তালেবানের আসল জোর কোথায়

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ১৬ আগস্ট ২০২১, ০০: ৩৬
আপডেট : ১৬ আগস্ট ২০২১, ০০: ৫০

আফগানিস্তানের ক্ষমতায় ফিরছে তালেবান। এটা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি এরই মধ্যে তাজিকিস্তানে পাড়ি দিয়েছেন। দেশটিতে শান্তি প্রক্রিয়ার শীর্ষ নেতা আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ এরই মধ্যে তাঁকে ‘সাবেক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ফলে যা বাকি আছে, তা শুধু আনুষ্ঠানিক ঘোষণার। কিন্তু প্রশ্ন হলো তিনগুণ বড় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তালেবান এত সহজ জয় পল কী করে? তাদের জোরটাই বা কোথায়? 

আফগান সরকারের সেনাবাহিনীতে আছে ৩ লাখ ৬৯৯ সেনা। বিপরীতে বিদ্রোহী তালেবান গোষ্ঠীর সদস্য মাত্র ৮০ হাজার। অস্ত্রশস্ত্রেও কাগজে কলমে এগিয়ে আফগান সরকারি বাহিনী। অথচ মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে কাবুল দখলে নিল তালেবান। প্রশ্ন হলো, একই জাতির মানুষ হয়েও আফগান সরকারি বাহিনীর কী নেই, যা তালেবানের আছে? 

প্রেসিডেন্ট প্যালেস তালেবানদের দখলেযুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে সেনা মোতায়েন করেছিল ২০০১ সালে। দুই দশক সেখানে তারা ছিল আফগানিস্তানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে। এই সময়ে তারা ব্যয় করেছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলার। হয়েছে সেনাক্ষয়। সবচেয়ে বড় ঝড়টি গেছে আফগানদের ওপর দিয়ে। সামরিক–বেসামরিক মিলিয়ে উভয় পক্ষের প্রায় ৫০ হাজার লোক নিহত হয়েছে। তাহলে এত ব্যয়ের অর্থ কী থাকল? 

বলা হয়েছিল আফগান সরকারের বাহিনীকে প্রশিক্ষিত ও প্রস্তুত করা হচ্ছে। সরকার পরিচালনার জন্য তাদের প্রস্তুত করার কথাও বলা হয়েছিল। কিন্তু তার কিছুই যে হয়নি, তা এখন তো স্পষ্ট। কেন হয়নি? একই জাতির মানুষ দুই পক্ষে বিভক্ত হওয়ার পর কেন তাদের মধ্যে এত বড় ব্যবধান দেখা যাচ্ছে? আজকের তালেবান জয়ের পেছনে মূলত রয়েছে এই দুই বাহিনীর গঠনের মধ্যে। 

তালেবান পক্ষে সেনা সংখ্যা কম, অস্ত্রশস্ত্রও সেকেলে না হলেও অত্যাধুনিক নয়। বিপরীতে অত্যাধুনিক অস্ত্র সজ্জিত আফগান সরকারি বাহিনীর সদস্য অনেক। বোঝাই যাচ্ছে যুদ্ধটা যদি কাগজে–কলমে হতো, তবে নিঃসন্দেহে তালেবান পরাজিত হতো। হয়নি। কারণ, আফগান সরকারি বাহিনীর মাথার ওপর ছাতা হয়ে ছিল ন্যাটো বাহিনী। ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ছায়া। তাদের উপস্থিতি এই বাহিনীকে কখনোই নিজের দুর্বলতা বুঝতে দেয়নি। বিপরীতে তালেবান যোদ্ধারা মার্কিন হামলায় পরাভূত হয়ে আফগানিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে প্রতিনিয়ত নিজেদের কৌশলগত ভুলগুলো খোঁজার চেষ্টা করেছে হয়তো। এদিকে ক্ষমতার কাছে বসে যুক্তরাষ্ট্রের ছত্রচ্ছায়ায় আফগান বাহিনীর মধ্যে হয়েছে দুর্নীতির সংক্রমণ। 

প্রেসিডেন্ট প্যালেসে তালেবান

আফগানিস্তানে মার্কিন তহবিল ব্যবহারের পর্যবেক্ষক একটি প্রতিষ্ঠান গত মাসে সতর্ক করে বলেছিল, মার্কিন বাহিনীর আফগান বাহিনীর সক্ষমতা সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই। তারা বোকার স্বর্গে বাস করছে। আফগান ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি ফোর্সেসের (এএনডিএসএফ) স্বাধীনভাবে কাজ করার কোনো যোগ্যতাই নেই। অথচ ২০২১ সালের মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত নিরাপত্তা খাতে যুক্তরাষ্ট্রের ৮ হাজার ৮৩০ কোটি ডলার ব্যয় হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে। 

এই অর্থ কোথায় কীভাবে ব্যয় হলো, তার কোনো সুস্পষ্ট হিসাব নেই। অথচ শুধু এই ব্যয়ের পরিমাণের ওপর দাঁড়িয়েই যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানের সরকারি বাহিনীর যোগ্যতার নিরূপণ করেছে। আর এতেই হয়েছে বিপত্তি। এই মূল্যায়ন নিয়ে গত বছর যখন মার্কিন প্রশাসন সচেতন হয়ে ওঠে, তত দিন অনেক দেরি হয়ে গেছে। সেনা প্রত্যাহারের যাবতীয় কাজ তত দিনে সম্পন্ন। আবার চাইলেও এত বড় ব্যয় আবার নিজের কাঁধে তুলে নেওয়ার অবস্থাও নেই ওয়াশিংটনের। ফলে সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তে তাকে অটল থাকতে হয়েছে। 

 

এর সঙ্গে যখন যুক্ত হয়েছে বাহিনীর ভেতরে থাকা দুর্নীতির সমীকরণ, তখন তা তার অযোগ্যতাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। বিভিন্ন পর্যায়ে সেনা নিয়োগ থেকে শুরু করে নেতৃত্ব পর্যায়ে তাদের তুলে আনা বা পদোন্নতি—সব ক্ষেত্রেই বিস্তৃত হয়েছিল এই দুর্নীতি। 

এই পরিস্থিতিতে তালেবান পক্ষ ঠিক বিপরীতভাবে নিজেদের প্রস্তুত করেছে। তারা ছড়িয়ে পড়েছিল আফগানিস্তানের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। আফগান সরকার যখন শহরাঞ্চল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেই সন্তুষ্ট ছিল, তখন তালেবান নিজেদের ছড়িয়ে দেয় সারা দেশে। মাঝেমধ্যে দু–একটি স্থাপনা বা বিশেষ দিন বেছে যে বোমা হামলা, তা আদতে ছিল নিজেদের উপস্থিতির জানান, যা একই সঙ্গে তাদের নতুন সদস্যদের উজ্জীবিতও করেছে। মার্কিন সেনা উপস্থিতির দীর্ঘ প্রতিক্রিয়া হিসেবে আফগানিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে নিজেদের সংগঠনের প্রসার ঘটানো তাদের জন্য কঠিন কিছু ছিল না। ফলে সাংগঠনিকসহ সব দিক দিয়েই তারা গড়ে উঠেছে। 

যুদ্ধ কৌশলে আফগান বাহিনী মুখ্যত সম্মুখ যুদ্ধের অপেক্ষায় ছিল। তাদের বড় সাহস ছিল যুক্তরাষ্ট্র। সম্মুখ যুদ্ধের এই কৌশলই পিছিয়ে দিয়েছে এএনডিএসএফকে। তারা অনেকটা গেরিলা কায়দায় যুদ্ধ করতে এই কয় বছরে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া তালেবানকে মোকাবিলার কোনো নিজস্ব কৌশল স্থির করেনি। তালেবানও যুক্তরাষ্ট্র সরে পড়ার আগ পর্যন্ত মুখোমুখি আসেনি। ফলে নিয়মিত বিরতিতে চোরাগোপ্তা হামলা চালানো তালেবান যখন সামনে এল, তখন হকচকিয়ে গেল এএনডিএসএফ। তারা অনেকটা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেল বলা যায়। সঙ্গে দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত কর্তাব্যক্তিরা তাদের মুখোমুখি হয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার কোনো নৈতিক ভিত্তিও পেল না। দেশটির ভেতরে আশরাফ গনি সরকারের দুর্নীতি নিয়ে অসন্তোষও ছিল। সব মিলিয়ে যে ক্ষেত্র তৈরি হলো, তা তালেবান উপস্থিতিতে ছেড়ে যেতে এক রকম বাধ্যই ছিল আফগান সরকারের কর্তাব্যক্তিরা। বিভিন্ন প্রদেশে এমনটাই দেখা গেছে, যার ফল হলো দীর্ঘ দুই দশকের যুদ্ধ ও এত এত মৃত্যু শেষে অতীত সময় ফিরে আসার শঙ্কা। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আবু সাঈদকে ৪–৫ ঘণ্টা পরে হাসপাতালে নেওয়া হয়—শেখ হাসিনার দাবির সত্যতা কতটুকু

মেট্রোরেল থেকে আমলাদের বিদায়, অগ্রাধিকার প্রকৌশলীদের

সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার সময় বাড়ল

শিক্ষকের নতুন ২০ হাজার পদ, প্রাথমিকে আসছে বড় পরিবর্তন

ব্যাংক খাতে নতুন নীতিমালা: আটকে গেল ২৫৮ কর্মকর্তার জিএম পদে পদোন্নতি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত