অনলাইন ডেস্ক
পর্যটন মন্ত্রী মোহাম্মদ রামি মার্টিনি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের কাজে ফিরে আসতে এবং তাঁদের সরকারি স্থাপনাগুলো রক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি সিরিয়ার জনগণের জন্য একটি ‘নতুন দিনের’ আগমনকে স্বাগত জানিয়েছেন।
পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অফিশিয়াল ফেসবুক অ্যাকাউন্টে শেয়ার করা একটি ভিডিও বার্তায় মার্টিনি বলেছেন, ‘এটি জনগণের ইচ্ছা এবং জনগণের ইচ্ছাই বিজয়ী হতে হবে।’
তিনি বলেন, সরকারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ গাজি আল-জালালি রাজধানীতে প্রবেশ করা বিরোধী শক্তির সঙ্গে সমন্বয় করছেন।
এর আগে বিরোধী নেতা আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি বলেছেন, ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো আগের প্রধানমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে থাকবে যতক্ষণ না সেগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়।’
সিরিয়ার সঙ্গে ইসরায়েলের অধিকৃত সীমান্ত অঞ্চলগুলোকে (অধীকৃত গোলান মালভূমি) সংরক্ষিত সামরিক এলাকা ঘোষণা করেছে।
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মেরম গোলান, আইন জিভান, বুকআতা এবং খিরবেত আইন হুরার চারপাশের কৃষি অঞ্চলগুলোতে বেসামরিক লোকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে।
কৃষকেরা সামরিক বাহিনীর প্রয়োজন অনুসারে এবং ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে কিছু সময়ের জন্য এই অঞ্চলগুলোতে প্রবেশ করতে পারবেন।
ইরাকি গণমাধ্যমে জানানো হয়েছে, দামেস্কে অবস্থিত ইরাকি দূতাবাস খালি করা হয়েছে।
বার্তা সংস্থা এএফপি একটি কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে।
এর আগে দামেস্ক শহরে অবস্থিত ইরানি দূতাবাসে হামলা হয়েছে।
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন বলে খবর এসেছে। তবে তাঁর অবস্থান এখনও অজানা।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্টের একজন কূটনৈতিক উপদেষ্টা বলেছেন, তিনি নিশ্চিত নন, আসাদ আরব আমিরাতে রয়েছেন কিনা।
বাহরাইনে মানামা ডায়ালগে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে আসাদের প্রসঙ্গে আসে। সাংবাদিকেরা আসাদের আরব আমিরাতে আশ্রয় নেওয়ার বিষয়ে জল্পনা নিয়ে জানতে চাইলে উপদেষ্টা আনোয়ার গারগাশ মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন।
তিনি বলেন, ‘যখন মানুষ জিজ্ঞেস করে, বাশার আল-আসাদ কোথায় যাচ্ছেন?, এটি সত্যিই, দিনের শেষে, ইতিহাসে একটি ফুটনোট মাত্র।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি এটি গুরুত্বপূর্ণ নয়। যেমন আমি বলেছি, শেষ পর্যন্ত এটি বড় ঘটনাগুলোর তুলনায় একটি ফুটনোট মাত্র।’
গারগাশ আরও উল্লেখ করেন, সিরিয়া এখনও ‘ঝুঁকিমুক্ত নয়’ এবং সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার উত্থানের শঙ্কা রয়েই গেছে।
সিরিয়ার প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ গাজী আল-জালালি সম্প্রচার মাধ্যম আল-আরাবিয়া চ্যানেলকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া উচিত। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।
সাক্ষাৎকারে সিরিয়ার প্রধানমন্ত্রী আরও উল্লেখ করেছেন, তিনি বিদ্রোহী কমান্ডার আবু মোহাম্মদ আল-জাওলানির সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখেন। তাঁদের আলোচনায় ক্ষমতা হস্তান্তর ও অন্তর্বর্তী সময় নিয়ে কথা হয়েছে।
আজ রোববার সকালে আল-আরাবিয়া চ্যানেল প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে বলেছে, তাঁর বাশার আল-আসাদের সঙ্গে সর্বশেষ যোগাযোগ হয়েছে ‘গতকাল সন্ধ্যায়’। আসাদের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে তাঁর কাছে কোনো তথ্য নেই।
এদিকে আজ ভোরে প্রধানমন্ত্রী সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক বক্তব্যে বলেছেন, তিনি জনগণের জন্য সর্বোত্তম কাজটি করতে প্রস্তুত।
সিরিয়ার সঙ্গে আফগানিস্তানের সীমান্ত নেই। ভৌগোলিকভাবে দুই দেশ বহু দূরত্বে বিচ্ছিন্ন।
কিন্তু সিরিয়ায় বিদ্রোহী বাহিনীগুলোর প্রতি তালেবানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সমর্থন এবং সহানুভূতি রয়েছে।
সিরিয়ায় চলমান পরিস্থিতি নিয়ে তালেবান সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি আসেনি। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁদের প্রতিক্রিয়া বেশ অবাক করার মতো!
তালেবানরা রক্ষণশীল ও জিহাদি মতাদর্শের অনুসারী। এক তালেবান সদস্য বলেছেন, আদর্শিক কারণে তালেবানদের সিরিয়ায় জিহাদি বিদ্রোহীদের প্রতি গভীর সহানুভূতি রয়েছে।
এই তালেবান কর্মকর্তার বক্তব্য অনুযায়ী, তালেবানরা আশা করছে, বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো ‘সিরিয়ায় শরিয়া আইন’ বাস্তবায়ন করবে, যা তাঁদের তালেবান সরকারের মতো হবে।
বিদ্রোহীদের আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় সিরিয়ার মাটিতে সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল। এখন জানা যাচ্ছে, ইসরায়েলের কয়েকটি ট্যাঙ্ক সিরিয়া সীমান্তের বেড়া অতিক্রম করেছে। ১৯৭৪ সালের পর এই প্রথম তারা সিরিয়া সীমান্ত অতিক্রম করল।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম মারিভের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই পদক্ষেপটি মূলত সিরিয়ার সেনাবাহিনী বা সাধারণ মানুষের ইসরায়েলি ভূখণ্ডের দিকে এগিয়ে আসা প্রতিরোধ করতেই নেওয়া হয়েছে।
ইসরায়েলি ডায়াসপোরা বিষয়ক মন্ত্রী আমিখাই চিকলি বলেছেন, ইসরায়েলকে ১৯৭৪ সালের যুদ্ধবিরতি রেখা ভিত্তিক একটি নতুন প্রতিরক্ষা রেখা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এই নিয়ন্ত্রণ রেখা অধীকৃত গোলান মালভূমি (মাউন্ট হারমন) এলাকায় অবস্থিত।
ইসরায়েল ১৯৬৭ সালে সিরিয়ার গোলান মালভূমির অধিকাংশ অংশ দখল করে। ১৯৮১ সালে সেটির পুরোটাই তারা নিয়ন্ত্রণে নেয়।
প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের পতনের পর কাতারের দোহায় সিরিয়ার দূতাবাস একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘স্বাধীনতার প্রথম প্রভাত এসেছে এবং সিরিয়া জুলুমের কবল থেকে মুক্ত হয়েছে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘আমাদের জনগণ বহু বছর ধরে বর্ণনাতীত অমানবিকতার শিকার হয়েছে। তাঁরা এরপরও সবচেয়ে গুরুতর অপরাধের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে মানব মর্যাদা ও জাতির সম্পদকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেননি।’
বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, জনগণ এখন দেশ পুনর্গঠন করবে, যাতে দেশ সমস্ত সিরিয়াবাসীর জন্য একটি মাতৃভূমি হয়ে ওঠে।
‘আমরা আমাদের জনগণের প্রতি এই বার্তা পাঠাচ্ছি যে, সামনে আমাদের পথ দীর্ঘ এবং চ্যালেঞ্জপূর্ণ। আমাদের একে অপরের প্রতি হাত বাড়িয়ে দিতে হবে, ঐক্যবদ্ধভাবে দায়িত্ব নিয়ে আমাদের দেশ পুনর্গঠন করতে হবে। এই মহান মাতৃভূমির জন্য একটি যোগ্য ভবিষ্যৎ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’ বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে দূতাবাস।
বিদ্রোহীরা বলেছে, দেইর এজোরে শাসক বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছে।
পূর্ব সিরিয়ার সবচেয়ে বড় শহর দেইর এজোরে সরকারি বাহিনী অবস্থান করছিল। বিদ্রোহী গোষ্ঠী এইচটিএস টেলিগ্রাম চ্যানেলে বলেছে, সেনাবাহিনী বিদ্রোহীদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে।
দেইর এজোরে প্রবেশ করার কথা জানানোর মাত্র এক মিনিট পরেই আত্মসমর্পণের ঘোষণা আসে।
সিরিয়ার জনগণের উদ্দেশে বিদ্রোহীদের প্রথম বিবৃতি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়েছে।
সাধারণ পোশাক পরিহিত এক ব্যক্তি বিদ্রোহীদের পক্ষে ঘোষণা দেন, ‘দামেস্ক শহর মুক্ত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আজকে স্বৈরাচার বাশার আল আসাদ ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন। দামেস্কের সব কারাবন্দী মুক্তি পেয়েছেন। আমরা আমাদের যোদ্ধা এবং নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি যাতে তাঁরা সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি রক্ষা এবং সংরক্ষণ করেন। সিরিয়ার জয় হোক।’
গত ১০ দিন ছিল ইতিহাসের এক দারুণ মুহূর্ত। সিরিয়াতে দ্রুতগতিতে অনেক ঘটনা ঘটছে।
বিক্ষোভকারীরা তাঁদের শক্তিশালী ঘাঁটি উত্তর-পশ্চিম ইদলিব থেকে বেরিয়ে দ্রুত অগ্রসর হয়ে আলেপ্পো, হামা এবং হোমস দখল করেছে।
এখন তাঁরা দামেস্কে, প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের ক্ষমতার কেন্দ্রস্থলে পৌঁছে গেছেন।
ঘটনার আকস্মিকতায় মানুষ হতবাক, তাঁরা চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেন না, একই সঙ্গে উত্তেজিতও। তাঁরা যেন অনুভূতি প্রকাশ করতে পারছেন না, এমন এক অবস্থা!
এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ সেই কয়েক লাখ সিরীয়র জন্য যারা নির্যাতনের শিকার হয়ে পালিয়েছেন অথবা একটি ভালো জীবনের আশায় বিধ্বস্ত দেশ ছেড়ে গিয়েছেন।
আসাদ সরকার কয়েক বছর আগে বিজয় ঘোষণা করার পর পরিস্থিতি আপাত স্থিতিশীল থাকলেও সিরীয়দের জীবনমানের কোনো উন্নতি হয়নি।
সিরিয়ার প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। দেশে একটি মানবিক সংকট রয়েছে। সেখানে মানুষ আন্তর্জাতিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল।
আসাদের পতনের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর মানুষজন সীমান্তে জড়ো হচ্ছে। তাঁরা অপেক্ষা করছেন কখন সীমান্ত খুলে দেওয়া হবে, তাঁরা নিজ নিজ বাড়িতে ফিরতে পারবেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই দামেস্কের আশেপাশের এলাকার বাসিন্দা। এই মানুষগুলোকে আসাদ সরকার ফিরতে দেয়নি।
বিরোধীরা এরই মধ্যে রাজধানী দামেস্কে প্রবেশ করেছে। এবার সিরিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম শহর হোমসের পতন হয়েছে।
আল–জাজিরার পাওয়া ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, হোমসের সড়কে উদ্যাপন করছেন যোদ্ধা ও সাধারণ মানুষ। বিদ্রোহীরা যখন শহরে প্রবেশ করেছিলেন তখন তাঁদের উল্লাস করতে দেখা যায়।
আমেরিকান রাজনীতিবিদ ব্রেনডেন বয়েল বলেছেন, ‘আল-আসাদ শাসনের পতন অবশ্যই সিরিয়ার জনগণের জন্য একটি সুযোগ। এর মাধ্যমে তাঁরা দমনপীড়ন এবং গোষ্ঠীভিত্তিক সহিংসতা
থেকে মুক্ত হয়ে নিজেদের ভবিষ্যত নির্ধারণ করতে পারবেন।’
সামাজিক মাধ্যম দেওয়া পোস্টে তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘গত দশক ধরে কংগ্রেসে ফ্রি সিরিয়া আন্দোলনের পক্ষে নিরলসভাবে কাজ করার পর, আমি অনেক স্বস্তি অনুভব করছি। সেই খুনি অবশেষে পতিত হয়েছে!’
এদিকে, সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের পতনে নেতৃত্ব দেওয়া সশস্ত্র গোষ্ঠী এইচটিএস যুক্তরাষ্ট্রে ‘সন্ত্রাসী’ গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত।
সিরিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেছেন তিনি জনগণের দ্বারা নির্বাচিত নেতৃত্বের সঙ্গে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
সিরিয়ার প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ গাজী আল-জালালি বলেছেন, তিনি দামেস্কে অবস্থান করছেন এবং জনগণের জন্য যা ভালো তা করতে সহায়তা করতে প্রস্তুত।
সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত ভাষণে তিনি আরও বলেন, সিরিয়া একটি স্বাভাবিক দেশ হতে পারে যা তার প্রতিবেশী দেশগুলো এবং বিশ্বের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তৈরি করতে পারে।
সিরিয়ার বিরোধী নেতা হাদি আল-বাহরা সংবাদ সংস্থা আল-আরাবিয়াকে বলেছেন, আসাদের শাসনের পতন হয়েছে এবং ‘সিরিয়ার ইতিহাসের একটি অন্ধকার যুগ পেরিয়ে গেছে’।
বাহরা সিরিয়ার বিপ্লবী এবং বিরোধী শক্তির জাতীয় জোটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি জনসাধারণকে জানিয়েছেন, দামেস্ক এখন নিরাপদ।
তিনি এক্সে লিখেছেন, ‘আমাদের সব ধর্ম ও সম্প্রদায়ের জনগণের প্রতি, যতক্ষণ আপনি অন্য কোনো নাগরিকের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলবেন না এবং যতক্ষণ আপনি আপনার ঘরে থাকবেন, আপনি নিরাপদ।’
আল বাহরা বলেন, ‘কোনো প্রতিশোধ বা প্রতিশোধের ঘটনা হবে না এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনো ঘটনা ঘটবে না। মানুষের মর্যাদাকে সম্মান করা হবে এবং সবার সম্মান রক্ষা করা হবে।’
বিপ্লবী গোষ্ঠী এইচটিএস শিগগিরই সিরিয়ার জাতীয় টেলিভিশনে জনগণের উদ্দেশে তাদের প্রথম বার্তা প্রচার করবে।
আজ রোববার গ্রুপটি সকালের দিকে জানিয়েছিল, তারা দামেস্কে রেডিও ও টেলিভিশন সদর দপ্তর দখল করেছে এবং শিগগিরই তাদের বিজয়ের ঘোষণা সম্প্রচার করবে।
বিপ্লবী বাহিনী রাজধানীতে প্রবেশ করার পর রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন সম্প্রচার বন্ধ হয়ে গেছে।
বিরোধী সশস্ত্র বাহিনী আগেই দাবি করেছে, প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সিরিয়া ছেড়ে চলে গেছেন।
বিরোধী যোদ্ধারা দামেস্ক বিমানবন্দর দখলে নেওয়ার কয়েক মুহূর্ত আগে, ওপেন–সোর্স ফ্লাইট ট্র্যাকারগুলো সিরিয়ার আকাশে একটি উড়োজাহাজের গতিপথ রেকর্ড করেছে।
ইলিউশিন ৭৬ উড়োজাহাজ, যার ফ্লাইট নম্বর সিরিয়ান এয়ার ৯২১৮, দামেস্ক থেকে এটিই ছিল শেষ ফ্লাইট।
প্রথমে এটি পূর্ব দিকে উড়ে যায়, এরপর উত্তর দিকে ঘোরে।
কয়েক মিনিট পরে উড়োজাহাজটির সিগন্যাল হারিয়ে যায়। ওই সময় এটি হোমস শহরের ওপর চক্কর দিচ্ছিল।
তবে ওই উড়োজাহাজে করেই আসাদ পালিয়েছেন কিনা, আর কোথায় তাঁর গন্তব্য সে ব্যাপারে কোনো তথ্য কেউ দিতে পারেননি।
বিদ্রোহী বাহিনী সিরিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে বেশ কয়েকটি নতুন ঘোষণা দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ পালিয়ে গেছেন— এমন ধারণা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্রোহীরা প্রশাসনিক কাজ নিয়ে একের পর এক ঘোষণা দিচ্ছে।
ইসলামপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)–এর নেতা টেলিগ্রামে ঘোষণা করেছেন, দামেস্ক শহরে ‘সরকারি প্রতিষ্ঠান’– এর কাছাকাছিও যাবে না বাহিনী।
আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি যোগ করেছেন, এই প্রতিষ্ঠানগুলো সাবেক প্রধানমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে থাকবে যতক্ষণ না সেগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হচ্ছে।
ফাঁকাগুলি আনন্দ উল্লাস না করারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ গাজী আল-জালালী বলেছেন, তিনি তাঁর বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন না এবং তিনি নিশ্চিত করতে চান যে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকর থাকবে।
আল-জালালী বলেছেন, ‘আমি সবাইকে যুক্তিসঙ্গতভাবে ভাবতে এবং দেশের কথা চিন্তা করার আহ্বান জানাই।’
‘আমরা বিরোধীদের প্রতি হাত বাড়িয়ে দিচ্ছি, যারা তাঁদের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন এবং নিশ্চিত করেছেন যে, তাঁরা এই দেশের কারো ক্ষতি করবেন না।’ যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী
তিনি নাগরিকদের প্রতি সরকারি সম্পত্তি রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন।
মধ্যপ্রাচ্যে অতীতে সরকার পতনের সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপক অরাজকতা দেখা দিয়েছে। ২০০৩ সালে, আমেরিকান বাহিনী ইরাকি প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর, রাষ্ট্রীয় সংস্থা এবং সরকারি স্থাপনাগুলোতে ব্যাপক লুটপাট হয়।
সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো বলেছে, ‘নতুন সিরিয়া’ হবে একটি ‘শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের’ স্থান, যেখানে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে এবং সব সিরিয়াবাসীর মর্যাদা সংরক্ষিত হবে।
বিদ্রোহীরা এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা অন্ধকার অতীতের পাতা উল্টিয়ে ভবিষ্যতের জন্য নতুন দিগন্ত খুলছি।’
বিরোধী নেতারা, যার মধ্যে এইচটিএস প্রধান আল-জুলানিও রয়েছেন, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে জোর দিয়ে বলেছেন, তাঁরা সব নাগরিকের জন্য একটি রাষ্ট্র গড়তে চান, যা গোষ্ঠীতন্ত্র এবং আল-কায়েদার সঙ্গে পূর্ববর্তী সম্পর্ক নিয়ে উদ্বেগ দূর করবে।
সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ নাতাশা হল বিবিসিকে বলেছেন, তিনি মনে করেন, আমরা সিরিয়ায় আসাদ শাসনের অবসান প্রত্যক্ষ করছি।
বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর ভেতরে এখন কী ধরনের সম্পর্ক ও বোঝাপড়া কাজ করছে বলে মনে হচ্ছে, এমন প্রশ্নে হল বলেন, ইসলামপন্থী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) এই লড়াইয়ের নেতৃত্ব দিচ্ছে। এরাই অংশগ্রহণকারী সব গোষ্ঠীর মধ্যে সবচেয়ে ‘শৃঙ্খলাবদ্ধ এবং শক্তিশালী’।
তিনি আরও বলেন, এইচটিএস বিদেশি শক্তির কাছ থেকে সবচেয়ে স্বাধীন বলে মনে হচ্ছে, তারা বাইরের শক্তির ওপর কম মুখাপেক্ষী, যেখানে অন্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো তুরস্কের প্রভাবাধীন।
হল বলেন, ‘এই গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সমন্বয় কেমন হবে, বিশেষ করে উত্তর-পূর্বে কুর্দি পরিচালিত গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে, তা সময়ই বলে দেবে।’
যেখানে তুরস্ক এবং কুর্দিদের মধ্যে গভীর ঐতিহাসিক শত্রুতা রয়েছে। এই কুর্দি জনগোষ্ঠী তাদের একটি স্বাধীন কুর্দিস্তানের জন্য লড়াই করে যাচ্ছে।
বিদ্রোহী বাহিনী সিরিয়াকে ‘মুক্ত’ ঘোষণা করেছে। তারা জানিয়েছে, স্বৈরাচারী প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ দেশ ত্যাগ করেছেন।
এটি একটি অন্ধকার যুগের সমাপ্তি এবং একটি নতুন যুগের সূচনা, টেলিগ্রাম চ্যানেলে এমন বার্তা দিয়েছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী এইচটিএস।
বিদ্রোহীরা বলেছে, আসাদের শাসনের অর্ধ-শতাব্দী ধরে যারা বাস্তুচ্যুত বা বন্দী হয়েছিলেন, তাঁরা এখন ঘরে ফিরতে পারবেন।
এইচটিএস বলেছে, এটি হবে একটি ‘নতুন সিরিয়া’ যেখানে ‘সবাই শান্তিতে বসবাস করবে এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে’।,
রাজধানী দামেস্কের কেন্দ্রে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান, উমাইয়াদ স্কয়ার, সেখানে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সংস্থা, যেমন: প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং সিরিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর সদর দপ্তর অবস্থিত। এই এলাকায় এখন মানুষ আসাদ পতনের উদ্যাপন শুরু করে দিয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, উচ্চশব্দে গান বাজানো হচ্ছে এবং প্রায় এক ডজন মানুষ একটি ট্যাঙ্কের চারপাশে নাচছে। আসাদের সামরিক বাহিনী এই ট্যাঙ্ক ফেলে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা দামেস্কে সদর দপ্তর থেকে সরে গেছেন।
সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের মধ্যপ্রাচ্য প্রোগ্রামের সিনিয়র ফেলো নাতাশা হল বিবিসি রেডিও ৫ লাইভকে বলেছেন, ‘এটি সত্যিই মনে হচ্ছে আমরা ৫৪ বছরের স্বৈরশাসনের শেষ ঘণ্টা, বা মিনিট পার করছি।’
তিনি ১৯৭০–এর দশকের শুরুতে শুরু হওয়া আসাদ পরিবারের শাসনের কথা উল্লেখ করেছেন।
হল বলেন, মনে হচ্ছে, প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ দামেস্ক ছেড়ে চলে গেছেন, যেমন আমরা আগেই জানিয়েছি।
তিনি বলেন, দেশে যা ঘটছে তা একাধিক ঘটনার সম্মিলিত ফলাফল। এর মধ্যে রয়েছে আসাদের মিত্ররা, যেমন ইরান এবং রাশিয়া, বিশ্বব্যাপী অন্যান্য ঘটনাবলীর কারণে ‘দুর্বল এবং বিভ্রান্ত’ হয়ে পড়েছে।
এর সঙ্গে যোগ হয়েছে সিরিয়ার ৯০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। অনেকেই বাস্তুচ্যুত হয়ে আশ্রয় শিবিরে অনিশ্চিত জীবনযাপন করছে।
‘আমি মনে করি মানুষ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে,’ যোগ করেন হল।
সিরিয়ার বিদ্রোহীরা তথাকথিত সায়দনায়া কারাগার থেকে বন্দীদের মুক্ত করেছে। এই কারাগারকে এক সময় জাতিসংঘ ‘মানব জবাইখানা’ হিসেবে বর্ণনা করেছিল। এখানে হাজার হাজার বিরোধী সমর্থকের ওপর নির্যাতন ও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
ধারণা করা হচ্ছে, হাজার হাজার মানুষ এই কারাগারে আটক আছেন।
বিদ্রোহী গোষ্ঠী এইচটিএস তাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে ঘোষণা করেছে, বন্দীদের মুক্ত করা হয়েছে এবং এটিকে সায়দনায়ার ‘অন্যায়ের যুগের সমাপ্তি’ বলে অভিহিত করেছে তারা।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, মানুষ কারাগারের প্রাঙ্গণ থেকে বেরিয়ে আসছে।
অবশ্য এসব ভিডিও কোনো গণামাধ্যম যাচাই করতে পারেনি।
সায়দনায়া কারাগারের বন্দী ও নিখোঁজদের সমিতি জানিয়েছে, মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দীরা দামেস্কের নিকটবর্তী একটি শহর মানিনের দিকে যাচ্ছেন।