Ajker Patrika

আজ নয়তো কাল আমরা তোমাদের ধরবই, তাইওয়ানকে চীনের হুমকি

অনলাইন ডেস্ক
চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র উ কিয়ান। ছবি: সংগৃহীত
চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র উ কিয়ান। ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি বার্ষিক সামরিক মহড়া সম্প্রসারণের ঘোষণা দিয়েছে তাইওয়ান। এর প্রতিক্রিয়ায় চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তাইওয়ানকে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র উ কিয়ান বলেন, ‘আজ নয়তো কাল আমরা তোমাদের ধরবই।’

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র উ কিয়ানের এই হুমকি সবার বিশেষ মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। কারণ, এটি শিশুতোষ চলচ্চিত্র ‘নে ঝা টু’-এর একটি বিখ্যাত সংলাপের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।

তাইওয়ানের বার্ষিক সামরিক মহড়া হান কুয়াংয়ের পরিধি বাড়ানোর খবরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উ কিয়ান বলেন, ‘এটি পরিস্থিতি, জনমত ও শক্তির তুলনায় একটি ভুল হিসাব। এমনভাবে সামনে এগোনো অত্যন্ত বিপজ্জনক। আমরা ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টি (ডিপিপি) কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করছি, ঝাঁটার সাহায্যে জোয়ারের মুখে দাঁড়ানো ধ্বংসের কারণ হবে। আজ নয়তো কাল আমরা তোমাদের ধরবই।’

চীনের সামাজিক মাধ্যমে এই মন্তব্য ছড়িয়ে পড়লে নেটিজেনরা এর সঙ্গে শিশুতোষ চলচ্চিত্রটির তুলনা করতে থাকেন। নে ঝা টু চীনা পুরাণের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত, যেখানে এক তরুণ রাক্ষসদের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। এ সিনেমায় একটি দৃশ্যে দেখা যায়, নে ঝা একটি ছুঁচোকে ধমক দিয়ে বলছে—‘আমি ফিরে আসব এবং তোমাকে ধরব।’

নে ঝা টু চীনে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এটি চীনের ইতিহাসে সর্বোচ্চ আয় করা চলচ্চিত্র হওয়ার পরে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমেও ব্যাপক প্রচার পেয়েছে। এ ছাড়া ‘ইনসাইড আউট ২’-এর আয় ছাড়িয়ে বিশ্বে শীর্ষ স্থান দখল করে নিয়েছে।

চলচ্চিত্রটির সাফল্য চীনে দেশাত্মবোধের জোয়ার সৃষ্টি করেছে। দেশটির গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, চীনারা সিনেমাটি বহুবার দেখছেন এবং একই সময়ে মুক্তি পাওয়া হলিউডের ‘ক্যাপ্টেন আমেরিকা: ব্রেভ নিউ ওয়ার্ল্ড’ সিনেমার বিপরীতে নে ঝা টু দেখার উৎসাহ দিচ্ছেন।

তবে নে ঝা টু তাইওয়ানে মুক্তি পায়নি।

এদিকে উ কিয়ানের মন্তব্যের জবাবে তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় চীনকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য সবচেয়ে বড় ‘সমস্যা সৃষ্টিকারী’ হিসেবে অভিহিত করেছে। মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এ বছর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ৮০তম বার্ষিকী এবং ইতিহাস প্রমাণ করেছে, যেকোনো ধরনের আগ্রাসন ও সম্প্রসারণ শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়।’

তাইওয়ান দখলের পূর্ণাঙ্গ সামরিক ক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্যে আধুনিকীকরণের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে চীন। গত সপ্তাহে চীন তাদের সামরিক বিধিমালা সংশোধন করেছে। সংশোধনীতে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর প্রধান দায়িত্ব হবে ‘যুদ্ধে জয়লাভ করা’। এ ছাড়াও সেনাবাহিনীকে সব সময় ‘যুদ্ধের প্রস্তুতি ও প্রস্তুতির দিকে মনোনিবেশ’ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তাইওয়ানের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে এই মিত্রতা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। এ সপ্তাহে ট্রাম্প বলেছেন, চীন আক্রমণ করলে যুক্তরাষ্ট্র সামরিকভাবে তাইওয়ানকে রক্ষা করবে কি না, সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে তিনি রাজি নন। ট্রাম্পের এই অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের কৌশলগত অস্পষ্টতার নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তবে এটি তাঁর পূর্বসূরি জো বাইডেনের অবস্থান থেকে ভিন্ন। বাইডেন প্রেসিডেন্ট থাকাকালে বারবার বলেছেন, তাঁর নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানকে রক্ষা করবে।

ট্রাম্পের এই অবস্থান তাইপেতে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তিনি তাইওয়ানকে মার্কিন সেমিকন্ডাক্টর ব্যবসা ‘চুরি’ করার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন এবং দেশটির প্রতি সমর্থনের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত