কেরালার ভূমিধসে নিহতের সংখ্যা আরও বেড়ে ১৬৭ 

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ০১ আগস্ট ২০২৪, ০৮: ৩২
আপডেট : ০১ আগস্ট ২০২৪, ১০: ৪৩
Thumbnail image

ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালার ওয়েনাদ জেলায় ভয়াবহ ভূমিধসের ঘটনার পর পেরিয়ে গেছে তিন দিন। তার পরও বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬৭। এ ছাড়া আরও অন্তত ২০০ জন নিখোঁজ রয়েছে এখনো। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

গত মঙ্গলবার রাত ৩টা ৪০ মিনিটের দিকে ওয়েনাদের মেপ্পাদি, মুন্দাকাল টাউন ও চুরালমালায় তিন দফা ভূমিধস হয়। সেতু ধসে পড়ায় এবং সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সড়কপথে অন্যান্য জেলার সঙ্গে অঞ্চলটির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। প্রতিকূল যোগাযোগব্যবস্থা ছাড়াও ভারী বর্ষণে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হওয়ার কথা জানিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, উপদ্রুত এলাকায় পৌঁছাতে একটি অস্থায়ী সেতু নির্মাণে সেনাবাহিনীকে সহায়তা করতে বলা হয়েছে।

রাজ্যের চার জেলা ওয়েনাদ, কোঝিকোড়, মালাপ্পুরম ও কান্নুরে রেড অ্যালার্ট জারি করেছে স্থানীয় আবহাওয়া বিভাগ। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এনডিআরএফ, কান্নুর ডিফেন্স সিকিউরিটি কোর এবং বিমানবাহিনীর সদস্যরা হেলিকপ্টারযোগে উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

উদ্ধারকারীদের বরাত দিয়ে টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া জানিয়েছে, শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ১৬৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া নিখোঁজ আছে এখনো অন্তত ২০০ জন। এর বাইরে ভূমিধসের কারণে বিধ্বস্ত হওয়া বিভিন্ন বাড়ি থেকে ১ হাজার ৩৮৬ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে ৮ হাজারের বেশি মানুষকে।

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন গতকাল বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ১৪৪ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মৃতের মধ্যে ৭৯ জন পুরুষ, ৬৪ জন নারী। প্রায় ১৯১ জন এখনো নিখোঁজ।’ তিনি আরও বলেন, ওয়েনাদে স্থাপিত ৮২টি ত্রাণশিবিরে ৮ হাজার ১৭ জনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। রাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগ ত্রাণশিবিরে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য পর্যাপ্তসংখ্যক ডাক্তার এবং প্যারা-মেডিকেল স্টাফ মোতায়েন করেছে।’

মঙ্গলবার রাতে প্রথম ভূমিধসটি হয় মুণ্ডাক্কাই শহরে। তখন প্রবল বৃষ্টি হচ্ছিল। সেখানে উদ্ধার তৎপরতার মধ্যেই ভোর ৪টা নাগাদ চুরালমালায় একটি স্কুলের কাছে দ্বিতীয় দফায় ভূমিধস হয়। স্কুলটিকে একটি অস্থায়ী আশ্রয়শিবির হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল। ভূমিধসে পুরো এলাকার সব দোকানপাট, বাড়িঘর পানি ও কাদায় ভরে যায়। এর মধ্যে একটি সেতু ভেঙে পড়ায় অঞ্চলটিতে প্রায় ৪০০ পরিবার আটকা পড়ে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা কয়েকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, কাঁচা রাস্তা ও বনাঞ্চল দিয়ে কাদাপানি ঢুকে পড়ছে। ঘরবাড়ি ভেসে যাচ্ছে এবং মানুষ ও যানবাহন আটকে পড়েছে। চুরালমালা থেকে মুণ্ডাক্কাই ও আট্টামালার মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু ভেঙে পড়ায় ওই দুটি এলাকা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এতে আটকে পড়া পরিবারগুলোর কাছে উদ্ধারকর্মীদের পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা রশিদ পাদিক্কাল পারাম্বান সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, মধ্যরাতের দিকে অন্তত তিনটি ভূমিধস হয়। আরেক স্থানীয় বাসিন্দা রাঘবন সি অরুণামালা ওই এলাকায় ঘটে যাওয়া ভয়াবহ দৃশ্যের বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আটকে পড়া একজনকে সাহায্যের জন্য চিৎকার করতে শুনতে পাই। উদ্ধারকর্মীরা কয়েক ঘণ্টা ধরে তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন।’

কয়েক দিন ধরে কেরালার বিভিন্ন জায়গায় প্রবল বৃষ্টি হয়েছে। পার্বত্য জেলা ওয়েনাদে এমনিতেই বর্ষা মৌসুমে ভূমিধসের ঝুঁকি থাকে। আগেও এমন ঘটনার নজির রয়েছে। গতকাল ভূমিধসের পর কেরালার বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা বিভাগ সাধারণ মানুষকে ভূমিধসপ্রবণ এলাকা থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে।

ভূমিধসে নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পিনারাই বিজয়নের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, ভূমিধসে নিহতদের পরিবারকে ২ লাখ টাকা করে দেওয়া হবে। আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য ও উদ্ধার অভিযানের সাফল্য কামনা করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত