হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থী মিডিয়া মোগল জিমি লাইয়ের বিচার শুরু

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ২২: ১৪

জাতীয় নিরাপত্তা লঙ্ঘন এবং বিদেশিদের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগে হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থী মিডিয়া মোগল জিমি লাইয়ের বিচার শুরু হয়েছে। প্রায় তিন বছর কারাগারে থাকার পর স্থানীয় সময় আজ সোমবার তাকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ৭৬ বছর বয়সী লাই ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে কারাগারে রয়েছেন। জাতীয় নিরাপত্তা লঙ্ঘন ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে ২০২০ সালে হংকংয়ের ২৫০ জনেরও বেশি আন্দোলনকর্মী ও আইনপ্রণেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন জিমি লাই।

তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এই ধনকুবের। দোষী সাব্যস্ত হলে জিমি লাইকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। জিমি লাইয়ের মামলায় শোরগোল উঠেছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। হংকংয়ে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার পরীক্ষা হিসেবেও দেখা হচ্ছে এই বিচারকে।

হংকংয়ে নিয়ন্ত্রণ শক্ত করতে এবং গণতন্ত্রপন্থীদের বিক্ষোভের প্রতিক্রিয়ায় ২০২০ সালের ১ জুলাই নতুন জাতীয় নিরাপত্তা আইন (এনএসএল) কার্যকর করে বেইজিং। বিশৃঙ্খলা দমনের জন্য আইনটি প্রয়োজনীয় বলে সে সময় জোর দিয়ে বলেছিল বেইজিং।

হংকংয়ে অবশিষ্ট স্বাধীনতা ও স্বায়ত্তশাসন এতে ধ্বংস হয়ে যাবে বলে তখন আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল গণতন্ত্রপন্থীরা। জাতীয় নিরাপত্তা আইনের অধীনেই গ্রেপ্তার হন হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থী প্রকাশনা হিসেবে পরিচিত অ্যাপল ডেইলির প্রতিষ্ঠাতা জিমি লাই। চীনা কর্তৃপক্ষ পত্রিকাটির প্রকাশনা বাতিল করে দিয়েছে।

চীনের নিরাপত্তা দুর্বল করতেই জিমি লাই কাজ করেছেন বলে অভিযোগ আনা হয়। তাকে বিশ্বাসঘাতক বলেও আখ্যা দেয় বেইজিং। তবে সমালোচকদের মতে, প্রাক্তন ব্রিটিশ ভূখণ্ড হংকংয়ে বেইজিংয়ের প্রভাব শক্ত করারই আরেকটি উদাহরণ হলো লাইয়ের গ্রেপ্তারের ঘটনা।

প্রচণ্ড শীত উপেক্ষা করে জিমি লাইয়ের বিচার শুরুর আগের রাতে হংকংয়ে আদালতের বাইরে জড়ো হন তার সমর্থকেরা। কড়া নিরাপত্তার মধ্যেই প্রতিবাদ করেছেন বিশিষ্ট গণতন্ত্রপন্থী কর্মী আলেকজান্দ্রা ওয়াং। তিনি বলেন, ‘আমি জিমি লাইকে সমর্থন করি কারণ আমি সত্যের বিজয় চাই। আমি চাই সে (জিমি লাই) দ্রুত বের হয়ে আসতে পারবে। আমি আবার অ্যাপল ডেইলি পড়তে চাই।’

জিমি লাইয়ের আইনি দল বিবিসিকে বলেছে যে, সুষ্ঠু শুনানির অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে জিমি লাইকে। যুক্তরাজ্যের আইনজীবী নিয়োগে তাকে বাধা দিয়েছে বেইজিং। হংকংয়ের নেতার বাছাই করা তিনজন বিচারক তার বিচার করছে।

চীন ও যুক্তরাজ্যের দ্বৈত নাগরিক জিমি লাইকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন, ‘কেউ জাতীয় নিরাপত্তা আইনের অধীনে বিচারের মুখোমুখি হচ্ছে—এতে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে, ব্রিটিশ নাগরিক জিমি লাইকে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিচারের সম্মুখীন হচ্ছে বলে উদ্বেগের মাত্রা বেশি।’

এনএসএলের অধীনে মামলা ছাড়াও জিমি লাইয়ের বিরুদ্ধে তার টুইট, সাক্ষাৎকার এবং তার মালিকানাধীন অধুনা-লুপ্ত অ্যাপল ডেইলি পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধগুলোর ওপর ভিত্তি করে ঔপনিবেশিক যুগের একটি আইনের অধীনে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগও আনা হয়েছে।

এনএসএলের অধীনে গ্রেপ্তার হওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের অন্যতম হিসেবে বিবেচনা করা হয় চীনা কমিউনিস্ট পার্টির তীব্র সমালোচক জিমি লাইকে। হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনের প্রথম সারিতে ছিলেন তিনি। ২০১৪ সালে আমব্রেলা আন্দোলন থেকে শুরু করে ২০১৯ সালে বেইজিং সমর্থিত প্রত্যর্পণ বিলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভেও ছিলেন তিনি। অ্যাপল ডেইলি সহ হংকংয়ের কয়েকটি বিখ্যাত গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করেছিলেন জিমি লাই।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত