কলকাতা: গোটা রাজ্যে তাঁর দল দাপট দেখালেও নন্দীগ্রামে তিনি নিজে হেরে গেছেন। ৩২ বছর পর নিজে ভোটে হারলেন। মানতে পারছে না নন্দীগ্রাম। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই জানিয়েছেন, নন্দীগ্রামে ফের ভোট চেয়ে তাঁর দল তৃণমূল কংগ্রেস আদালতে যাবে। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। সেখানকার মানুষ আজ সকালেও ফের ভোট গোনার দাবিতে সড়ক অবরোধ করে। অভিযোগ উঠেছে, নন্দীগ্রামে জয়ী বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারীর গাড়িতেও হামলা করেন তৃণমূল সমর্থকরা। তবে অশান্তির অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল। নন্দীগ্রামের মানুষকেও অভিনন্দন জানিয়েছেন মমতা।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে শুরু করে বিজেপির সমস্ত নেতা-মন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গের ভোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দল তৃণমূলকে হারাতে সর্বশক্তি নিয়োগ করলেও ধরাশায়ী হয়েছে তারা। মমতাবিরোধী বাম ও কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় নিজেদের বিন্দুমাত্র অস্তিত্ব বাঁচিয়ে রাখতে পারেনি। ২৯২ আসনে মমতার দল একাই ২১৩। বিজেপি থেমেছে ৭৭-এ। এটাই তৃণমূলের সবচেয়ে বড় জয়।

কিন্তু দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই হেরে গেছেন নন্দীগ্রামে। তৃণমূলেরই সাবেক নেতা ও মন্ত্রী, বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারীর কাছে ১ হাজার ৯৫৬ ভোটে হেরেছেন মমতা। শুভেন্দু পেয়েছেন, ১ লাখ ১০ হাজার ৭৬৪ ভোট। আর ১ লাখ ৮ হাজার ৮০৮ ভোট পেয়েছেন মমতা। এই কেন্দ্রেই সিপিএমের মীণাক্ষী মুখার্জি পেয়েছেন ৬ হাজার ১৯৮ ভোট।

মমতার অভিযোগ, অনেক গড়মিল হয়েছে ভোটগণনায়। তাই তাঁর দল আদালতে যাবে। উল্লেখ্য, মমতা এই প্রথমবার কলকাতা থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে নন্দীগ্রামে ভোটে লড়লেন। গতবার এই কেন্দ্র থেকেই শুভেন্দু তৃণমূলের টিকিটে ৮১ হাজার ২৩০ ভোটে জিতেছিলেন। তিনি সেখানকার স্থানীয় নেতা। ভোটে দাঁড়িয়েই হুমকি দিয়েছিলেন, মমতাকে ৫০ হাজারেরও বেশি ভোটে হারাতে না পারলে রাজনীতি ছেড়ে দেবেন। কিন্তু ব্যবধান মাত্র ১ হাজার ৯৫৬। এটাকেই একান্তে জয় বলে মনে করছেন তৃণমূল নেতারা। তবে বিজেপিকে চাপে রাখতে আদালতে যাওয়া নিয়েও চর্চা হচ্ছে।

অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রীর আসন হওয়ার সুযোগ খুইয়ে নন্দীগ্রামের তৃণমূল সমর্থকরা উত্তেজিত। গতকাল রোববারই শুভেন্দুর গাড়িতে ঢিল ছোঁড়া হয়। বিভিন্ন জায়গায় অবরোধের পাশাপাশি বিজেপি কর্মীদের বাড়িতেও হামলা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। তবে তৃণমূলের পক্ষ থেকে সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে চলছে সরকার গঠনের তোড়জোড়।

মমতাই ফের মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন। নবনির্বাচিত বিধায়করা তাঁকেই নেতা নির্বাচিত করায় শুরু হয়েছে শপথ গ্রহণের তোড়জোড়। শপথের ছয়মাসের মধ্যেই কোনও একটি আসনে উপনির্বাচনে জিতিয়ে আনা হবে মমতাকে, এমনটাই তৃণমূল সূত্রের খবর।

১৯৮৯ সালের পর এই প্রথম কোনও নির্বাচনে হারলেন মমতা। ২১৩ আসনে জয়ের পরও নেটদুনিয়ায় কটাক্ষ হজম করতে হচ্ছে তৃণমূল সমর্থকদের। তাঁদের আবার পাল্টা দাবি, রাজ্যের ২৯২ আসনেই তাঁরা মমতাকে সামনে রেখেই বিজেপিকে হারিয়েছেন। কংগ্রেস ও সিপিএম-ও উড়ে গেছে মমতা-ঝড়ে, বলছেন তৃণমূল সমর্থকরা।