Ajker Patrika

গাজা যুদ্ধবিরতির চেষ্টায় ইসরায়েলে ব্লিঙ্কেন

আপডেট : ১৯ আগস্ট ২০২৪, ১৩: ২৩
গাজা যুদ্ধবিরতির চেষ্টায় ইসরায়েলে ব্লিঙ্কেন

গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি চুক্তি চূড়ান্ত করার সর্বসাম্প্রতিক চেষ্টায় ইসরায়েলে পৌঁছেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। গতকাল রোববার তেল-আবিবে পৌঁছান তিনি। মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, যুদ্ধবিরতির চুক্তি সম্পন্ন করতে নতুন করে আশার সঞ্চার হচ্ছে।  

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে। 

দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠক করছেন তিনি। গত বছরের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরাইলে শীর্ষ মার্কিন কূটনীতিকের দশম সফর এটি।

গত বছরের অক্টোবরে গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলে এটি ব্লিঙ্কেনের নবম সফর। গাজায় যুদ্ধবিরতি করা নিয়ে ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে দীর্ঘদিনের ব্যবধান কমিয়ে আনার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র একটি সংশোধিত প্রস্তাব উপস্থাপনের কয়েকদিন পর ব্লিঙ্কেন এই সফরে গেলেন।

প্রস্তাবটি নিয়ে গত সপ্তাহে কাতারের দোহায় আরেলাচনা শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল উভয়েই একটি চুক্তি হওয়া নিয়ে আশাবাদ প্রকাশ করেছে। তবে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস বলছে, তাঁরা এ বিষয়ে আগ্রগতি হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী নয়।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গতকাল রোববার হামাসকে গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির আলোচনায় বাধা হিসেবে অভিযুক্ত করেন। তিনি এই সপ্তাহের শেষে নতুন আলোচনা শুরুর আগে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের ওপর আরো চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন।

ব্লিঙ্কেনের সফরসঙ্গী এক মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শীর্ষ মার্কিন কূটনীতিক সোমবার ইসরায়েলের নেতানিয়াহু, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট ও প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজোগের সঙ্গে আলাদাভাবে দেখা করবেন। এরপর মঙ্গলবার মিসরে যাত্রা করবেন বলে পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে।

চুক্তিতে মতভেদ থাকা বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে আছে গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা পুরোপুরি সরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি। হামাস সেনা সরিয়ে নেওয়ার ওপর জোর দিচ্ছে। তবে ইসরায়েল সেটি করবে কি না, প্রশ্ন আছে তা নিয়ে।

তবে ব্লিঙ্কেন ইসরায়েল সফরে যাওয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছানো যেতে পারে বলে আশা প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘আমরা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে যুদ্ধবিরতি চুক্তির সবচেয়ে কাছাকাছি পৌঁছেছি।’

চুক্তিটি চূড়ান্ত করার চেষ্টায় বাইডেন তাঁর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেনকে ইসরায়েলে পাঠিয়েছেন বলেও জানিয়েছিলেন।

গতবছর ৭ অক্টোবরে ইসরায়েলে ঢুকে পড়ে হামাসের হামলায় ১২০০ জন নিহত এবং ২৫১ জন জিম্মি হওয়ার দিন থেকেই গাজায় যুদ্ধ শুরু করেছে ইসরায়েল। তখন থেকে এখন পর্যন্ত গাজার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের হিসাবে নিহত হয়েছে ৪০ হাজারের বেশি মানুষ।

এর মধ্যে কেবল গত বছরের নভেম্বরে একবার এক সপ্তাহের একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় ২৪০ ফিলিস্তিনি বন্দি ইসরায়েলের জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার বিনিময়ে হামাস ১০৫ ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছিল। এখনো হামাসের হাতে ১১১ জিম্মি আছেন বলে দাবি ইসরায়েলের, যাদের ৩৯ জনই মারা গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সর্বসাম্প্রতিক এক যৌথ বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসর জানায়, তারা একটি যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি প্রস্তাব উত্থাপন করেছে, যা হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে ব্যবধান কমাতে সহায়ক।

যুদ্ধবিরতি নিয়ে দোহায় সর্বশেষ আলোচনার পর মধ্যস্থতাকারীরা বলছেন, গত দুই দিনের আলোচনা গঠনমূলক এবং ইতিবাচক পরিবেশে পরিচালিত হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ফ্ল্যাটের ভেতর অন্তঃকোন্দলে এনসিপির মোতালেবকে গুলি, মাদক ও গুলির খোসা উদ্ধার: পুলিশ

বেনজীরের ফ্ল্যাট থেকে জব্দ ২৪৬ ধরনের মালামাল প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে

খুলনায় এনসিপি নেতা গুলিবিদ্ধের ঘটনায় তরুণী আটক

এবার দিল্লি ও আগরতলায় ভিসা কার্যক্রম ‘সাময়িক বন্ধ’ করল বাংলাদেশ

সরকারের দেওয়া গানম্যান প্রত্যাখ্যান করলেন নুরুল হক নুর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিজ নামে ২ ‘সর্ববৃহৎ ব্যাটলশিপ’ নির্মাণ করছেন ট্রাম্প, সব মিলিয়ে ২৫ টির পরিকল্পনা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মার–এ–লাগোর সংবাদ সম্মেলনে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও অন্যান্যরা। ছবি: এএফপি
মার–এ–লাগোর সংবাদ সম্মেলনে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও অন্যান্যরা। ছবি: এএফপি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, মার্কিন নৌবাহিনীর জন্য তিনি এক নতুন শ্রেণির যুদ্ধজাহাজ বা ‘ব্যাটলশিপ’ তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন। অতি শক্তিশালী অস্ত্রে সজ্জিত এই জাহাজগুলোর নাম রাখা হবে তাঁর নিজের নামেই। মূলত মার্কিন নৌবাহিনীকে ঢেলে সাজানোর যে উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা তিনি নিয়েছেন, তারই নাম দিয়েছেন ‘গোল্ডেন ফ্লিট।’

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে বলা হয়েছে, ট্রাম্প ক্লাস ইউএসএস ডিফায়েন্ট—নামের এই বিশেষ যুদ্ধজাহাজগুলোর নির্মাণকাজ খুব দ্রুতই শুরু হতে যাচ্ছে। ট্রাম্প বুক ফুলিয়ে দাবি করেছেন, আগামী মাত্র আড়াই বছরের মধ্যেই এই রণতরিগুলো সাগরে দাপিয়ে বেড়ানোর জন্য পুরোপুরি তৈরি হয়ে যাবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই ঘোষণার পেছনে রয়েছে মার্কিন নৌবাহিনীকে এক বিশাল আকৃতি দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা। সেখানে যেমন থাকবে মনুষ্যচালিত বিশাল সব যুদ্ধজাহাজ, তেমনি থাকবে চালকহীন ছোট ছোট নৌযানও। এই বহরে যুক্ত হবে বড় আকারের ক্ষেপণাস্ত্রবাহী রণতরি এবং ছোট গতির নৌকা।

মার্কিন সরকারের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা বেশ কিছুকাল ধরেই একটা সতর্কবার্তা দিয়ে আসছেন। তাঁদের দুশ্চিন্তা চীন। জাহাজ নির্মাণের সক্ষমতা এবং মোট উৎপাদনের হিসেবে আমেরিকা এখন চীনের চেয়ে বেশ খানিকটা পিছিয়ে পড়েছে। ফ্লোরিডার মার-এ-লাগো গলফ ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প যখন এই নতুন পরিকল্পনার কথা বলছিলেন, তখন তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং নৌবাহিনী সচিব জন ফেলান। সোমবারের সেই সভায় ট্রাম্প জানান, প্রাথমিকভাবে তিনি দুটি ব্যাটলশিপ তৈরির অনুমোদন দিয়েছেন। তবে তাঁর আসল লক্ষ্য হলো, এমন অন্তত ২৫টি জাহাজ নির্মাণ করা।

নিজের পরিকল্পনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘এই জাহাজগুলো হবে ইতিহাসের দ্রুততম এবং দীর্ঘতম। এযাবৎকালের পৃথিবীতে যত ব্যাটলশিপ তৈরি হয়েছে, তার চেয়ে অন্তত ১০০ গুণ বেশি শক্তিশালী হবে এগুলো।’ তিনি আরও জানান, এই দানবীয় জলযানগুলোতে মোতায়েন করা হবে হাইপারসনিক মিসাইল এবং এমন সব মারণাস্ত্র, যা এর আগে কেউ দেখেনি। ট্রাম্পের ভাষায় এগুলো হবে মার্কিন নৌবাহিনীর ‘ফ্ল্যাগশিপ’ বা প্রধান গর্ব।

বক্তব্যের সময় ট্রাম্পের দুই পাশে ঝোলানো ছিল বড় বড় পোস্টার, যেখানে সেই ‘ট্রাম্প ক্লাস’ জাহাজের কাল্পনিক সব ছবি আঁকা। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই জাহাজগুলো দেশের মাটিতেই তৈরি হবে, যার ফলে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নৌবাহিনী সচিব জন ফেলান একটি মজার তথ্য দিয়েছেন। তিনি জানান, ট্রাম্প নিজে থেকে তাঁর কাছে একটি ‘বিশাল ও সুন্দর’ ব্যাটলশিপ তৈরির আবদার করেছিলেন। সেই বহরে আরও থাকবে কয়েক ডজন সহায়ক ও পণ্যবাহী নৌযান।

গত ১৯ ডিসেম্বর মার্কিন নৌবাহিনী আরও একগুচ্ছ নতুন নৌযানের ঘোষণা দিয়েছিল, যেগুলো তৈরি হবে কোস্টগার্ডের লিজেন্ড-ক্লাস ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাটারের আদলে। নৌ-অপারেশন প্রধান ড্যারিল কডল এক ভিডিও বার্তায় সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, লোহিত সাগর থেকে শুরু করে ক্যারিবীয় অঞ্চল পর্যন্ত আমেরিকার যে অপারেশন চলছে, তাতে আমাদের হাতে থাকা ছোট যুদ্ধজাহাজের সংখ্যা চাহিদার তুলনায় মাত্র এক-তৃতীয়াংশ। অর্থাৎ পানির নিচে বা ওপরে ছোট নৌযানের ঘাটতি এখন আর অস্বীকার করার উপায় নেই। ড্যারিল কডল মনে করেন, বড় যুদ্ধজাহাজগুলোকে বড় লড়াইয়ের জন্য বাঁচিয়ে রাখতে হলে ছোটখাটো মোকাবিলায় এই ধরনের গতির জাহাজগুলোর খুব প্রয়োজন।

তবে মুদ্রার উল্টো পিঠও আছে। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ‘কনস্টেলেশন-ক্লাস ফ্রিগেট’ নামের একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বারবার কাজ পিছিয়ে যাওয়া আর খরচ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় ২০২৪ সালে সেটি বাতিল হয়ে যায়। দেখা গেছে, প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার খরচ করার পরেও মাত্র দুটি জাহাজ পাওয়ার আশা ছিল। এদিকে সমুদ্রের দখল নিয়ে আমেরিকার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীন ক্রমেই এগিয়ে যাচ্ছে। চলতি বছরে সারা বিশ্বের জাহাজ নির্মাণের যত অর্ডার এসেছে, তার ৬০ শতাংশেরও বেশি গেছে চীনের দখলে। চীনের নৌবাহিনী এখন সংখ্যার বিচারে বিশ্বের বৃহত্তম।

জানুয়ারিতে ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার পর থেকেই ট্রাম্প তাঁর দেশের জাহাজ শিল্পকে টেনে তোলার কথা বলে আসছেন। গত মার্চে তিনি আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘একসময় আমরা কত জাহাজ বানাতাম! এখন প্রায় বানাই না বললেই চলে। কিন্তু আমরা আবার খুব দ্রুত জাহাজ বানানো শুরু করব। দেখবেন, এর প্রভাব হবে বিশাল।’ সেই ধারাবাহিকতায় অক্টোবরে ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাবের সঙ্গে ট্রাম্প একটি চুক্তি করেছেন। আমেরিকা ফিনল্যান্ডের নকশা করা ১১টি আইসব্রেকার বা বরফ কাটার জাহাজ কিনবে, যার সাতটিই তৈরি হবে আমেরিকার মাটিতে ফিনিশ কারিগরি জ্ঞান ব্যবহার করে।

ট্রাম্পের এই যুদ্ধজাহাজ তৈরির ঘোষণাটি এমন এক সময়ে এল, যখন ভেনেজুয়েলার সঙ্গে উত্তেজনা তুঙ্গে থাকায় ক্যারিবীয় সাগরে মার্কিন নৌ ও বিমান শক্তি বাড়ানো হয়েছে। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের সন্দেহে আমেরিকা বেশ কিছু নৌযানে আক্রমণ শুরু করেছে, যেখানে অন্তত ১০০ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার সাংবাদিকদের ট্রাম্প দাবি করেন, এই কড়া পদক্ষেপের ফলে মাদক চোরাচালান বন্ধ হয়েছে এবং হাজার হাজার আমেরিকান নাগরিকের প্রাণ বেঁচেছে। যদিও অনেক বিশেষজ্ঞই এই হামলার আইনি ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁদের মতে, এই ধরনের সরাসরি আক্রমণ আন্তর্জাতিক যুদ্ধ আইনের পরিপন্থী হতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ফ্ল্যাটের ভেতর অন্তঃকোন্দলে এনসিপির মোতালেবকে গুলি, মাদক ও গুলির খোসা উদ্ধার: পুলিশ

বেনজীরের ফ্ল্যাট থেকে জব্দ ২৪৬ ধরনের মালামাল প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে

খুলনায় এনসিপি নেতা গুলিবিদ্ধের ঘটনায় তরুণী আটক

এবার দিল্লি ও আগরতলায় ভিসা কার্যক্রম ‘সাময়িক বন্ধ’ করল বাংলাদেশ

সরকারের দেওয়া গানম্যান প্রত্যাখ্যান করলেন নুরুল হক নুর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

লিবিয়ার হাফতারকে যুদ্ধবিমানসহ ৪০০ কোটি ডলারের বেশি সামরিক সরঞ্জাম দিচ্ছে পাকিস্তান

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৫২
পাকিস্তানের তিন বাহিনীর প্রধান ফিল্ড আসিম মুনিরের সঙ্গে লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মির প্রধান ফিল্ড মার্শাল খলিফা হাফতার। ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তানের তিন বাহিনীর প্রধান ফিল্ড আসিম মুনিরের সঙ্গে লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মির প্রধান ফিল্ড মার্শাল খলিফা হাফতার। ছবি: সংগৃহীত

উত্তর আফ্রিকার দেশ লিবিয়ার একাংশের নিয়ন্ত্রক জেনারেল খলিফা হাফতারের নেতৃত্বাধীন লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মির কাছে ৪০০ কোটি ডলারের বেশি মূল্যের সামরিক সরঞ্জাম বিক্রির চুক্তি চূড়ান্ত করেছে পাকিস্তান। চুক্তির আওতায় চীন ও পাকিস্তানের যৌথভাবে তৈরি যুদ্ধবিমান সরবরাহের কথা রয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে লন্ডন থেকে প্রকাশিত মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই।

এই চুক্তি তেলসমৃদ্ধ উত্তর আফ্রিকার দেশটিতে সামরিক সক্ষমতার ভারসাম্যে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে। বর্তমানে লিবিয়া দ্বিখণ্ডিত। খলিফা হাফতার দেশটির পূর্বাঞ্চল শাসন করছেন, আর পশ্চিমে ত্রিপোলিতে রয়েছে জাতিসংঘ স্বীকৃত প্রধানমন্ত্রী আবদুল হামিদ দিবেইবাহর নেতৃত্বাধীন সরকার।

গত সপ্তাহে বেনগাজি সফরের সময় পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির বলেন, ‘আপনাদের সশস্ত্র বাহিনীকে যতটা সম্ভব শক্তিশালী করে গড়ে তুলুন। কারণ, এই বাহিনীই দেশের অস্তিত্ব নিশ্চিত করে।’ সেখানে হাফতারের ছেলে সাদ্দামের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। রয়টার্স জানিয়েছে, ওই বৈঠকেই অস্ত্র চুক্তির বিষয়টি চূড়ান্ত হয়।

লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মির কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে মুনির বলেন, ‘লিবিয়া সিংহদের দেশ।’ এ সময় তিনি লিবিয়ার প্রখ্যাত ইসলামি পণ্ডিত ওমর আল-মুখতারের প্রসঙ্গ টানেন। মুখতার ১৯২০-৩০-এর দশকে ইতালীয় দখলদারত্বের বিরুদ্ধে লড়াই করে কিংবদন্তি হয়ে আছেন।

চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার আগে রয়টার্সের দেখা নথিপত্র অনুযায়ী, হাফতারের বাহিনী ১৬টি জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমান কিনবে, যা পাকিস্তান ও চীন যৌথভাবে তৈরি করেছে। এর সঙ্গে ১২টি সুপার মাশাক প্রশিক্ষণ বিমানও থাকছে। এক পাকিস্তানি কর্মকর্তা জানান, এই চুক্তি আড়াই বছর মেয়াদি এবং এতে স্থল, জল ও আকাশপথের নানা সরঞ্জাম অন্তর্ভুক্ত। দুই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চুক্তির অঙ্ক ৪৬০ কোটি ডলার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যা পাকিস্তানের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সামরিক সরঞ্জাম বিক্রির চুক্তি।

বর্তমানে ত্রিপোলি বা হাফতার, কারও হাতেই শক্তিশালী কোনো বিমানবাহিনী নেই। এর আগে ২০১৯ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, মিসর ও রাশিয়ার সমর্থনে ত্রিপোলি দখলের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন হাফতার। সে সময় তুরস্ক ড্রোন ও ভাড়াটে সৈন্য পাঠিয়ে ত্রিপোলি সরকারকে রক্ষা করে। সেই থেকে পশ্চিম লিবিয়ায় তুরস্কের হাজারো সৈন্য মোতায়েন রয়েছে।

২০১১ সালে ন্যাটো-সমর্থিত অভিযানে মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতনের পর থেকে লিবিয়া মূলত তুরস্ক ও উপসাগরীয় দেশগুলোর ছায়াযুদ্ধের ময়দানে পরিণত হয়। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেই শত্রুতার রেখা কিছুটা ঝাপসা হয়ে এসেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরব এখন ত্রিপোলির সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াচ্ছে। অন্যদিকে তুরস্কও হাফতারের ছেলে সাদ্দামের মাধ্যমে হাফতারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছে। পাকিস্তানের সঙ্গে সৌদি ও আমিরাতের ঘনিষ্ঠতা পুরোনো। হাফতারের সঙ্গে আমিরাতের সম্পর্ক সবচেয়ে গভীর হলেও সৌদি আরবও তাঁর পক্ষে লবিং করে থাকে।

তবে সুদানের আধা সামরিক বাহিনী আরএসএফকে সমর্থনের ইস্যুতে হাফতার পরিবারের সঙ্গে মিসরের সম্পর্কের টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, হাফতার আরএসএফকে অস্ত্র সরবরাহে সহায়তা করছেন। পাকিস্তানের এই অস্ত্র বিক্রির সিদ্ধান্ত তাদের এক গুরুত্বপূর্ণ বন্ধুরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক জটিলতা তৈরি করতে পারে। উপসাগরীয় দেশগুলো এতে উদ্বিগ্ন না হলেও তুরস্ক বিষয়টি সহজভাবে না-ও নিতে পারে। কারণ, তুরস্ক ও পাকিস্তানের মধ্যে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ নিরাপত্তা সম্পর্ক রয়েছে এবং কাশ্মীর ইস্যুতে আঙ্কারা সব সময় ইসলামাবাদকে সমর্থন দেয়।

অর্থনৈতিক সংকটে থাকা পাকিস্তান এখন তাদের সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানি বাড়িয়ে আয় বাড়ানোর চেষ্টা করছে। ভারত ও পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সামরিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে তাদের অস্ত্রের সক্ষমতা প্রদর্শিত হওয়ার পর এই প্রচেষ্টা আরও জোরদার হয়েছে। ২০১১ সাল থেকে লিবিয়ায় জাতিসংঘের অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বছরের পর বছর ধরে দেশটিতে অস্ত্রের প্রবাহ থেমে নেই। যদিও পাকিস্তান এখানে চীনা প্রযুক্তির অস্ত্র বিক্রি করছে, তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ফেরার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও পাকিস্তানের সম্পর্কের যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে।

গত অক্টোবর মাসে গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে মিসর থেকে সরাসরি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। পাকিস্তানের প্রভাবশালী সেনাপ্রধান আসিম মুনির এ বছর ইতিমধ্যে দুবার ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এবং গাজা ইস্যু নিয়ে আলোচনার জন্য তৃতীয়বার হোয়াইট হাউস সফরের কথা রয়েছে তাঁর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ফ্ল্যাটের ভেতর অন্তঃকোন্দলে এনসিপির মোতালেবকে গুলি, মাদক ও গুলির খোসা উদ্ধার: পুলিশ

বেনজীরের ফ্ল্যাট থেকে জব্দ ২৪৬ ধরনের মালামাল প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে

খুলনায় এনসিপি নেতা গুলিবিদ্ধের ঘটনায় তরুণী আটক

এবার দিল্লি ও আগরতলায় ভিসা কার্যক্রম ‘সাময়িক বন্ধ’ করল বাংলাদেশ

সরকারের দেওয়া গানম্যান প্রত্যাখ্যান করলেন নুরুল হক নুর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ট্রাম্পকে তরুণদের ‘রোল মডেল’ বললেন এক সময়ের ঘোর বিরোধী নিকি মিনাজ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
‘আমেরিকাফেস্ট’ সম্মেলনের মঞ্চে নিকি মিনাজ। ছবি: সংগৃহীত
‘আমেরিকাফেস্ট’ সম্মেলনের মঞ্চে নিকি মিনাজ। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনায় রক্ষণশীল সংগঠন টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএ আয়োজিত ‘আমেরিকাফেস্ট’ সম্মেলনে হঠাৎ উপস্থিত হয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের প্রশংসা করেছেন মার্কিন র‍্যাপ তারকা নিকি মিনাজ। রোববার (২১ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনে তিনি তরুণ পুরুষদের জন্য ট্রাম্প ও ভ্যান্সকে ‘রোল মডেল’ হিসেবে উল্লেখ করেন। মিনাজের এই মন্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ চমক সৃষ্টি করেছে।

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) ‘ফরচুন’ জানিয়েছে, এই সম্মেলনটি প্রয়াত রক্ষণশীল কর্মী চার্লি কার্কের স্মরণে আয়োজন করা হয়। মঞ্চে নিকি মিনাজের সাক্ষাৎকার নেন চার্লি কার্কের স্ত্রী ও বর্তমানে টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএ-এর নেতৃত্বে থাকা অ্যারিকা কার্ক। আলোচনায় ট্রাম্পের প্রতি নতুন সমর্থনের কথা জানান মিনাজ—যদিও অতীতে তিনি ট্রাম্পের কঠোর সমালোচক ছিলেন। পাশাপাশি তিনি নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতারও নিন্দা জানান।

মিনাজ ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্র্যাট গভর্নর গ্যাভিন নিউসমকে কটাক্ষ করে ট্রাম্পের দেওয়া ‘নিউ-স্কাম’ নামটি ব্যবহার করেন। বর্তমান প্রশাসনের প্রশংসা করে তিনি বলেন—বর্তমান প্রশাসনে হৃদয় ও আত্মা আছে এবং ট্রাম্প ও ভ্যান্স দুজনই এমন নেতা, যাদের সঙ্গে সাধারণ মানুষ সহজে নিজেদের মিল খুঁজে পায়।

এদিকে মঞ্চে এক অস্বস্তিকর মুহূর্ত তৈরি হয়, যখন ভ্যান্সের রাজনৈতিক দক্ষতার প্রশংসা করতে গিয়ে মিনাজ তাঁকে ‘অ্যাসাসিন’ বলে ফেলেন। কথাটি বলার পরই তিনি থেমে যান এবং পরিস্থিতি কিছুটা বিব্রতকর হয়ে ওঠে। চার্লি কার্ক হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ায় শব্দটি উপস্থিত অনেকের মনে আঘাত দেয়।

সম্প্রতি মিনাজ ট্রাম্পের ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ দেওয়া নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টান নির্যাতন সংক্রান্ত একটি পোস্ট শেয়ার করেছিলেন, যেখানে সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞার কথা বলা হয়। এ নিয়ে তিনি জাতিসংঘে মার্কিন মিশনে আয়োজিত এক প্যানেল আলোচনাতেও অংশ নেন।

নিজের পরিবর্তিত অবস্থান নিয়ে মিনাজ বলেন, ‘মত বদলানো দোষের নয়—মনের কথা বলাই এখন সবচেয়ে বড় অপরাধ হয়ে গেছে।’ বিনোদন জগৎ থেকে সমালোচনার প্রসঙ্গে জানান, তিনি এসব নিয়ে ভাবেন না। একসময় ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির তীব্র বিরোধিতা করা এই শিল্পী এখন প্রকাশ্যেই বলছেন, তাঁর মত বদলানো ঠিকই আছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ফ্ল্যাটের ভেতর অন্তঃকোন্দলে এনসিপির মোতালেবকে গুলি, মাদক ও গুলির খোসা উদ্ধার: পুলিশ

বেনজীরের ফ্ল্যাট থেকে জব্দ ২৪৬ ধরনের মালামাল প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে

খুলনায় এনসিপি নেতা গুলিবিদ্ধের ঘটনায় তরুণী আটক

এবার দিল্লি ও আগরতলায় ভিসা কার্যক্রম ‘সাময়িক বন্ধ’ করল বাংলাদেশ

সরকারের দেওয়া গানম্যান প্রত্যাখ্যান করলেন নুরুল হক নুর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যুদ্ধের মধ্যেই গাজায় দুবার সন্তান প্রসবের ভয়াবহ স্মৃতি হাদিলের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
হাদিল আল ঘেরবাওয়ির কোলে ছেলে জাওয়াদ। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান
হাদিল আল ঘেরবাওয়ির কোলে ছেলে জাওয়াদ। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান

‘এই বিভীষিকা আমি কখনো ভুলতে পারব না’—বলছিলেন হাদিল আল ঘেরবাওয়ি। ২৬ বছর বয়সী এই ফিলিস্তিনি নারী গাজা যুদ্ধে চরম ক্ষুধা, ভয় আর অনিশ্চয়তার মধ্যেই দুটি গর্ভধারণ ও দুবার সন্তান জন্ম দিয়েছেন।

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান-ভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরুর সময় হাদিল সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভধারণ হওয়ায় তিনি নিয়মিত ডাক্তার দেখাতেন, আলট্রাসাউন্ড করাতেন এবং ভিটামিন নিতেন। গাজা সিটির পূর্বাংশে ইসরায়েল সীমান্তের কাছে বসবাস করায় যুদ্ধ শুরুর প্রথম দিনই তিনি গাজার পশ্চিম অংশে বসবাস করা বাবা-মায়ের বাড়িতে চলে যান। হাদিল ভেবেছিলেন, কয়েক দিনের মধ্যেই তিনি আবার স্বামীর বাড়িতে ফিরে যাবেন। কিন্তু এরপর পরিবারটি অন্তত ১৩ বার বাস্তুচ্যুত হয় এবং স্বামীর বাড়িটিও একদিন পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়।

২০২৩ সালের অক্টোবর মাসেই গাজা সিটিতে একটি আবাসিক ভবনে বড় ধরনের হামলার কাছাকাছি অবস্থানে ছিলেন হাদিল। তাঁর কাছে এটিকে একটি ভূমিকম্প মনে হয়েছিল। পরে আশ্রয় নেন আল-শিফা হাসপাতালে। সেখানে অন্যান্য আশ্রয়প্রার্থীর ভিড় এত বেশি ছিল যে, বাথরুম ব্যবহার করাও প্রায় অসম্ভব ছিল। সেদিনের দৃশ্য আজও তাড়া করে ফেরে হাদিলকে। স্তূপ করে রাখা লাশ, ড্রামে রাখা খণ্ড-বিখণ্ড অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আর তীব্র গন্ধ। তিনি বলেন, ‘আমি গর্ভবতী ছিলাম, সহ্য করতে পারিনি।’

অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে—নিরাপত্তার আশায় এবার তিনি ও তাঁর স্বামী খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে যান এবং চিকিৎসকদের কাছে আগেভাগেই সন্তান প্রসবের অনুরোধ করেন। হাদিল যখন সন্তান প্রসব করছিলেন, তখন হাসপাতালটির পাশের ভবনেই হামলা হয় এবং আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিশৃঙ্খল এই পরিস্থিতিতে সন্তান বদলে যাওয়ার আতঙ্কও গ্রাস করেছিল হাদিলকে। তবে আতঙ্কের মধ্যেই শেষ পর্যন্ত তিনি ছেলে জাওয়াদের জন্ম দেন।

নবজাতক নিয়ে হাদিলকে ৩০ জনের সঙ্গে একটি কক্ষে গাদাগাদি করে থাকতে হয়েছিল। সেই সময়টিতে সেলাইয়ের তীব্র ব্যথার মধ্যেও তিনি কোনো ওষুধ পাননি; রাতের পর রাত চুপচাপ এই ব্যথা সহ্য করেছেন। তাঁর ধারণা, প্রসবের পর তিনি বিষণ্নতায় আক্রান্ত হয়েছিলেন।

কয়েক মাস পর তাঁরা একটি তাঁবুতে ওঠেন। বালু, পোকামাকড় আর প্রচণ্ড ঠান্ডায় একের পর এক নবজাতকের মৃত্যুর খবরে সারাক্ষণ আচ্ছন্ন হয়ে থাকতেন হাদিল। রাতে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে বারবার জেগে উঠতেন। জাওয়াদের বয়স ৯ মাস হলে আবারও গর্ভবতী হন তিনি। হাদিল বলেন, ‘তাঁবুতে থেকে আরেকটি সন্তান—ভীষণ ধাক্কা খেয়েছিলাম।’

চলতি বছরের জানুয়ারিতে সাময়িক যুদ্ধবিরতির খবর কিছুটা আশা জাগিয়েছিল তাঁদের। সেই আশা থেকেই ঝুঁকি নিয়ে তাঁরা নিজেদের বাড়িতে ফিরে যান। কিন্তু ছয় সপ্তাহ পরই ভেঙে যায় যুদ্ধবিরতি। পেটে সন্তান নিয়ে আবারও পালাতে হয় হাদিলকে। পালানোর পর তাঁদের বাড়িটিও ধ্বংস হয়ে যায়। যুদ্ধের মধ্যে দ্বিতীয় গর্ভধারণ হাদিলের জন্য ছিল সবচেয়ে কঠিন। এই সন্তান পেটে রাখার ৯ মাসই তাঁর যুদ্ধের মধ্যে কেটেছে। এমনও দিন গেছে, সারা দিন শুধু একটি শসা খেয়ে কাটিয়েছেন। আর কোথাও এক মুঠো খাবার পেলে নিজের ভাগটুকু তিনি ছেলে জাওয়াদকে দিতেন।

দ্বিতীয়বার প্রসবের সময়ও তিনি বাবা-মায়ের বাড়িতে গিয়ে ওঠেন। কারণ ওই বাড়ি থেকে কাছাকাছি একটি হাসপাতালে নবজাতক সুরক্ষার জন্য ইনকিউবেটর ছিল। এক রাতে প্রসবব্যথা শুরু হলে, লিফট না থাকায় পাঁচ তলা থেকে হেঁটেই নামতে হয় হাদিলকে। পরে তিনি অ্যাম্বুলেন্সে ওঠেন এবং ওই হাসপাতালে দ্বিতীয় ছেলে ফারেসের জন্ম দেন। জন্মের সময় ফারেসের ওজন ছিল মাত্র ২ কেজি।

এবারে অ্যানেসথেসিয়া ছাড়াই সেলাই দেওয়া হয় হাদিলকে। আর অন্যকে সুযোগ করে দিতে কিছুক্ষণের মধ্যেই বিছানা খালি করে তাঁকে চেয়ারে বসে থাকতে হয়। ফারেসের জন্মের পাঁচ ঘণ্টা পর, চরম ক্লান্তি ও ব্যথা নিয়ে তিনি আবার পাঁচ তলা সিঁড়ি বেয়ে বাবা-মায়ের ঘরে ফেরেন। এই যুদ্ধ, তাঁর শরীর ও মনে রেখে গেছে এমন ক্ষত—যা ভুলবার নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ফ্ল্যাটের ভেতর অন্তঃকোন্দলে এনসিপির মোতালেবকে গুলি, মাদক ও গুলির খোসা উদ্ধার: পুলিশ

বেনজীরের ফ্ল্যাট থেকে জব্দ ২৪৬ ধরনের মালামাল প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে

খুলনায় এনসিপি নেতা গুলিবিদ্ধের ঘটনায় তরুণী আটক

এবার দিল্লি ও আগরতলায় ভিসা কার্যক্রম ‘সাময়িক বন্ধ’ করল বাংলাদেশ

সরকারের দেওয়া গানম্যান প্রত্যাখ্যান করলেন নুরুল হক নুর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত