যেভাবে পাকিস্তানে আভিজাত্য আর ক্ষমতার প্রতীক হয়ে উঠল পিকআপ ট্রাক ‘ডালা’

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭: ৫২
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮: ০৬
ব্যবসায়ীদের জন্য নিরাপত্তা ও আভিজাত্যের প্রতীক হয়ে উঠেছে ‘টয়োটা হাইলাক্স পিকআপ’। ছবি: এএফপি

করাচির ব্যস্ত সড়কে যখন যানজটে আটকে থাকে সাধারণ যানবাহন, তখন একটি গাড়ি সবার চোখে পড়ে—টয়োটা হাইলাক্স। ট্রাফিকের জট ভেদ করে দ্রুতগতিতে ছুটে চলা এই যান হয়ে উঠেছে ক্ষমতা, প্রভাব ও ভয়ের প্রতীক। ‘ডালা’ নামে পরিচিত এই পিকআপ গাড়ি গ্রামীণ এলাকা পেরিয়ে এখন শহরের রাজনীতি, ব্যবসা, এমনকি অপরাধ জগতের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

বার্তা সংস্থা এএফপির একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, স্থানীয়ভাবে ডালা নামে পরিচিত এই গাড়িটি একসময় পাকিস্তানের গ্রামীণ ও পার্বত্য অঞ্চলে নির্ভরযোগ্য যানবাহন হিসেবে জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটি শহরের নতুন ব্যবসায়ীদের জন্য নিরাপত্তা ও আভিজাত্যের প্রতীক হয়ে উঠেছে।

করাচির ব্যস্ত সড়কে হাইলাক্সের উপস্থিতি একধরনের মর্যাদার পরিচায়ক। রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী এবং ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা এই গাড়ি বহন করে একটি প্রভাবশালী বার্তা দেন। করাচির রাজনীতিবিদ উসমান পেরিয়ার এএফপিকে বলেন, ‘এই গাড়ি মানে গুরুত্বপূর্ণ কেউ আসছে। এটি আভিজাত্য, নিরাপত্তা এবং ক্ষমতার প্রতীক।’

স্থানীয়ভাবে ডালা নামে পরিচাত এই গাড়ির পিছনে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নিরাপত্তার জন্য অস্ত্রধারী দেহরক্ষী রাখেন। ছবি: এএফপি
স্থানীয়ভাবে ডালা নামে পরিচাত এই গাড়ির পিছনে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নিরাপত্তার জন্য অস্ত্রধারী দেহরক্ষী রাখেন। ছবি: এএফপি

পাকিস্তানের নির্বাচনী সময়ে হাইলাক্সের চাহিদা বেড়ে যায়। ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের সময় এই ডালা গাড়ি ভাড়ার হার ছিল তুঙ্গে। পিটিআইয়ের এমপি সাজ্জাদ আলী সুমরো বলেন, ‘নির্বাচনী প্রচারণা করতে রেভো (ডালা গাড়ি) ছাড়া উপায় নেই।’

তবে এই গাড়ি শুধু নিরাপত্তার জন্য ব্যবহৃত হয় না। ডালা এখন গুম বা অপহরণের প্রতীক হয়ে উঠেছে। অনেক মানবাধিকারকর্মী অভিযোগ করেন, এই গাড়িগুলো প্রায়ই গোপন অভিযানে ব্যবহৃত হয়। ইসলামাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি বাবর সত্তার এক শুনানিতে বলেন, ‘একটি ভিগো (ডালা গাড়ি) বাড়িতে প্রবেশ করে, একজনকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর ওই ব্যক্তির সঙ্গে কী ঘটেছে কেউ জানে না।’

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান অভিযোগ করেছিলেন, তাঁকে ২০২৩ সালে ইসলামাবাদে পাকিস্তান রেঞ্জারস (বেসামরিক বাহিনী) একটি কালো ডালায় তুলে নিয়ে গিয়েছিল। তাঁর দাবি, এটি পাকিস্তান মুসলিম লীগ—নওয়াজের সামরিক নেতৃত্বের ষড়যন্ত্রের অংশ ছিল।

করাচির অপরাধপ্রবণ সড়কেও ডালার প্রভাব দেখা যায়। এসব গাড়ি নিয়ে কাজ করেন ৩৫ বছর বয়সী জোহাইব খান। তিনি বলেন, ‘একজন সাধারণ ছিনতাইকারী ডালা ছেড়ে অন্য কোনো গাড়ি লুট করাকে নিরাপদ মনে করে।’

হাইলাক্সের উপস্থিতি প্রভাবশালী ও নিরাপত্তার প্রতীক হওয়ায় পুলিশেরও গাড়ি থামানোর সাহস কম। জোহাইব বলেন, ‘পুলিশ আমাকে থামায় না। কারণ, তারা মনে করে, আমি এমন কেউ হতে পারি যে তাদের ক্ষতি করতে পারে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত