বিদেশে ক্যারিয়ার: মাইক্রোসফটে চাকরির পেছনে

সি এম খালেদ সাইফুল্লাহ
প্রকাশ : ০১ নভেম্বর ২০২২, ১০: ২৯
আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০২২, ১০: ৩১

সি এম খালেদ সাইফুল্লাহর শৈশব ও বেড়ে ওঠা লক্ষ্মীপুর শহরে। ২০২২ সালের জুলাই মাসে মাইক্রোসফট ভ্যাঙ্কুভার থেকে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে প্রস্তাব পান এবং অক্টোবর মাসে মাইক্রোসফটের টিমস দলে যোগ দেন। তাঁর মাইক্রোসফটে চাকরির গল্প, নতুনদের পরামর্শ ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন তিনি নিজেই।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। ছয় মাসব্যাপী প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে প্রোগ্রামিং নাইট করতাম। একটা গ্রুপ করে সারা রাত ল্যাবে থেকে প্রোগ্রাম সলভ করতাম। ভার্সিটিতে নিজেদের মধ্যে শেখার প্রতিযোগিতা ছিল। এরপর আমি কানাডায় ইউনিভার্সিটি অব সাসকাচোয়ানে (USASK)  মাস্টার্সে ভর্তি হই। এখানে পড়াশোনার সঙ্গে প্রতিদিন প্রায় এক ঘণ্টার মতো প্রোগ্রামিং করতাম। এটা রেগুলার করার চেষ্টা করতাম। পাশাপাশি যাঁরা এসব প্রতিষ্ঠানে জব করেন, তাঁদের সঙ্গে লিংকড-ইনে যোগাযোগ করতাম।

তাঁদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় পরামর্শ ও তথ্য নিতাম। এ ছাড়া বিভিন্ন বই পড়া, ইউটিউবে টিউটোরিয়াল ভিডিও দেখে ও বিভিন্ন ব্লগ পড়ে প্রস্তুতি নিয়েছি। অল্প অল্প করে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করি।

মাইক্রোসফটে কাজের সুযোগ
মাইক্রোসফটে কয়েক ধরনের চাকরির সুযোগ রয়েছে। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, হার্ডওয়্যার বা মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং। ডেটা সায়েন্স রিলেটেড বেশ জব রয়েছে। এখন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স রিলেটেড জবও রয়েছে। এ ছাড়া নন-টেকনিক্যাল জবের মধ্যে ডিজাইন, ফিন্যান্স, এইচআর, রিক্রুটমেন্ট, মার্কেটিং, ম্যানেজমেন্ট, সেলস, নিয়োগ থেকে শুরু করে সব ধরনের চাকরি রয়েছে। বর্তমানে মাইক্রোসফটে প্রায় দুই লাখের বেশি লোক জব করেন। সুতরাং এখানে প্রায় সব ফিল্ডের জব রয়েছে। যেকোনো ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে যে কেউ মাইক্রোসফটের মতো কোম্পানিতে চাকরি করতে পারবেন।

আবেদনের প্রক্রিয়া
মাইক্রোসফটে ক্যারিয়ার সাইট রয়েছে। লোকেশন, ব্যাকগ্রাউন্ড ও এরিয়া দিয়ে সার্চ করলে জবের ধরন পাওয়া যাবে। এরপর জবের বর্ণনা অনুযায়ী নিজের সিভি তৈরি করতে হবে। মাইক্রোসফট কর্তৃপক্ষ জবের বর্ণনার সঙ্গে সিভি ম্যাচ করবে। যত বেশি ম্যাচ হবে, তত বেশি ইন্টারভিউয়ে ডাক পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। তাই সিভিটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নতুন গ্র্যাজুয়েটরা সিভির প্রতি মনোযোগ দেবে। সিভি যেন দুই পেজের বেশি না হয়। সিভিতে কোনো প্রজেক্ট করে থাকলে সেটা উল্লেখ করবে এবং বস্তুনিষ্ঠ তথ্য দিতে হবে।

একাডেমিক বা প্রফেশনাল তথ্য, নিজের দক্ষতা, নিজের পেশাগত অভিজ্ঞতা, প্রতিটি এক্সপেরিয়েন্স ও ইমপ্যাক্টগুলো থাকতে হবে। কোনো কোম্পানিতে কন্ট্রিবিউশনের ফলে কোনো ইমপ্যাক্ট হলে, সেটা সিভিতে উল্লেখ করতে হবে। সিভিতে প্রিয় শখ কী, ধর্ম, জেন্ডার, জাতীয়তা, বয়স এসব তথ্য দেওয়ার প্রয়োজন নেই। যেই ফিল্ডে আবেদন করা হবে, তার ইন্টারভিউয়ে যেসব প্রশ্ন আসতে পারে, সেভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। আমি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে অ্যাপ্লাই করেছি। লিডকোড নামের ওয়েবসাইটে জব রিলেটেড প্রোগ্রাম সলভ করেছি। এ ছাড়া 'Cracking The Coding Interview' নামের বইটি পড়েছি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে সহযোগিতা নিয়েছি। সিভির পাশাপাশি ইংরেজির দক্ষতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইংরেজিতে কথা বলতে না পারলে নিজেকে সুন্দরভাবে প্রেজেন্ট করা যায় না।

চাকরির ইন্টারভিউ 
২০২২ সালের মে মাসে লিংকড-ইনে মাইক্রোসফটের একজন রিক্রুটার আমাকে নক দেন। তখন তিনি আমার পরিস্থিতি এবং কিছু তথ্য জানতে চান। এরপর একটা লিংক দেন। যেখানে দেড় ঘণ্টার মধ্যে তিনটি প্রোগ্রামিং প্রবলেম সলভ করতে হয়। আমি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রবলেম সলভ করে সাবমিট করি। এক সপ্তাহ পর জানান, আমি অনসাইট ইন্টারভিউতে উত্তীর্ণ হয়েছি। কোভিডের কারণে আমার ভার্চুয়ালি অনসাইট ইন্টারভিউ হয়েছিল। ৪৫ মিনিট করে টোটাল চারটা ইন্টারভিউ হয়। এই ধাপ আমি যথাযথভাবে পার করি এবং অনসাইট ইন্টারভিউতে উত্তীর্ণ হই। তাঁরা জানান, মাইক্রোসফটের অজুর এইচপিসি টিমের ম্যানেজার আমার সঙ্গে কথা বলবেন। 

দুর্ভাগ্যবশত তার দুদিন পর আমার আবেদন করা পদটি বিলুপ্ত করা হয়। তখন আমাকে ট্যালেন্টপুলে দেওয়া হয়। এখানে মাইক্রোসফটের ম্যানেজাররা অনসাইট ইন্টারভিউতে উত্তীর্ণ হওয়াদের বাছাই করে তাঁদের টিমে নেন। টিম ম্যাচে তিনজন ম্যানেজার কথা বলে শেষের জন আমাকে নিতে রাজি হন। এরপর ২০২২ সালের জুলাইয়ের শেষে আমাকে অফার লেটার দেওয়া হয়। ফাইনালি আমি অক্টোবরে জয়েন করি।

তরুণদের জন্য পরামর্শ
প্রথমে ইন্টারনেটের সঠিক ব্যবহার এবং বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা জানতে হবে। পাশাপাশি নিজের আত্মীয়স্বজন, সহপাঠী ও বন্ধুদের সঙ্গে এসব কোম্পানির কথা আলোচনা করতে হবে। এতে নলেজ অনেক বৃদ্ধি পায়। বিশ্বের বড় বড় কোম্পানির লোকের লিংকড-ইন আইডি থাকে। লিংকড-ইন, টুইটার ও ব্লাইন্ডের মতো প্রফেশনাল সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয় থাকতে হবে। পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রমগুলোতে অ্যাকটিভ থাকতে হবে। এতে করে নলেজ ও নেটওয়ার্ক দুটোই বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া ইংরেজি কথা বলার স্কিলে উন্নতি করতে হবে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
আপাতত আমার স্কিলগুলো ডেভেলপ করতে চাই। আমি চাই মাইক্রোসফটের মতো কোম্পানিগুলো আমাদের দেশে আসুক। তখন বাংলাদেশি ডেভেলপারদের সঙ্গে কাজ করব। পাশাপাশি নিজেকে একজন টেকনিক্যাল লিডার হিসেবে দেখতে চাই। এ ছাড়া আমার দেশ, জাতি এবং ধর্মকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে চাই।

সি এম খালেদ সাইফুল্লাহ, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, মাইক্রোসফট

অনুলিখন: আনিসুল ইসলাম নাঈম

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আবু সাঈদকে ৪–৫ ঘণ্টা পরে হাসপাতালে নেওয়া হয়—শেখ হাসিনার দাবির সত্যতা কতটুকু

মেট্রোরেল থেকে আমলাদের বিদায়, অগ্রাধিকার প্রকৌশলীদের

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

বিমানবন্দরে সাংবাদিক নূরুল কবীরকে হয়রানির তদন্তের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ৩৫ কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত