Ajker Patrika

গভীর মনোযোগই সাফল্যের শক্তি

সাব্বির হোসেন
গভীর মনোযোগই সাফল্যের শক্তি

বর্তমান দ্রুতগামী ডিজিটাল বিশ্বে গভীর মনোযোগ দিয়ে কাজ করা যেন এক কঠিন চ্যালেঞ্জ। একের পর এক নোটিফিকেশন, ই-মেইল এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আকর্ষণ আমাদের মনোযোগকে প্রতিনিয়ত ভেঙে দিচ্ছে। তবে ক্যাল নিউপোর্ট তাঁর জনপ্রিয় বই ডিপ ওয়ার্ক-এ দেখিয়েছেন, এই ব্যস্ততার যুগেও গভীর মনোনিবেশ প্রকৃত সাফল্যের চাবিকাঠি। নিউপোর্টের মতে, আধুনিক কর্মক্ষেত্রে ‘ব্যস্ত থাকা’ উৎপাদনশীলতার প্রকৃত মাপকাঠি নয়; বরং যাঁরা গভীরভাবে মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে পারেন, তাঁরাই ভবিষ্যতের সফল ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠবেন।

ডিপ ওয়ার্ক বনাম শ্যালো ওয়ার্ক

নিউপোর্ট কাজকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন—ডিপ ওয়ার্ক: গভীর মনোযোগ ও মনস্থিরতা নিয়ে করা কাজ, যা মস্তিষ্ককে চ্যালেঞ্জ করে এবং নতুন দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করে। উদাহরণস্বরূপ, গবেষক যিনি দীর্ঘ সময় গবেষণায় নিবেদিত থাকেন বা প্রোগ্রামার যিনি জটিল কোড লিখছেন। শ্যালো ওয়ার্ক: সাধারণত কম মানসিক প্রচেষ্টা নেয় এবং সহজে বিভ্রান্তির সুযোগ দেয়, যেমন ই-মেইল দেখা, মিটিংয়ের শিডিউল তৈরি করা বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করা। নিউপোর্টের মতে, বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক অর্থনীতিতে ডিপ ওয়ার্কের দক্ষতা ক্রমশ বিরল হয়ে উঠছে, অথচ এর মূল্য দিন দিন বাড়ছে।

ডিপ ওয়ার্ক চর্চার পাঁচটি নিয়ম

গভীরভাবে কাজ করুন: গভীর মনোযোগ দেওয়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি বেছে নেওয়া জরুরি। নিউপোর্ট চারটি কৌশলের কথা বলেন, মোনাস্টিক পদ্ধতি: দীর্ঘ সময় নির্জনে কাজ করা (উদাহরণ: গবেষক)। বাইমোডাল পদ্ধতি: নির্দিষ্ট কিছু সময় গভীর কাজে নিবেদিত রাখা (উদাহরণ: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক)।

রিদমিক পদ্ধতি: প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় গভীর কাজে ব্যয় করা (উদাহরণ: লেখক)।

জার্নালিস্টিক পদ্ধতি: যখনই সুযোগ পাওয়া যায়, তখনই গভীরভাবে কাজ শুরু করা (উদাহরণ: সাংবাদিক)।

মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষমতা বাড়ান: নিউপোর্ট বলেন, মনোযোগকে প্রশিক্ষিত করাও শরীরচর্চার মতো গুরুত্বপূর্ণ। বিরক্তিকে গ্রহণ করুন: ফোন ও অন্যান্য ডিজিটাল বিভ্রান্তি থেকে মুক্ত হয়ে নির্দিষ্ট সময় গভীর কাজে ফোকাস করুন।

মানসিক সহনশীলতা বাড়ান: কিছু মানসিক কসরত, যেমন কার্ড মুখস্থ করা বা অঙ্কের জটিল সমস্যা সমাধান করা, মনোযোগ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

অপ্রয়োজনীয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বর্জন করুন

সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের মনোযোগের সবচেয়ে বড় শত্রু। নিউপোর্ট ৩০ দিনের একটি পরীক্ষার পরামর্শ দেন—এক মাসের জন্য নির্দিষ্ট অ্যাপ বা ওয়েবসাইট ব্যবহার বন্ধ রাখুন। এরপর নিজেকে প্রশ্ন করুন—এটি ছাড়া কি জীবন সহজতর হয়েছে? যদি উত্তর হ্যাঁ হয়, তবে সেটি বাদ দেওয়াই ভালো। এ ছাড়া তিনি ৮০/২০ নীতির প্রয়োগের পরামর্শ দেন—যে টুল বা অ্যাপগুলো আপনার সাফল্যের ৮০% অবদান রাখছে, শুধু সেগুলো ব্যবহার করুন।

শ্যালো কাজ কমিয়ে দিন

শ্যালো কাজকে কমিয়ে গভীর কাজে বেশি সময় ব্যয় করা সফলতার মূলমন্ত্র।

ফিক্সড-সিডিউল প্রোডাকটিভিটি: প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ের পর কাজ বন্ধ করুন এবং বিশ্রাম নিন।

ই-মেইল ব্যবস্থাপনা: সব ই-মেইলের উত্তর দেওয়া বাধ্যতামূলক নয়; শুধু প্রয়োজনীয় ই-মেইলগুলোর উত্তর দিন।

গভীর কাজের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা

নিউপোর্টের মতে, ডিপ ওয়ার্ক মস্তিষ্কের নিউরোপ্লাস্টিসিটি বাড়ায়। যখন কেউ গভীরভাবে মনোযোগ দেয়, তখন তার নিউরাল কানেকশন আরও শক্তিশালী হয়, যা শেখার গতি বৃদ্ধি করে। একটি কাজের প্রতি ৯০ মিনিটের বেশি নিবিষ্ট থাকলে মানুষ ফ্লো স্টেটে প্রবেশ করে, যেখানে কাজের গতি ও দক্ষতা—উভয় বৃদ্ধি পায়।

প্রতিদিনের জীবনে ডিপ ওয়ার্ক

ফোন ও ইন্টারনেটের ব্যবহার কমিয়ে নির্দিষ্ট সময় ধরে শুধু গভীর কাজে মনোযোগ দিন।

কাজের শেষে একটি শাটডাউন রিচুয়াল তৈরি করুন, যেমন ডায়েরি লেখা বা টাস্ক লিস্ট তৈরি করা। সপ্তাহে অন্তত এক দিন ডিজিটাল ডিটক্স করে নিজেকে প্রযুক্তির প্রভাব থেকে মুক্ত রাখুন। নিউপোর্টের মতে, গভীর কাজ কেবল একটি দক্ষতা নয়, বরং এটি একটি জীবনদর্শন। যাঁরা সত্যিকার অর্থে নিজেদের কাজে একাগ্র হতে পারেন, তাঁরাই দীর্ঘ মেয়াদে বড় সাফল্য অর্জন করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত