ইসরায়েল যাওয়ার শাস্তি কোন আইনে, একে অপরকে দেখাচ্ছেন দুই মন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৯ মে ২০২১, ১৬: ১৪
আপডেট : ২৯ মে ২০২১, ১৯: ০১

ঢাকা: বাংলাদেশের পাসপোর্ট থেকে ‘ইসরায়েল ব্যতীত বিশ্বের সব দেশের ক্ষেত্রে বৈধ’ বাক্যটি থেকে ‘ইসরায়েল ব্যতীত’ কথাটি বাদ দেওয়া হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশর অবস্থান স্পষ্ট করতে গিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকার করে না বাংলাদেশ। তাই সেখানে কোনো বাংলাদেশি গেলে তাঁর শাস্তি পেতে হবে।

তবে ইসরায়েল যাওয়ার শাস্তি কোন আইনে, কী হতে পারে– সেটি নিয়ে পররাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়ের স্পষ্ট কোনো ধারণা নেই। এ নিয়ে ব্যাখ্যা চাইলে দুই মন্ত্রী একে অপরের দিকে নির্দেশ করেছেন। বিষয়টি এখন অনেকটা মৃদু বিরোধের দিকেই গেছে।

১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশের পাসপোর্টের গায়ে ইসরায়েল যাওয়ার বিষয়ে স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা ছিল। বাংলাদেশের পাসপোর্টে এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং তাইওয়ানে যাওয়ার ব্যাপারেও নিষেধাজ্ঞা ছিল। একে একে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। দীর্ঘ দিন পর সম্প্রতি পাসপোর্ট থেকে ‘অল কান্ট্রিজ একসেপ্ট ইসরায়েল’ কথাটিও প্রত্যাহার করা হয়। ‘আন্তর্জাতিক মানে’ উন্নীত করার লক্ষ্যেই এ পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে ব্যাখ্যায় বলছে সরকার।

এর মধ্যে গত বুধবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এক অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, পাসপোর্ট থেকে ‘একসেপ্ট ইসরায়েল’ শব্দ দুটি উঠে গেলেও ইসরায়েল সম্পর্কে বাংলাদেশের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। কোনো বাংলাদেশি যদি অনুমোদন ছাড়া ইসরায়েল যান, তবে তাঁকে বিচারের সম্মুখীন হতে হবে।

ইসরায়েল গেলে কোন আইনে বাংলাদেশিকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হবে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এটা আপনি স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়কে জিজ্ঞেস করেন।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্ধৃতি টেনে একই প্রশ্নের উত্তর আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার মনে হয় এটা উনাকে (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) জিজ্ঞেস করা ভালো হবে। উনিই এটার ব্যাখ্যা দিক, …আমাকে জিজ্ঞাসা না করে…। সব আইনের ব্যাপারে আপনারা আমাকে জিজ্ঞেস করেন, উনি কোন আইন দেখিয়ে এটা বলেছেন, এটা জিজ্ঞেস করেন উনাকে।’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, বাংলাদেশিদের ইসরায়েল ভ্রমণ প্রতিরোধ করতে হলে অবশ্যই এ সংক্রান্ত আইন প্রয়োজন। এত দিন পাসপোর্টে লেখা ছিল, ফলে ইসরায়েল যাওয়া বন্ধ ছিল। এখন পাসপোর্টে নিষেধাজ্ঞা নেই, আর এ সংক্রান্ত কোনো আইনও নেই। ফলে কোনো বাংলাদেশির ইসরায়েল যাওয়া ঠেকাতে পারবে না সরকার। কারণ কোনো বাংলাদেশিকে যদি এর জন্য বিচারের আওতায় আনতে হয়, তবে সেই বাংলাদেশিকে আদালতে নিয়ে দাঁড় করাতে হবে। আদালতে এ সংক্রান্ত আইন ও শাস্তির বিধান দেখাতে হবে। সেটি যেহেতু নেই, ফলে আইন করার আগে সরকারের বাধা দেওয়ার ক্ষমতা নেই। তবে একটি বিষয় পরিষ্কার যে, ইসরায়েলের সঙ্গে এখনো বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক হয়নি।

নতুন পাসপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশিরা ইসরায়েল যেতে পারবে কি–না? এ প্রশ্নের উত্তরে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকার পরও ইসরায়েল যদি চায় বাংলাদেশিদের ভিসা দিতে পারে। আবার নাও দিতে পারে। এটা তাদের সার্বভৌম অধিকার। এ ক্ষেত্রে বাধা দেওয়া বা বিচারের আওতায় নিয়ে আসার ক্ষমতা বাংলাদেশ সরকারের এ মুহূর্তে নেই।

আরও পড়ুন:

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত