Ajker Patrika

৯৫ দিন পর প্রশান্ত মহাসাগর থেকে উদ্ধার জেলে, বেঁচে ছিলেন যেভাবে

অনলাইন ডেস্ক
পানিশূন্যতার কারণে জেলের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে পড়ে। ছবি: এএফপি
পানিশূন্যতার কারণে জেলের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে পড়ে। ছবি: এএফপি

মাছ ধরতে সাগরে গিয়েছিলেন পেরুর মারকোনা শহরের বাসিন্দা ৬১ বছর বয়সী ম্যাক্সিমো নাপা কাস্ত্রো। গত ৭ ডিসেম্বর দুই সপ্তাহের জন্য পর্যাপ্ত রসদ নিয়ে নৌকায় চড়ে বসেছিলেন তিনি। যাত্রার ১০ দিনের মাথায় প্রবল ঝোড়ো হাওয়ায় পথ হারিয়ে ফেলেন নাপা। ভেসে যান প্রশান্ত মহাসাগরের বিশাল জলরাশিতে। ৯৫ দিন পর গত ১১ মার্চ উত্তর পেরুর উপকূলের কাছ থেকে তাঁকে উদ্ধার করেছে ইকুয়েডরের একটি মাছ ধরার নৌকা।

পেরুর রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আন্দিনার বরাতে সিএনএন জানায়, প্রশান্ত মহাসাগরে তিন মাস আটকে থাকার পর রক্ষা পেরুর এক জেলেকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। খারাপ আবহাওয়ার কারণে পথ হারিয়ে ফেলেছিলেন তিনি।

নাপা কাস্ত্রোর মেয়ে ইনেস নাপা তোরেস গত ৩ মার্চ এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘বাবার হারিয়ে যাওয়ার পর প্রতিটা দিন আমাদের জন্য বেশ যন্ত্রণার ছিল। আমি আমার দাদির কষ্ট বুঝতে পারি, কারণ একজন মা হিসেবে আমিও তা অনুভব করতে পারি। আমরা কখনো ভাবিনি, আমাদের এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে, কারও সঙ্গে এমন হোক আমি চাইব না। বাবা, তোমাকে খুঁজে পাওয়ার আশা আমরা কখনো হারাব না।’

নাপা কাস্ত্রোর পরিবার ও স্থানীয় জেলেরা তিন মাস ধরে নাপাকে খুঁজে বেড়াচ্ছিল। তাঁদের সঙ্গে পেরুর সামুদ্রিক টহল দলও খুঁজতে নামে, কিন্তু ব্যর্থ হয়। শেষ পর্যন্ত গত বুধবার যখন ইকুয়েডরের মাছ ধরার টহল দল তাঁকে উদ্ধার করে, তখন তিনি পেরুর উপকূল থেকে প্রায় ৬৮০ মাইল দূরে। মারাত্মক পানিশূন্য অবস্থায় এবং সংকটাপন্ন পরিস্থিতিতে ছিলেন তিনি।

ইনেস ইকুয়েডরের জেলেদের প্রতি তাঁর বাবাকে বাঁচানোর জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ফেসবুকে এক পোস্টে বলেন, ‘ধন্যবাদ, ইকুয়েডরের ভাইয়েরা, আমার বাবাকে উদ্ধার করার জন্য। ঈশ্বর তোমাদের মঙ্গল করুন।’

রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানা যায়, শেষ ১৫ দিন কোনো খাবার ছাড়াই কাটিয়েছেন নাপা কাস্ত্রো। উদ্ধারের পর জেলে নাপা কাস্ত্রো স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানান, নৌকায় বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করে সেই পানি পান করতেন। পোকামাকড়, পাখি ও কচ্ছপ খেয়ে বেঁচে ছিলেন তিনি।

ইকুয়েডর সীমান্তের কাছে পাইতা শহরে তাঁর ভাইয়ের সঙ্গে পুনর্মিলিত হন নাপা। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমি মরতে চাইনি। বেঁচে থাকতে আমি পোকামাকড় খেয়েছি, পাখি খেয়েছি, শেষ যে জিনিসটি খেয়েছি তা ছিল কচ্ছপ।’

নাপা আরও বলেন, ‘আমি জীবনের প্রতি আশা ধরে রাখতে সব সময় নিজের পরিবারের কথা ভেবেছি। আমি আমার মায়ের জন্য বাঁচতে চেয়েছি। আমি প্রতিদিন আমার মায়ের কথা ভাবতাম। আমার একটি নাতনি আছে, যার বয়স মাত্র কয়েক মাস, আমি তার কথা মনে রেখেছিলাম।’

তিনি বলেন, ‘ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, তিনি আমাকে দ্বিতীয়বার বাঁচার সুযোগ দিয়েছেন।’

নাপার মা এলেনা কাস্ত্রো স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানান, পরিবারের সদস্যরা আশাবাদী থাকলেও তিনি ধীরে ধীরে আশা হারাতে শুরু করেছিলেন। তিনি টিভি পেরুকে বলেন, ‘আমি প্রভুকে বলেছিলাম, সে জীবিত থাকুক বা মৃত, অন্তত তাঁকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও, যেন আমি তাঁকে একবার দেখতে পারি। কিন্তু আমার মেয়েরা কখনো বিশ্বাস হারায়নি। তারা সব সময় বলত, মা, সে ফিরে আসবে, সে ফিরে আসবে।’

সিএনএন-এর সহযোগী গণমাধ্যম একুয়েভিসা জানায়, নাপা কাস্ত্রো পেরু-ইকুয়েডর সীমান্তের কাছে পাইতা শহরের স্থানীয় একটি হাসপাতাল চিকিৎসা নিয়েছেন। গতকাল শনিবার হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান তিনি। আরও কিছু চিকিৎসা পরীক্ষার জন্য নাপাকে পাইতায় রাখা হয়েছিল, এরপর তিনি দক্ষিণে লিমার উদ্দেশে রওনা হবেন বলে জানা গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএসএমএমইউতে হেনস্তার ঘটনা নিয়ে যা বললেন প্রাণ গোপালের মেয়ে ডা. অনিন্দিতা

বান্ডিল বান্ডিল টাকা ছেড়ে আমার জামাইকে নিয়ে আসব: গ্রেপ্তার ছোট সাজ্জাদের স্ত্রী

একই মাঠে সকালে শ্রীলঙ্কাকে, বিকেলে পাকিস্তানকে হারাল নিউজিল্যান্ড

স্বাধীনতা দিবসে এবার কুচকাওয়াজ হচ্ছে না

থমথমে খামারবাড়ি: সড়ক অবরোধ করে চলছে অবস্থান কর্মসূচি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত