Ajker Patrika

যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক একই ছন্দে রয়েছে: বরিস জনসন

অনলাইন ডেস্ক
যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক একই ছন্দে রয়েছে: বরিস জনসন

ঢাকা: যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ‌একই ছন্দে' রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে প্রথম মুখোমুখি বৈঠক শেষে তিনি এই মন্তব্য করেন।

যুক্তরাজ্যের স্থানীয় সময় আজ বৃহস্পতিবার ইংল্যান্ডের কর্নওয়ালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। এতে ব্রেক্সিটের কারণে উত্তর আয়ারল্যান্ড ঘিরে সৃষ্ট বাণিজ্য সংকটের প্রসঙ্গটি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হয়। এই সংকট নিরসনে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) একই পথে এক তালে হাঁটছে বলে বৈঠক শেষে দেওয়া বক্তব্যে ইঙ্গিত দেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।

জি-সেভেন সম্মেলনের আগে আগে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে উত্তর আয়ারল্যান্ড সংকট বেশ গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা হয়। বৈঠক শেষে দেওয়া বক্তব্যে বরিস জনসন জানান, সংকট নিরসনে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইইউ একযোগে কাজ করবে। তিন পক্ষই গুড ফ্রাইডে এগ্রিমেন্ট (জিএফএ) রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

এর আগে জো বাইডেন এই চুক্তি রক্ষার বিষয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, যুক্তরাজ্য ও ইইউ দ্বৈরথের কারণে শান্তি প্রক্রিয়অ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া উচিত নয়।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈঠকে দুই নেতা আটলান্টিকের দুপারের মধ্যে ভ্রমণ পুনরায় চালুর জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠনের বিষয়ে সম্মত হয়েছেন। করোনা মহামারি ব্যাপক আকার নিলে যুক্তরাষ্ট্রে ব্রিটিশদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। বৈঠকে এ ছাড়া ‌আটলান্টিক সনদ' নামে একটি সনদে স্বাক্ষরের বিষয়ে উভয় নেতা সম্মত হয়েছেন। উভয় পক্ষে একযোগে বিভিন্ন বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রতিশ্রুতিই এই সনদের মূল উপজীব্য।

বরিস জনসন ও জো বাইডেনের মধ্যকার বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে ছিল করোনার টিকা, জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে সব ছাপিয়ে অনুমিতভাবেই ব্রেক্সিটের প্রসঙ্গটিই মুখ্য হয়ে ওঠে।

ব্রেক্সিটের পর ব্রিটেনের মূল ভূখণ্ড থেকে উত্তর আয়ারল্যান্ডে পণ্য পাঠাতে ইইউ আরোপিত কিছু বাধা তৈরি হয়েছে। এই নিয়েই উভয় পক্ষের মধ্যে বাণিজ্য সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে ব্রিটেন থেকে পণ্য আমদানিতে নতুন এই বাধার প্রভাব পড়েছে উত্তর আয়ারল্যান্ডের জনপরিসরে। সেখানে এমনকি সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার ঘটনাও ঘটেছে। বিষয়টি ক্রমে ইউরোপ ও মিত্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হিসেবে ইউরোপে কোনো অস্থিতিশীলতা তৈরি হোক, তা নিজের স্বার্থেই চায় না যুক্তরাষ্ট্র। উপরন্তু, বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পূর্বপুরুষের আবাসভূমি ছিল আয়ারল্যান্ড। সব মিলিয়ে এই সংখট নিরসন যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকার তালিকায় ঢুকে পড়ে। সামনের কয়েক মাস এই সংকট নিরসনে এই অঞ্চলে নানা কূটনৈতিক তৎপরতা চলবে নিঃসন্দেহে।

এ বিষয়ে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ বিবিসিকে বলেন, ‌কয়েক বছর তর্ক-বিতর্কের পর ডিসেম্বরে আমরা যে সমাদানে পৌঁছেছি, তা আগামী জুলাইয়েই নতুন করে পর্যালোচনার কিছু নেই বলে আমি মনে করি। অনেক স্নায়ুক্ষয়ী আলোচনার পর আমরা একটি বাণিজ্য সমঝোতায় পৌঁছেছি। ছয় মাস না যেতেই যদি তারা বলে, ‍তোমাদের সঙ্গে আমরা যে আলোচনা করেছি, তাকে সম্মান জানানোর পদ্ধতি আমাদের জানা নেই", তবে এর অর্থ দাঁড়ায়, কোনো কিছুই আর সম্মানের যোগ্য নয়।'

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে আসার (ব্রেক্সিট) সময় উত্তর আয়ারল্যান্ডকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়। ব্রেক্সিটের কারণে ইংল্যঅন্ড, স্কটল্যান্ড ও ওয়েলস ইইউ থেকে বেরিয়ে এলেও উত্তর আয়ারল্যান্ডের পক্ষে তা সম্ভব হয়নি। মূলত ইইউ সদস্য হিসেবে আয়ারল্যান্ড প্রজাতন্ত্রের থেকে যাওয়া এবং অঞ্চলটির সঙ্গে উত্তর আয়ারল্যান্ডের স্থলসীমান্ত থাকার কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় উভয় পক্ষ সম্মত হয় যে, দুই ভূখণ্ডের মধ্যে শান্তি অক্ষুণ্ন রাখতে হলে, যুক্তরাজ্যের বাকি অংশ থেকে উত্তর আয়ারল্যান্ডে আসা যেকোনো পণ্যকে ইইউ মানদণ্ড পেরিয়ে আসতে হবে।

এই সমঝোতায় বাধ সাধে যুক্তরাজ্যকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে চাওয়া অংশ। তারা এই সমঝোতাকে বিভাজনের নামান্তর হিসেবে চিহ্নিত করে। তাদের ভাষ্যমতে, আয়ারল্যান্ড ও উত্তর আয়ারল্যান্ডের মধ্যে আক্ষরিক অর্থে স্থলসীমান্ত টানা এড়াতে গিয়ে আইরিশ সাগরকেই সীমান্ত হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে বাণিজ্যিক যোগাযোগ ভয়াবহভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে বলেও তারা অভিযোগ তোলে। ক্রমে উত্তর আয়াল্যান্ডের রাজনীতিও অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। আর এটিই এই সংকটকে বর্তমান রূপ দিয়েছে।

আজ অনুষ্ঠিত বাইডেন-জনসন বৈঠকে এই বিষয়টির নিষ্পত্তিই মুখ্য হয়ে উঠেছে। এ ছাড়া চীন ও রাশিয়ার মতো বিরোধী পক্ষকে মোকাবিলায় ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র মৈত্রীকে এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিও বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। এরই ফল হচ্ছে ‌আটলান্টিক সনদ'। এই আটলান্টিক সনদকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বৈঠক শেষে বড় অর্জন হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, সাইবার নিরাপত্তা, ক্রমবর্ধনশীল প্রযুক্তি খাত, বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বৈশ্বিক ইস্যুগুলো যৌথভাবে মোকাবিলাই এই সনদের মূল লক্ষ্য।

বৈঠক শেষে দেওয়া বক্তব্যে বাইডেন বলেন, আমাদের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক রক্ষা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি উভয় পক্ষের প্রতিশ্রুতিকে গুরুত্ব দিয়ে আমরা বিশেষ সম্পর্কের বিষয়ে সম্মত হয়েছি।'

এদিকে বরিস জনসন বাইডেনের নেতৃত্বাধীন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসনকে ‌মুক্ত হাওয়ায় নিশ্বাস নেওয়ার' সঙ্গে তুলনা করেছেন। বৈঠক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‌ন্যাটো, নিরাপত্তা থেকে শুরু করে জলবায়ু পরিবর্তন পর্যন্ত বহু বিষয়ে তারা আমাদের সঙ্গে কাজ করতে চায়।'

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মাসুদ আহমেদের সব পদ স্থগিত

টিআইএন নেওয়ার পরে কিন্তু ঘুমাইতে পারবেন না: এনবিআর চেয়ারম্যান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত