওয়েবসাইটটির ব্যবহারকারীদের উদ্দেশ্যে সতর্ক বার্তা দিয়ে বলা হয়েছে, প্রকৃত StopNCII কখনো কারও ছবি বা ভিডিও পোস্ট করতে বলে না। অ-সম্মতিমূলক অন্তরঙ্গ ছবি সরানোর ক্ষেত্রে StopNCII কীভাবে কাজ করে সেটির একটি ভিডিওচিত্রও ওয়েবসাইটটিতে যুক্ত করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, ভুক্তভোগী ওয়েবসাইটে আবেদন করার পর এরা ওই ছবির বা ভিডিওয়ের একটি হ্যাশ বা ডিজিটাল বারকোড তৈরি করে। যা StopNCII এর হ্যাশব্যাংকে সংরক্ষিত থাকে এবং এই কোড StopNCII এর অংশী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। অংশী প্রতিষ্ঠানগুলো এই হ্যাশের ভিত্তিতেই ছবি বা ভিডিও শনাক্ত করে এদের ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে দেয়।

StopNCII নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আপত্তিকর ছবি সরানোর ক্ষেত্রে কাজ করে। ছবি: দাতব্য সংস্থা সাউথ ওয়েস্ট গ্রিড ফর লার্নিংয়ের ইমেইলসোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত দাবিগুলোর অধিকতর সত্যতা যাচাইয়ে StopNCII এর মূল প্রতিষ্ঠান সাউথ ওয়েস্ট গ্রিড ফর লার্নিংয়ের (এসডাব্লিউজিএফএল) প্রেস অফিসে মেইল করে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ। প্রেস অফিস মেইলের উত্তরে জানায়, StopNCII ইন্টারনেটের সব উৎস থেকে ছবি সরানোর ক্ষেত্রে কাজ করে না। প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক, রেড্ডিট, থ্রেডস, স্ন্যাপ, ব্যাম্বল, অনলি ফ্যানস, আইলো এবং নিয়ান্টিকের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করে। অর্থাৎ কেবল এই প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়েবসাইট থেকেই কেবল তারা আপত্তিকর ছবি সরাতে পারে। 

সাউথ ওয়েস্ট গ্রিড ফর লার্নিংয়ের (এসডব্লিউজিএফএল) প্রেস অফিস আরও জানায়, এরা কখনো ভুক্তভোগীকে ওয়েবসাইটে ছবি পোস্ট করতে বলে না। StopNCII-এর ওয়েবসাইটে মূলত আপত্তিকর ছবিগুলোকে হ্যাশে পরিণত করা হয় এবং ছবি ভুক্তভোগীর ফোনেই থেকে যায়। 

উপরিউক্ত আলোচনা থেকে এটি স্পষ্ট, StopNCII ইন্টারনেটের সব উৎস থেকে ছবি সরাতে কাজ করে না। এটি কেবল নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে আপত্তিকর ছবি সরাতে কাজ করে এবং এসব ক্ষেত্রে ওয়েবসাইটটি সরাসরি ভুক্তভোগীর ছবি ব্যবহার করে না বরং আপত্তিকর ছবিটিকে অন ডিভাইস হ্যাশিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে নির্দিষ্ট কিছু ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে দেয়। অর্থাৎ StopNCII ফেসবুকে ভাইরাল দাবিটি বিভ্রান্তিকর।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা factcheck@ajkerpatrika.com
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পদত্যাগ করেছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আমিনুল ইসলাম

পাগল বেশে রাস্তায় মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা কন্টেন্ট ক্রিয়েটর সম্পর্কে যা জানা গেল

হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের উপাধ্যক্ষকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা

প্রধান উপদেষ্টার নতুন বিশেষ সহকারী কে এই আনিসুজ্জামান চৌধুরী

সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে জাতিসংঘের ফলকার তুর্কের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাল আইএসপিআর

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত