Ajker Patrika

আজই ফাইনাল খেলবেন এরদোয়ান

আজই ফাইনাল খেলবেন এরদোয়ান

গত ১৪ মে প্রথম দফার ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে পারেননি তুরস্কের ভোটাররা। কারণ দেশটির প্রেসিডেন্ট হতে হলে বিজয়ী প্রার্থীকে অবশ্যই নির্বাচনে কাস্ট হওয়া ভোটের অর্ধেকের বেশি পেতে হতো। প্রথম দফায় চার প্রার্থীর কেউই এই শর্ত পূরণ করতে পারেননি। 

এ অবস্থায় প্রথম দফায় সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া দুই প্রার্থীকে নিয়ে আজ রোববার দ্বিতীয় দফার ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আজকের নির্বাচনে দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও একেপি নেতা রিস্যেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিরোধী ন্যাশনাল অ্যালায়েন্সের কেমাল কিলিচদারওলু। 

প্রথম দফায় ৪৯.৫২ শতাংশ ভোট পেয়ে অল্পের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হননি এরদোয়ান। সে সময় কেমাল পেয়েছিলেন ৪৫ শতাংশ ভোট। 

অতীতে এরদোয়ান যত নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন প্রতিবারই প্রথম দফায় জিতে গিয়েছিলেন। এবারই প্রথম দ্বিতীয় দফার ভোটে লড়াই করতে হচ্ছে তাকে। 

টানা ২০ বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট হিসেবে তুরস্কের ক্ষমতায় আছেন এরদোয়ান। এ ক্ষমতার মেয়াদ আরও পাঁচ বছর বাড়বে কি-না তা আজই নির্ধারিত হবে। কিছু জরিপেও দেখা গেছে, ৫২ থেকে ৫৪ শতাংশ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হবেন তিনি। সাম্প্রতিক ভূমিকম্প দেশটির অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা দিলেও তা এরদোয়ানের জনপ্রিয়তায় সামান্যই প্রভাব ফেলেছে। 

প্রথম দফায় কেমালের চেয়ে ২৫ লাখ ভোট বেশি পেয়েছিলেন এরদোয়ান। এ হিসেবে দ্বিতীয় দফায় তাকেই এগিয়ে রাখছেন বিশ্লেষকেরা। 

তবে কারও কারও মতে, দ্বিতীয় দফার ভোটে প্রভাব ফলতে পারে প্রথম দফায় তৃতীয় অবস্থানে থাকা সিনানের সমর্থকেরা। এ ছাড়া প্রথম দফায় ভোটকেন্দ্রে না যাওয়া প্রায় ৮০ লাখ ভোটারও প্রভাবক হতে পারে। এসব ভোটারকে নিজের দিকে টানতে একটি ইউটিউব চ্যানেলে গত কয়েক দিন ধরে ব্যাপক প্রচার চালিয়েছেন কেমাল। ভোটার ও সমর্থকদের সঙ্গে লাইভে কথা বলেছেন। বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। বলা হচ্ছে, এ ধরনের প্রচারণার মাধ্যমে তরুণদের মধ্যে কিছু সাড়া জাগিয়েছেন রিপাবলিকান পিপলস পার্টির এই নেতা। এসব তরুণের মধ্যে অনেকই প্রথম দফায় ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে যাননি। 

এ অবস্থায় কেমালের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানোর অভিযোগ তুলেছেন এরদোয়ান। বলছেন, কেমাল জয়ী হলে সন্ত্রাসবাদের জয় হবে। 

নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হবে বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায়। আশা করা যায়-এর ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই জানা যাবে কে হাসছেন শেষ হাসিটি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

অবসরের আগে ফরমায়েশি রায়, বিচারকদের অসততায় উদ্বিগ্ন ভারতের প্রধান বিচারপতি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ভারতের প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্ত। ছবি: সংগৃহীত
ভারতের প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্ত। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেছেন, অবসরের ঠিক আগে বিচারকদের একটি অংশ প্রভাবিত হয়ে রায় দিচ্ছেন, যা উদ্বেগজনক।

আজ বৃহস্পতিবার মধ্যপ্রদেশের এক জেলা বিচারকের করা আবেদন শুনছিলেন সুপ্রিম কোর্ট। ওই বিচারক অবসরের মাত্র ১০ দিন আগে তাঁর বরখাস্তের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন।

সূর্য কান্তের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচিও ছিলেন। তাঁরা বিচারকদের ফরমায়েশি রায় দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, কিছু বিচারক অবসরের আগে ‘ছক্কা হাঁকানোর’ চেষ্টা করছেন।

এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, অভিযোগ অনুযায়ী, বিচারকের দেওয়া দুটি বিচারিক আদেশের সঙ্গে ওই জেলা বিচারকের বরখাস্তের বিষয়টি যুক্ত ছিল।

শুনানিকালে বেঞ্চ মন্তব্য করে, ‘আবেদনকারী অবসরের ঠিক আগে ছক্কা হাঁকাতে শুরু করেছিলেন। এটি একটি দুর্ভাগ্যজনক প্রবণতা। আমি এ নিয়ে বিস্তারিত বলতে চাই না।’

ওই জেলা বিচারকের মূলত গত ৩০ নভেম্বর অবসর নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দুটি বিচারিক আদেশের জেরে তাঁকে ১৯ নভেম্বর বরখাস্ত করা হয়। পরে ২০ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট মধ্যপ্রদেশ সরকারকে তাঁর অবসর এক বছর পিছিয়ে দিতে নির্দেশ দেন। কারণ, রাজ্য সরকার কর্মীদের অবসরের বয়স ৬২ বছরে উন্নীত করে।

এ পরিস্থিতি নিয়ে কটাক্ষ করে প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেন, ‘যখন তিনি ওই দুটি আদেশ দিয়েছিলেন, তখন তিনি জানতেন না যে তাঁর অবসর বয়স এক বছর বাড়ানো হয়েছে। অবসরের আগে বিচারকদের এভাবে একের পর এক আদেশ দেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে।’

এ সময় বেঞ্চ প্রশ্ন তোলে—কেন ওই জেলা বিচারক তাঁর বরখাস্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে যাননি।

বিচারকের পক্ষে আইনজীবী জানান, যেহেতু এটি ফুল কোর্টের সিদ্ধান্ত ছিল, তাই ন্যায়বিচারের আশায় তিনি সরাসরি সুপ্রিম কোর্টে আসাই সমীচীন মনে করেছিলেন।

বিচারকের পক্ষে উপস্থিত জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বিপিন সাংঘি আদালতকে জানান, ওই কর্মকর্তার কর্মজীবন ছিল ‘চমৎকার’ এবং তাঁর বার্ষিক মূল্যায়ন প্রতিবেদনগুলোতে তিনি খুব ভালো রেটিং পেয়েছেন।

তিনি প্রশ্ন তোলেন—যেসব বিচারিক আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা যায় এবং উচ্চতর আদালত চাইলে সংশোধন করতে পারেন, সেসব আদেশের জন্য কীভাবে একজন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা যায়।

জবাবে বেঞ্চ জানান, ভুল আদেশ দেওয়ার কারণে কোনো বিচারিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায় না কিংবা তাঁকে বরখাস্তও করা যায় না। কিন্তু যদি আদেশগুলো স্পষ্টভাবে অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়—তাহলে বিষয়টি ভিন্ন।

আদালত আরও উল্লেখ করেন, অতীতে এমন বহু ঘটনা ঘটেছে, যেখানে ফুল কোর্টের সিদ্ধান্ত হাইকোর্ট বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে বাতিল করেছেন। এসব বিবেচনায় সুপ্রিম কোর্ট আবেদনটি শুনতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আবেদনকারীকে হাইকোর্টে যাওয়ার নির্দেশ দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মুসলিম স্ত্রীকে নিয়ে বিবাদ, ভারতে বাবা-মাকে মেরে খণ্ডিত দেহ নদীতে ফেলল ছেলে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ১৯
বাবা-মাকে হত্যার অভিযোগে প্রকৌশলী আম্বেশকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ছবি: এনডিটিভি
বাবা-মাকে হত্যার অভিযোগে প্রকৌশলী আম্বেশকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ছবি: এনডিটিভি

মুসলিম নারীকে বিয়ে করেছিলেন ছেলে। বাবা-মা মেনে নিলেন না এ বিয়ে। দীর্ঘদিন ধরে মনোমালিন্যের পর ছেলে ও তাঁর স্ত্রী সিদ্ধান্ত নিলেন বিবাহ বিচ্ছেদের। কিন্তু খোরপোশ দিতে যে অর্থের প্রয়োজন, তা না থাকায় বাবার কাছে টাকা চেয়েও পেলেন না। আর এই ক্ষোভের জেরে বাবা-মাকে হত্যার পর দেহ খণ্ড-বিখণ্ড করে নদীতে ফেলে দিলেন ছেলে। এমন ঘটনা ঘটেছে ভারতের উত্তরপ্রদেশের জৌনপুরে।

নিখোঁজ এক ষাটোর্ধ্ব দম্পতির সন্ধানে নেমে এই হত্যাকাণ্ডের কথা জানতে পারে পুলিশ। বাবা-মাকে হত্যার অভিযোগে ছেলে আম্বেশকে আটক করেছে পুলিশ। পেশায় প্রকৌশলী আম্বেশ তাঁর বাবা শ্যাম বাহাদুর (৬২) ও মা ববিতা (৬০)-কে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন বলে পুলিশের বরাতে এনডিটিভি জানিয়েছে।

পুলিশ জানায়, আম্বেশের মুসলিম স্ত্রীকে পরিবার মেনে নিতে অস্বীকার করায় দীর্ঘদিন ধরে বাবা-মায়ের সঙ্গে তাঁর বিবাদ চলছিল। একপর্যায়ে আম্বেশ ও তাঁর স্ত্রী আলাদা হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এ সময় অ্যালিমনি দেওয়ার জন্য আম্বেশের অর্থের প্রয়োজন হয়। তিনি তাঁর বাবার কাছে টাকা চেয়েছিলেন, কিন্তু বাবা তা দিতে অস্বীকার করেন। এ নিয়ে বিরোধ থেকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানা যায়, গত ১৩ ডিসেম্বর আম্বেশের বোন বন্দনা জৌনপুরের জাফরবাদ থানায় তাঁর বাবা-মা এবং ভাই নিখোঁজ হওয়ার একটি ডায়েরি করেন।

বন্দনা জানান, গত ৮ ডিসেম্বর আম্বেশ তাঁকে ফোন করে বলেন, বাবা-মা ঝগড়া করে বাড়ি থেকে চলে গেছেন। তিনি তাঁদের খুঁজতে বের হচ্ছেন। এরপর আম্বেশের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তাঁর সঙ্গে আর যোগাযোগ করা যায়নি।

এক সপ্তাহ পর আম্বেশকে যখন পুলিশ আটক করে, তখন তিনি ভেঙে পড়েন এবং নিজের অপরাধ স্বীকার করেন।

পুলিশি তদন্তে জানা যায়, রেলওয়ের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী শ্যাম বাহাদুরের একমাত্র ছেলে আম্বেশ প্রায় পাঁচ বছর আগে এক মুসলিম নারীকে বিয়ে করেছিলেন। তাঁর বাবা-মা এই বিয়ে মেনে নেননি এবং পুত্রবধূকে বাড়িতে ঢুকতে দেননি। তাঁদের দুটি সন্তান থাকলেও শ্যাম বাহাদুর বারবার আম্বেশকে চাপ দিচ্ছিলেন তাঁর স্ত্রীকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য। শেষ পর্যন্ত আম্বেশ স্ত্রীকে ডিভোর্স দিতে রাজি হন এবং স্ত্রী খোরপোশ হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন।

গত ৮ ডিসেম্বর সেই টাকার জন্যই আম্বেশ তাঁর বাবার সাহায্য চান। বাবা তা দিতে অস্বীকার করলে মা ববিতার সঙ্গে আম্বেশের কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে আম্বেশ রান্নাঘরে গিয়ে শিল-পাটার শিল দিয়ে তাঁর মায়ের মাথায় আঘাত করেন। এ সময় তাঁর বাবা প্রতিবেশিদের ডাকতে নিলে বাবার মাথায়ও আঘাত করেন আম্বেশ। ঘটনাস্থলেই বৃদ্ধ দম্পতির মৃত্যু হয়।

পুলিশ জানায়, হত্যার পর প্রমাণ লোপাটের জন্য আম্বেশ মৃতদেহগুলো সরিয়ে ফেলার পরিকল্পনা করেন। বড় কোনো ব্যাগ না পেয়ে গ্যারেজে থাকা ছোট বস্তা আনেন। করাত দিয়ে বাবা-মায়ের দেহ ছয় টুকরো করে বস্তায় ভরে গাড়ির ডিকিতে তুলে নেন। পরে ভোরের দিকে নদীতে ফেলে দেন।

বোন বন্দনাকে ফোন করার পর ছয় দিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন আম্বেশ। এ সময় তিনি বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাফেরা করেন এবং মোবাইল ফোন বন্ধ রাখেন। ১৪ ডিসেম্বর জৌনপুরে ফিরে আসেন তিনি। বাবা-মায়ের কথা জিজ্ঞেস করা হলে তিনি এড়িয়ে যান। পরে পরিবারের সদস্যদের সন্দেহ হলে তাঁরাই পুলিশে খবর দেন।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আম্বেশ পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন। তবে একপর্যায়ে তিনি ভেঙে পড়েন এবং বাবা–মাকে হত্যার কথা স্বীকার করেন।

স্বীকারোক্তির পর পুলিশ দেহ উদ্ধারের অভিযান শুরু করে। এ সময় শ্যাম বাহাদুরের দেহের একটি অংশ উদ্ধার করা হয়। পাশাপাশি, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত করাত এবং শিলপাটাও উদ্ধার করা হয়েছে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আয়ুষ শ্রীবাস্তব জানান, নদীতে তল্লাশির জন্য ডুবুরি দল নামানো হয়েছে। বাকি দেহাংশও দ্রুত উদ্ধার করা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যুক্তরাষ্ট্র ছাড়ার কথা ভাবছেন আতঙ্কিত শিক্ষকেরা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ২০
যুক্তরাষ্ট্রের ৮১ লাখ শিক্ষকের মধ্যে ৮ লাখ ৫৭ হাজার ২০০ জন অভিবাসী। ছবি: আলজাজিরা
যুক্তরাষ্ট্রের ৮১ লাখ শিক্ষকের মধ্যে ৮ লাখ ৫৭ হাজার ২০০ জন অভিবাসী। ছবি: আলজাজিরা

যুক্তরাষ্ট্রে একটি স্কুলে পড়ান সুজানা। গত দুই বছরে সপ্তাহের প্রতিটি দিন সুজানার কেটেছে শিশুদের জিনিসপত্র সযত্নে সাজানো, ছবি ও বইয়ের মাধ্যমে শেখানো এবং গানের চর্চা করিয়ে। কিন্তু গত অক্টোবরে পাল্টে গেল তাঁর এই জীবন। খবর পেলেন, শিশুদের শিক্ষক হিসেবে যে উপভোগ্য সময় তিনি কাটাতেন, সেই কাজের অনুমতি নবায়নের আবেদন বাতিল হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ১০ শতাংশ শিক্ষক অভিবাসী, যাদের মধ্যে একজন সুজানা। আর তাঁর এই পরিচয়ই এখন আবারও ঠেলে দিয়েছে অনিশ্চিত জীবনের দিকে।

প্রায় এক দশক আগে গুয়াতেমালার সহিংসতা থেকে পালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন সুজানা।

যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশ থেকে শিক্ষক নিয়োগ বাড়লেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ‘অভিবাসী হঠাও’ নীতি তাঁদের জীবিকার জন্য হুমকি সৃষ্টি করেছে। পাশাপাশি এভাবে শিক্ষককে হারানো শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবেও প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন শিক্ষকেরা।

ওয়াশিংটন ডিসির কমিউনিকিডস প্রি-স্কুলের শিক্ষক সুজানা আল জাজিরাকে বলছিলেন, ‘শিক্ষার্থীদের এই খবরটা কীভাবে জানাব ভাবছিলাম। তাদের মধ্যে অনেকের বয়স তিন থেকে চার বছর। আবার অনেকে এত ছোট বিষয়টা বোঝার ক্ষমতা নেই।’

স্প্যানিশ ভাষায় সুজানা বলতে থাকেন, ‘এক সপ্তাহের মধ্যে আমি সবকিছু হারালাম। যখন আমি শিক্ষার্থীদের বিদায় জানালাম, তারা জানতে চেয়েছিল কেন। আমি শুধু বলতে পেরেছিলাম, ‘আমি কেবল তোমাদের বিদায় বলতে পারি।’

সুজানা স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘কিছু শিশু আমাকে জড়িয়ে ধরেছিল। ওদের কথা ভেবে আমার মন কেঁদে উঠেছিল।’

যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে বিদেশে জন্ম নিয়েছেন এমন শিক্ষক কাজ করছেন, এর সঠিক কোনো হিসাব নেই। তবে ২০১৯ সালে প্রকাশিত জর্জ মেসন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের ৮১ লাখ শিক্ষকের মধ্যে ৮ লাখ ৫৭ হাজার ২০০ জন অভিবাসী। তাঁরা প্রি-স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের নানা শিক্ষার দায়িত্বে নিযুক্ত আছেন।

যুক্তরাষ্ট্র সরকার শুধু ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রি-কিন্ডারগার্টেন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শূন্যপদ পূরণের জন্য ৬ হাজার ৭১৬ জন পূর্ণকালীন শিক্ষককে অস্থায়ী এক্সচেঞ্জ ভিসায় দেশে এনেছে। এর মধ্যে অনেক শিক্ষক ফিলিপাইন থেকে এসেছিলেন, পাশাপাশি জ্যামাইকা, স্পেন ও কলম্বিয়ার মতো দেশ থেকেও অনেকে ছিলেন।

তবে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে অভিবাসীদের জন্য তৈরি হওয়া অনিশ্চয়তা স্কুলগুলোতে বেশ বিঘ্ন সৃষ্টি করেছে, কেন না তাঁরা অভিবাসী শিক্ষকদের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল।

সুজানার কর্মস্থল কমিউনিকিডস প্রি-স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি রাউল ইচেভারিয়া অনুমান করে বলেন, কমিউনিকিডসের প্রায় ৯০ শতাংশ কর্মী অভিবাসী। এদের মধ্যে নাগরিকত্ব পাওয়া এবং বৈধ অনুমোদনের সঙ্গে কাজ করা অভিবাসী উভয়েই রয়েছেন।

অভিবাসনের বৈধ পথ বাতিলের কারণে কয়েকজন শিক্ষকের চাকরি ঝুঁকির মুখে পড়েছে বলে জানান ইচেভারিয়া।

স্কুলের আরও পাঁচজন শিক্ষকের কাজের ক্ষমতা অস্থায়ী কাজের অনুমতি (Temporary Protected Status, TPS) বাতিল হয়েছে। ইচেভারিয়া জানান, এই পাঁচজন শিক্ষক মূলত ভেনেজুয়েলা থেকে এসেছেন। কিন্তু অক্টোবর মাসে ট্রাম্প প্রশাসন কমিউনিকিডসের শিক্ষকদেরসহ ৩ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি ভেনেজুয়েলার নাগরিকের টিপিএস বাতিল করে।

ইউএস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেসের ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে, ২০২৬ সালের ২ অক্টোবর তাদের যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে কাজ করার অনুমোদন শেষ হবে।

কমিউনিকিডস প্রি-স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ইচেভারিয়া বলেন, ‘এই শিক্ষকেরা জীবিকার সুযোগ হারিয়েছেন। আর আমার স্কুলে স্প্যানিশ, ফরাসি ও ম্যান্ডারিনের মতো ভাষায় দক্ষ শিক্ষকের প্রয়োজন রয়েছে।’

সরকারের এ সিদ্ধান্তে স্কুলগুলো শিক্ষক সংকটে পড়ছে। এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি রাজ্যই ফেডারেল সরকারের কাছে শিক্ষক ঘাটতির তথ্য জানিয়েছে। তবে এ নীতির সমর্থকেরা বলেন, শিক্ষাক্ষেত্রে উচ্চ চাপ এবং কম বেতন শিক্ষকদের আকর্ষণ ও ধরে রাখাকে কঠিন করে তোলে। ফলে কিছু রাজ্য শিক্ষাক্ষেত্রে কর্মী সংগ্রহের জন্য বিদেশিদের দিকে ঝুঁকছে।

ইচেভারিয়া জানান, এই নীতির প্রভাব সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থীদের ওপর পড়েছে। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষকের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়। হঠাৎ এক রাতের মধ্যে তারা সেই শিক্ষককে হারায়। তখন তাদের মনের অবস্থা কি হতে পারে!’

তিনি মনে করেন, যখন এই সম্পর্কগুলো ভেঙে যায়, তখন মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে পশ্চাৎপদতা দেখা দিতে পারে, বিশেষ করে ছোট বয়সী শিশুদের মধ্যে।

আমেরিকান এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশনের ২০২৪ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, শিক্ষকেরা যদি বছরের মধ্যবর্তী সময়ে বিদ্যালয় ছাড়েন, তখন শিশুদের ভাষা দক্ষতা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর প্রভাব শিশুর আত্মসম্মান এবং মানসিক স্থিতিশীলতাকেও ছোঁয়।

কমিউনিকিডস-এ পড়া এক শিশু অভিভাবক মিশেল হাওয়েল জানান, শিক্ষককে হারানো ক্লাসরুমের পরিবেশকেও সংবেদনশীল করে তুলেছে।

তিনি বলেন, ‘সেখানে শিক্ষকেরা শুধুমাত্র ছোট শিশুদের শিক্ষক নন। তারা যেন বাড়িতে যুক্ত হওয়া নতুন এক সদস্য।’

তিনি আরও বলেন, ‘তারা শিশুদের জড়িয়ে ধরে, অভিভাবকের মতো আগলে রাখে। যখন সেই মানুষগুলো থাকে না, তা শুধু শিশুদের জন্যই নয়, সবার জন্যই মেনে নেওয়া কঠিন।’

স্কুল সাইকোলজিস্ট মারিয়া সি (ছদ্মনাম) বলেন, কোনো প্রিয় ব্যক্তি বা শিক্ষকের হঠাৎ অনুপস্থিতি শিশুর শরীরে কর্টিসল হরমোন বৃদ্ধি করতে পারে, যা বিপদের মুহূর্তে শিশুকে সুরক্ষা দেয়। যখন এই চাপ দীর্ঘস্থায়ী হয়, তখন একই হরমোন সাহায্যের চেয়ে ক্ষতি করতে শুরু করে। এটি শিশুর স্মৃতি, মনোযোগ এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। তিনি যেসব শিশুর সঙ্গে কাজ করেন, তারা এই বহিষ্কার নীতির কারণে সৃষ্ট অস্থিরতার সঙ্গে লড়াই করছে।

মারিয়া বলেন, ‘কিছু শিশুর ক্ষেত্রে এটি উদ্বেগের মতো প্রকাশ পায়। অন্যদের ক্ষেত্রে হতাশা বা হঠাৎ রাগের প্রকাশ দেখা যায়। তারা সারাদিন “লড়াই বা পালানো” মোডে থাকে।’

পাঁচ থেকে বারো বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে এটা বেশি দেখা যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জনপ্রিয়তায় ধস: জাতির উদ্দেশে ভাষণে নিজের গুণগান আর সেনাদের খুশি রাখার কৌশলে ট্রাম্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ১৫
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: বিবিসি
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: বিবিসি

বড়দিনের ঠিক আগে মার্কিন সামরিক বাহিনীর সদস্যদের জন্য বড় ধরনের উপহার ঘোষণা করলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থানীয় সময় বুধবার রাতে হোয়াইট হাউস থেকে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক বিশেষ টেলিভিশন ভাষণে তিনি সাড়ে ১৪ লাখ সক্রিয় ও রিজার্ভ সেনার প্রত্যেকের জন্য ১ হাজার ৭৭৬ ডলারের একটি বিশেষ বোনাস বা ‘ওয়ারিয়র ডিভিডেন্ড’ দেওয়ার ঘোষণা দেন। ১৭৭৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা লাভের ঐতিহাসিক বছরকে স্মরণীয় করে রাখতে এই অঙ্কের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানিয়েছেন, এই বোনাস প্রকল্প বাস্তবায়নে ২ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে। এই অর্থের সংস্থান সম্পর্কে তিনি বলেন, এটি মূলত তাঁর প্রশাসনের আমদানিকৃত পণ্যের ওপর আরোপিত ব্যাপক শুল্কনীতি এবং গত ৪ জুলাই স্বাক্ষরিত ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল’ থেকে আসবে। ভাষণে ট্রাম্প অত্যন্ত দৃঢ়কণ্ঠে বলেন, ‘আমাদের সামরিক বাহিনীর চেয়ে এই সম্মানের দাবিদার আর কেউ নেই। চেকগুলো ইতিমধ্যে প্রক্রিয়াকরণ শুরু হয়েছে এবং বড়দিনের উৎসবের আগেই তা আমাদের বীরদের হাতে পৌঁছাবে।’

মাত্র ১৮ মিনিটের এই ভাষণে ট্রাম্প তাঁর গত ১১ মাসের অর্থনৈতিক সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরেন। তিনি দাবি করেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসছে এবং নিত্যপণ্যের দাম দ্রুত কমতে শুরু করেছে। ট্রাম্পের মতে, পেট্রল এবং ডিমের দাম কমেছে।

তিনি বর্তমান দ্রব্যমূল্যের জন্য সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ডেমোক্র্যাটদের দায়ী করেন, ভাষণে সাতবার বাইডেনের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ডেমোক্র্যাটরা মুদি পণ্যের দাম আকাশে তুলেছিলেন, কিন্তু আমরা তা সমাধান করছি।’

যদিও সরকারি তথ্য বলছে ভিন্ন কথা। সেপ্টেম্বরের অর্থনৈতিক উপাত্ত অনুযায়ী, মূল্যস্ফীতির হার জানুয়ারির পর প্রথমবারের মতো ৩ শতাংশ ছুঁয়েছে। যদিও কিছু পণ্যের দাম কমেছে, তবে সাধারণ আমেরিকানদের বড় অংশই এখনো আবাসন খরচ, শিশু যত্ন এবং স্বাস্থ্যসেবার লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে চরম অসন্তুষ্ট।

ট্রাম্পের এই ভাষণ এমন এক সময়ে এল, যখন বিভিন্ন স্বাধীন জনমত জরিপে তাঁর জনপ্রিয়তা দ্বিতীয় মেয়াদের সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। ভাষণে তিনি আত্মবিশ্বাসী থাকলেও পরিসংখ্যান বলছে ভিন্ন কথা।

পলিটিকোর জরিপ অনুযায়ী, অর্ধেক ভোটার এমনকি ট্রাম্পকে ভোট দেওয়া ১০ জনের মধ্যে ৪ জন মনে করেন জীবনযাত্রার ব্যয় তাঁদের জীবদ্দশায় এখন সবচেয়ে খারাপ পর্যায়ে আছে।

সিবিএস নিউজ/ইউগভের নভেম্বর মাসের জরিপ বলছে, অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় ট্রাম্পের ওপর জনসমর্থন গত মার্চের তুলনায় ১৫ পয়েন্ট কমে মাত্র ৩৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

সম্প্রতি ভার্জিনিয়া, নিউ জার্সি, নিউইয়র্ক সিটি এমনকি মিয়ামি এবং জর্জিয়ার নির্বাচনে রিপাবলিকানদের আশানুরূপ ফল না হওয়াকে মূল্যস্ফীতির প্রভাব হিসেবে স্বীকার করেছেন প্রেসিডেন্ট নিজেই।

২০২৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ২৫০তম বার্ষিকী উদ্‌যাপন করা হবে। সেই মাইলফলক সামনে রেখে ট্রাম্প এক দেশপ্রেমমূলক আহ্বানের মাধ্যমে তাঁর ভাষণ শেষ করেন। তিনি বলেন, ‘আগামী বছর বিশ্ব যখন আমাদের দিকে তাকাবে, তারা দেখবে এমন এক জাতি, যারা তাদের নাগরিকদের প্রতি অনুগত এবং শ্রমিকদের প্রতি বিশ্বস্ত। আমরা আবার আগের মতো সম্মান পাচ্ছি।’

বিশ্লেষকদের মতে, আগামী বছরের মধ্যবর্তী নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটারদের, বিশেষ করে সামরিক বাহিনীর সমর্থন ধরে রাখতেই এই ‘ওয়ারিয়র ডিভিডেন্ড’ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে গত ১১ মাসে সাধারণ মানুষের জীবনে উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন না আসায় এই সংক্ষিপ্ত ভাষণ বা এককালীন বোনাস ভোটারদের দীর্ঘমেয়াদি অসন্তোষ কমাতে কতটা সক্ষম হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েই গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত