Ajker Patrika
সাক্ষাৎকার

অস্ট্রেলিয়ায় ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে

ড. খলিলুর রহমান।

ড. খলিলুর রহমান, অস্ট্রেলিয়ার বায়োফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি মিউকফার্মে, ড্রাগ ডেভেলপমেন্ট সায়েন্টিস্ট হিসেবে কর্মরত আছেন। পাশাপাশি ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলসে খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করছেন। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নাদিম মজিদ

প্রশ্ন: মিউকফার্ম কি নিয়ে কাজ করে? সে প্রতিষ্ঠানে আপনি কোন সেকশনে কি নিয়ে কাজ করছেন?

উত্তর: মিউকফার্ম একটি ক্যানসার ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান। তারা মূলত বিরল রোগ সিউডোম্যাক্সোমা পেরিটোনি রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ ‘ব্রোম‍্যাক’ নিয়ে কাজ করছে। এই ওষুধটি কেমোথেরাপির কার্যকারিতা বাড়াতে সহায়ক। আমি মিউকফার্মের একজন আরএন্ডডি সায়েন্টিস্ট হিসেবে কর্মরত। আমার প্রধান কাজ হলো ক্যানসার কোষের ওপর ওষুধের প্রভাব এবং প্রাণীর শরীরের প্রতিক্রিয়া নিয়ে গবেষণা করা। এ ছাড়া ওষুধের নিরাপত্তা, কার্যকারিতা এবং গুণগত মান নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো আমার দায়িত্বের মধ্যে পরে।

প্রশ্ন: আপনি কীভাবে এ সেক্টরে এলেন?

উত্তর: আমি দক্ষিণ কোরিয়ায় মাস্টার্স করাকালীন সেখানকার প্রসিদ্ধ ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি ডংয়ে এস টির অর্থায়নে একটি ডায়াবেটিস ড্রাগ ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলাম। একটি ডায়াবেটিক ওষুধের শুরু থেকে বাজারে আসা পর্যন্ত কাজ করেছিলাম। ওষুধটি বাজারে বেশ সাফল্য লাভ করে, যা আমার চিন্তাভাবনা বদলে দেয়। আমি দেখি, একটি ওষুধ মানুষের জীবনে কত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এ অনুপ্রেরণা থেকে ওষুধ শিল্পে কাজ করার আগ্রহ আরও বৃদ্ধি পায়। পরে আমি ইউনিভার্সিটি অব সিডনি থেকে ক‍্যানসার ড্রাগ ডেভেলপমেন্টের ওপর পিএইচডি এবং পোস্ট-ডক্টরাল গবেষণা করি। বর্তমানে আমি ক্যানসারের ড্রাগ ডেভেলপমেন্ট নিয়েই কাজ করছি।

প্রশ্ন: অস্ট্রেলিয়ার পিএইচডি প্রোগ্রামে কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়?

উত্তর: অস্ট্রেলিয়ার পিএইচডি প্রোগ্রামগুলো শিক্ষার্থীদের জন্য নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে, যা তাদের শিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়নে সহায়ক। অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রায়ই মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন বৃত্তি প্রদান করে থাকে। এই বৃত্তিগুলো টিউশন ফি, জীবনযাত্রার খরচ এবং গবেষণার খরচ বহন করতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের তাদের গবেষণা প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, ল্যাবরেটরি এবং অন্যান্য সুবিধা প্রদান করে। অভিজ্ঞ শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের গবেষণা কাজ তত্ত্বাবধান করেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করেন। শিক্ষার্থীদের গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন করার জন্য কনফারেন্স এবং কর্মশালায় অংশগ্রহণের সুযোগও দেওয়া হয়।

প্রশ্ন: অস্ট্রেলিয়ায় পিএইচডি করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কী কী চেয়ে থাকে? কীভাবে প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন?

উত্তর: পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়ার জন্য আবেদনকারীকে ভালো একাডেমিক যোগ্যতা এবং গবেষণার সম্ভাবনা প্রদর্শন করতে হয়। আবেদনকারীর আন্ডারগ্র্যাজুয়েট বা মাস্টার্স পর্যায়ের একাডেমিক রেকর্ড ভালো হতে হবে। ইন্টার্নশিপ এবং প্রকাশনা থাকা গুরুত্বপূর্ণ। আবেদনকারী যে টপিকে পিএইচডি করতে চায়, সে টপিকে যদি তার সুপারভাইজার আগ্রহী হন, তাহলে তাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের চাহিদা অনুযায়ী আবেদনকারীর TOEFL বা IELTS স্কোরও থাকতে হবে। সর্বোপরি, ব্যক্তিগত মোটিভেশন, অভিজ্ঞতা এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতির বিষয়গুলোও গুরুত্ব পায়।

প্রশ্ন: অস্ট্রেলিয়া বাইরের দেশ থেকে মেধাবীদের নিয়ে আসার জন্য কী কী প্রোগ্রাম সুবিধা দিয়ে থাকে?

উত্তর: অস্ট্রেলিয়া বাইরের দেশ থেকে মেধাবীদের নিয়ে আসার জন্য বিভিন্ন প্রোগ্রাম অফার করে থাকে, কারণ দেশটিতে দক্ষ জনশক্তির সংকট রয়েছে। এই প্রোগ্রামগুলোর মাধ্যমে তারা সঙ্কট পূরণ করতে চায়। এক গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ হলো জেনারেল স্কিলড মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম, যা দক্ষ জনশক্তিকে স্থায়ী আবাসন প্রদানের অনুমোদন দেয়। এতে আবেদনকারীর যোগ্যতা, কাজের অভিজ্ঞতা এবং ইংরেজিতে দক্ষতা যাচাই করা হয়। এর বাইরেও নিয়োগকর্তারা টেম্পোরারি স্কিল শর্টেজ ভিসার মাধ্যমে বিদেশি কর্মজীবীদের স্বল্পমেয়াদি এবং মাঝারি মেয়াদি কাজের জন্য স্পনসর করে থাকেন। গ্লোবাল ট্যালেন্ট ভিসার মাধ্যমে প্রযুক্তি, প্রকৌশল এবং গবেষণা সেক্টরের ব্যক্তিদের জন্য স্থায়ী বসবাসের অনুমোদন দেওয়া হয়। এমপ্লয়ার নমিনেশন স্কিম এবং রিজিওনাল স্পন্সরড মাইগ্রেশন স্কিমের মাধ্যমে শ্রমিক সংকট পূরণের চেষ্টা করা হয়। এই প্রোগ্রামগুলোর মাধ্যমে দেশটি প্রতিযোগিতামূলক জনশক্তি, উদ্ভাবন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করে থাকে।

প্রশ্ন: বাইরের দেশে ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া কলাবুরেশন হয়। আপনি নিজেও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কাজের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষকতাও করেন। বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ ধরনের সংস্কৃতি কেন গুরুত্বপূর্ণ?

উত্তর: বাইরের দেশে ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া কলাবুরেশন একটি সাধারণ বিষয়, যার মাধ্যমে তারা উদ্ভাবন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক দক্ষতার উন্নয়ন করে থাকে। উন্নত বিশ্বে বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের জ্ঞান বিনিময় এবং বাজারের চাহিদা অনুযায়ী কাজ করে থাকে। শিক্ষকেরা তাদের পড়াশোনার পাশাপাশি শিল্পভিত্তিক প্রকল্পে যুক্ত হন, যা তাদের একাডেমিক জ্ঞান এবং ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা বাড়ায়। বাংলাদেশেও এ ধরনের সংস্কৃতি জরুরি। এটি দেশের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ, স্থানীয় শিল্প, উন্নত প্রযুক্তি এবং উদ্যোক্তা উন্নয়নে সহায়ক হতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থায় ব্যবহারিক জ্ঞান যুক্ত করলে শিক্ষার্থীরা শুধু একাডেমিক ক্ষেত্রে সফল হবে না, বরং দেশের উদ্ভাবন এবং উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

প্রশ্ন: বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষকতা করতে চাইলে পূর্বের পিএইচডি বা পোস্ট ডক, এমনকি ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা কাজ করে না। অস্ট্রেলিয়াতে এ বিষয়গুলো কীভাবে দেখা হয়?

উত্তর: অস্ট্রেলিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষকতা করতে চাইলে পূর্বের পিএইচডি বা পোস্ট ডক্টরাল অভিজ্ঞতা এবং ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পিএইচডি এবং পোস্ট ডক্টরাল অভিজ্ঞতা শিক্ষককের গবেষণা দক্ষতা, নতুন জ্ঞান তৈরির ক্ষমতা এবং আন্তর্জাতিক গবেষণার সঙ্গে যুক্ত থাকার প্রমাণ দেয়। এই অভিজ্ঞতাগুলো শিক্ষকদের তাদের বিষয় সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জনে এবং শিক্ষার্থীদের গবেষণায় সহায়তা করতে সাহায্য করে। আন্তর্জাতিক জার্নালে গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করা শিক্ষককের গবেষণা দক্ষতা এবং জ্ঞানের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রমাণ করে। অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষক নিয়োগের সময় তাদের প্রকাশনার সংখ্যা ও মান যাচাই করে। এসব বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়।

প্রশ্ন: ভারত এবং চীন বাইরের দেশ থেকে কর্মরত তাদের ট্যালেন্টদের দেশে ফিরিয়ে নিতে প্রোগ্রাম রেখেছে। কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকলে প্রবাসী বাংলাদেশি মেধাবীরাও বাংলাদেশে এসে কাজ করতে আগ্রহ পাবে?

উত্তর: বিদেশে কর্মরত মেধাবীদের তাদের দেশে নিয়ে আসতে এবং অর্থনীতিতে অবদান রাখার জন্য ভারত ও চীন নানা প্রোগ্রাম চালু করেছে। তাদের উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে আর্থিক প্রণোদনা, কর ছাড়, গবেষণা অনুদানসহ নানা সুবিধা, যা প্রকৌশল, প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞান সেক্টরে কাজ করা পেশাজীবীদের তাদের দেশে কাজ করতে উৎসাহিত করে। একই ধরনের সুবিধা বাংলাদেশও তাদের মেধাবীদের জন্য অফার করতে পারে, বিশেষ করে ক্যারিয়ার সুযোগ, প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা এবং অবকাঠামো সুবিধা প্রদান করতে পারে। উদ্ভাবন, উদ্যোক্তা এবং পেশাজীবীদের উন্নয়নে নানা সুযোগ-সুবিধা প্রদান করলে প্রবাসী বাংলাদেশিরাও বাংলাদেশে এসে কাজ করতে আগ্রহী হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশকে ভেঙে ফেলার আহ্বান ত্রিপুরার রাজপরিবার প্রধানের

পরিবারের সামনে পুলিশ কর্মকর্তা লাঞ্ছিত, স্বেচ্ছাসেবক দলের ৩ নেতা-কর্মী আটক

নয়াদিল্লি হাসিনা আমলের দৃষ্টিভঙ্গিই ধরে রেখেছে: ভারতীয় গণমাধ্যমকে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

বিমসটেক সম্মেলনে ড. ইউনূস ও নরেন্দ্র মোদি বৈঠক হচ্ছে

গ্রেপ্তার আসামিকে ছিনিয়ে নিতে পুলিশের ওপর হামলা, বিএনপির ১৭ নেতা-কর্মী আটক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত