ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন

সার্কের পুনরুজ্জীবনের চেষ্টা বাংলাদেশ-পাকিস্তানের, ভারতের নজর বিমসটেকে

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০: ১২
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০: ৪৩
Thumbnail image
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের দাবি, বাংলাদেশ-পাকিস্তান সার্কের পুনরুজ্জীবন চাইলেও ভারত চায় বিমসটেকের সক্রিয়করণ। ছবি: সংগৃহীত

দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে পাকিস্তানের সঙ্গে একযোগে কাজ করছে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। বিপরীতে সার্ককে নিষ্ক্রিয় রেখেই ভারত দৃষ্টি কেন্দ্রীভূত করেছে বিমসটেকের (বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন) দিকে। সার্ক যেখানে দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশ নিয়ে গঠিত, সেখানে বিমসটেক মূলত বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো নিয়ে যা গঠিত।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তারা জানতে পেরেছে, পাকিস্তান বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী প্রশাসনের সদস্য এবং কিছু অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তাকে প্রভাবিত করে সার্ক পুনরুজ্জীবনের প্রচেষ্টা করছে। ইকোনমিক টাইমসের দাবি, এটি নাকি ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি করার কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশন বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, মন্ত্রণালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ সক্রিয় করেছে এবং বিভিন্ন ধারণা প্রচার করছে, যার মধ্যে সার্ক উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে সার্কের মহাসচিব বাংলাদেশের কূটনীতিক মোহাম্মদ গোলাম সারোয়ার। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমটির দাবি, সার্কভুক্ত দেশগুলোতে ভারতের প্রস্তাবিত বিভিন্ন সংযোগ প্রকল্পে পাকিস্তানের একগুঁয়ে আচরণ এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থতার কারণে সার্ক কার্যত নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে।

এর আগে, ২০১৪ সালের নভেম্বরে নেপালের কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত সার্কের অষ্টাদশ শীর্ষ সম্মেলনে আট দেশের এই জোটের দুটি চুক্তি শেষ করার প্রস্তুতি ছিল। সেগুলো হলো—আঞ্চলিক রেলওয়ে চুক্তি এবং যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের যানবাহন নিয়ন্ত্রণের জন্য মোটর যানবাহন চুক্তি। কিন্তু সেই সময়ের নওয়াজ শরিফের নেতৃত্বে পাকিস্তান সরকার সামরিক বাহিনীর চাপের মুখে প্রস্তাবগুলো আটকে দেয়।

পাকিস্তান থেকে উৎসারিত পরপর সন্ত্রাসী হামলার কারণে ২০১৬ সালের নভেম্বরে ইসলামাবাদে সার্কের উনিশতম শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেই সময়ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন নওয়াজ শরিফ।

এর আগে, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের প্রভাবের কারণে নেপাল গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাইডলাইনে সার্ক দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের একটি বৈঠক আয়োজনের চেষ্টা করেছিল, কিন্তু ভারত এতে আগ্রহী ছিল না। এর পরিবর্তে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সাইডলাইনে বিমসটেক বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন।

উল্লেখ্য, বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টোরাল, টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন, অর্থাৎ বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলে বহুমুখী কারিগরি ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা উদ্যোগ বা সংক্ষেপে বিমসটেক দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কয়েকটি দেশকে নিয়ে গঠিত একটি আঞ্চলিক জোট। ১৯৯৭ সালের ৬ জুন ব্যাংককে—বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের এক বৈঠকে একটি নতুন আন্তঃআঞ্চলিক জোট সৃষ্টি করা হয় এবং সভায় অংশগ্রহণকারী মূল আলোচকদের দেশের নামের আদ্যক্ষর অনুযায়ী এই জোটের নাম দেওয়া হয় বিসটেক।

মিয়ানমার এই বিসটেকের প্রথম সভায় পর্যবেক্ষক হিসেবে অংশ নেয়। পরে ১৯৯৭ সালের ২২ ডিসেম্বর প্রথম মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে মিয়ানমারকে পূর্ণ সদস্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়। মিয়ানমারের সদস্য হিসেবে যোগদানের পর সংগঠনের নামটি কিছুটা পরিবর্তন করা হয়। ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত মন্ত্রী পর্যায়ের ২য় বৈঠকে নেপালকে পর্যবেক্ষকের মর্যাদা দেওয়া হয়। পরে ২০০৩ সালে নেপাল ও ভুটানকে সংগঠনটির পূর্ণ সদস্যের পদ প্রদান করা হয়। ২০০৪ সালের ৩১ জুলাই সংগঠনের প্রথম আনুষ্ঠানিক শীর্ষ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ সংগঠনটির নাম পরিবর্তনের পক্ষে মত দেন এবং সংগঠনটির পরিবর্তিত নামটি দাঁড়ায় বিমসটেক।

বিমসটেকের সদর দপ্তর বাংলাদেশের ঢাকায় অবস্থিত। ২০১৪ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটি উদ্বোধন করেন। বিমসটেকের মূল উদ্দেশ্য হলো—দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং বঙ্গোপসাগর উপকূলের দেশগুলির মধ্যে প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি করা। ব্যবসা, বিনিয়োগ, প্রযুক্তি, পর্যটন, মানব সম্পদ উন্নয়ন, কৃষি উন্নয়ন, মৎস্য সম্পদ, যোগাযোগ ব্যবস্থা, পোশাক ও চামড়া শিল্পসহ আরও অনেকগুলি ক্ষেত্র বিমসটেকের মূল উদ্দেশ্যভুক্ত।

অপরদিকে, দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সংক্ষেপে সার্ক) দক্ষিণ এশিয়ার একটি আঞ্চলিক সংস্থা। এর সদস্য দেশগুলো—বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, নেপাল, ভুটান এবং আফগানিস্তান। চীন, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান, মিয়ানমার, মরিশাস, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন হলো সার্কের ৯টি পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র। সার্ক ১৯৮৫ সালের ৮ই ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। জেনারেল হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদের শাসনকালে সার্কের পথ চলা শুরু হয়েছিল। তবে এই সংগঠনের মূল ধারণা দেন বাংলাদেশের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান।

বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কা নেতারা দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন এবং অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশসমূহের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও সহযোগিতা করার লক্ষ্যে এক রাজকীয় সনদপত্রে আবদ্ধ হন। এটি অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং উন্নয়নের যৌথ আত্ম নির্ভরশীলতা জোর নিবেদিত। সার্কের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সমূহ হলো—বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, মালদ্বীপ, ভুটান এবং ২০০৭ সালে আফগানিস্তান সার্কের সদস্য পদ লাভ করে। রাষ্ট্রের শীর্ষ মিটিং সাধারণত বাৎসরিক ভিত্তিতে নির্ধারিত এবং পররাষ্ট্রসচিবদের সভা দুই বছর পর পর অনুষ্ঠিত হয়। নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু সার্কের সদর দপ্তর অবস্থিত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত